![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন সন্তান। একজন ভাই। একজন বন্ধু। একজন স্বামী। একজন বাবা। একজন মানুষ।
বিকাল ৫ টা ১০ মিনিট শেষে ঘড়ির কাটা ১১ মিনিটের দিকে এগুচ্ছে । অনিক তার নিজ কক্ষে দামি বিছানার উপর বসে আছে । বসে আছে বললে ভুল হবে,শুয়ে-বসে আছে। দশম শ্রেনী পড়ুইয়া আধুনিক ছেলে,টেক্সস্ট বুকের চেয়ে ফেসবুকে ইন্টারেস্ট বেশি । হাতে বোতাম হীন দামি ডিভাইস । স্ক্রিনে স্পর্স করেই সব কাজ করা যায় । যদিও প্রতিদিন একবার হলেও অনিকের মা এসে দেখে যায় অনিক কি করছে,তবে আজ আসেনি । কেন আসেনি এ নিয়ে অনিকের মাথা ব্যাথা নেই ।
হঠাৎ চিৎকার রহিমা খালার............
আম্মাগো......(কাজের বুয়ারা ধনি গৃহকর্ত্রীদের আম্মা ছাড়া মনেহয় আর কিছু ডাকতে শিখেনি)
অনিক ছুটে গেলো তার মায়ের রুমে । নিশ্চুপ,চোখ বন্ধ মাকে দেখে হাতের ডিভাইসটা কোন মতে পকেটে রেখে এক হাত মায়ের কপালে রেখে আরেক হাতে নিশ্বাস পরিক্ষা করলো । নিশ্বাস নিচ্ছে । রহিমা খালার দিকে ফিরে,
-কি হয়েছে রহিমা খালা ? (রহিমা অনিকের মাকে আম্মা ডাকে,তবে অনিক কেন রহিমাকে খালা ডাকে তা আমার জানা নেই)
_জানিনা ছোট আব্বা । (রহিমা অনিকের মাকে ডাকে আম্মা,তবে কেন অনিককে ছোট আব্বা ডাকে তাও আমার জানা নেই)
কথা বাড়াচ্ছে রহিমা খালা ,
-আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দিতে বলল । দিলাম । হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে মুখে সামান্য পানি নিলো আর এক মুঠো ঔষধ গিলে ফেললো । সাথে সাথে বিছানায় হেলে পরলো । এই যে ঔষধের পাতা ।
অনিক হাত বাড়িয়ে ঔষধের পাতা নিয়ে দেখলো দামি ঘুমের ট্যাবলেট । অনিক দামি ঘুমের ট্যাবলেট চিনে । ডাক্তার তাকে একবার প্রেসক্রাইব করেছিলো ।
দড়জার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আবির । আবির অনিকের বড় ভাই । বয়সে ৫ বছরের বড় হলেও লেখা পড়ায় অনিকের চেয়ে পিছিয়ে । কেমন জানি ঘুম ঘুম চোখে প্রশ্ন করলো,
-কি হয়েছে অনিক?
-আম্মু ঘুমের ঔষধ খেয়েছে ৮/১০ টা । আসছ ভালোই হলো,ধরো আম্মুকে হসপিটালে নিয়ে যাই ।
পারবোনা বলে চলে গেলো আবির । এদিক ওদিক না দেখে অনিক রহিমা খালা কে বললো ধরো । অনিক আর রহিমা খালা কোন মতে ধরাধরি করে অনিকের মাকে মুল দড়জার সামনে নিয়ে এলো । চিৎকার করে বলতে লাগলো “আবদুল চাচা,গাড়ি বের করো,আম্মুকে হসপিটালে নিতে হবে”
ধনিদের আবদুল চাচারা মনেহয় রেডিই থাকে । সাথে সাথে গাড়িয়ে নিয়ে হাজির ।
গাড়ি কিছু দূর যেতেই অনিক রহিমা খালাকে প্রশ্ন করলো,
-আম্মু এমন করলো কেন বলতে পারবে রহিমা খালা ?
