![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুমেকের মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তারা ২৫ জন
স্যালাইন ও ব্যথানাশক দিয়ে তিনদিন ধরে ২৫ শ্রমিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেকে) মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের কেবিন কিংবা বেডে তাদের কোনো স্থান হয়নি। হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে ওরা কেবল গুমরে কাঁদছে।
এ আর্তনাদ সেনাকল্যাণ সংস্থা পরিচালিত মংলার এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ভবন ধসে আহত শ্রমিকদের।
শনিবার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে খুমেকে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা গেল। মংলায় ভবন ধসের পর এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২৯ শ্রমিককে।
তাদের মধ্যে হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছেন ২৫ জন। গুরুতর আঘাত পাওয়ায় যশোরে পাঠানো হয়েছে তিনজনকে। এরা হলেন- ঝলমলিয়ার তরুণ চৌধুরি, শ্যামনগর বাইনতলার মনিরুল ইসলাম ও ঠিকানা না জানা লিয়াকত। রিলিজ দেওয়া হয়েছে একজনকে।
হাসপাতালে ভর্তি আছেন, মংলার হৃদয় আকন্দ, নিরালা দরগা পাড়ার মজিদ গাজি, বাগমারার আলামিন, শফিকুল ইসলাম বাবু, সাহেব আলী, ইমদাদুল হক, পিরোজপুরের শফিকুল গাজি, গৌরম্ভার ছাইরাবাদের রমিজ শেখ, মোজাফফার গাজি, সামাউন শেখ, বটিয়াঘাটা ভান্ডার কোটের মানছুর, নাজিম মোল্লা, ইমদাদ, ইনছার ফকির, দিনাজপুর পূর্ব বারগার মশিউর, দিনাজপুর রানিপুরের মিজান আলী, রামপাল রাজনগরের রাজু আকুজ্ঞী, আশাশুনি মির্জাপুরের আনিস সরদার, মংলা বি এল এস রোডের মাহফুজুর রহমান তিনি উদ্ধার করতে যেয়ে আহত হন, দাকোপের পশ্চিম শ্রীনগরের রবিউল গাজি, দেবাশীষ মন্ডল, সিলেট সুনাম গজ্ঞের টেংরা টিলা গ্রামের মাসুদ মিয়া, সাতক্ষীরা শ্যামনরের বাইনতলা গ্রামের ইউনুছ শেখ, ইয়াছিন শেখ ও মংলা সোনাতুলির আবু সাইদ।
বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় পশ্চিম শ্রীনগরের রবিউল গাজির সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাল নেই, ওই ঘটনার পর বোবা হয়ে গেছি। আমি মশলার কড়াই নিয়ে ওপরে উঠছিলাম। আলামিন ওপরে মশলা ঢেলে নিয়েছিল। শুনেছি ও মারা গেছে। ওর সঙ্গে তখনই শেষ দেখা হবে বুঝতে পারিনি।
স্মৃতিকাতর হয়ে তিনি বলেন, নামার সময় হঠাৎ শুনতে পেলাম কড়-কড়-মড়-মড় শব্দ আর কিছুই বলতে পারিনা। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে।
তিনি বলেন, আমি যদি মারাও যেতাম তাহলে হয়তো আমার এতো কষ্ট হতো না। এতো যন্ত্রণা সহ্য করা লাগতো না। ব্যথার কষ্টে সারারাত কাতরাতে থাকি, ঘুমাতে পারি না। ইট, রড, সিমেন্টের ভেতরে চাপা পড়েছিলাম।
তিনি আরো বলেন, সংসারে আমরা ৮ জন মানুষ। বাবার কাজ করার ক্ষমতা নেই। আমি সংসারে বড় ছেলে । আমার আয়ের ওপরে পেটে ভাত জোটে বাকিদের।
কারখানা থেকে সাহায্যের আশ্বাসের কথা জানানো হলে তিনি বলেন, আমরা এ রকম ধরণের কোনো কথা জানতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, আমার কোনো অনুদানের দরকার নেই । আমি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে কাজ করে খেতে পারি সে ব্যবস্থা করে দিন।
কাতরানো অবস্থায় কথা হয় মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনদিন হয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা সেই বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমাদের জন্য কোনো কেবিন কিংবা খাটও জোটেনি।
এসব শ্রমিকেরা জানান, বর্তমানে তাদের অনেকের ঘরে রান্নাও হয় না। কিন্তু কেউ খোঁজও নেয় না।
খুমেকের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, আহত ২৫ শ্রমিকদের সার্জারি বিভাগের ১১ জন চিকিৎসক ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা দিচ্ছেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় তাদেরকে মেঝেতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সেনা কল্যাণ সংস্থার মালিকানায় ১৯৯৪ সালে পশুর নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ড নামে সিমেন্ট বাজারজাত শুরু করে।
কারখানাটি গুদাম নির্মাণের জন্য ১৪২ কোটি টাকায় চীনের সিএনবিএম ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয়।
২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে চীনা কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ আইটিসিএল নামক অপর একটি কোম্পানি এ কাজের সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করে। চলতি বছরের ১০ নভেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা। বাংলাদেশি এই কোম্পানি বৃহস্পতিবার সকালে ৪০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এ ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুপুরে ভবনটি ধসে পড়ে।
©somewhere in net ltd.