নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে সমুদ্র পারি দেওয়া ছেলেটি জেগে উঠে দেখে সে মাত্র বিছানার এপাশ ফিরে ওপাশে শুয়েছে মাত্র

অমিত বসুনিয়া

পৃথিবীর মৃত্যু ঘটুক শূধু তৃনলতাগুলো বেড়ে উঠুক , ছুয়ে দিক নীল আকাশের ভ্রান্ত সীমানা ।

অমিত বসুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের ইতিহাস ( ২১ ফেব্রুয়ারি স্পেশাল ) - অমিত

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৪

একা মাঝারি সাইজের কামরা ।
ইখতিয়ার চোধুরী ইজি চেয়ারে বসে আছে । তার মাথার উপর একটা ফ্যান লো স্পিডে ঘুরছে , ফ্যানের বাতাস ইখতিয়ার চৌধুরীর পছন্দ না কিন্তু ফ্যান ঘোরার সময় যে হালকা কচ কচ আওয়াজ হয় সেইটা উনার খুব প্রিয় ।
উনার পুরো ঘর জুরে পায়চারি করছে উনার বড় নাতনী অর্প । তার কানে মোবাইল ফোন আর মুখে হাসি ।
- কি করছো ?
- এইতো দাদুর রুমে ।
- আচ্ছা কালকে কি আমাদের দেখা হবে ?
- কেন ?
- ওমা তুমি জানো না কালকে একুশে ফেব্রুয়ারি ।
- একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবাই শহিদ দের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় । বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ডেটিং করে নাকি ?
- এখন সবাই করে ।
- আমি করবো না , তুমি জানো আমার দাদু একজন ভাষা আন্দোলন কারী ?

- ওহ তাই ।
- আচ্ছা রাখি পরে কথা হবে । বাই
- বাই
"অর্প" বয়ফ্রেন্ড সজিব অনেক আশা করছিলো কালকে ডেটিং এ যাবে । কিন্তু সেটা আর হলো না । রাগের চোটে সে মোবাইল টা আছাড় দিতে ধরেও দিলো না ।

