নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখাটাকে গল্পের আকার দিতে কিছু দৃষ্টিকটু শব্দ ও বাক্যের ব্যবহারের জন্য আগেভাগেই হ্মমা চেয়ে রাখছি।
ঃ দোস্ত জোস্ একটা খবর আছে।
ঃ কি?
ঃ নাতাশার সাথে ডেটিং এ গেছিলাম। আর কইস না। যা একখান জিনিস না রে। পুরাই পাংঙ্খা।
হাসানের কথা শুনে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেল্লাম। আমাকে হা করে থাকতে দেখে ও আবার বললো-
ঃ তুই কষ্ট নিস না। দাঁড়া তোরও একটা ব্যবস্থা কইরা দিবানি।
ঃ কি ব্যবস্থা?
ঃ ওর সেই মাপের একটা ছোট্ট বইন আছে। ওর লগে তোর ফিটিং করাইয়া দিমুনে। মাইয়া ছোট তয় ওইডাও সেইরাম।
লজ্জায় রাগে ঘৃণায় আমি তাকিয়ে রইলাম আমার রুমমেটের দিকে। একটা মানুষ কতটা বিবেক বর্জিত হতে পারে, একটা মানুষের মাঝের পশুটা কতটা ঘৃণ্য হতে পারে। তা অামার কল্পনারও অতীত ছিল। আমি কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। মুখ লুকানো সূর্যটাকে নিজের প্রতিরূপ মনে হচ্ছিল। অন্ধকার হয়ে এসেছে। আকাশের বুকে সদ্য উঁকি দেওয়া চাঁদটা যেন ধিক্কার দিচ্ছে।
কিন্তু কাকে?
আমায়?
নাকি আমার বন্ধু হাসানকে?
নাকি এই পঙ্গু অথর্ব সমাজ ব্যবস্থাকে। যেখানে নারীরা পায় না তাদের প্রাপ্য সম্মান। সর্বস্য বিলিয়ে যেখানে যোগাড় করতে হয় বাঁচার প্রথম শর্ত 'অন্ন'।
ভাবতে ভাবতে রাসেল মামার চায়ের দোকানের সামনে চলে এলাম। দোকানে ঢুকতেই নিরু এগিয়ে এসে বললো-
ঃ আবীর ভাই কেমুন আছেন? হাসান ভাই আয় নাই? আফনেরে এমন লাগতেছে ক্যান? কি হইছে?
আমি নিরুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। রং চটা ফিকে হয়ে যাওয়া একটা ফ্রকে মায়াময় মুখে বিস্তর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।
আর কয়েক বছর পর হয়তোবা এখন থেকেই ছোট্ট কোমলমনা এই মেয়েটির দিকে হাসানের মতো কতশত নির্লজ্জ পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি নিহ্মেপিত হয় ভেবেই বুকটা ভারী হয়ে গেল।
ঃ ভাইয়া। চা লন।
চিন্তায় ছেদ পড়ল নিরুর ডাকে। চোখ নামিয়ে নিলাম। চা এর কাপ হাতে অন্ধকারে নিজেকে খুঁজে পেতে চাইছিলাম।
কিন্তু চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের সাথে আহা উহু শব্দে মনোযোগ চলে গেল রাসেল মামার খুপরির অন্ধকারময় বেঞ্চটার উপর। আলো আধারিতে এক যুগল প্রেমিক প্রেমিকার একান্তে কাটানো কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত। উষ্ণ আলিঙ্গন। প্রেমিকের হাতের আঙ্গুলের গতিময়তা। প্রেমিকার শরীরের নিষিদ্ধ গোপণ জায়গা গুলো ছুঁয়ে যাওয়া। উত্তেজনায় কাঁপতে থাকা দু'জোড়া ঠোঁটের একাত্ম ঘোষণা।
আর বসলাম না। নিরুর হাতে চায়ের দাম দিয়েই বেরিয়ে আসলাম। পেছন থেকে নিরুর চিৎকার
ঃ ভাইয়া, চা খাইলেন না যে?
