![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেলফিস শব্দটি আমাদের কাছে খুবই পরিচিত । সেলফিস ইংরেজি শব্দ হলেও বর্তমান সময়ে এটি বাংলা ভাষার শব্দ হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে । কারন আমরা কেউ কখনো ডিকশনারি খুলি আর না খুলি সেলফিস শব্দের ব্যবহারগত অর্থটা খুব ভালোভাবেই জানি । তাই তো ?
আমার চোখের সামনে যখন একটি পাঁচ বছরের বাচ্চা অন্য একটি বাচ্চাকে আইসক্রিম না দেওয়ার জন্য শুনতে হয় সেলফিস । তখন আমার হাত আমার মাথাই গিয়ে পড়ে ।
আসলে কি বাচ্চাটি জানতো সেলফিস শব্দের অর্থটি কি ?
জানতো না ।
তাহলে কি ভাবে আর কোথা থেকে পেল এই শব্দটি ?
পেয়েছে এ মূর্খ সমাজ ব্যবস্থা থেকে । যেখানে খারাপকে খারাপ হিসেবেই দেখা হয় । ভাল করা তো দুরের কথা । নেতিবাচককে কিছু সময়ের জন্য ইতিবাচক ভাবাটাও তাদের কাছে কষ্টসাধ্য ।
যা হোক আমার কাছে স্বার্থপর শব্দটির দুইটি দিক রয়েছে । খারাপ দিক বা নেতিবাচক দিক আর ভালো দিক বা ইতিবাচক দিক । আমরা সকলেই এর খারাপ দিক বা নেতিবাচক দিকটি জানি যেমন__
অন্যকে সাহায্য না করা, পরের উপকারে না আসা, ইত্যাদি ইত্যাদি । আর এগুলো না করার জন্য একটা মানুষের বাবা মার দেয়া আকিকা করা নামের পূর্বে খুব সুন্দর করে স্বার্থপর শব্দটি বসিয়ে দেয় ।
এভাবেই সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ তাকে নিয়ে সমালোচনা করতে থাকে, “ও তো বড়ই স্বার্থপর !”
আর এভাবেই তাকে সমাজের চোখে, চোরের মত বসবাস করতে হয় ।
আসলেই কি ও স্বার্থপর ?
তাহলে স্বার্থপর শব্দটির ভালো বা ইতিবাচক দিকটি কি ?
যেখানে সে স্বার্থপর হয়েই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ।
আর কেনই বা তার ভাল বা ইতিবাচক দিকটা আমরা জানি না ?
সত্যি বলতে কি, হাজারো ভাল গুন থাকার পরেও কারো মধ্যে যদি কিঞ্চিত পরিমাণ খারাপ গুন দেখা দেয় তাহলে তার ভাল গুনগুলোকে আর আমরা গ্রহণ করতে পারি না । আর এটাও এক ধরনের স্বার্থপরতা ।
স্বার্থপরতার ভাল দিকটি বিবেচনা করার জন্য দুটি জিনিস চলে আসে; সফলতা ও সার্থকতা ।
আমরা সকলেই ব্যক্তিজীবনে সফলতা চাই । কিন্তু কইজন-ই বা সফলতার দরজায় গিয়ে পৌঁছাই ।
সফলতার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কেউ অক্ষম, কেউবা বৃদ্ধ কিংবা কেউ মরে গিয়ে প্রেতাত্মায় পরিণত হয় ।
আর এর মুল কারন হল আত্মিক স্বার্থপরতার অভাব । “দোষ মুক্ত স্বার্থপরতা মানব কল্যাণকর ।”
যারা জীবনে সফলতার দরজায় গিয়ে কড়া নেড়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য এটি ছিল একটি চমৎকার পন্থা । কারন স্বার্থপরতাই হল জীবনকে প্রতিষ্ঠা করার প্রথম কৌশল । নিজেকে টিকিয়ে রাখতে যেমন খাবারের প্রয়োজন, খাবার দান করে নয় ।
