![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা নির্দিষ্ট ভালবাসা ছিল,তা হারিয়ে ফেলেছি।এখন আর কোন কিছুর প্রতি ভালবাসা মনে জাগে না।
দুটি তরুণ বয়সের নরনারী হয়তো খানিকটা মৌখিকভাবে পরিচিত হয়ে অথবা একেবারেই অপরিচিত হয়ে মিলেছে ও সমাজের অনুমতিক্রমে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়ে প্রথম রাত্রিতে এক নিভৃত ঘরের মধ্যে দুজনে এক বিছানাতে শুয়ে রাত্রি কাটাবার ছাড়পত্র পেয়েছে। এরই নাম ফুলশয্যা। দুজনেই মনে মনে জানে যে ওদের মধ্যে কোন সম্পর্কটি দাঁড়ালো, আর এও তারা জানে যে আজ থেকে সেই সম্পর্কটি সারা জীবন বজায় থাকলো। কিন্তু আজই প্রথমে কেমন করে যে সেই সম্পর্কের গোড়াকার পত্তনটি শুরু করতে হবে, কেমন করে সেই দিক দিয়ে আলাপটি আরম্ভ করতে হবে, সে সম্বন্ধে কেউই কিছু জানে না। ঐ একটি রাত্রি তাই প্রত্যেক দম্পতির পক্ষে মহা সমস্যার রাত্রি।
পৃথিবীর সকল দেশেই আছে এই ফুলশয্যার রাত্রি। আচারে আচরণে অনেক রকমের তফাৎ থাকতে পারে, কিন্তু বিবাহিত প্রত্যেক নরনারীকেই প্রথম মিলনের এই শুভ রাত্রিটি অনিশ্চিত ভাবে যাপন করতে হয়। যাদের কোর্টশিপ হয়ে বিয়ে হয়েছে তাদের অবশ্য আগেকার আলাপটা ঝালানো থাকে, যাদের তা হয়নি তাদের কোনো আলাপই নেই। কিন্তু কোর্টশিপ হলেও তার অর্থ মাত্রই খানিকটা কাব্যময় ভালোবাসা, কল্পনা বিলাসের কিছু আদান প্রদান, আর হয়তো কিছু কিছু পূর্বরাগের সূচনা। বাস্তবের দিক দিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেই। অন্ততপক্ষে সাধারণ ভাবে এই কথাই ধরে নিতে হবে।
এরা কী করবে? কেমন ভাবে আলাপ শুরু করবে? হয়তো স্বামীই আপন অধিকারের দাবীতে প্রথম কিছু প্রস্তাবনা করবে। কিন্তু গোড়া থেকেই তার মনে রাখা চাই যে তার স্ত্রী নিতান্ত কাঠের পুতুল নয়। ওর সঙ্গে এক ঘরে শোবার অধিকার পেয়েছে বলেই যে ওর গায়ে হাত দেবারও অধিকার রয়েছে, গোড়াতে এমনও মনে করা ঠিক নয়। প্রত্যেক অধিকারটি আগে অর্জন করা চাই। সেই হিসাবে গোড়া থেকেই তাকে নতুন ধরনের কোর্টশিপ শুরু করতে হবে। প্রথম বাক্যটি থেকেই নিজের একটা আন্তরিকতা দেখাতে হবে। আমাকে তোমার পছন্দ হলো কিনা, বাপের বাড়ির জন্য মন কেমন করছে কিনা, এই সব ছেলেমানুষি প্রশ্ন এখনকার দিনে হাস্যকর।
আমরা গোড়াতেই অনেক ভুল করি। প্রথম কথা, বিয়ে করতে যাবার সময় সেই যে প্রাচীন প্রথানুযায়ী বলা হয় “দাসী আনতে যাচ্ছি”, তারই অহস্কারটা কোনো কোনো নতুন স্বামীদের মনে এখনও বিশেষভাবে ক্রিয়া করতে থাকে। তারা এটুকু একবারও ভেবে দেখেনা যে স্ত্রীকে ঘরে আনা মাত্রই তাকে দাসী করা সেকালে হয়তো চলতো, কিন্তু একালে নয়। স্ত্রী দাসীও হতে পারে, ক্রীতদাসীও হতে পারে, কিন্তু সেটা তার স্বেচ্ছাতেই হবে। কারো দাবীতে নয়। স্ত্রীকে স্বামীর বাধ্যই হতে হয়, কিন্তু সেটা স্বামীর অধিকারের জোরে নয়, সেটা সে পরে আপনিই হবে স্বামীর আন্তরিক ব্যবহারে।
