![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখাপড়া ও জানার প্রতি আগ্রহ আমার সেই মাধ্যমিক সময়ের মতোই রয়ে গেছে। নিজেকে আমি লেখাপড়া থেকে কখনো সরিয়ে নিতে চাই না।
বিশ্বের সকল দেশসমূহের জীবন ধারণের মান, শিক্ষা, নিরক্ষরতা প্রভৃতির একটি তুলনামূলক সূচক। জাতিসংঘ নির্ধারিত একটি সূত্রের মাধ্যমে প্রতিবছর নির্ধারণ করা হয় এই পৃথিবীর কোন দেশের মানবিক জীবন ব্যবস্থা কতটা উন্নত। আর মানব উন্নয়ন সূচক নির্ধারণের নির্ধারকগুলি হলো: প্রত্যাশিত জীবনকাল, শিক্ষার হার এবং মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন। আর ইহাই হল মানব উন্নয়ন সূচক (Human Development Index) ।
মোট জাতীয় উৎপাদন ধারণা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও পরে এর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তখন ১৯৮০-র দশকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (UNDP)মানব উন্নয়ন সূচক (human development index)ধারণাটি সামনে নিয়ে আসে।তারা যুক্তি দিলো কেবল উৎপাদন বা মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়ন পরিমাপ করা ঠিক নয়।উন্নয়নের সাথে কেবল অর্থনৈতিক ব্যাপার-স্যাপার জড়িত নয়, মানব উন্নয়নের ব্যাপারও রয়েছে। তাই তারা মানব কল্যাণের সাথে তিনটি দিক যুক্ত করলোঃ দীর্ঘ ও সুষ্ঠু জীবন; শিক্ষা ও জ্ঞান এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন-মান। মানব উন্নয়ন সূচক দিয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসুচীও তামাম দুনিয়ার দেশগুলোকে ভাগ করলো তিনটি ভাগেঃ উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন মানব-সম্পদের দেশ।
নতুন অংক দিয়ে উন্নয়নটা হিসাব করলেও ফলাফলে তেমন কোন পার্থক্য নেই। মোট জাতীয় আয়ের পরিমাপের মত, মানব উন্নয়ন সূচকেও দেখা যায় - পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো, আমেরিকা, কানাডা, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সবার উপরে স্থান লাভ করে আছে।অনুরূপভাবে উপ-সাহারার আফ্রিকার দেশগুলো মাথাপিছু আয় ও মানব উন্নয়ন উভয় মাপকাঠিতে সবার নীচে রয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিলো, ফলাফল যদি একই হয়, তাহলে মাথাপিছু আয়ের পরিবর্তে জটিল ‘মানব উন্নয়ন সূচক’ দিয়ে উন্নয়ন পরিমাপের কোন যৌক্তিকতা আছে কি? অনেকে বললো, মাথাপিছু আয়ের পরিবর্তে ‘মানব উন্নয়ন সূচক’ অনেক গ্রহণযোগ্য। প্রথমতঃ এ দু’টো পরিমাপ একে অপরের পরিপূরক নয়। যেমন, বিশ্বব্যাংকের মাথাপিছু আয় অনুসারে চিলি ও আর্জেন্টিনা মধ্য-আয়ের দেশ, অন্যদিকে মানব-উন্নয়ন সূচকে তারা ‘উচ্চ মানব সম্পদের’ দেশ। ঠিক তেমনিভাবে, নিম্ন মাথাপিছু আয়ের দেশ, অন্যদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি)মানব-উন্নয়ন সূচকে ‘মধ্যম মানব সম্পদের’ দেশ।দ্বিতীয়তঃ মানব-উন্নয়ন সূচক ধারণাটি ব্যবহার করলে আমরা এটা জোর দিয়ে বলতে পারি - উন্নয়ন কেবল জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাপকাঠিতে পরিমাপকৃত কোন ব্যাপার-স্যাপার নয়, উন্নয়ন ধারণা আরো ব্যাপক।
অন্যদিকে আরো অনেকে যুক্তি দেন, এরকম মানদন্ডে জাতীয় উন্নয়ন বা অবস্থা পরিমাপ করা অর্থহীন। কেননা, এরকম পরিমাপক দিয়ে দেশের মধ্যে স্থানগত বা সমাজগত অসমতা (inequality)কোনভাবে বিবেচনায় আনা হয় না। এছাড়া এরকম পরিমাপক দিয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষের ‘উন্নয়ন ভাবনা’ বা কিভাবে জীবন মান পরিবর্তন করা যায় তাদের সেই মতামতকে কোনভাবেই প্রতিফলিত করতে পারে না।
