![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবু আলী হোসাইন ইবনে সিনা তিনি হলেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সেরা চিকিৎসক ও গণিতজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং একজন দার্শনিক ব্যাক্তি । তাকে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে । তাকে একইসাথে ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান এবং রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিরা তাদের জাতীয় জ্ঞানবীর হিসেবে দাবী করেছেন । মুসলিম বিশ্বে তার প্রভাব সব চেয়ে বেশী । মধ্যযুগীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের ভিত রচনায় তার অবদান অনস্বীকার্য । তার মূল অবদান ছিল চিকিৎসার শাস্ত্রে । তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশ্বকোষ আল কানুন ফিত তীব রচনা করেন যা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্তও মধ্যপ্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠ ছিল । আরবিতে ইবনেসীনাকে আল শায়খ, আল রাঈস, তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে । ইউরোপে তিনি আভিসিনা নামে সমধিক পরিচিত, হিব্রু ভাষায় তার নাম আভিসিনা ।
ইবনে সিনা বুখারার বর্তমান উজবেকিস্তান অন্তর্গত খার্মাতায়েন জেলার আফসানা নামক স্থানে ৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে কিংবা অনেকের মতে আগস্ট মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন । আরবি পঞ্জিকা মতাবেক সালটি ছিল ৩৭০ হিজরী । তার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম সিতারা । তার মাতৃভাষা ছিল ফার্সি । ফার্সি ভাষায় তিনি বেশ কিছু কবিতা এবং গ্রন্থ রচনা করেছেন । তবে সমকালীন অন্যান্যদের মতো তিনিও আরবি ভাষাকে জ্ঞান প্রকাশের মূল বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন । ইবন সীনার পিতা বুখারার সামানীয় সম্রাটের অধীনে একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন ।
ইবনে সিনার জন্মের পর সপরিবারে আফসানাতে বাস করতেন । ইবনে সিনারর দ্বিতীয় ভাইয়ের জন্মের পরে আবদুল্লাহ এবং সিতারা সবাইকে নিয়ে বুখারায় চলে আসেন । তাদের শিক্ষার জন্য যথোপযুক্ত গৃহশিক্ষক নিয়োগ করেন । এখান থেকেই সীনার শিক্ষার শুরু । সব ভাইয়ের মধ্যে সীনা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই বিশেষ মেধার স্বাক্ষর রাখেন । ইবনে সিনা মাত্র ১০ বছর বয়সে সমগ্র কুরআন মুখস্ত করেন । মুখস্তের পাশাপাশি তিনি সকল সূক্ষ্ণ ও জটিল বিষয় নিয়ে ছোটবেলা থেকে চিন্তা করতেন । এতে তার বাবা মা এবং শিক্ষক সকলেই বিস্ময় প্রকাশ করতেন । বাবা বুআলীকে ইসমাইলী শাস্ত্র বিষয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন । কিন্তু ইবন সীনা ইসমাইলীদের কোন কথাই বিনা যুক্তিতে মেনে নিতেন না । তাদের অনেক বিষয়ই তিনি যুক্তি দিয়ে প্রত্যাখান করেন । মূলত এরা সীনাকে শিক্ষা দেয়ার মত যোগ্য ছিলনা । তাই আবদুল্লাহ পুত্রের জন্য আরও যোগ্য শিক্ষকের খোজ করতে থাকেন ।