এমনি ভাবেই স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম থেকে ব্যবহার করা চাই। কোনো কোনো স্বামী ফুলশয্যার রাত্রি থেকেই অধিকারের দাবীতে অনেক অত্যাচারও করে ফেলে। এটা হয় প্রায়ই তাদের অজ্ঞতাবশত। এইটুকুই কেবল্ব তাদের ধারণা রয়েছে যে আজ থেকে ঐ স্ত্রীর সঙ্গে আমার সঙ্গমের অধিকার পাকা হলো, অতএব আজই আমি তার ন্যায্য সুযোগ নিতে পারি। এখানে যে হৃদয়ের কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে, স্ত্রীকে আগে স্ত্রী-সম্পর্ক মানিয়ে নেবার প্রশ্ন থাকতে পারে, এই সহজ কথা তাদের মাথা ঢোকে না।
ভেবে দেখে না যে স্ত্রী কাছে এসে শুলেও তার হৃদয়টিকে আগে দখল করতে হবে।
একে তো অনিশ্চিতের ভয়ে তার বুকটা আপনা থেকেই দুরুদুরু করছে, তার উপরে স্বামী লোকটা যে কেমন এটুকুও বুঝে নেবার সময় না দিয়ে যদি একেবারেই সঙ্গমে প্রবৃত্ত হওয়া যায়, তবে সেটা হয়ে পড়ে নিছক বলাৎকার। স্ত্রীরূপে যে মেয়েটি চিরজীবনের স্থায়ী সঙ্গিনী হতে চলেছে, তার সঙ্গে প্রথম দিনই এমন বিবেচনাশূণ্য ব্যবহার করতে যাওয়া নিতান্তুই কাঁচা কাজ। এতে তার মন স্বামীর প্রতি চিরকালের জন্য বিমুখ হয়ে যায়। তারপর থেকে ভবিষ্যতে যদিও স্বামীর যেটুকুতে অধিকার আছে সেটুকু তাকে দিতেই হয়, কিন্তু দেয় সে নিতান্ত নির্লিপ্ত প্রাণহীন ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এমন একটা হৃদয়হীন সম্পর্ক দাঁড়িয়ে যেতে দেওয়া সব চেয়ে অনিষ্টকর। একটু বিবেচনার দ্বারা হৃদয়ের দিক দিয়ে গোড়াপত্তন করলেই এমন বিশ্রী অবস্থাটা ঘটতে পারে না। অথচ তেমন কৃতিত্ব থাকলে এক রাত্রিতেই একটি সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়েকে সম্পূর্ণ অন্তরঙ্গ করে নেওয়া যায়। আর কিছু নয়, গোড়া থেকেই তেমনি ভাবে আলাপ করতে হয়, এবং ধীরে ধীরে খুব সন্তর্পণে অগ্রসর হতে হয়।
আগেকার অধ্যায়ে যে পূর্বরাগ ও প্রস্ততির বিভিন্ন ধাপের কথা বলা হয়েছে, সে সমস্ত একটি রাত্রির মধ্যেই পার হওয়া সম্ভব, যদি আগে স্ত্রীর অন্তরটিকে তেমন সম্পূর্ণ রূপে জয় করে নেওয়া যায়। নারীর অন্তর যতই বিমুখ কিংবা যতই আড়ষ্ট হোক, আন্তরিক সহানুভূতিসূচক প্রেমের আহ্বানে তাকে সাড়া দিতেই হবে। তবে প্রেমের সেই মিষ্ট স্বরটি স্বামীর কন্ঠে ধ্বনিত হওয়া চাই, ব্যবহারে