নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর মৃত্যু ঘটুক শূধু তৃনলতাগুলো বেড়ে উঠুক , ছুয়ে দিক নীল আকাশের ভ্রান্ত সীমানা ।
সবুজ পাতায় ঢাকা পুরো পাটক্ষেত।
আমগাছ কিংবা কাঠালগাছের পাতার মত ময়লা লাগানো বিবর্ন সবুজ নয়, একদম উজ্জ্বল সবুজ। সেই পাটক্ষেতে দৌড়ের প্রাকটিস করছে উসাইন বোল্টের বিশেষ শিষ্য সম্রাট নামের একটি ছাগল। তার পেছনে দৌড়াচ্ছে বিটলু। এই পাটক্ষেতটা তাদেরই।নাহ জমিটা তাদের না।
শুধু পাটক্ষেতটা তাদের।জমিটা গ্রামের বিশিষ্ট ব্যাক্তিত হাজী মিয়াঁর। বিটলুর বাবা আব্দুর রহিম গত দশ বছর ধরে এই জমিটা সহ হাজি মিয়াঁর বেশকিছু জমি বর্গা নেয়।ফসল যা উঠে তার অর্ধেক যায় হাজি মিয়াঁর গুদামে বাকিটা আব্দুর রহিমের উঠানে। আব্দুর রহিমের বড় ছেলে বিটলুর কাজ হচ্ছে সেই সব জমিতে যেন ছাগল বা অন্যান্য পশুপাখি উঠে ক্ষেত নস্ট না করে সেদিকে তদারকি করা।
ছাগল তাড়িয়ে ক্লান্ত বিটলু বাড়ির সামনের আমগাছটার নিচে জিড়াচ্ছে। তার ১২ বছরের তামাটে দেহ দিয়ে চিক চিক করে ফুটে উঠছে কাদা মাখানো ঘাম। তখন বিটলুদের বাড়ির ছাগল পাশের বাড়ির বাড়ন্ত লাউ গাছের কচি পাতা আপন মনে খেয়ে চলছে।সেদিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল সে।
হাজি মিয়াঁ নিজের বাড়ির বারান্দায় একটা কাঠের চেয়ারে বসে খবরের কাগজে চোখ বুলাচ্ছেন। তার সামনে একটা চৌকি, চৌকির উপর একটা পাটি বিছানো। গ্রামের লোকজন মাঝে মাঝে তার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ নিতে এবং বিচার চাইতে আসে। তাদের জন্যই এই ব্যাবস্থা। হাজি মিয়াঁর পুরো নাম হাজি সোলায়মান মিয়াঁ চৌধুরী। আজ থেকে ৭ বছর আগে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করে আসার পর থেকে তার নাম সোলায়মান চৌধুরী থেকে হাজি মিয়াঁ হয়ে গেছে। হাজি মিয়াঁ খবর পড়ার সময় থেকে থেকে মুখ বিকৃতি করতেছেন। তার সামনে বডিগার্ড লাভলী সিং এর মত দাঁড়িয়ে থাকা কুদ্দুস মিয়াঁ হাজি মিয়াঁর সাথে সাথে একই ভঙ্গীতে মুখ বিকৃতি করতেছে। যেন হাজি মিয়াঁকে বুঝাচ্ছে সে তার কত বড় অনুগত। শুধু মুখ বিকৃতি করছে তা না , সেটা যেন হাজি মিয়াঁর চোখে পড়ছে তার সর্বোচ্চ চেস্টা সে করে যাচ্ছে। কুদ্দুস মিয়াঁ হচ্ছে হাজির খাস লোক। হাজি মিয়াঁর হাজি হবার বছর বিশেক আগ থেকেই কুদ্দুস হাজি মিয়াঁর আস্তিন গোটানোর কাজ করে আসতেছে।
বাড়ির পাশের ডোবায় গরুকে গোসল করায় ব্যস্ত আব্দুর রহিম। ডোবার উপরে আরেকটা গরুর দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিটলু । আব্দুর রহিমের পেটানো শরীর। সারাদিন খাটাখাটনির ফলে চর্বি নামক বস্তু কোনদিন দেহের উপর প্রভাব বিস্তার করার সাহস পায়নি। তার উপর ছোটবেলা থেকেই হাডুডুর গ্রাম চ্যাম্পিয়ন রহিম। একটা গরুর গোসল সে করায় সেটা বিটলুর হাতে দিয়ে আরেকটা নিয়ে আবার নামলো ডোবায়। ডানহাতে ধরা একমুঠো খড় ঘন ঘন গরুর পিঠে চালাচ্ছে। গত বছর কেনা বাছুর দুইটার এবছর ভালোই স্বাস্থ হইছে। হাটে তুললে নিশ্চিত একটা ২০ হাজারের উপরে হবে।
গোসল করানো শেষ করে গরু দুইটা বাড়ীর সামনে গরু বাধা খুটিতে বাধলো। বাধতে বাধতে আব্দুর রহিমের মনে পড়লো। গোয়ালঘরের একদিকের বেড়া দুর্বল। ঘরের বাশের খুটি গুলোয়ও ঘুণ ধরেছে। এবার সেগুলো পালটানো দরকার। তার উপর গোয়ালঘরের দরজাটাও পুরাতন। চারিদিকে চোরচামাটার প্রভাব যে হাড়ে পড়ছে তাতে পরে সর্বনাশ হইতে দেরী থাকবেনা। বাড়ির ভেতরে ঢুকে গোসল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে হাটের দিকে রওনা দিলো রহিম সাহেব। তার পিছু পিছু বিটলু।
