নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিনেমা পাগল। সিনেমায় খাই, সিনেমায় ঘুমাই, সিনেমায় পড়ি, সিনেমায় স্বপ্ন দেখি। জীবন সিনেমাময়।

লেখাজোকা শামীম

গল্প লেখার নেশা আমার আশৈশব। মাধ্যমগুলো বদলে গেছে সময়ে সময়ে - কখনও গল্প, কখনও উপন্যাস, কখনও নাটক, কখনও চলচ্চিত্র কিংবা কখনও টিভি নাটক। যে মাধ্যমেই কাজ করি না কেন, একই কাজ করেছি - গল্প বলেছি। আমি আজন্ম গল্পকার - এক সাদামাটা গল্পকার। মুঠোফোন : ০১৯১২৫৭৭১৮৭. বৈদ্যুতিক চিঠি : [email protected]ফেসবুক : http://www.facebook.com/shajahanshamim.scriptwriterদৃষ্টি আকর্ষণ : আমার নিজের লেখা সাহিত্যকর্ম যেমন উপন্যাস ও নাটক - যা এই ব্লগে পোস্ট করেছি, তার সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত। আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া এসবের কিছুই কোনো মাধ্যমে পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।

লেখাজোকা শামীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গার্মেন্টস মালিকগণ, কবে আপনারা মানবিক হবেন ?

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানীখাতের প্রতিনিধি আপনারা, আপনারা গার্মেন্টস মালিকগণ। দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী দুটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি আপনারা, আপনারা গার্মেন্টস মালিকগণ। আমাদের দেশের আইন সভার অনেক সদস্য আপনারা। এমনকি মন্ত্রী সভাতেও আপনাদের কারো কারো আসন রয়েছে। এই দেশের ক্ষমতা ও সম্পদের একটা বড় অংশ আপনাদের করায়ত্ব। ক্ষমতা ও সম্পদ আপনাদের হাতে বলেই আপনারা রাষ্ট্রের শীর্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। আপনাদের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দেয়ার মতো প্রভাবশালী আপনারা।

আপনাদের কারণে লক্ষ লক্ষ বেকার গরীব মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আপনাদের কারণে দেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।আপনাদের কারণে দেশের একটা বড় অংশ প্রথমবারের মতো শহরমুখী হয়েছে। গ্রামের গবীর কিশোরী মেয়েটি উপার্জন করতে শিখেছে।

কিন্তু বেকারের কর্মসংস্থানের ফলে বেকার যত লাভবান হয়েছে, তারচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন আপনারা। বেকারের স্বল্পমূল্যের শ্রম দিয়ে আপনি বছর বছর কারখানা বাড়িয়েছেন। আপনার গাড়ির মডেল প্রতি বছর বদলে গেছে। আপনার বাড়ির জৌলুস প্রতি মাসে বেড়েছে। দেশে ছাড়াও দেশের বাইরে আপনি বাড়ি বানিয়েছেন। কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে আপনার স্ত্রী সন্তানের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আপনার সন্তানকে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন।

আপনি মালিক, আপনি তো বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আপনার সামাজিক অবস্থানের কারণেই আপনার এই জীবনযাপন দরকার। আপনার ব্যবসাকে আরো বাড়ানোর জন্য আপনার গাড়ি, বাড়ি, পোশাকের জৌলুস দরকার। আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য তাদের বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দরকার। আপনি মালিক, আপনার এই বিলাসী জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। আপনার অধিকারের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