তার সাদর আবেদন থাকা চাই। প্রেম অতি দুর্লভ বস্তু, কিন্তু এমনি ভাবেই হৃদ্যতা দিয়ে তার সূচনা ঘটাতে হয়, তবেই সে প্রেম যথা সময়ে দুই দিক থেকে সত্য হয়ে উঠে। দেহযন্ত্রকে উপভোগ করবার অধিকার দিতে স্ত্রী নিশ্চয়ই বাধ্য, কিন্তু সেই দেহযন্ত্রটির ভিতর যে একখানি মানবধর্মী মন বিরাজ করছে, সে সম্বন্ধে খেয়াল না থাকলে চলবে কেন? স্বামীর অধিকারটুকু নিতে হলেও এমন ভাবেই তা নেওয়া দরকার যাতে স্ত্রীর মনে হয় যে আমিই ওটুকু স্বেচ্ছায় দিলুম। আপনা থেকে আত্মসম্পদ দানের এই যে আনন্দ , এর সুযোগটুকু থেকে যেন সে কখনই বঞ্চিত না হয়।
নবপরিণীত স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্ক অনেকটা যেন কোনো নতুন রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের সম্পর্কের মতো। নতুন রোগী ইতিপূর্বে ডাক্তারের নামটাই হয়তো শুনেছে, কিন্তু সে নিজে তাকে চেনে না। বাধ্য হয়ে ডাক্তারের হাতে দেহরক্ষার ভার দিতে এসেছে, এমন কি জীবন রক্ষার দায়িত্বও তার থাকবে। কিন্তু নিজেকে অজানার হাতে সঁপে দিতে গিয়ে ভয়ে বুক তার কাঁপছে। না জানি কি কটু ওষুধ খাওয়াবে, কি কঠিন রকমের ইঞ্জেকশন লাগাবে। এমনি একজন রোগি পেলে ডাক্তার আগে আশ্বাস দিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে তার অন্তরটিকে সম্পূর্ণ জয় করে নেয়। তার পরে তাকে যতই কটু ওষুধ খাওয়াক আর যতই ইঞ্জেকশন দিক, কিছুতেই তার খারাপ লাগে না। স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি ঠিক এমনি ব্যবহারই করতে হবে। এর জন্য যতখানি প্রয়াসের প্রয়োজন সেটুকু প্রত্যেক স্বামীকেই করতে হবে। নবীনা বধূটি একজন অপরিচিত পুরুষের কাছে শুতে এসেছে, এমন ঘটনা তার জীবনে কখনো ঘটেনি। ভয়ে সে স্তন্তিত হয়ে আছে। প্রথমেই তার মনের সেই ভয়টি ভেঙ্গে দিতে হবে। সোজাসুজি সহৃদয় কথাবার্তায় তার সঙ্গে আলাপ করতে হবে, বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলতে হবে, তার মনে খানিকটা আস্থা জম্মাতে হবে। তাকে ভালো করে জানিয়ে দিতে হবে যে স্বামী মানে ব্যাঘ্রজাতীয় জানোয়ার নয়। সে একজন ভালোবাসবারই মতো চমৎকার মানুষ। এই স্বামীর কাছে স্নেহ আদর যত্ম যথেষ্টই পাওয়া যাবে, এমন কি তার কাছে অনায়াসে আবদার করাও চলবে। এইটুকু আস্থা প্রথমে তার মনে এনে ফেলতে পারলে তখন ধীরে ধীরে নবপিণীতা বধূকে আরো অধিক মাত্রায় জাগিয়ে তুলতে পারা যায়, তার গায়ে স্বচ্ছন্দে হাত দেওয়া যায়, মুখে চুম্বন করা যায়, যৌন আলিঙ্গনেও আহ্বান করা যায়। আপন বুদ্ধি থেকে যতটুকু সে শিখেছে, আর পরস্পরের আলোচনা থেকে যতটুকু সে