বিশাল তথ্যভান্ডা উইকিপিডিয়াতে লিখা আছে যে, মানব উন্নয়ন সূচক (HDI) একটি তুলনামূলক পরিমাপ আয়ু , সাক্ষরতা , শিক্ষা , জীবনযাত্রার মান , এবং জীবন মানের জন্য দেশের বিশ্বব্যাপী। এটি একটি সাধারণ উপায় মঙ্গল পরিমাপ বিশেষত, শিশুকল্যাণ। এটা কি দেশের একটি প্রভেদ ব্যবহৃত হয় উন্নত , একটি উন্নয়নশীল অথবা একটি অধীনে-উন্নত দেশের, এবং এছাড়াও অর্থনৈতিক নীতি জীবনের গুনমান উপর প্রভাব পরিমাপ করা।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন
জাতিসংঘ ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের লক্ষে বেশ অনেক কার্যপদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। এসব লক্ষ্যমাত্রা দেখে মনে হতে পারে উন্নয়ন খুব সোজা ও সাটামাটা ব্যাপার।উন্নয়নের শেষ ধাপে সমাজ কী কী অর্জন হতে পারে সে বিষয়ে একটা ইঙ্গিত আছে, কিন্তু সেগুলো কিভাবে অর্জন হবে সে ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ
১। চরম ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করা
২। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করা
৩। লৈঙ্গিক সমতা ও ক্ষমতায়ন অর্জন করা
৪। শিশুর মৃত্যূর হার কমানো
৫। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো
৬। এইচআবি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য মারাত্মক নির্মূল করা
৭। টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা
৮। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশদারিত্ব নিশ্চিত করা।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহ
১। যাদের দৈনিক আয় ১.০০ ডলারে নীচে সেসব মানুষের সংখ্যা ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেকে কমিয়ে আনা
২। মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা
৩। ২০১৫ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য মারাত্মকরোগের প্রকোপ অধিকহারে কমিয়ে আনা
৪। ২০১৫ সালের মধ্যে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনা
এসব লক্ষ্য ও লক্ষ্যমাত্রার আলোকে বিভিন্ন নীতিমালা ও কার্যপদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এসব নীতিমালা ও কার্যপদক্ষেপ গ্রহণের আগে উন্নয়নের অর্থ কি বুঝা প্রয়োজন। উন্নয়ন কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়? কে সংজ্ঞায়িত করেন এবং কোন মাত্রায়?
মানব উন্নয়ন সূচক মাপার উপায়ঃ
শুধু উন্নয়ন কী সেটা নিয়ে বিতর্ক নেই, কিভাবে উন্নয়টা পরিমাপ করবো সেটা নিয়েও বড়ই ঘাপলা রয়েছে। সে যাই হোক, উন্নয়নটা হলো এমন কিছু যা পরিমাপ বা নিরূপন করার প্রয়োজন পড়ে। উদাহরণ হিসেবে দেখুন, নীতিতৈরীকারকরা কোন জনগোষ্ঠী বা সমাজের জন্যে নীতি তৈরী করতে গিয়ে সামাজিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর অবস্থান কি তা খতিয়ে দেখে। অন্যদিকে কোন প্রচার সংগঠন (campaign organizations) কোন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবস্থা উন্নয়নের জন্যে প্রথমে অনুসন্ধান করে কিভাবে তারা প্রান্তিকতায় স্বীকার হয়।
উন্নয়ন পরিমাপের জন্যে একটি প্রক্সি পরিমাপক দরকার। যেমন, বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিমাপের জন্যে মোট জাতীয় আয় বা GNP ব্যবহার করে।এটাই বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিমাপক।
