নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিয়মিত একজন মানুষ। কোনোকিছুতেই নিয়মে আবদ্ধ হয়ে থাকতে ভালো লাগে না।

মোঃ আসাদুজ্জামান মিঠু

আপনার মতোই একজন মানুষ আমি। আমার হাত আছে, পা, চোখ, নাক, মুখ সবই আছে আপনার মতো। ফুটপাতে নোংরা কাপড় পরিহিত টোকাইটারও(অভিজাত সম্প্রদায়ের মতে) আপনার আমার মতো হাত আছে, পা আছে। ওকে জানার ইচ্ছে তো নেই? তাহলে আমাকে জানার এতো ইচ্ছে কেনো?

মোঃ আসাদুজ্জামান মিঠু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিন বদলের আশায়

২৭ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৫:১১

রাত দেড়টা পেড়িয়ে গেছে। লাঠির মতো সমান্তরাল রাস্তা থেকে শাখার মতো বেড়িয়ে যাওয়া ছোট্ট রাস্তাটা ধরে। আমি হাটছি। এ তল্লাটের সকল রাস্তাঘাট আমার নখদর্পনে। এখানে যা কিছু ঘটে সবকিছুই আমি জানি, দেখি, বুঝি। সব জায়গায় আমার অবাধ যাতায়াত । আমাকে দেখে কেউ ভয় পায় না, কেউ ফিরেও তাকায় না। আমাকে ওরা কেউ মানুষ মনে করে না। আমার সামনে যত রকমের অপরাধ আছে তা ওরা করে নির্বিঘ্নে। প্রতিবাদের ভাষা আমি ভূলে গেছি । আমার প্রতিবাদের ভাষায় বিন্দুমাত্র মতিভ্রম হয়না কারো। কিছুদিন আগেও আমাকে সবাই মান্য করতো। গ্রামের একটা স্কুলে শিক্ষকতা করতাম, দু পয়সা ভালোই রোজগারও করতাম। বাবা মা কে জন্মের পর আর দেখি নি। এতিমখানায় বড় হয়েছি বলে, আমি একান্তই একা। চল্লিশোর্ধ এক পৌড়া রান্না করে দিতো। আমি ওনাকে খালা ডাকতাম। উনি আমাকে নিজ সন্তানের মতোই স্নেহ করতেন। হয়তো নিঃসন্তান বিধবা বলেই আমি তার সন্তানের জায়গাটা পেয়েছিলাম স্থায়ীভাবে। দিনগুলো বেশ যাচ্ছিলো। স্কুলের চাকরী আর ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে নিয়ে। এর মাঝেই হঠাৎ একদিন খালা আমাকে বিয়ে করার কথা বললেন। খালার বয়স হয়ে গেছে। উনার কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে ভেবেই পাত্রী দেখতে বললাম। পাত্রী দেখা হয়ে গেল। বিয়ের দিনক্ষণ সব ঠিকঠাক। উপজেলা শহরে গেলাম বিয়ের বাজার করতে। খালা যা কিছু নিতে বলেছিলো সব কিছু নিয়ে একটা একটা ঠেলাগাড়ী বোঝাই করে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলাম, কাছের এক বন্ধুকে দাওয়াত দিতে হবে তাই। রাত বারোটা বেজে কয়েক মিনিট। পাকা রাস্তা থেকে কাঁচা রাস্তা ধরে এগুচ্ছি আমি। কিছুদুর যেতে না যেতেই হঠাৎ নারীকন্ঠের এক ভয়ার্ত চিৎকার পথ আগলে দাড়ালো আমার। চিৎকারটা কোনদিক থেকে আসছে শোনার জন্য কান খাড়া করে দাড়িয়ে গেলাম। পাশেই ধস্তাধস্তির আভাসও পেলাম। এ এলাকায় ডাকাত! কোনো কালে শুনিনিতো। কিছুটা ভয় লাগছিলো, আবার উৎসাহটাও দমাতে পারছিলাম না। ভয় আর উৎসাহের সামান্য স্নায়ুযুদ্ধ শেষে নতুন কিছু জানার উৎসাহটাই জয়ী হলো। ভীরু পদক্ষেপে এগিয়ে গেলাম শব্দ উৎসের দিকে। মনে হলো কয়েকজন যুবক কিছু