অর্প ফোন টা হাতে নিয়ে দাদুর পুরা রুমে পায়চারি করছে । ভাবছে সজিবের সাথে এরকম ব্যাবহার করা কি ঠিক হলো ?
সে আবার ফোন দিলো
- হ্যালো ?
- কালকে কয়টায় আসবা ?
- এইতো ৭ টায় ।
- আচ্ছা ।
এতক্ষন ইখতিয়ার চৌধুরী , অর্প'র সমস্ত কথাবার্তা শুনছিলেন । মোবাইলের ওপাশের লোকটি কে বা কি ধরনের কথাবার্তা বলতে পারে সেটাও একরকম আন্দাজ করে নিয়েছিলেন ।
মনে মনে ছোট্ট একটা দুঃখ পেলেন । ঠিক করলেন উনার নাতনী কে সব কথা জানাবেন । তার জানা খুবই জরুরি ।
তাই তাকে ডাক দিলেন ,
- অর্প
ডেটিং এর ঘোরে থাকা অর্প হুশ ফিরে পেলো ।
- জ্বি দাদু ।
- আচ্ছা তুই কি জানিস ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি হয়েছিলো ?
- ঐতো ভাষার জন্য সালাম , রফিক ,জব্বার এরা জীবন দিয়েছিল ।
- জিনিস টা এতো সহজ আর সাধারন ছিলো না যেটা তুই বা তোমরা ভাবছো ।
- তাহলে ?
- শুনতে চাস সেদিন কি হয়েছিল ?
অর্প জানে তার দাদু ভাষা আন্দোলন করেছিলেন , তাই কৌতহল বশত বলল ,
- হ্যা বলো দেখি শুনি ।
শোন,
" আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট এ পড়ি আমাদের বাসা এই জায়গায় ছিলো , তবে এইটা ছিলো না । এইটা আমি তোর বাবার জন্মের কয়েক বছর পর বানিয়েছি ।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ সকাল বেলা ।
আমি বাসা থেকে নাস্তা করে বের হলাম । আগের দিনই বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছিলাম আমরা মিছিলে যাবো । আসলে ঠিক দেশের জন্য বা ভাষার জন্য নয় অনেক টা মজা করেই গিয়েছিলাম ।
আমরা মিছিল কর‍তে করতে এগুচ্ছি । কখন যে মিছিলের সামনের দিকে এসে গেছি খেয়াল নাই ।পেছনে তাকিয়ে দেখিও আমার বন্ধুরা অনেক দূরে ।
আমি স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ দেখি আমার পাশে একটা ছেলে আমার চেয়ে দ্বিগুন স্বরে চেচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে । আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি । ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । আমার মনে হলো উনি কোন ভার্সিটির স্টুডেন্ট । এমন সময় উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
- আমি সালাম ।
আমিও হাত টা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম ,
- আমি ইখতিয়ার
- কিসে পড়ো
- ইন্টার মিডিয়েট
- আমি ঢাবি তে পড়ি ।
- মিছিলে ক্যান ?
- বন্ধুরা মিলে শখ করে এসেছি ।
- আমি মায়ের বকানী খেয়ে এসেছি ।
- মানে ?
আসার সময় আম্মা কইলো
- কিরে তুই মিছিলে যাবি নাকি ?
আমি বললাম , হ্যা
উনি বলল যাস না , মিছিলে গোলাগুলি হতে পারে ।
আমি হাসি দিয়ে বললাম ,
- ছোট বেলা থেকে যে ভাষায় তোমাকে ডেকে এসেছি সে ভাষা কেউ জোর করে কেড়ে নিবে সেটা আমি কেমন করে মানি ?
- তারপরেও তোর যদি কিছু হয়ে যায় ?
- আমার যদি কিছু হয় তাহলে মনে রাখিও ,আমার মতো লক্ষ্য সালাম কে তুমি পাবা ।
আম্মা মুখ ভার করে বললো ।
- তুই যাবি না ।
আর আমি হাসতে হাসতে বের হয়ে আসছি ।
সালাম ভাই এর কথা শুনে আমি থ মেরে গেলাম ।
ফাজলামো করে মিছিলে এসেছিলাম ,একি !
মোটামুটি তখন পরিস্থিতি বুঝে উঠলাম ।তখন আমার গলার স্বর ও হঠাৎ করে দ্বিগুন হয়ে গেলো ।
সালাম ভাই আর আমি পাশাপাশি হাটতে হাটতে স্লোগান দিচ্ছি , হঠাৎ সামনে পুলিশ ।
আমরা তার পরেও এগিয়ে যাচ্ছিলাম ।
দেখি পুলিশ গুলি ছুড়তেছে । মোটামুটি হতবাক হয়ে দ্বাড়িয়ে আছি । হঠাৎ পাশ দিয়ে শাই করে কি যেন উড়ে গেলো ।
আমি পেছনে তাকালাম ,
দেখি সালাম ভাইকে গুলি লেগেছে । আমি ঘুরে গিয়ে উনাকে পাজাকোলা করে ধরলাম ।
উনার গায়ের রক্ত আমার গায়ে মাখামাখি হলো ।
এমন সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছাড়লো ।
এই আস্কমিক আক্রমনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম ।
পরে জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি আমার রুমের বিছানায়।
কে কিভাবে আমাকে এখানে এনে দিয়ে গেছে কে জানে । রাতে রেডিও তে খবর এলো সালাম রফিক জব্বার প্রমুখ শহীদ হয়েছেন ।
তাহলে কি ?
আমিও হতবাক হয়ে গেলাম "
এতক্ষন অর্প অবাক হয়ে শুনছিলো ।
ইখতিয়ার চৌধুরী এইসব কথা বলছিলেন । তার চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছিল ।
অর্প কিছু না বলে উঠে চলে গেলো ।
পরের দিন সকাল , ২১ ফেব্রুয়ারির সকাল ।
অর্প ঘুম থেকে উঠলো ,উঠে তার দাদুর রুমে গিয়ে উনাকে ডেকে তুললো । তারপর উনাকে নিয়ে গেলেন শহীদ মিনারে । শহীদ মিনারে ফুল দিলো, দিয়ে দাদুর পাশে দ্বাড়িয়ে দ্বাড়িয়ে দেখছে ।
ঠিক এইসময় সজিব ফোন দিলো ।
অর্প ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখলো ।
পাশাপাশি দ্বাড়িয়ে আছে ইখতিয়ার চোধুরী আর তার নাতনী অর্প । লোকজন আসছে শহীদ মিনারে ফুল দিচ্ছে আর তারা শুধু তাকিয়ে দেখছে ...............
( ঘটনাটা কাল্পনিক )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৩

মাদিহা মৌ বলেছেন: ভাল লাগলো :)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৭

অমিত বসুনিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.