জেনেছে, তা ছাড়া বই পড়া, বায়স্কোপ দেখা, সখীদের মুখে শোনা প্রভৃতি তো আছেই—এই সমস্ত টুকরো টুকরো জ্ঞানলাভের দ্বারা স্পষ্ট করে কিছু জানা না থাকলেও কতকটা অনির্দিষ্টভাবে সে প্রস্তুত হয়েই রয়েছে। তাকে একটু অভয় দিয়ে খানিকটা হৃদ্যতার আবহাওয়া এনে ফেলতে পারলে তখন অনেক কিছুই সম্ভব। প্রকৃতি তার যৌন অঙ্গ সমূহকে যে ক্রিয়ার উপযোগী করে প্রস্তুত রেখেছে, তাইতে তাকে দক্ষতার সঙ্গে নিয়োজিত করতে পারলে তখন কিছুই কঠিন হবে না।
কিন্তু যদি প্রথম রাত্রেই কোনো সাড়া মেলা সম্ভব না হয়, তাতেও অধৈর্য হতে নেই। কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধরে অপর একটি সার্থক ফুলশয্যার রাত্রির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। হয়তো কিছুকাল পর্যন্ত তাতে বিলম্বও হতে পারে। হয়তো সেই স্ত্রী কোনো কারণে নিতান্তই বিমুখ, হয়তো কিছুতেই সে নিজের অনাসক্তি দূর করতে পারছে না, স্বামীর সংস্পর্শ সে মোটে সহ্য করতে পারছে না। এমন যদি হয় তাহলে স্বামীকে কিছুকালের জন্য ধৈর্য ধরতেই হবে। স্নেহও দেখাতে হবে, সহানুভূতিও দেখাতে হবে, সকল দিক দিয়ে বন্ধুত্বকে প্রগাঢ় করে তুলতে হবে, কিন্তু তীব্র অনিচ্ছার উপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে গিয়ে বারে বারে অপদস্থ হওয়া সমীচীন হবে না। অন্তত কিছুকালের জন্য এমন একটা ভাব দেখাতে হবে যে তোমার যে জিনিসে অনাসক্তি, সে জিনিস আমিও চাই না। এতেই যথেষ্ট কাজ হবে। প্রকৃতি তখন অন্য দিক দিয়ে কোনো এক অদ্ভুত উপায়ে স্ত্রীর মনটিকে অনুকূল করে তুলবে এবং তারই লক্ষণ গুলি ক্রমশ ভাবে ভঙ্গিতে প্রকাশ পেতে থাকবে। তখন আর ধৈর্য ধরে বেশি অপেক্ষা করবার প্রয়োজন হবে না।
কিন্তু এখানে আরো একটি কথা আছে। স্বামী মানে ব্যাঘ্র জাতীয় জীব নয়, কিন্তু সে যে ভেড়া জাতীয় জীবও নয়, এও জানিয়ে দেবার দরকার হতে পারে, এমন কি ফুলশয্যার রাত্রিতেই। কোনো কোনো স্বামী যেমন না বুঝে অত্যাচারী হয়, কেউ কেউ তেমনি আবার না বুঝে কাপুরুষও হয়। এখানে আমরা যাকে কাপুরুষতা বলছি সেটা সাহসের দিক দিয়ে নয়, সাধারণ পৌরুষের প্রকাশের দিক দিয়ে। এমন পুরুষও আছে যারা অন্য সময়ে ঠিক পুরুষেরই মতো, কেবল স্ত্রীলোকের কাছে গেলেই তাদের চেয়েও কোমল হয়ে নিতান্ত যেন অনুগতের মতো ভাবখানা প্রকাশ করতে থাকে। এটাও করে তারা অজ্ঞাতবশত, ভাবে যে এমনি ব্যবহার করলে বুঝি সমুচিত শিভ্যালরি প্রকাশ করা হয়। যারা নেহাৎ ভালমানুষ প্রকৃতির লোক তারাও এমনি ব্যবহারে স্ত্রীকে একটা অনাবশ্যক প্রাধান্য দিতে যায়। এতে মনস্তত্বের দিক দিয়ে দুই পক্ষেরই