নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিনেমাপ্রেমী । ট্র্যাভেলার । বইপোকা । রন্ধনশিল্পী

আলভী রহমান শোভন

খাই, দাই, ব্লগ লিখি ।

আলভী রহমান শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছবি ব্লগ – ঘুরে এলাম লালবাগ কেল্লা

০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ১২:৪৮



ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অন্যতম প্রাচীন দুর্গ লালবাগে কেল্লা। মোঘল আমলে স্থাপিত দুর্গটি ঐতিহাসিক নিদর্শন।



প্রথমে এই কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। আর এই কেল্লার নকশা করেন মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র আজম শাহ। ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন তিনি। মাত্র পনেরো মাস পরেই দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।



নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয় এবং শায়েস্তা খাঁ এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। এই পরী বিবির সাথে শাহজাদা আজম শাহের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে রাজকাজ পরিচালনা করতেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান।





শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ এই কেল্লা এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। বর্তমানে রবিবার পূর্ণ দিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকী ছয়দিন এই কেল্লা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।



কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-

কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা (দেওয়ান ই আম)
পরীবিবির সমাধি
উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ

দক্ষিণস্থ দুর্গ প্রাচীরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি বিরাট বুরূজ ছিল । দক্ষিণস্থ দুর্গ প্রাচীরের উত্তরে ছিল কয়েকটি ভবন ,আস্তাবল , প্রশাসনিক ভবন, এবং পশ্চিম অংশে জলাধার ও ফোয়ারা সহ একটি সুন্দর ছাদ-বাগানের ব্যবস্থা ছিল ।তবে বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক উৎখনন অন্যান্য কাঠামোর অস্তিত্ব প্রকাশ করেছে।

আবাসিক অংশটি ছিল দুর্গ প্রাচীরের পশ্চিম-পূর্বে , প্রধানত মসজিদটির দক্ষিণ-পশ্চিমে । দক্ষিণের দুর্গ প্রাচীরে নির্দিষ্ট ব্যবধানে ৫ টি বুরুজ ছিল উচ্চতায় দুই তালার সমান , এবং পশ্চিমের দুর্গ প্রাচীরে ছিল ২ টি বুরুজ যার সবচেয়ে বড়টি ছিল দক্ষিণস্থ প্রধান প্রবেশদ্বারে ।









































দিওয়ান-ই-আম বাংলার মোঘল সরকারের বাসভবন ছিল। ইংরেজি ফ্যাক্টরী গভর্নরের রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে শায়েস্তা খাঁ এখানেই বসবাস করতেন এবং কিছু ইউরোপীয়দের এখানে আটক রাখা হত।



ভবনটির পশ্চিম পাশে একটি গোসলখানা সংযুক্ত করা হয় যেখানে উষ্ণ পানির জন্য একটি ভূগর্ভস্থ রুম রয়েছে। একটি দীর্ঘ বিভাজন প্রাচীর হাম্মামের পশ্চিমা প্রাচীর বরাবর সঞ্চালিত হয়। ১৯৯৪ – ২০০৯ সালের মধ্যকার খননকার্য দেখায় যে হাম্মামখানার রুমের নীচে একটি বিশেষ ঘর ছিল যেখানে গরম পানি সরবরাহ এবং পোড়ামাটির পাইপের মাধ্যমে শীতল জল সরবরাহ করত বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছিল। হাম্মামখানার পাশে টয়লেট রুমও ছিল। বর্তমানে এই ভবনটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।



























মোঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর প্রিয় কন্যা পরী বিবির সমাধিটি মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রং এর ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছে। কক্ষগুলির ছাদ কষ্টি পাথরে তৈরি। মূল সমাধি সৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের উপরের কৃত্রিম গম্বুজটি তামার পাত দিয়ে আচ্ছাদিত। তবে এখানে পরীবিবির মরদেহ বর্তমানে নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।



লালবাগ কেল্লা মসজিদটি নির্মিত হয় ১৬৭৮-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। আয়তাকারে (১৯.১৯ মি: × ৯.৮৪ মি) নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মোঘল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানেও মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।





কেল্লায় লুকানোর জন্য একটি উত্তরণও ছিল। এটি আজম শাহের নকশা ছিল যেখান থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে যাওয়া যায় কিন্তু পরী বিবি মারা যাওয়ার কারণে এটিরও নির্মাণ কাজ বাতিল করা হয় ।










তথ্যসূত্র –
১) The Archaeological Heritage of Bangladesh - Asiatic Society of Bangladesh (2011)
২) Extracts from the Notes on the Antiquities of Dacca - Sayid Aulad Hasan (1903)
৩) Lalbag Fort - Habibur Rahman (2012)
৪) The Mughal Empire – James Richards (1996)

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ১২:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


বিস্তারিত ছবি, ভালো লাগলো

০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ১:১০

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

২| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ১:৩১

ধ্রুবক আলো বলেছেন: ছবি ব্লগ ও বিস্তারিত খুব ভালো লাগলো ++

০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ১:৩৫

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

৩| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ সকাল ৯:২৮

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: অনেক আগে একবার গিয়েছিলাম। ছবি গুলি সুন্দর হয়েছে।

০৪ ঠা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৩২

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

৪| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ সকাল ৯:৪৭

আমি চির-দুরন্ত বলেছেন: বিস্তারিত ছবিতে খুব ভালো লাগলো। আমি সপ্তাহে ১ বার অইখানে যাই।মন ভালো হয়।

০৪ ঠা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৩

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আমি প্রথমবার গেলাম। অনেক ভালো লেগেছে। :)

৫| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ সকাল ৯:৫২

আমি চির-দুরন্ত বলেছেন: আমাদের এলাকায় ঘুরতে আসার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

০৪ ঠা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: :)

৬| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪

সামিয়া বলেছেন: ভালোলাগলো

০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ১১:২৩

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু। :)

৭| ০৬ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৯

ডি মুন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।
++

ছবি দেখে লালবাগ কেল্লা ঘুরে আসতে ইচ্ছা করতেছে।

০৭ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:০৯

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ, ভাইয়া। :)

সময় করে ঘুরে আসুন একদিন।

৮| ১২ ই মে, ২০১৭ ভোর ৪:১১

সৌমিক আহমেদ খান বলেছেন: আপনাকে পাইসি

১৬ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৭

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: কই পাইছেন?

৯| ২৩ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৩১

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: চারশত বছরের ঢাকার এক বিখ্যাত জায়গা । তরতাজা কিছু সুন্দর ছবির জন্যে আপনার পোস্ট গুলো সবসময় খুবই সুন্দর :D

২৩ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:১০

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টগুলো নিয়মিত পড়ার জন্য। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.