![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিএনজি অটোরিক্সা এসে থামলো জরুরী বিভাগের সামনে। ৪-৫ জন লোক দৌড়ে এসে সিএনজি অটোরিক্সার ভেতরে থাকা ৩ যাত্রীকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার আগেই জামাই আদরে নিয়ে যায় ইমারজেন্সী ওয়ার্ডে। একটু পরের দৃশ্য একই। আরেকটি সিএনজি অটোরিক্সা এসে দাড়াঁতেই একই কায়দায় ৩ জন লোক রোগী বহনকারী ট্রেসার নিয়ে এগিয়ে এসে তাদের নিয়ে যায় ভেতরে। পনের মিনিট ধরে একই দৃশ্য দূর থেকে অবলোকন করে প্রাথমিক অবস্থায় এটিই প্রতীয়মান হয় যে, হাসপাতাল গুলোতে স্বাস্থ্যসেবা যথেষ্ট উন্নিত সাধিত হয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এটি নিত্যদিনের দৃশ্য হলেও ঘটনার অন্তরালে রয়ে গেছে আরেকটি ঘটনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রুগী সেবার নামে রোগী বাগানোর এসব কাজকর্ম ক্রমানুসারে করে থাকে হাসপাতালের সামনে অবস্থিত মেডিসিন দোকানের নিয়োজিত দালালরা। অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে এসব অনিয়ম। রোগীদের নিকট এখানকার এসব অনিয়মই যেন নিয়মে পরিনত হয়ে গেছে। মাত্র ২ জন ওয়ার্ড বয় থাকলেও বাহির থেকে ভাড়াটিয়া ১৫-২০ জন লোক দিয়ে চলে ইমারজেন্সী ওয়াডের সমস্ত কাজকর্ম। অনেকটা অনিচ্ছা থাকা সত্বেও কথাগুলো স্বীকার করলেন ইমারজেন্সীতে থাকা একজন কর্মরত মেডিকেল অফিসার। তিনি বলেন, জনবলের অভাবে এমন ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হলেও সারা বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো একই নিয়মে চলে আসছে। এভাবেই নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে বাংলাদেশের অন্যতম দর্শণীয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (শজিমেক)। ভৌগোলিক দিক থেকে উত্তরবঙ্গের কেন্দ্রস্থলে বগুড়ার অবস্থান। বগুড়ার গুরুত্ব এই কারনে সবচেয়ে বেশি। ইতি পুর্বে বগুড়ায় স্বয়ং সম্পুর্ন বিমান বন্দর, মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিভিশন কেন্দ্রসহ ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনা বিভিন্ন সময় সরকার হাতে নিলেও তা বাস্তবে রুপ লাভ করেনি। কিন্তু তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন হয়ে কিছুটা হলেও বগুড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে।বগুড়ায় ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ, যোগাযোগের সুব্যবস্থার কারনে একটি বৃহত্তর হাসপাতাল ও স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ ও ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী প্রথম ১০০ দিনের কর্মসুচী অন্যতম হিসেবে ১৬ জানুয়ারি ২০০২ সালে বগুড়া শহরতলীর ছিলিমপুরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মোট ২৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ একর জায়গার উপরে বগুড়ায় নয়নাভিরাম শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অবস্থিত। এখানে রয়েছে একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, একটি পূর্নাঙ্গ মেডিকেল কলেজ, কলেজের ছাত্রছাত্রীর জন্য ২টি ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস, ইন্টার্নী চিকিৎসকদের জন্য ২টি পৃথক হোস্টেল, মহিলা ও পুরুষ চিকিৎসকদের জন্য ২টি ডরমেটারী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পর্যাপ্ত আবাসন, জিমনেশিয়ান। মেডিকেল কলেজে রয়েছে প্রতি বছর ১০০ জন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভর্তির সুবিধা। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বগুড়াবাসীদের স্বপ্নের হাসপাতালের সার্বিক চিত্রে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। বর্তমানে নানাবিধ অনিয়মের বেড়া জালে আবদ্ধ হয়ে পরেছে এ হাসপাতালের নিয়ম কানুন। বাংলাদেশের অন্যসব হাসপাতালগুলোর মতই বগুড়ার এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে নানান প্রতারণা। রয়েছে নানান অনিয়মও। ডাক্তার কর্তৃক রোগীকে ক্লিনিকে বাগানো, ওষুধ চুরি, নোংরা পরিবেশ এবং বহিরাগত দালালদের আনাগোনায় রোগীরা এখানে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। এখানে আসা রোগীদের অভিযোগ প্রতিদিনের নিয়মতান্ত্রিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অভিযোগ না করলেই যেন তা অনিয়ম মনে হয়। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে বেড পাওয়া, প্রয়োজনীয় ওষধ পাওয়া, সময় মত ডাক্তার পাওয়া, নার্সের আন্তরিক সেবা পাওয়া, এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া সবই যেন এখানে দুর্লভ ব্যাপার।তারপরেও অনেক আশা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা বাধ্য হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। যাদের পকেটে পয়সা রয়েছে তারা যান স্থানীয় নামীদামি কোন ক্লিনিকে। পয়সার বিনিময়ে সেবা কিনে নিয়ে তারা খুব সহজেই বাড়িতে ফিরতে পারেন। কিন্তু যাদের পয়সা নেই তারা কিছুটা বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং স্বাস্থ্য সেবা ও নিজের ভাগ্য সপে দেন আল্লাহর উপর। অন্যদিকে, নতুন এই হাসপাতালের অবকাঠামোগত নির্মাণের কিছু ত্রুটি থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে রোগীসহ এখানকার ডাক্তার এবং নার্সদের।একটি সূত্র থেকে জানা যায়, তারেক রহমান সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালের অনুকরণে এই হাসপাতাল করতে গিয়ে আমাদের দেশীয় সুবিধার দিকে নজর না দেয়ায় নির্মানের অবকাঠামোগত ভুলের কারণে অনেককেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রোগীদের জন্য হাই কমোড ল্যাট্রিন, হাসপাতাল প্রশাসনের জন্য সুবিধা অনুযায়ী বসার স্থান না থাকা, নার্সদের পর্যবেক্ষণ রুম বা ওয়েটিং রুম সুবিধা অনুযায়ী না হওয়া, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনে বাধাগ্রস্থ হওয়া সহ নানাবিধ অসুবিধার কথা জানালেন হাসপাতালে উপ-পরিচালক। তিনি বলেন, তখন প্রকল্প পরিচালক অথবা সংশ্লিষ্টরা যদি বিল্ডিং নির্মানের ব্যাপারে দেশীয় উপযোগি সুবিধার কথা চিন্তা করতেন তবে টাকার অনেক সাশ্রয়সহ হাসপাতালের বিল্ডিংটি আরও অধিকতর ব্যবহার উপযোগি হতো। মাত্র ৪ বছর বয়সে শজিমেক হাসপাতাল বর্তমানে শিশু অবস্থায় থাকায় তার সৌন্দর্য এবং উপযোগিতার কোন কমতি খুব একটা চোখে না পরলেও অদূর ভবিষ্যতে এর উৎকর্ষতা এবং সেবার মান নিয়ে যে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠতে পারে বর্তমান অবস্থা দেখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
©somewhere in net ltd.