আগে থেকেই আবদুল্লাহ সেখানকার এক মেওয়া বিক্রতার কথা জানতেন । এই বিক্রতা ভারতীয় গনিতশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিল । বাবা আবদুল্লাহ সীনাকে এই মেওয়া বিক্রতার কাছে গণিত শিখার ব্যবস্থ করে দিলেন । মেওয়া বিক্রতা এর আগে কাউকে তার জ্ঞান বিতরণের সুযোগ পায়নি । এই সুযোগে সে সীনাকে সানন্দে শিক্ষা দিতে থাকে এবং সীনার মেধা এতে আরও সহযোগীর ভূমিকা পালন করে । অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় গণিতের অনেক বিষয় তার আয়ত্তে এসে যায় । এরপর তাকে অধ্যয়ন করতে হয় ইসমাইলী শাস্ত্রের আইন অধ্যায় । এতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেন । এর মাঝে আর একজন যোগ্য শিক্ষকের সন্ধান পান সীনার পিতা । তিনি ছিলেন তৎকালীন অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব আল নাতেলী । নিজ পুত্রকে শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি নাতেলীকে নিজের গৃহে থাকার ব্যবস্থা করে দেন । এই শিক্ষকের কাছে সীনা ফিকহ, ন্যায়শাস্ত্র, জ্যামিতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র শিক্ষা করেন । ছাত্রের মেধা দেখে পড়ানোর সময় নাতেলী বিস্মিত হয়ে যেতেন । তার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেতে হত তাকে । বিস্মিত হয়ে তিনি আবদুল্লাহকে বলেছিলেন আপনার ছেলে একদিন দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী হবে । দেখবেন ওর পড়াশোনায় কোন ব্যাঘাত যেন না ঘটে ।
পরবর্তীতে সীনার শিক্ষক হিসেবে আরও দুজন নিযুক্ত হন তারা হলেন ইবরাহিম এবং মাহমুদ মসসাহ । এসময় শিক্ষক নাতেলী বুঝতে পারেন সীনাকে বেশী দিন শিক্ষা দেয়ার মত সামর্থ বা জ্ঞান তার নেই । তখন ইবনে সীনা শিক্ষার বিষয়ে অনেকটা নিজের উপর নির্ভর করেই চলতে থাকেন । এসময় তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেনঃ
যে কোন সমস্যার সমাধান ওস্তাদ যেরুপ করতেন আমি তার চেয়ে ভালভাবে করতে পারতাম । তার কাছে জাওয়াহির মানতিক বা তর্কশাস্ত্রের খনি নামক বইটি পড়ে মুখস্থ করার পর বুঝলাম আমাকে শেখাবার মত কিছু নতুন আর তার কাছে নেই । তখন বইগুলো আর একবার পড়তে শুরু করলাম । ফলে সকল বিষয়ে আমি বিশেষ পারদর্শী হয়ে উঠলাম । ইউক্লিডের জ্যামিতির দ্য এলিমেন্টস প্রথম কয়েকটি সম্পাদ্যের সমাধানে ওস্তাদের সাহায্য নিয়ে বাকি কটির সমাধান আমি নিজেই করলাম । টলেমির ১৩ খণ্ডের আলমাজেস্ট বইটি শুরু করে সমস্যার সম্মুখীন হলে ওস্তাদ বললেন তুমি নিজে সমাধান করতে চেষ্টা কর যা ফল দাড়ায় এনে আমাকে দেখাও । আমি বিচার করে রায় দেবো । একে একে সব সমস্যার সমাধান করে ওস্তাদের সম্মুখে হাজির করলাম । তিনি দেখে-শুনে বললেন ঠিক হয়েছে সব কটিই নির্ভুল সমাধান হয়েছে । আমি বেশ বুঝতে পারলাম এ ব্যাপারে ওস্তাদ আমার কাছ থেকে কিছু নতুন তথ্য শিখে নিলেন ।
এভাবে নাতেলী বুঝতে পারলেন তার প্রয়োজন শেষ । এরপর তিনি বুখারা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । বুআলী নিজেই এবার নিজের শিক্ষক সাজলেন । এসময় চিকিৎসা শাস্ত্র এবং স্রষ্টাতত্ত্ব সম্বন্ধে তার আরো মৌলিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে । এরিস্টটলের দর্শন সম্পূর্ণ ধাতস্থ করেন এ সময়েই । নতুন বই না পেয়ে আগের বইগুলোই আবার পড়তে শুরু করেন । তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল । বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা তার কাছে পড়তে আসত ইবনে সিনা তরুণ বয়সেই শিক্ষকতা শুরু করে দিলেন ।
