![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্প লেখার নেশা আমার আশৈশব। মাধ্যমগুলো বদলে গেছে সময়ে সময়ে - কখনও গল্প, কখনও উপন্যাস, কখনও নাটক, কখনও চলচ্চিত্র কিংবা কখনও টিভি নাটক। যে মাধ্যমেই কাজ করি না কেন, একই কাজ করেছি - গল্প বলেছি। আমি আজন্ম গল্পকার - এক সাদামাটা গল্পকার। মুঠোফোন : ০১৯১২৫৭৭১৮৭. বৈদ্যুতিক চিঠি : [email protected]ফেসবুক : http://www.facebook.com/shajahanshamim.scriptwriterদৃষ্টি আকর্ষণ : আমার নিজের লেখা সাহিত্যকর্ম যেমন উপন্যাস ও নাটক - যা এই ব্লগে পোস্ট করেছি, তার সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত। আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া এসবের কিছুই কোনো মাধ্যমে পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।
ছয়
কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে গেল। দূর থেকেই আমাদের গলির সামনে একটা জটলা দেখতে পেলাম। কাছে এসে দেখি, মা হাত পা ছড়িয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছেন। অকল্পনীয় দৃশ্য। আমার পর্দানশীন মা এতগুলো বেগানা পুরুষের সামনে বেপর্দা, এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
পাশের বাড়ির নুরীর মা বলল,‘ভাই, এতক্ষণে আইলা ? সব্বনাশ যা হওনের হয়া গেল।’
আমি আঁতকে উঠে বললাম, ‘কী সর্বনাশ ?’
‘আহারে অহন কী অইব ? এত বড় সংসার’, নুরুর মা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল, ‘মাগো, কাইন্দো না গো, মা। আল্লার কেরামতি মূর্খে বোজে না।’
আমি মার দিকে এগিয়ে গেলাম। বললাম, ‘মা, ওঠেন। ঘরে চলেন।’
‘বাবা, আমার কপাল পুড়ল’, মা আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করতে লাগলেন। আমি বোকার মতো লোকজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
পনির ভেতরে ছিল। আমার কণ্ঠস্বর শুনে ছুটে এল। মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,‘ভাইয়া, এ কি হল ?’
‘আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘আব্বা আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে।’
‘কী করেছে ওই বুড়ো হারামজাদা ?’
‘মাকে খুব মেরেছে।’
‘আজ ওই বদমাশকে মেরেই ফেলব।’
আমাকে কয়েক জন আটকাল। তাদের এক ঝটকায় সরিয়ে চলে এলাম আব্বার ঘরে।
আব্বা ঘুমাচ্ছেন। বিশ্রী তেলতেলে ভুড়িটা উঠানামা করছে। আমি জোর গলায় ডাকলাম, ‘আব্বা।’
আব্বা রক্ত চক্ষু মেলে চাইলেন। বুঝলাম, নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন। আমি চেঁচিয়ে বললাম, ‘আপনি কী করেছেন ?’
আব্বা পাশ ফিরতে ফিরতে বললেন, ‘চেচাস ক্যান ? তর ছোট মা গুডবাই। বিদায় করে দিলাম। মেয়েলোক হল দাসী বান্দী, বড় বড় কথা বলবে কেন ?’
‘তাই বলে আপনি মাকে যখন তখন মারবেন ?’
আব্বা মজা পেয়ে হাসলেন। বললেন, ‘এই শেষ মার। তর ছোট মায়ের লগে সব খতম। তর অবশ্য মায়ের অভাব হবে না। নতুন মা পাবি। ঝকঝকে, নিউ মডেল।’
‘চুপ করেন।’
‘চুপ করব ক্যান রে, বোকা ? সত্যি কথা বললাম। তর মাকে ছেড়ে দিয়েছি। তালাক। এক্কেবারে তিন তালাক।’
বলে কী এ লোক ? আমার ইচ্ছে হল, নিজের মাথা বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে ফেলি। এই কুৎসিত পশুটার মৃত্যু হলে খুশী হতাম। নতুবা আমি নিজেই এক দিন খুন করে ফেলব। আমার বিশ্বাস হয় না, এ আমার বাপ। এই রকম নোংরা উৎস থেকে আমি জন্ম নিতে পারি না।
বাইরে চলে এলাম। পনির লুনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হল। লুনার চোখেও পানি। সহানুভূতির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে শার্টের হাতায় চোখ মুছলাম।
কে বলবে পনির আমার সৎ বোন ? আমার আব্বার দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে ? ওর মাকে আব্বা কিছুক্ষণ আগে তালাক দিয়েছেন। কী রকম অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এই ভদ্র মহিলা কিছুক্ষণ আগেও ছিলেন আমার মা। এখন তিনি কেউ না। শুধু মাত্র একজন মহিলা। মানুষের সম্পর্ক কত ঠুনকো !
