নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা বলি

আমি মানুষ

প্রত্যেক মানুষের বুকের ভিতরে একটা চাপা ব্যথা থাকে। সেটা বিভিন্ন রকমের হয়। কারো ভালবাসার জন্য, কারো বাবা - মায়ের জন্য, কারো অর্থের জন্য, কারো পড়াশুনার জন্য। কিন্তু একটা না একটা ব্যথা থাকবেই। তবুও মানুষ বেঁচে থাকে।

আমি মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে, শহীদমিনার ভেঙ্গে কি বোঝাতে চাইছেন?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩১

ভেবেছিলাম শাহবাগ নিয়ে আর কোন লেখা লিখবনা। কারন এই লিখতে যেয়ে অনেকের সাথে মনোমালিন্যের সূত্রপাত হচ্ছে। কিন্তু আজ খবরে যা দেখলাম তাতে ভাবলাম আমার অভিজ্ঞতার কিছু শেয়ার করি। আমি এমন কোন বুদ্ধিজীবি বা বড় কিছু না। হয়তো আমার লেখা কেউ পড়বে না। কিন্তু কেউ পড়ে যদি উপকৃত হয় তবেই লেখা সার্থক হবে।



আমি তখন ৭/৮ এ পড়ি।মসজিদে যেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। এলাকার সবচেয়ে ভালো স্কুল ক্যান্টনমেন্টে পড়ি। একদিন আমার এক বন্ধু বল্লো নামাজের পর আলোচনা হবে, থাকিস। আমার বন্ধু আমার চেয়ে ভালো ছাত্র ছিলো। সে পড়াশুনায় আমাকে অনেক সাহায্য করতো। তো তার কথা শুনে থেকে গেলাম। পরে দেখলাম সেটা শিবিরের একটা প্রোগ্রাম হচ্ছে। ভালোই ইসলামের কথা বল্লো, কথা শেষে মুনাজাত হলো। কিছু বই দিলো পড়ার জন্য। এভাবে কয়েক দিন গেলো। একদিন এক বড় ভাইয়ের বাসায় সবাইকে ডাকলো। ওখানে যেয়ে শুনলাম কমিটি গঠন হচ্ছে। মজার ঘটনা আমার বন্ধু হলো সভাপতি। সে আমাকে বানালো সেক্রেটারি। তখন নিজেকে সেক্রেটারি ভাবতেই ভালো লাগছিলো। ৭/৮ এর ছেলে আমি একটা সংগঠনের সেক্রেটারি। বলে রাখি বড় ভাইয়ের কথামতো আমার বাসায় কেউ কিছু জানতো না। সেই সময় নির্বাচন আসলো। সেক্রেটারি হিসাবে আমার কাছে প্রচারের জন্য পোষ্টার-ব্যানার আসে। চাঁদাতুলি জামাতের লোকের কাছে। মনে আছে আমাদের মসজিদের ঈমামের কাছে চাঁদা তুলতে গেলে উনি আমাকে উৎসাহিত করে। ততদিনে আমার বাবার কাছে কিছু কিছু খবর পৌছেছে। বাবা একদিন বকাবকি করলো। কে শোনে কার কথা।



ভোটেরদিন আসলো। এবারতো আর লুকিয়ে থাকা সম্ভব না। আমি হলাম পোলিংএজেন্ট। আমার নিজের তখনো ভোট হয়নি। ঐ দিন বাবা আমাকে সরা সরি দেখলো। বাসায় এসে বকাবকি করলো। আমি ছিলাম আমার পাড়ার সবচেয়ে ভালো ছেলে। এক দিনে সবাই বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করলো। এর মাঝে আমাদের মসজিদে বসা নিয়ে গন্ডোগোল শুরু হলো। মসজিদ কমিটি ঈমাম সাহেবকে বল্লো আমাদের জানিয়ে দিতে আমরা যেনো মসজিদে আলোচনা সভা না করি। আগেই বলেছি ঈমাম সাহেব সরা সরি জামাত করতেন। শুধু এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন বলে শিবিরের বড় ভাইয়েরা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।



উনি একদিন আমাকে ডেকে বল্লেন বাবা ভালো কিছু করতে হলে এসব বাদ দিয়ে পড়াশুনা করো আর আল্লাহকে ডাকো। এর মাঝে শিবির থেকে জুডো কারাত শেখানোর কথা বলা হয়। বলা হয় হাতের কাছে লাঠি রাখতে যাতে কেউ আক্রমন করলে প্রতিহত করা যায়। হুজুরের কথা, বাবার কথা মিলে যায়। এর আগে পর্যন্ত আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ছিলো এলাকার মধ্যে। এরপর বাবা পেপার রাখা শুরু করলে শিবিরের নিষ্ঠুরতার চিত্র একে একে প্রকাশ পেতে থাকে। সেসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ছিলো জামাত-শিবিরের মূল ঘাটি। তারা মানুষ খুন করতো আর বড় ভাইয়েরা বলতো কাফের খুন করা হয়েছে। হল দখল করতে যেয়ে তাদের কেউ মারাগেলে বলা হতো শহীদ হয়েছে।