-জানিনা......(রহিমা খালা যে কোন প্রশে আগে জানিনা উত্তর দিবে,এটা তার মুদ্রা দোষ বলা যায়) । তবে গত রাতে বড় আব্বা আবিরের সাথে কথা কাটাকাটি করতে শুনেছি ।
-কি নিয়ে ?
-বড় আব্বা নাকি কি এক ট্যাবলেট খেয়েছে । দামি ট্যাবলেট । কাগজে মোড়ানো । একটু একটু লাল রং এর ট্যাবলেট । কাগজে নাকি আরেকটা ছিলো,ঐটা সবুজ ।
অনিক জানে তার ভাই রং-বে-রং এর ট্যাবলেট খায় । এ-ও জানে ঐ ট্যাবলেটের দাম কেমন । কেনার টাকাটাই বা কোথায় পায় । সকালে দামি ফোনটা নিয়ে বের হয়ে বিকালে ফিরে এসে যখন বলে ফোনটা হারিয়ে ফেলেছে,তখন কম বেশ সবাই বুঝে ফোনটা কিভাবে হারিয়েছে । মায়ের দামি লকেটটা খুজে না পেলে কম বেশ সবাই বুঝে সেটা কোথায় গায়েব হয়েছে । বাবার মানি ব্যাগের টাকার হিসাবতো বাবা কখনই রাখে না । অনিকের এখন এত কিছু চিন্তা করার সময় নেই । সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার বাবার নাম্বার খুজে বের করছে,ব্যস্ত বাবাকে শেষ বার কবে ফোন দিয়েছে তা এক প্রকার ভুলেই গেছে সে । বড় অফিসের বড় পদের কর্মচারী অমিত সাহেব বড্ড ব্যস্ত থাকেন বড় বড় ফাইল নিয়ে ।
-হ্যালো আব্বু...
_হ্যা অনিক বলো ।
-আম্মুকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্চি । ম্যা বি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে ৮/১০ টা ।
ওপাশ থেকে কোন শব্দ আসছে না । কান থেকে মোবাইল সামনে এনে দেখে লাইন কেটে দিয়েছে তার বাবা । আজ সম্ভবত অমিত সাহেবের ব্যস্ততা কম । তাই ফোনে সময় নষ্ট না করে হসপিটালের দিকে রওনা দিয়েছেন ।
হাসপাতালে গাড়ি পৌঁছেছে । অনিকের মায়ের গাঁ আগের চেয়ে অনেক ঠান্ডা । গাড়িতে এসি চলছিলো তাই হয়তো । প্রাইভেট হাসপাতাল । রোগী দেখেই ডাক্তার নার্স ছুটে এলো । একটা রুমের বেডে রেখেই তৎক্ষনাত চেকাপ শুরু করলো । খুব একটা চেকাপও করতে হয়নি । সিনিয়ার ডাক্তার জুনিয়ার ডাক্তার আর নার্সের দিকে তাকাচ্ছে । হয়তো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে চেকাপের খবরটা বাহিরে রোগীর লোকদের কে জানাবে । একজন নার্স বের হয়ে অনিকের সামনে এসে দাড়ালো । আদুরে হাতে অনিকের দু বাহু ধরে নরম কন্ঠে বললো “উই আর সরি,ইউর মাদার ইজ নো মোর”
> অনিক কাদবে নাকি মোবাইলটা নিয়ে আব্বুকে আবার ফোন দিবে ভেবে পাচ্ছিলো না ।
> রহিমা খালা আম্মাগোর বদলে আল্লাগো বলে চিৎকার করে উঠলো ।
> অমিত সাহেব হয়তো রাস্তায়,হাসপাতাল মুখি ।
> আবির হয়তো তার রুমে ঘুমের রেস কাটানোর চেষ্টা করছে । ট্যাবলেট টা যে দামিই ছিলো ।
©somewhere in net ltd.