এ সময় বুখারার বাদশাহ নুহ বিন মনসুর এক দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত হয় । দেশ এবং বিদেশের সকল চিকিৎসক এর চিকিৎসায় ব্যর্থ হন । ততদিনে সীনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় বাদশাহের দরবারে তার ডাক পড়ে । তিনি বাদশাহকে সম্পূর্ণ সাড়িয়ে তুলেন । তার খ্যাতি এ সময় দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে । আরোগ্য লাভের পর বাদশাহ সীনাকে পুরস্কার দেয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন । এসময় সীনা চাইলে বিপুল সম্পদ এবং উচ্চপদ লাভ করতে পারতেন । কিন্তু তিনি কেবল বাদশাহের কাছে শাহী কুতুবখানায় বাদশাহের দরবারের গ্রন্থাগারে প্রবেশ করে পড়াশোনার অনুমতি প্রার্থনা করেন । বাদশাহ তার এই প্রার্থনা মঞ্জুর করেন । এভাবেই ইবন সিনা শাহী গ্রন্থাগারে প্রবেশের সুযোগ পান । গ্রন্থাগারের ভিতরে যেয়ে অবাক হয়েছিলেন সিনা । কারণ এমন সব বইয়ের সন্ধান তিনি সেখানে পেয়েছিলেন যেগুলো এর আগেও কোনদিন দেখেননি এবং এর পরেও কখনও দেখেননি । প্রাচীন থেকে শুরু করে সকল লেখকদের বইয়ের অমূল্য ভাণ্ডার ছিল এই গ্রন্থাগার । সব লেখকের নাম তাদের রচনাসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা তৈরির পর তিনি সেগুলো অধ্যয়ন করতে শুরু করেন । এমনই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন যে নাওয়া খাওয়ার কথাও তার মনে থাকত না ।
১০০১ সালে ইবন সিনার পিতা মৃত্যুবরণ করেন । সুলতান নুহ বিন মনসুরও ততদিনে পরলোকে চলে গেছেন । নুহ বিন মনসুরের উত্তরাধিকারী নতুন সুলতান ইবন সিনাকে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত করেন । এভাবে সিনা বুখারা অঞ্চলের শাসনকর্তার অধীনে সরকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন শুরু করেন । কিন্তু রাজনীতিতে তিনি ছিলেন নতুন । অভিজ্ঞতার অভাবে কার্য সম্পাদনে তাকে হিমশিম খেতে হয় । কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ট্রান্সঅকসিনিয়ায় বিদ্রোহ দেখা দেয় । খার্মাতায়েনের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে ঐতিহাসিক অকসাস নদী আমু দরিয়া প্রবাহিত হয়ে গেছে যা বুখারা এবং তুর্কীস্তানের মধ্যবর্তী সীমারেখা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে । ট্রান্সঅকসিনিয়া তথা খার্মাতায়েনের লোকেরা তাই বেশ দুর্ধর্ষ প্রকৃতির ছিল । তাদের বিদ্রোহ দমন ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। ইবন সিনা এই বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হন এবং এতে সুলতান তার উপর বেশ বিরক্ত হন । আত্মসম্মানবোধ থেকেই ইবন সিনা চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়েন । এই যাত্রায় তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল । কখনও রাজার হালে থেকেছেন কখনও আবার কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন । তবে সকল কিছুর মধ্যেও তার মূল অবলম্বন ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞান । এই বিজ্ঞানের বলেই তিনি সবসময় সম্মানিত হয়েছেন । এর বদৌলতেই চরম দুর্দিনের মধ্যেও আনন্দের দেখা পেয়েছেন ।