অন্যদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী কর্তৃক ব্যবহৃত ‘মানব উন্নয়ন সূচক’ মানব উন্নয়ন বুঝার জন্যে তিনটি চলক ব্যবহার করে থাকেঃ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অবস্থা। এসব চলক পরিমাপের জন্যে বিভিন্ন সূচক নির্ধারণ করতে হয়, যা করা এত সোজাসুজি ব্যাপার নয়।যেমন, মৌলিক চাহিদা বলতে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানকে বুঝায়, কিন্তু এ উপাদানগুলোকে কিভাবে পরিমাপ করা হবে সেটা ততটা সোজা নয়।
উন্নয়ন পরিমাপ নিয়ে আরো একটি সমস্যা হলো বিভিন্ন সময় বা বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার তুলনা নিয়ে।যেমন, জাতীয় শুমারীর মাধ্যমে বিশাল তথ্যভান্ডার সৃষ্টি করা যেতে পারে, কিন্তু সেটা বিশ্লেষণ করতে হলে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা পেশাজীবি লোক ও প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে, যা অনেক দেশের নেই।তাছাড়া সংগৃহীত তথ্য বিভিন্নভাবে বাদ পড়তে পারে, সেক্ষেত্রে পরিমাপটাতে কি প্রভাব পড়বে সহজে অনুমেয়।
তবে যাই বলা হোক না কেন, শেষ বিচারে উন্নয়ন পরিমাপ হলো সংখ্যার ব্যাপার-স্যাপার, অর্থাৎ সংখ্যায় মাপা হয়। যেমন, মোট জাতীয় আয় গাণিতিক সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়।কিন্তু উন্নয়নকে যখন সংখ্যা দিয়ে মাপা হয় তখন উন্নয়নের ভাবগত বা গুণগত দিক যেমন, মানুষের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও অভিমত ইত্যাদি উপেক্ষিত থেকে যায়। এ ধরণের সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ স্থানীয় জনগণের চিন্তা বা মতামতকে টুটি চেপে ধরে বহিরাগত উন্নয়ন ধারণাকে চাপিয়ে দেয়। এ বিতর্কের জ্বলন্ত উদাহরণ হলো, দারিদ্র সংজ্ঞা নিয়ে। যেমন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের মূল ধারণাবিন্দুতে হলো দারিদ্র্য বিমোচন। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের বিপরীতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে হয়েছে, তা একেবারেই অর্থনীতি কেন্দ্রিক।
(বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, জার্নাল ও ওয়েব সাইটের সহায়তায় লিখেছি)
০১ লা জুন, ২০১২ রাত ১০:৪৯
সৈয়দ মাহবুব হাসান আমিরী বলেছেন: গ্রোস নেশনাল হেপিনেস ভাল প্রস্তাব। এ প্রস্তাবিট যদি ইউএনডিপি-তে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতো।
ধন্যবাদ আপনাকে সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুন, ২০১২ রাত ১০:২২
শাহ মো. আরিফুল আবেদ বলেছেন: ওরে কঠিন রে কঠিন! পড়লাম পুরাটা। ‘মানব উন্নয়ন সূচক’ নিয়ে আমারো কিছু কথা আছে। আমার কথা হলো- জিএনপি/ জিডিপি এ গুলো হলো পাশ্চাত্যের তৈরি ডিসকোর্স। একটা জাতি কতটা উন্নত তা অর্থনীতির পাল্লায় বিবেচ্য হতে পারে না। অরণ্যে বসবাসরত কোন সম্প্রদায় সভ্যতার কোন আলো না পেয়েও দেখা যাবে অনেক সুখে আছে। আফ্রিকান অনেক দেশ আছে যারা যাপিত জীবনে সুখ পাওয়া টাকেই মূল মনে করে। ব্রাজিলে যে কার্নিভাল হয় তা উদযাপন করতে ইউরোপীয়রা এখন প্রতি বছর সেখানে হাজির হচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দেশ গুলোর দিকে তাকালে মনে হয় জাজ সংগীতে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ আর ২ দিনের ছুটি উদযাপনে কী শান্তি অ আনন্দময় জীবন-তা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। অথচ দারিদ্য তাদের আষ্টে-পিষ্টে বেধে রেখেছে। কিন্তু সুখ লাভ থে তারা নিজেদের কখনো বঞ্চিত করা না। তাই আমরা চাই-জি এন এইচ পি অর্থাৎ গ্রোস নেশনাল হেপিনেস প্রডাক্ট এর বৃদ্ধি। জাতীয় সুখ বৃদ্ধি হোক আমাদের সবার জীবনে।