আমি পেছনে ফিরে চাইলাম। নিরু দাঁড়িয়ে আছে। মায়াময় মলিনতার দুটি চোখ। বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। না প্রেম বা ভালোবাসা নয়। তবে করুনাও নয়।
হেঁটে চলেছি সোডিয়ামের হলুদ আলোয়। নিজের ছায়াকে সঙ্গী করে নহ্মত্রের মাঝে পথ খুঁজে নিচ্ছিলাম। কিছুদূর যেতেই ফার্মগেটের কাছাকাছি একটা ল্যাম্পোস্টের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা এক অল্পবয়সী মেয়ের সাথে আঁধবয়সী এক রিক্সাচালকের দরকষাকষি আমার দৃষ্টি কাঁড়ে। মেয়েটির মুখে পুরু মেকআপের আস্তরণ আর ঠোঁটে কড়া লাল লিপিস্টিক। বুঝতে সমস্যা হয় না যে মেয়েটি পতিতা। হাই সোসাইটির কাছে প্রস্টিটিউট আর এই রিক্সাওয়ালাদের কাছে শুধুই একটা মাংসপিন্ড। অল্প কিছু নোটের বিনিময়ে কিনে নেওয়া একটা শরীর বৈকি আর কিছু নয়।
মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হতেই মেয়েটি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে চোখ নামিয়ে নিল। নিজের মনেই হেসে উঠি। আর দেরী না করে সরে পড়ি ওখান থেকে। একটা মেয়ের শরীর কেনাবেচার দৃশ্য দৃষ্টির অগোচরে হওয়াই ভালো।
বেশ রাত হয়েছে। চাঁদ মামা যে কখন মাথার উপর উঠে এসেছে খেয়ালই করি নি। কিন্তু হোস্টেলেও ফিরতে মন চাইছে না। হাসানের কথা মনে পড়তেই ঘৃণায় মগজটা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ভাবলাম আরও কিছুহ্মণ হাঁটাহাঁটি করি। হাঁটতে হাঁটতে কিছু চিন্তা মাথার মধ্যে নড়াচড়া করে উঠল। হাসান, নিরু, ঐ প্রেমিক যুগল, সোডিয়ামের আলোয় শরীর কেনাবেচা করা কথিত পতিতা। একদিকে প্রেমের সিল মোহরের অন্তরালে শরীরের হ্মুধা মেটানো। ভালোবাসার পবিত্রতার বর্মে আধুনিকতার নামে জনসম্মুখে অবলীলায় চলছে শরীর নিয়ে খেলা। অন্যদিকে পেটের হ্মুধার যন্ত্রণায় বেঁচে থাকার তাগিদে নিজের সম্ভ্রম বেচে দুবেলা খাবার জোগাত করা বস্তির ঐ মেয়েটি পতিতা। সমাজের চোখে নর্দমার কীট।
রিক্সায়, বাসে, ট্রামে, হোটেলে, পার্কে প্রেমিক প্রেমিকার খেতাবে চলছে বেহায়াপনা। শরীরকে তুলছে নিলামে। দামি দামি উপহারে অধুনা মেয়েরা বিকিয়ে দিচ্ছে নিজেদের। সমাজ এদের হাই সোসাইটির উপাধি দিয়েছে। এটাই নাকি যুগের সাথে তাল মেলানো।
আর বাঁচার তাগিদে শরীরকে জীবিকা বানানো পতিতাবৃত্তি। রাতের আধারে এদের প্রয়োজন থাকলেও দিনের আলোতে এরা অস্পৃশ্য। গন্ধময় নালায় এদের বাস।
হাসান!
হুম। হাসানই হচ্ছে আমাদের সমাজ। এরাই আধুনিকতা আর পতিতাবৃত্তির স্রষ্টা। নিয়ন্ত্রক। পৃষ্ঠপোষক। কখনো সুযোগ পেলে দেশকেও দাঁড় করিয়ে দেবে রাতের অন্ধকারে ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে। এরাই পূজনীয়। ধর্ষনের পর এরা পায় সংবর্ধনা। আমাদের গৌরবের সমাজ ব্যবস্থা।
আর ঐ চায়ের দোকানের নিরু হলো ভবিষ্যৎ। ধর্ষনের অপেক্ষায় প্রতিহ্মার প্রহর গুনছে। আর এই আমি হলাম জনগণ। নির্বাক দর্শক। প্রতিটা ঘটনার একমাত্র সাহ্মী। কিন্তু বলার হ্মমতা নেই, নেই প্রতিবাদের সাহস। সময় আজ অপেহ্মায় আছে আমার জেগে উঠার। আর আমিও জেগে উঠবো, শুধুই সঠিক সময়ের অপেহ্মায়।।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৫
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৬
নিলু বলেছেন: সময় পেরিয়ে যাচ্ছে যে ,
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৯
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ঠিকই বলেছেন।
সময়য় পেরিয়ে যাচ্ছে।
তাই এখনি করতে হবে যা করনীয়।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পাশে থাকবেন আশা রাখি।
৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০০
সুমন কর বলেছেন: পড়ে গেলাম।
শব্দ ব্যবহারে সর্তক হতে হবে।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৪
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই।
বিষয়টি মনে থাকবে।
৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৪৩
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: হাসানের মতো অমানুষরাই নারীদের ভোগ্য পণ্য বানিয়েছে। আবার তার মতো অমানুষরাই আমাদের সমাজপতি। সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এরাই সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। তাদের ছত্রছায়ায় ভালো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আমাদের মানবিক মূল্যবোধ জেগে না উঠলে, নৈতিকতার প্রশ্নে আমরা সচেতন হতে না পারলে নারীদের এই অবমূল্যায়ন আর ভোগ বিলাসের হাত থেকে আমরা তাদের রক্ষা করতে পারবো না। মহামারী আকারে ছড়ানোর আগেই আমাদের বিবেকের দরজা উন্মুক্ত করতে হবে।
কিছু ঘটনার চিত্রায়ন করেছেন লেখাটায়, যা আমাদের সমাজেরই বাস্তব চিত্র। সচেতনামুলক আপনার কথাগুলো বেশ ভালো হয়েছে। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো রাজপুত্র।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৫৯
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী বাঙালী।
আপনি যথার্থই বলেছেন।
কিন্তু আমাদের মানবিক মূল্যবোধগুলো বহু বছরের পুরনো কিছু কুসংস্কার ও অভহ্ময়ের হাতে বন্দী।
তাই নারীরা আজো কিছু কতিপয় চরিত্রহীন সমাজপতিদের হাতে লাঞ্চিত।
ভাল থাকবেন।
আপনার ভাল লাগা আমার কাছে অঅনুপ্রেরণার উৎস।
৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫১
ডরোথী সুমী বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে। বাস্তবে এমনই ঘটছে। শুভ কামনা রইলো।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: নির্দ্বিধায় একমত।
ব্লগে স্বাগতম এবং মন্তব্যে ভালো লাগা।
শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩২
তাহসান আহমেদ বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
বাস্তব কথা।