সম্মানিত গার্মেন্টস মালিকগণ, আপনাদের এই বিলাসবহুল জীবনের বিপরীতে আপনারা শ্রমিকদের কী দিয়েছেন ? তাদের দিয়েছেন স্বল্প বেতন, দীর্ঘ শ্রম ঘণ্টা এবং বিভৎস নির্মম মৃত্যু।বিপুল বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে আপনার এই সব গরীব মানুষদের অতি অল্প বেতন দিয়ে শ্রম শোষণ করে যাচ্ছেন। আট ঘণ্টা শ্রম দেয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে তাদের বারো থেকে ষোল ঘণ্টা কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার পারিশ্রমিক দ্বিগুণ দেয়ার কথা থাকলেও আপনারা দিচ্ছেন দেড় গুণ। সুযোগ পেলেই নানা অজুহাতে অতিরিক্ত শ্রম ঘণ্টার টাকা মেরে দিচ্ছেন। এমনকি দুই তিন মাসের বেতন বকেয়া রাখছেন। প্রতিবাদ করলে মুহূর্তে ছাটাই করে দিচ্ছেন নিরীহ শ্রমিকদের।

আপনাদের এই শ্রমিকরা চরম দরিদ্র, শিক্ষাদীক্ষাহীন এবং বেশির ভাগই নারী। ফলে ওদের শোষণ করার সব সুবিধাই আপনাদের হাতে । চাকুরি গেলে খাবে কী - এই চিন্তায় ওরা আপনাদের অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে থাকে। শিক্ষাদীক্ষা নাই বলে এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার কোন বুদ্ধিও ওদের নাই। নারী বলে ওদের প্রতিবাদ করার সাহস ও শক্তি দুটোই কম।

মাঝে মাঝেই আপনাদের কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়। বেশির ভাগ সময় তার কারণ হয় বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবী। বিশেষ করে ঈদ উৎসবের আগে শ্রমিক অসন্তোষ একটা সাধারণ ঘটনা। শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকানোর জন্য আপনাদের রয়েছে স্থানীয় পালিত মাস্তান, রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী এবং স্থানীয় টাউট শ্রমিক নেতা ও রাজনৈতিক নেতা। আপনারা যখন যাকে দরকার ব্যবহার করে শ্রমিক অসন্তোষ সামাল দেন। যখন সামাল দিতে পারেন না, গার্মেন্টস বন্ধ করে ভেগে যান। শ্রমিকরা বেশ কয়েক দিন বিক্ষোভ করার পর পেটের দায়ে অন্য কোথাও কাজ নিয়ে নেয়। আপনার ভীষণ লাভ হয়। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আর দিতে হয় না।

সরকারের শ্রম অফিসের কাজ হল আপনাদের সহায়তা করা। কারণ সরকারের আর সব প্রতিষ্ঠানের মতো ওখানেও কিছু সংখ্যক ঘুষখোর কর্মকর্তা হা করে বসে আছে। আপনাদের ঘুষের কাছে মারা যায় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার।

কখনও কি ভেবেছেন আপনি যেই বাড়িটাতে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করেন, সেই বাড়িটাতে আগুন লাগে না কেন ? আর আগুন লাগলেও প্রাণহানি হয় না কেন ? আপনি যেই বাড়িটাকে বাস করেন, সেই বাড়িটা কেন ধ্বসে পড়ে না ? কারণ ওটা আপনার এবং আপনার পরিজনের বসবাসের জন্য বলেই আপনি নিরাপদ করে বানিয়েছেন।

অন্য দিকে আপনার শ্রমিকদের জন্য যেই কারখানা বানিয়েছেন, সেখানে আগুন লাগলে শত শত শ্রমিক মারা যায়। যেই কারখানা বানিয়েছেন, সেই কারখানা ধ্বসে পড়ে শত শত শ্রমিক মারা যায়। কারণ একটাই আপনাদের কাছে শ্রমিকের জীবনের মূল্য কানাকড়িও নাই।

যে শ্রমিকের রক্ত ঘামে আপনাদের এত বিত্তবৈভব, তাদের এই অমানবিক নির্মম বিভৎস মৃত্যু কি আপনাদের বিবেকে নাড়া দেয় না ? না, দেয় না। কারণ আপনাদের বিবেক মরে গেছে। আপনারা বহু আগেই মানবিকতা হারিয়েছেন। আর যে রাষ্ট্রযন্ত্রে আপনারা বাস করেন, তার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান টাকা দিয়ে কেনা যায় বলে শ্রমিকদের প্রতি আপনাদের এই অমানবিক আচরণের কোন ন্যায্য বিচার হয় না, হবেও না কোনদিন।