গুদামের সামনে দাঁড়িয়ে হাজি মিয়াঁ। মাচায় থাকা ধান লোক লাগিয়ে বস্তা ভর্তি করতেছে। প্রতিবছর সেই ধান ট্রাক নিয়ে এসে ধান ব্যাবসায়ী নিয়ে যায়। এবার কেন জানি এখনো আসছে না। আগে ভাগেই বস্তায় ভরে রেডী করে রাখতেছে। সেসবের তদারকি অবশ্য কুদ্দুস মিয়াঁ একাই করতে পারে। তারপরেও হাজি মিয়াঁ নিজে থেকে করে নিতেই সাচ্ছন্দবোধ করে। বউ আর সম্পদ কখনো অন্যের ভরসায় রাখা উচিত না।
চুরি হলো আব্দুর রহিমের বাড়িতে। গোয়ালঘরের পেছনের বেড়া ভেঙ্গে গরু দুইটা চোর নিয়ে গেছে। উঠানে বসে মাথায় হাত দিয়ে আছে আব্দুর রহিম। বিটলু তখন পাশে দাঁড়িয়ে সে জানেনা এইসময় সে কি করবে। সে কি বাপের মত মাথায় হাত দিয়ে বড় মানুষের মত বসে থাকবে নাকি ছোটবাচ্চার মত কাঁদবে। এবার গরু বেচে তার একটা সাইকেল কেনার কথা ছিলো। সাইকেল না পাওয়ার কস্টে অবশ্য তার চোখে পানি আসতেছে। কিন্তু এই বয়সে কাঁদলে আশেপাশের লোকে বলবে, অতবড় দামড়া পোলা কান্দে।
গ্রামের লোকজন বার বার আসতেছে আর গোয়ালঘরের ভাঙ্গা বেড়ার দিকে গোয়েন্দা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
বাড়ির বারান্দার চেয়ারে বসে আসে হাজি মিয়াঁ। সামনের চৌকিতে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে আব্দুর রহিম। হাজি মিয়াঁ গলায় খাঁকারি দিয়ে বললো,
- দ্যাখ আব্দুর রহিম চুরি হইয়াই গ্যাছে এখন আর কি করার। আগে যদি আসতি তাইলে দুইটা বাশ নিয়া যায়া গোয়ালঘরের বেড়া ঠিক করতি পারতি। এখন আর কি করার। সবই আল্লাহ লীলাখেলা।
- মিয়াঁ ভাই দ্যাখেন না যদি কিছু করতে পারেন। গরু দুইটা নাহক ৫০ হাজার টেকা হইত।
- দ্যাখি কি করবার পারি। দুই যা বাড়িত যা । খাইছিস ? না খাইলে খায়া যাস।
সালাম দিয়ে আব্দুর রহিম সেখান থেকে চলে গেলো।
গরু চুরির সাত দিন হয়ে গেলো চোরের কোন হদিস পাওয়া গেলো না। আব্দুর রহিম তার সেরাটা চেস্টা করেও কোন কুলকিনাড়া করতে পারলো না। শেষে থানায় গিয়ে ডায়েরী করছে। কিন্তু সেখানেও তেমন কোন ভালো খবর পায় নাই। ইদানিং পাটক্ষেতে ছাগলের ঘন ঘন আনাগোনা হয়। বিটলু আর তাড়াতে যায় না। গরু নাহক সাইকেলের শোঁকে সেও গা ছেড়ে দিয়েছে।
এবার আবার চুরি হইলো। চুরি হইছে হাজি মিয়াঁর বাড়িতে। সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে ১ লাখ টাকা আর তিন ভরি গয়না।
সকাল থেকেই বাড়ির উঠানে মানুষ ভর্তি। হাজি মিয়াঁ তখনো বারান্দায় বসা। তার মাথার উপরে কুদ্দুস মিয়াঁ শোঁকে কাতর। তার চোখ দুটো ছোট বাচ্চার মত পানিতে টলমল। ঘন্টাখানেক চুপ থাকার পর হাজি মিয়াঁ মুখ খুললেন।
- দ্যাখেন মিয়াঁরা । এইভাবে তো থাকা যায় না। সেদিন আব্দুর রহিম মিয়াঁর বাড়িতে চুরি হইলো আইজকা আমার বাড়িতে।
গ্রামের সবাই মিলে হু হু করে হাজির কথায় সায় দিলো।
হাজি মিয়াঁ আবার বলে উঠলো,
- চলেন সবাই মিল্লা থানা যামু। চোরের নাগাল না পাওয়া পর্যন্ত থানা থেকে যামু না।
তিনদিন থানায় ছোটাছুটির পর চোরকে পাওয়া গেলো। চোর চুরির কথা স্বীকার করলো এবং হাজি সাহেবের মালামাল ফেরত দিলো।
আব্দুর রহিম তখনো আশায় চোর গরুও ফেরত দিবে। কিন্তু চোর গরু চুরির কথা অস্বীকার করলো।
বিচার শেষ, চোর থানা হাজতে থেকে কোর্টে চালান হলো। হাসিমুখে বাড়ি ফিরলো আব্দুর রহিম সহ বাকি সবাই।
যাইহোক হাজি মিয়াঁর মাল তো ফেরত পাইছে।
২| ১৭ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৫০
অমিত বসুনিয়া বলেছেন: hmm
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: হাজি মিয়ার ভাগ্য ভাল।