একটার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমি একবার ডাকলাম, দুই বার ডাকলাম, কয়েকবার ডাকার পরও যখন কোনো সাড়া পেলাম না তখন এগিয়ে গেলাম। একটু কাছে যেতেই একটা নারীকন্ঠের আর্তচিৎকার শুনতে পেলাম। বাঁচাও ধ্বনিতে মুখরিত সেই জনমানবহীন বিস্তীর্ণ প্রান্তর। মুহুর্তে নিরব নারীকন্ঠ। তার চারপাশে ঘিরে থাকা চোখগুলো শান্ত হতে থাকলো। আমি ছুটে গেলাম। দেখলাম বিবস্ত্র এক নারীদেহকে ঘিরে কিছু পশু । আমি ওদের কয়েকজনকে চিনলাম চেয়ারম্যানের ছেলে রহিম, তার বন্ধু রফিক, আকবর, কুদ্দুস আরো কয়েকটা অচেনা মুখ। আমাকে দেখে ওরা ভয় পেয়ে গেলে। আমার চাঁদর দিয়ে আমি দেহটা ঢেকে দিতে যেতেই পিঠে একটা শীতল স্পর্শ অনুভব করলাম। আমি লুটিয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছিলো জ্ঞান হারাচ্ছি। চাঁদটা ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর আবার আস্তে আস্তে চাঁদটা উজ্জ্বল হতে থাকলো। সেই চাঁদের আলোয় আমি দেখলাম একটা বিবস্ত্র নারীদেহ পাশে একটা মানুষের লাশ। এই দুটো প্রাণহীন দেহকে ঘিরে কিছু বুনো জানোয়ারের উল্লাস । আমি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাইলাম অথচ কোনো শব্দ সৃষ্টি করতে পারলাম না। লাশ দুটো উঠাবো ভেবে যেই ধরেছি সেই দেখলাম আমি কথা বলার ক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি আমার শক্তিও হারিয়েছি। হাটতে পারছিলাম না। ভাবলাম রাতটা মাঠেই কাটিয়ে দিনের আলোতে বাড়ী ফিরবো। নতুন একটা সকাল হলো। আমি আমার বাসস্থানের পথে হাটছি। রাস্তায় আসতে অনেককেই দেখলাম। কলিম চাচাকে ছালাম দিলাম। জবাব না দিয়ে চাচা হেটে চললেন। ভাবলাম হয়তো দেখতেই পাননি আমাকে। বাড়ীর কাছে আসতেই মানুষের ভীড় দেখতে পেলাম। "খালার কিছু হয়নি তো? " অজানা আতঙ্কে বুকটা কেপে উঠলো। পা চালালাম দ্রুত। দেখলাম খালা কাঁদছে আর আমার নাম ধরে বিলাপ করছে। আমি খালার পাশে বসে খালাকে ডাকলাম। খালা নিরুত্তর। আবার ডাকলাম এবারও খালা নিরুত্তর। কিসের জন্য খালার এ কান্না? প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে নিজেকে আবিস্কার করলাম অশরীরী আত্মা হিসেবে। আমার বাগদত্তার কথা মনে পড়লো। ভাবলাম বিয়ে তো আর হয়নি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হবে। সে সুখী হোক। - - সেদিনের পর প্রায়ই বাড়ীতে গিয়েছি। খালার কান্না ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাইনি। চেয়ারম্যানের ছেলেটা বিয়ে করেছে প্রায় বছর দুই হবে । আজ তার একটা কন্যা সন্তান হয়েছে। দোয়া করি ভালো থাকুক সে। - এখনো প্রায়ই দেখি এখানে ওখানে নারীকন্ঠের ভয়ার্ত আর্তনাদ। আমি শুনি, আমি দেখি। প্রতিবাদ করারর ইচ্ছে জাগে করতে পারি না। কোন একদিন কেউ প্রতিবাদ করবে এই আশায় দিনগুনি। আল্লাহ্ একদিন ওদের উচিৎ জবাব দিবে এই প্রত্যাশায় রাত জাগি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.