![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
এখনকার বাচ্চাদের যেমন গলা দিয়ে ভাত নামতে কষ্ট হয় আমাদের এরকমই আজব এক সমস্যা ছিল। সেটি অবশ্য ভিন্নধরনের! এখন গলা দিয়ে খাবার ঢুকাতে কষ্ট হয়! আর তখন বাড়ীতে মা কিংবা বড় বোনের হাতে বানানো উলের সোয়েটারের গলা দিয়ে মাথা ঢোকানো ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই ধস্তা-ধস্তির পর্যায়টি পার হলে আমার মনে হতো অন্ধকার কুয়োর মধ্যে থেকে বের হয়ে বহু প্রতিক্ষীত সূর্যের দেখা পেলাম! আর মা কিংবা বড় আপা ভাবতেন গাধাটার মাথাটা এত বড় কেন! নিজেদের বুনোনের হাত যশ নিয়ে তাঁদের মাঝে কোনরূপ সংশয় থাকবার প্রশ্নই থাকতো না। বাবা যথারীতি ভ্রু-কুচকে দৃশ্যটি বিরক্তি সহকারে পর্যবেক্ষণ করতেন এবং এক পর্যায়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠোনে গিয়ে পায়চারী করতেন, আর বলতেন, তারা তারি করো, মাঠে প্যারেড তো শেষ হতে চলল, এত দেরি করলে যাবো কখন। মায়ের হাত ধরে কিছুক্ষণ পরই উঠোনে বাবার পাশে এসে দাড়াতাম। বাবার গায়ে পুরোনো একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কোট আর ভিন্ন রংয়ের বেলবটম প্যান্ট, পায়ে খাদিম কেডস। তাঁর ক্ষূদে সহযোদ্ধার অবস্থা আরও করুণ! গায়ে সেড় দুয়েক ওজনের মোটা উলের সোয়েটার আর নি¤œাঙ্গে হাফ প্যান্ট! ঠক্ ঠক্ করে শীতে কাপছি! দু-হাটুতে ঠোকা-ঠুকি! পায়ে ডোড়া কাটা ইলাষ্টিকহীন মোজার উপরে বড় ভাইয়ার ছোট বেলার খাদিম কেডস! সেটা নাকি আবার ধারাবাহিকভাবে মেজ ভাইও পড়েছেন! এখন আমার অধিকারে এসেছে! মা বলতেন, যাও বাপ-বেটা মিলে ১৬ই ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন কর গিয়ে। বাবা মুচকি হাসতেন। সে হাসিতে, (এখন মনে হয়) কিসের যেন এক আনন্দ ছিল, একটা গর্ব ছিল। সেই আনন্দ আর গর্বের কাছে পৃথিবীর সকল কিছুই যেন হার মানায়।
২.
বাবা বুক ফুলিয়ে কুচকানো কোট গায়ে বাড়ীর গেটের কাছে গিয়ে দাড়াতেন, পিছনে আমি। দু প্রজ¤েœর দুই যোদ্ধা ১৬ই ডিসেম্বরের তাৎপর্য দুজনের কাছে তখন দুরকম। বাড়ির গেটে চিকন একটা বাশেঁর ডগায় সূর্যদয়ের সময় টানানো (গত সন্ধ্যায় আয়রন বা ইস্ত্রি করা) পতাকা কুয়াশায় ভিজে একটু নুয়ে পড়েছে। রোদ উঠলে শুকোবে এবং তারপর একটু বাতাস পেলে পত্ পত্ করে উড়বে এই ভেবেই বাবা বোধ হয় প্রতি ১৬ই ডিসেম্বরে আস্বস্ত হয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে হাঁটা শুরু করতেন। এপ্রসঙ্গে দুটো কথা না বললে অপুর্ণতা থেকে যেেত পারে! আমাদের বাড়ীতে কয়েকটি বিলাস দ্রব্য ছিল! একটা সাদা কালো টেলিভিশন, একটা ঢালাই লোহার আয়রণ (ইস্ত্রি), একটা রেডিও, একটা উদ্ভট দর্শন টেপ রেকর্ডার এবং কয়েকটি ক্যাসেট ( হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর একটি, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গানের একটি, বড় বোনের একটি কি দুটি ক্যাসেট ছিল সিনেমার গানের )। সেই ঢালাই লোহার আয়রণ সাধারণত বাড়ীর মেয়েরাই ব্যবহার করতেন। বাড়ীর স্ত্রীলোকেরাই বেশী ব্যবহার করতেন বলেই আমরা ছোট বেলায় এই বস্তুটিকে ইস্ত্রি বলে ডাকতাম বোধ হয়। যাইহোক বাবা এই বস্তুটির ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগী হতেন শুধু ১৫ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায়, জাতিয় পতাকাটি আয়রণ করবার জন্য, নিজের গায়ের কোট কুচকানো হলেও তাতে তার কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু পতাকা নিপাট ভাজহীন হওয়া চাই। ঠিক সময়ে পতাকা উঠবে, ঠিক সময়ে পতাকা নামবে, দিনের বাকি সময় দেশাত্মবোধক গান শুনবেন আর একটু পর পরই পতাকাটি দেখে আসবেন ঠিক-ঠাক রয়েছে কিনা। পতাকার বাঁশের উপর কোনো কাক বসলে হায়-হায় করে তেড়ে যেতেন, যেন পাক সেনা এসে বসেছে। কাকগুলো খুবই অপ্রস্তুত হয়ে চলে যেত; হয়ত ওরা বুঝতো পতাকার বাঁেশ বসে কাজটা মোটেও ঠিক করেনি। অথচ অনেক সময় দেখেছি বাবা চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন, অনতিদূরে মা আমের কিংবা বড়ইয়ের আচার শুকাতে দিয়েছেন। কাক এসে মহা আনন্দে আচার খেয়ে লোপাট করছে, বাবার তাতে কিচছু যায় আসে না। পতাকার বাঁশে বসলে রক্ষে নেই বাছা।
২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩
বাউন্ডুলের গল্প বলেছেন: ধন্যবাদ আরোহী। কিন্তু সমস্যায় পড়েছি কিছু বিষয় নিয়ে। আমি এখানে নতুন। প্রোফাইল টা ঠিক মতন তৈরী করতে পারিনি। প্রথমে ছবি আপলোড এর সুযোগ দিয়েছিল কিন্তু পরে করব ভেবে স্কিপ করে গিয়েছি। এখন আর প্রোফাইলে ছবি সংযোজিত করবার কোন অপশন খুজে পাচ্ছি না। এব্যাপারে সাহায্য করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করবেন আশা করি।
৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪
বাউন্ডুলের গল্প বলেছেন: অপশন একটা পেরাম ছবিও আপলোড করলাম্ দেখা যাক কাজ হয় কিনা।
৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩
কালো ঘোড়ার আরোহী বলেছেন: দুঃখিত। সময়মত সাহায্য করতে পারিনি বলে।
যতক্ষনে আপনার কমেন্টটা আমার চোখে পড়লো, ততক্ষনে আপনার প্রচেষ্টায় আপনি সফল হয়ে গেছেন!
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১
কালো ঘোড়ার আরোহী বলেছেন: চমৎকার লেখা।