আমার কাঁদা উচিত। ওদের মতো করে হাপুস নয়নে কাঁদা উচিত। কিন্তু আমার চোখ অশ্রু শূন্য। হৃদয়ের গভীরে আমি যে কী ভয়ঙ্কর কাঁদছি, কাউকে দেখাতে পারছি না। এই কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।
‘ভাইয়া, আমরা তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’
‘চলে যাচ্ছিস মানে ? কোথায় যাচ্ছিস ? আমি তোদের কোন দিন যেতে দেব না। মা উঠেন। চলেন, ঘরে চলেন।’
নুরীর বাপ বলল, ‘করতাছ কী বাবা ? বেশরীয়তী কাম। তোমার মার ওই ঘরে থাকা এখন নাজায়েজ।’
‘আমি এই সব মানি না। আমি কিচ্ছু মানি না। ’
চিৎকার করে জানিয়ে দিলাম সবাইকে। কিন্তু আমার গলা ভেঙ্গে এল। বুকের গভীর ভেঙ্গে চলে এল উদগত কান্না। মার পাশে কাদা মাটিতে বসে আমিও হঠাৎ মার মতো চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।
আব্বা ঘরে থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে এলেন। হুংকার দিয়ে বললেন,‘চোপ রাও। সব হারামজাদা, চোপ রাও।’
আমরা ভয়ে চুপ মেরে গেলাম। কিন্তু নুরীর মার কোলের বাচ্চাটা ভ্যা করে কেঁদে দিল।
হঠাৎ করে হাড়গিলে নুরীর বাপ তেড়ে কুঁদে গেল, ‘পাইছ কী মিয়া ? বৌ ছাড়ছ ভালো কথা, কিন্তুক জুলুম কর ক্যান ? চুপ কইরা রইলা ক্যান ? মনে করছ, নেশা কর বইলা সবাই তোমারে ডরায় ?
আব্বা নুরীর বাপের দিকে মাস্তানী দৃষ্টিতে তাকালেন। হিংস্র দৃষ্টি। দাঁত চিবিয়ে বললেন,‘নুরীর বাপ, পাতলা পায়খানা হয় ?’
নুরীর বাপ ঘাবড়ে গিয়ে বলল,‘না তো। কিন্তুক এই কথা ক্যান ?’
‘এমন মার দেব যে, ছয় মাস পাতলা পায়খানা থাকবে।’
আব্বা তার ডান হাতের মাদুলিতে আল্লাহু নামটায় হাত বুলাতে লাগলেন। বিশাল এই মাদুলিতে ভর্তি আব্বার ব্যবসার মাল। টাটকা হেরোইন। আব্বার মারমুখী ভঙ্গি দেখে নুরীর বাপ ভয়ে কেটে পড়ল।
‘কলমী, উঠো। সাফ সাফ কাইট্টা পড়। নইলে লাত্থি মাইরা ড্রেনে ফালায়া রাখমু।’
আব্বার হুমকিতে মার কোন প্রতিক্রিয়া হল না। কিন্তু আশেপাশের ভীড় পাতলা হয়ে গেল। সবাই যার যার ধান্দায় চলে গেল। শুধু লুনা পনিরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইল।
আমি আব্বার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। সাহস করে বললাম, ‘আব্বা, আপনার মতো খারাপ মানুষ হয় না।’
আব্বা প্রশ্রয়ের হাসি হাসলেন,‘এত দিনে বুঝলি ? ভালোই হইছে, তুইও কাইট্টা পড়।’
‘বেরিয়ে তো যাবই। এই নরকে থাকার কোন ইচ্ছা নেই।’
‘তাইলে সগগে যাও’, আব্বা মুখ বাঁকিয়ে হাসলেন,‘সঙ্গে হুর পরী তো দিয়াই দিলাম। চিন্তার কী, এখনই বিদায় হও।’
আব্বা ভুড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বারান্দার খাটে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসলেন। একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে টানতে লাগলেন।
আমি একটা ট্রাংকে আমাদের যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। আব্বা বারান্দায় খাটে বসে সিগারেট টানতে টানতে আমাদের কীর্তিকলাপ দেখছেন। হঠাৎ হেচকি তুলে হাসলেন। আমি চমকে তাকাতেই আরেকটা হাসি দিলেন। উপহাস। বললেন,‘একটা ট্রাংকে তোদের জিনিসপত্র না আটলে আরেকটা এনে নে। আমি টাকা দিতাছি।’
আমি তার দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকালাম। তিনি তরল গলায় বললেন,‘ইচ্ছে হলে ফার্নিচারও নিয়ে যেতে পারিস। একটা ট্রাক ভাড়া করে নিলেই হবে।’
কোন কথা না বলে উঠে চলে এলাম। একটা ব্যাগ কিনতে হবে। কিছু কাপড় চোপড় ট্রাংকে জায়গা হচ্ছে না। পনির ও মাকে নুরীদের ঘরে বসিয়ে একটা ব্যাগ কিনতে বেরিয়ে গেলাম।
ফিরে দেখি, পনির ও মা নেই। আমার কাপড় চোপড় নুরীদের বাসায় রেখে ওরা চলে গেছে। নুরীর মা বলল, ‘তোমারে পনির একটা চিঠি দিয়া গেছে।’
নুরীর মা একটা ক্ষুদ্র চিরকুট নিয়ে এল।
ভাইয়া,
তোমাকে কষ্ট না দেয়ার জন্যই আমরা চলে গেলাম। কোথায় গেলাম জানানো সম্ভব হল না। কোন দিন হয়তো দেখা হবে। তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি, ভাইয়া। কেন এত ভালোবাসি, তা আমি নিজেও জানি না।
ইতি-
তোমার বোন পনির ।
চলবে ...
পর্ব -০১ । পর্ব - ০২ । পর্ব - ০৩ । পর্ব - ০৪ । পর্ব - ০৫ । পর্ব -০৭ ।
আমার অন্যান্য ধারাবাহিক উপন্যাস :
কুষ্ঠ নিবাস
নাটকের মেয়ে
২| ২৩ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:০৬
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পড়ছি....
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মনে হচ্ছে বাস্তবজীবনে ঘটে যাওয়া কিছু পড়লাম্ ।বর্ণনা সুন্দ হয়েছে। কথোপকথন ও ভাল লাগলো ।চালিয়ে যান সুপ্রিয় ব্লগার ।