ভুল হয়। আজকালকার বধূরা যথেষ্ট বয়স্থা, বুদ্ধিমতি, চতুরা। সুযোগ পেলেই তারা কিছু প্রাধান্য করতে অর্থাৎ পুরুষের উপর কর্তৃত্ব নিতে প্রলুদ্ধ হয়ে ওঠে। বলা বাহুল্য এতে কোনো পক্ষেরই শেষ পর্যন্ত সুখ নেই। পুরুষের দেহ ও মনোবৃত্তির গঠন হয়েছে অধিকার করবার উপযোগী, আর নারীর দেহ মনের গঠন হয়েছে অধিকৃত হবার উপযোগী। পুরুষ সর্বাংশে পুরুষ, আর নারী সর্বাংশে নারী হলেই সব দিকে একটা সামঞ্জস্য রক্ষা হয়। এর উল্টোপাল্টা করতে গেলেই তার থেকে অশান্তি দেখা দেয়। বিপরীত অভিনয় হচ্ছে দেখলেই তৎক্ষণাৎ সাবধান হতে হবে। বিকৃতির সৃষ্টি হচ্ছে দেখলেই তাকে সময় থাকতে নির্মূল করতে হবে। যদি বাঁধা আসে নারীর দুর্বদ্ধির দিক থেকে, হয়তো তার অন্যরকম মতলব থেকে, ভয় অথবা অপরিচয় অথবা অপ্রস্ততির দিক থেকে নয়, তবে পুরুষের পক্ষে একটু জোরের সঙ্গেই সেই বাধাকে দূর করতে হবে। এখানে জোরের কথা বলছি অতি সন্তর্পট্রে, কারণ এ জোর নিষ্ঠুর অত্যাচারীর পীড়ন হলে চলবে না। এটুকু হওয়া চাই সহানুভূতি-সম্পন্ন চিকিৎসকের বাহ্যিক জোর খাটিয়ে চিকিৎসা প্রয়োগ করার মতো। অনেক মেয়েদের মনের একটি গূঢ়তত্ব এই যে তারা এই সকল বিষয়ে পুরুষের পক্ষ থেকে একটু জোর প্রয়োগ করাই পছন্দ করে। নির্বিরোধে অধিকারটি সঁপে দিতে তারা খুব উৎসুখ হয়না। তারা চায় অধিকারী জোর করে প্রাপ্য আদায় করে নিক, তবেই বোঝা যাবে যে দেয় জিনিসটার দাম কিছু বেশি।
সুতরাং সকল মেয়ের সঙ্গে একই রকম ব্যবহার চলে না। আগে বুঝে নিতে হয় মেয়েটির প্রকৃতি কেমন। আর স্ত্রীকেও বুঝে নিতে হয় স্বামীর প্রকৃতি কেমন। প্রথম রাত্রি থেকেই এই বোঝাবুঝির শুরু। গোড়ায় ভুল বুঝে ফেললে ঐ একদিনের ভুলে সারা জীবনই ভুল হতে থাকতে পারে।
কোনো এক ভদ্রলোকের উপর্যুপরি দুই দফা দুটি ফুলশয্যার অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানি। যখন প্রথম বারে একটি বিবাহ হয় তখন তার বয়স ছিল কম। স্ত্রীলোকের সঙ্গে সেই প্রথম সঙ্গমসুখ লাভ করবার সুযোগ মিলেছে, এই আনন্দেই তিনি আত্মহারা। শুনেছিলেন যে কৃত্রিম উপায়ে যৌনসুখ পাওয়ার চেয়ে স্ত্রীসঙ্গমে চারগুণ বেশি সুখ লাভ হয়। সেই সুখটি তিনি ফুলশয্যার রাত্রিতেই উপভোগ করতে চাইলেন। স্ত্রীকে অনেক ভোলালেন, আদর করলেন, নানারকমে তুষ্ট করতে থাকলেন। স্ত্রী প্রথমে যথেষ্ট ভয়ে ভয়েই ছিল, তার পর দেখলো লোকটি নিতান্তই অনুগত। অনায়াসে এর উপর একটু প্রাধান্য করা চলতে পারে। ভদ্রলোক দ্বিধায় একেবারে চুপসে গেলেন, লজ্জায় আর কোনো রকম প্রয়াসই করতে পারলেন না। কিছুকাল পরে তিনি সব কিছুই উপভোগ করলেন, কিন্তু সেই প্রথম ফুলশয্যার রাত্রে স্ত্রীর সেই কর্তৃত্বভাবটুকু যেন প্রচ্ছন্নভাবে তাদের দাম্পত্য জীবনের মধ্যে থেকেই গেল।