শ্রদ্ধেয় স্যার মোতাহের হোসেন চৌধুরী তার ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থের “জীবন ও বৃক্ষ” প্রবন্ধে বলেছেন ;
“বৃক্ষের ফুল ফোটানোর দিকে তাকালে জিবনের সার্থকতা খুজে পাওয়া যায় ।” কিন্তু বৃক্ষকে তার ফুল ফোঁটাতে হলে যে তাকে টিকে থাকতে হবে তা তিনি তার প্রবন্ধে অপরিপূর্ণ রেখে দিয়েছেন । নিজেকে শেষ করে দিয়ে অন্যকে সাহায্য করাই কি সার্থকতা । না নিজেকে টিকিয়ে রেখে সফলতার দরজায় কড়া নাড়ায় সার্থকতা । আমার মতে ; যারা নিজেকে শেষ করে দিয়ে অন্যকে সাহায্য করে তারা হল ব্যক্তি প্রতারক, ভীতু আর কাপুরুষ । তারা সমাজের চোখে নিজেকে অনেক বড় অভিনেতা ভাবতে চাই । কিন্তু নিঃশেষ বন্ধ হয়ে গেলে তো আর ভাবা যাই না । অর্থাৎ “যে নিজেকে ভালোবাসতে জানে না সে কখনো অন্যকে ভালোবাসতে পারে না ।” তাই সার্থকতা যদি আসে সফলতা থেকে, তাহলে ঠিক তেমনি সফলতাও আসে স্বার্থপরতা থেকে । নিজেকে টিকিয়ে রেখে সফলতার পথে হাঁটতে প্রয়োজন স্বার্থপরতা । যা মানুষের এটি একটি প্রকৃত ইতিবাচক দিক ।
স্বার্থপরতা শুধু নিজের অস্তিত্বকেই নয়, নিজের কল্পনা শক্তিকেউ টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে । যদি কল্পনার সাথে বিবেচনা করি___
তাহলে ভাবি, আমি আমার রাজ্যের রাজা । আমি চাইলেই যুদ্ধ করে অন্যের রাজ্য ছিনিয়ে নিতে পারি । কিন্তু কখনো যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হয়ে নিজের রাজ্য হারাতে চাই না । কারন রাজ্য হারালেই আমি নিঃস্ব ।
আর নিঃস্ব রাজাকে কেউ সম্মান করা তো দুরের কথা রাজ্যের প্রতিটি মানুষই আমাকে পচা খাবারের ন্যায় ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিবে । আর এভাবেই আমার কল্পনার সমাপ্তি ঘটবে । আমরা বাস্তবে কোন কিছু না পেলেও কল্পনার মাধ্যমে সেটা পাওয়ার চেষ্টা করি । আমি সহ অনেকেই চারদেয়ালের মাঝে বন্দি থেকেও আবদ্ধ ঘরটাকে একটা রাজ্য ভাবতে পারি । আমি চাইলেই আমার রাজ্য হারাতে পারি না । আমার কল্পানাই চাই আমাকেই বার বার আমার রাজ্যের রাজা বানাতে । তাই কল্পনাতেও নিজেকে টিকিয়ে রাখতে স্বার্থপরতার প্রয়োজন ।
আয়নায় নিজেকে দেখার পর কেউ যদি নিজেকে সুন্দর না ভাবতে পারে তাহলে তার এমন প্রত্যাশা না হওয়া উচিত যে, তাকে অন্য কেউ সুন্দর বলবে । আর নিজকে সুন্দর ভাবার জন্য কেউ যদি আমায় স্বার্থপর ভাবে তাহলে ভাবুক । কারন আমাকে সুন্দর ভাবার জন্য আমি কাউকে অত্যাচার করছি না আর কারো প্রতি অন্যায়ও করছি না ।
আমাদের নিজেকে সার্থকতার দরজায় কড়া নাড়তে, সফলতার রাস্তাই হাঁটতে দোষমুক্ত স্বার্থপরতার যে কোন পথ অবলম্বন করা উচিত ।
“সফলতা আসবেই,
সার্থকতা প্রকাশ পাবেই ।।”
©somewhere in net ltd.