এসব দেখে একসময় শিবিরের প্রতি আমার ভাললাগা কমতে থাকে। এর মাঝে এসএসসি পরীক্ষা চলে আসে। আমি পড়াশুনায় ব্যস্ত হয়ে যাই। আস্তে আস্তে এসবের ভিতরে থেকে বের হয়ে আসি। আমার মনে আছে আমি যেদিন এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাই আমার পাড়ার না হলেও ৫০ জন আমাকে বিদায় দিতে এসেছিলো। মনে হচ্ছিলো যুদ্ধে যাচ্ছি। অনেকে নিজের ছেলেকে বিদায় দিয়ে আমাকে বিদায় দিতে এসেছিলো। প্রত্যেকেই আমার হাতে ২০/৩০ টাকা গুঁজে দিয়ে দোয়া করছিলো। তাদের ভালোবাসা আবার ফিরে পেয়েছি দেখে ভালো লাগে। তখনকার মানুষ গুলোর মদ্ধে যে আবেগ সেগুলো এখন কোথায় গেছে?



সত্যি আজ খবর দেখে আমার ভয় লেগেছে। আমি না হয় বাইরে থাকি দেশেতো আমর বাবা-মা, আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আছে। দেশ কি গৃহ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে।

আমাদের দেশতো মুসলিম দেশ। ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ১২ কোটি মানুষই মুসলমান। এই ১২ কোটি মানুষের মধ্যে নিশ্চয় ১ কোটির বেশী মানুষ নাস্তিক নেই। তো শাহবাগে যদি নাস্তিকরাই থাকে তো আপনি যেয়েন না। ওখানে তারা কি করলো তাতে আপনার কি? আরযদি মানুষ মনে করে তারা ভালো কিছু করছে তবে আপনি তাদের আটকিয়ে রাখতে পারবেন না। আমি ২/১ দিন মানুষকে বলতে গেছি যার যার কাজ তাকে করতে দিন। এতেই আমি নাস্তিক হয়ে গেছি। কে কি বল্লো এতে আমার যায় আসেনা। আমার ঈমান সম্পর্কে জ্ঞান আমার কাছে আছে। এর ছবির সাথে তার মাথা লাগিয়ে যেসব ছবি প্রচার হচ্ছে তা কি খুব ভালো কিছু? এক দল আরেক দলকে গালাগালি করছে, এই কি ইসলামের শিক্ষা?নিজেরাই নিজেদের বোন কে গালি দিয়ে বলছেন শাহবাগে যেসব মেয়েরা গেছে তারা বেশ্যা। তারা তো আপনাদেরই বোন। ধরেনিলাম তারা অসৎ সঙ্গে পড়েছে। তাদের কি বেশ্যা বলতে পারেন? জেনে রাখেন কোন মুসলমানকে গালিদেয়া ফাসেকী, আর খুন করা কুফরী। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেই আল্লাহর সানিধ্য পাওয়া যায়না। আগে ঈমান ঠিক রাখতে হয়।

অনেকেই বলছে এতা কিছু থাকতে রাজাকারের বিচার কেনো করতে হবে? রাজাকারের বিচার করতে হবে কারন এতো দিন করা সম্ভব হয়নি। যারা ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনের সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তাদের বিচার তো হওয়াই উচিত। এটা যেকোন সভ্য মানুষকে জিজ্ঞাসা করলেই সে বলবে। আজকে সাঈদিকে নিয়ে লাফালাফি। গোলাম আজমের কথা কেন বলেন না। কারন গোলাম আজম যে রাজাকার ছিলো তা নিজ মুখে স্বীকার করেছে। শাহবাগে যারা গত ১৭ দিন ধরে আন্দোলন করলো তারা আস্তিক হোক আর নাস্তিক হোক তারাতো ১৭ দিনে একটাও গাড়ী ভাঙলো না, পুলিশ মারলো না বা গোলাগুলি করলোনা। আর জামাত শিবির একদিনেই মানুষও মেরে ফেল্লো। তাহলে মানুষের রায় কোন দিকে যাবে এটা জামাত-শিবিরের ভেবে দেখা উচিত। আর তাদের কারনে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা উঠছে। কেউতো বলছে না তাবলীগ জামাত নিষিদ্ধ করো। কয়দিন আগে বিশ্ব ইজতেমা হয়ে গেলো। কই তাদেরতো গাড়ী ভাঙচুর করা লাগেনি।

জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে, শহীদমিনার ভেঙ্গে কি বোঝাতে চাইছেন? আবার সেই সমীকরনে আসি। আপনাদের সংখ্যাও হয়তো ১ কোটি। ১৫ কোটি মানুষের দেশে ১৪ কোটি মানুষ নিশ্চয় আপনাদের ১ কোটি মানুষের চেয়ে কম বোঝেনা। তারা রাস্তায় নামলে আপনারা কোথায় যাবেন?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৩

রাজ৩৩৩ বলেছেন: ভাই খুব ভালো লিখছেন.........সহমত

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪১

আমি মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৯

কলাবাগান১ বলেছেন: শাহবাগে যারা গত ১৭ দিন ধরে আন্দোলন করলো তারা আস্তিক হোক আর নাস্তিক হোক তারাতো ১৭ দিনে একটাও গাড়ী ভাঙলো না, পুলিশ মারলো না বা গোলাগুলি করলোনা।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪১

আমি মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.