সেই প্রথম স্ত্রী যতদিন বেঁচে ছিল তত দিন তিনি সুখী হতে পারেন নি। কয়েক বছর বাদে স্ত্রীটি হঠাৎ মারা গেল। আবার তাকে একটি বিবাহ করতে হলো। আবার নতুন ফুলশয্যা। কিন্তু প্রথম ফুলশয্যার প্রত্যেক কথাটি তাঁর স্মরণে ছিল। এবারকার স্ত্রীর সঙ্গেও প্রথমে তিনি আলাপ আপ্যায়ণ যথেষ্টেই করলেন। তাঁর মনটি একটু নরম হয়েছে দেখেই আর কালবিলম্ব না করে তিনি যৌন বাসনা পূর্ণ করতে অগ্রসর হলেন। অপর পক্ষ থেকে যথেষ্টই বাঁধা নিষেধ আসতে থাকলো, তাতে তিনি একটুও বিচলিত হলেন না। কিন্তু বাধাবিঘ্নের ভিতর দিয়ে কোনো কাজই সুশৃঙ্খলে সম্পন্ন করা যায় না। লিঙ্গটি যোনিমধ্যে প্রবেশ করাতে গিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনায় যোনির বাইরে কাপর চোপড়েই তাঁর বীর্যপাত হয়ে গেল। তথাপি তিনি বুঝলেন যে এতেও হলো তাঁর জয়। এর ফলে পরবর্তী জীবনে তিনি সুখী হয়েছেন। অনেকে মনে করে সঙ্গম করতে গিয়ে তাঁর আগেই কাপড়ে স্খলন হয়ে যাওয়া খুব একটা লজ্জার বিষয়। কিন্তু বাস্তবিক তা নয়। নতুন যৌন সম্পর্কের প্রথম দিকে অত্যধিক উত্তেজনায় এটা অনায়াসেই ঘটতে পারে। প্রথম ফুলশয্যার রাত্রে কিংবা প্রথম কয়েক বারের সঙ্গম প্রচেষ্টায় অনেকেরই এটা হয়। উত্তেজনা হঠাৎ চরম শীর্ষে উঠে গেলে তাঁর একটা আশু নিবৃত্তি হতেই হবে, তখনো পর্যন্ত সঠিক সঙ্গমক্রিয়া শুরু হোক বা নাই হোক। এটা স্বাভাবিক, এতে কোনো ব্যর্থতা বোধ করবার কারণ নেই।
ফুলশয্যার রাত্রে কত লোকে যে কত রকমের অভিজ্ঞতাই লাভ করে তাঁর কোনো ঠিকানা করা যাবে না। নজীর সংগ্রহ করতে গেলে দেখা যাবে যে সাফল্যের চেয়ে হয়তো অকৃতকার্যতাঁর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু প্রথম রাত্রেই সঙ্গমের প্রচেষ্টা যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। স্বামীরা স্বভাবতই একটু আগ্রহান্বিত হয়ে উঠে, তারা একবার সাধ্যমত চেষ্টা না করে ছাড়ে না। কিন্তু তাতে অকৃতকার্য হলে বিশেষ কিছু যায় আসে না।
অকৃতকার্যতা ঘটবার আরো একটি কারণ আছে। সেটা হলো মেয়েদের হাইমেন অর্থাৎ কুমারী পর্দার ব্যবধান। যে সব নারী আজ পর্যন্ত অক্ষতযোনি, তাদের মধ্যে অনেকেরই যোনির দেঊড়ির কাছে যনিগহ্বরে প্রবেশের মুখের খানিকটা অংশ এই পর্দা দিয়ে আচ্ছাদন করা থাকে। সে কথা পূর্বেই একবার বলা হয়েছে। দৈবাৎ এটি ছিঁড়ে গিয়ে প্রবেশদ্বার অবারিত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু অনেক সময়ে এটি ছেঁড়া থাকে না। যোনির ভিতরে