সম্মানিত গার্মেন্টস মালিকগণ, আপনারা তো মানব সমাজেই বাস করেন। সমাজের সুবিধাভোগী মানুষ হিসেবে আপনাদের সমাজের প্রতি কিছু দায়িত্ব আছে। শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরি করা আপনাদের দায়িত্ব। হয়তো সাময়িকভাবে আপনারা এই দায়িত্ব এড়াতে পারবেন। কিন্তু এটার দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল ভালো হবে না। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ঘৃণা আপনাদের জন্য জমা হচ্ছে, তা একদিন বিস্ফোরিত হবে, এই শ্রমিক শ্রেণীই একদিন ফুঁসে উঠবে। তখন আপনাদের বাড়ি-গাড়ি বিত্ত বৈভব আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না। সুতরাং আপনার নিজের স্বার্থেই সময় থাকতে মানবিক হোন। অপর মানুষের প্রতি মানবিক হওয়াটা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩১

যোগী বলেছেন:
আমাদের দেশের মানুষদের সৎ পথে আসার কোন ট্রেন্ডই লক্ষ করা যায় না, সেটাই সবচেয়ে বেশি হতাশ করে।
সৎ আর অসৎ এর সিমা রেখাটা ভিষন ভাবে কনফিউজিং হয়ে পড়েছে।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে সৎ লোক না পাঠালে সততা কোথাও থাকবে না। গণতন্ত্রে সেই সুযোগ থাকলেও আমরা ভোটারটা অসৎ বলে অসৎ লোকদেরই নেতা হিসেবে বেছে নেই।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

ওবায়দুল হক মাহমুদ বলেছেন: রানা প্লাজা'র সামনে থেকে :
Click This Link

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪

পত্রদূত বলেছেন: রক্তচোষারা না শোনে ধর্মের কাহিনী

৪| ০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:৪৬

ওিহদুর বলেছেন: সভ্যতার শুরু থেকেই শ্রমিকরা এই রকম মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে । আপনি শ্রমিকদের যে অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন তা খুবই বাস্তব । কিন্তু শুধু সমস্যা দেখলেই ঘাবড়ে গেলে হবেনা । সমাধানের পথ খুঁজতে হবে । সেটা হলো শিক্ষা । আমাদের সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র এবং শিক্ষা বঞ্চিত ছেলে-মেয়েরাই এক সময় বেঁচে থাকার জন্য গার্মেন্টস এ অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দেয় । কিন্তু তারা যদি পড়ালেখা করার সুযোগ পেতো তাহলে হয়তো তারা তাদের জীবন যাপনের জন্য হয়তোবা অন্য কোন পেশা বেছে নিতো । আসলে আমাদের সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী । আমি জানিনা আমাদের মতো দেশের জন্য গণতন্ত্র মানানসই শাসনব্যবস্থা কিনা । কিন্তু আমি যদি সমাজতন্ত্রের কথা বলি সেখানে ও মিল পাইনা কথার সাথে কাজের । শুধু তাই নয় বিংশ শতাব্দীর এর যুগে সমাজতন্ত্রের মতো শাসন ব্যবস্থাকে ও মার খেতে দেখেছি । আমি আন্তরিক ভাবে কামনা করি এই যে, আর যেনো পোষাকশিল্প শ্রমিকদের এই ভাবে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে না হয় । শ্রমিকরা অন্তত তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো । মেহনতী মানুষের জয় হোক ।

৫| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮

আরিফ আহমেদ বলেছেন: টক লট ব্যবসায়ীদের জন্য সাইট লট হাট ভিজিট করার আমন্ত্রন রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.