পুরুষের লিঙ্গ প্রথম বারে প্রবেশ করতে গেলেই তখন এই পর্দার দ্বারা বাঁধা পায়। হয়তো পাশ দিয়ে লিঙ্গের একটুমাত্র অংশ কোনগতিকে ঢুকে যাবার পরেই এর দ্বারা আটকে যায়। সে সময় যদি একটু জোর দিয়ে আরো ভিতরের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে ঐ পর্দাটি ছিঁড়ে গিয়ে সামান্য কিছু রক্তপাত হয়, সঙ্গে সঙ্গে লিঙ্গও বাঁধামুক্ত অনায়াসে ভিতরে যাতায়াত করতে থাকে। কিন্তু কোনো কোনো স্থলে পর্দাটি পুরু ও মজবুত থাকলে সেটি জোর দিলেও সহজে ছেঁড়ে না। তখন অগত্যা অনেকটা অসম্পূর্ণ ভাবেই সেদিনকার মতো যৌনক্রিয়া সারতে হয়। উপর্যুপরি কয়েকদিনের ঐরূপ প্রচেষ্টায় হয়তো কোনোদিন পর্দাটি অকস্মাৎ ছিঁড়ে পথ পরিস্কার হয়ে যায়, এবং কখন যে ছিঁড়লো তা অনেক সময় জানাও যায় না। কিন্তু বেশি কঠিন হলে এই পর্দা নিত্যই বাঁধা দিতে থাকে। তখন বাধ্য হয়ে এটিকে কোনো কৃত্রিম উপায়ে ছিঁড়ে দিতে হয়। এমন কি সময় সময় ধাত্রী অথবা ডাক্তারেরও সাহায্য নিতে হয়।
আজকাল শোনা যায় সঙ্গম প্রচেষ্টা ছাড়াও কেউ কেউ আরো কিছু বেশি রকম সুযোগ নেবার চেষ্টা করে থাকে। ঠিক ফুলশয্যার রাত্রে না হলেও বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রীকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে দেখবার বাসনা স্বামীর মনে জাগে। কিন্তু মেয়েদের পক্ষে সঙ্গমে নিযুক্ত হওয়া আলাদা কথা, আর পুরুষের সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন হওয়া আলাদা কথা। শ্লীলতার প্রশ্ন সেখানে না থাকলেও একেবারে এতটা দুঃসাহস করতে যাওয়া ভালো নয়। মেয়েদের মনে একটা স্বাভাবিক লজ্জাবোধ থাকে। বেশি লোভ করে তাড়াতাড়ি একদিনেই তাঁর সমস্ত লজ্জাটুকু ভেঙ্গে ফেলতে গেলে স্ত্রীর মন হয়তো তাতে অপ্রত্যাশিত আঘাত পেয়ে চিরকালের জন্য বিমুখ হয়ে যেতে পারে। কিংবা তাঁর মনে বিভীষিকা বা ঘৃণার উদয় হতে পারে। এখানে মনে রাখা উচিত যে আগেকার পরিচয় যতই ঘনিষ্ট হোক, যৌন পরিচয় হলো সম্পূর্ণ এক স্বতন্ত্র জিনিস। প্রথম কয়েক রাত্রির সেই নতুন রকমের পরিচয়টুকু যত শিষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত হয় ততই ভালো। নগ্নতা দেখবার বাসনা অথবা আরো অন্যান্য রকমের বাসনাগুলির কোনোটাই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অসঙ্গতা না হলেও পরবর্তী কালের জন্য যেসব তুলে রাখা উচিত। ভবিষ্যৎ জীবনে কারো কোনো বাসনাই অপূর্ণ থাকবে না, এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন । ঘনিষ্ঠতা জমে গেলে কালক্রমে সব কিছুই সম্ভব।
©somewhere in net ltd.