ইবন সিনা অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন । তার অভিজ্ঞতার ঝুলিও ছিল সমৃদ্ধ । তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ নগরী খোয়ারিজমে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি পণ্ডিত আল বেরুনির সাথে সাক্ষাৎ করেন । আল বেরুনির মূল উৎসাহ ছিল ভারতবর্ষ । কিন্তু ইবন সিনা কখনও ভারত অভিমুখে আসেননি । তিনি যাত্রা করেছিলেন পশ্চিম দিকে । তার মূল উৎসাহও ছিল পশ্চিমে দিকে । এ জন্যই হয়তো তার চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত বইগুলো প্রাচ্যের সীমানা ছাড়িয়ে পাশ্চাত্য জগতেও আপন অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিল । খোয়ারিজম থেকে বিদায় নিয়ে তিনি রাজধানী শহর গুরুগঞ্জে উপস্থিত হন । এই শহরে তার জীবনের বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন । এখানে অবস্থানকালেই চিকিৎসা বিষয়ে তার অমর গ্রন্থ কানুন ফিততিব রচনা করেছিলেন । এরপর যান পূর্ব পারস্যের অন্তর্গত খোরাসান শহরে । স্বাধীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন সিনা । কিন্তু এসময় গজনীর সুলতান মাহমুদ ইবন সিনার গুণের কথা শুনতে পেরে তাকে তার দরবারে নিয়ে যাওয়ার জন্য সব দিকে দূত প্রেরণ করেন । নিজ দরবার নয় সুলতান মাহমুদের ইচ্ছা ছল তার জামাতা খোয়ারিজম অধিপতির দরবারকে তিনি জ্ঞাণী গুণী ব্যক্তিদের দ্বারা সুশোভিত করবেন । ইবন সিনাকে তিনি চেয়েছিলেন সভাসদ হিসেবে । কিন্তু সিনা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জর্জন নামক স্থানে পালিয়ে যান । সুলতান মাহমুদ এ খবর জানতে পেরে জর্জনের অধিপতিকে ফরমান পাঠান যেন ইবন সিনাকে হস্তান্তর করা হয় যেভাবেই হোক স্বেচ্ছায় আসতে না চাইলে বন্দী করে । কিন্তু ইবন সিনা এবার জর্জন থেকেও পালিয়ে গিয়ে আবার নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন । এবার তার যাত্রার দিক ছিল ইরান বরাবর ।
ইরানে যাওয়ার পথে ইবনে সিনা তার সমসাময়ীক কবি ফেরদৌসীর জন্মস্থান বিখ্যাত তুস নগরী পরিদর্শন করেছিলেন । এখান থেকে তিনি ইরানের সুপ্রাচীন শহর হামাদানে গমন করেন । ঐশ্বর্যশালী এবং ঐতিহাসিক এই নগরীটিকে ভাল লেগে গিয়েছিল ইবনে সিনার কাছে এখানে অনেকদিন তিনি ছিলেন । দেশ বিদেশ ভ্রমণ করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন । বয়সও হয়েছিল অনেক । তাই তিনি মানসিক এবং শারীরিক প্রশান্তি খুজছিলেন । হামাদানে তিনি এই প্রশান্তি খুজে পান । এখানে তিনি ধীর স্থার মনে চিন্তা করার সময় সুযোগ লাভ করেন । হামাদেনের সম্রাট তার থাকা খাওয়া এবং নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন । তিনি এখানে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে স্বাধীন জীবিকা উপার্জন করতেন । এর সাথে তিনি ধ্যান করতেন অধিবিদ্যা ও ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনের মৌলিক বিষয়ে । এখানেই তিনি বিখ্যাত দার্শনিক গ্রন্থ কিতাব আল শিফা রচনা করেন । এই বইটি কবি উমর খৈয়ামের খুব প্রিয় ছিল । জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এটি তার সাথে ছিল বলে কথিত আছে । হামাদানে তিনি অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন । সারাদিন পরীশ্রেমের পর রাতে তিনি অভিজাত ব্যক্তিবর্গের সাথে আমোদ প্রমোদে লিপ্ত হতেন । সুবিশেষ দার্শনিক প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও গম্ভীর মূর্তিতে বসে থাকা তার স্বভাবে ছিলনা । তাই বলে কখনও আবার আমোদ আহলাদে একেবারে মজে যেতেননা । নিজের ধীরশক্তি সবসময় সক্রিয় রাখতেন । কখনই বিস্মৃত হতেননা যে তিনি একজন জ্ঞানপিপাসু এবং জ্ঞান চর্চাই তার মুখ্য কাজ ।
হামাদানের সুলতান অসুস্থ হলে ইবন সিনা তার চিকিৎসা করেন । এতে সম্রাট আরোগ্য লাভ করেন । এই চিকিৎসায় খুশি হয়ে সম্রাট তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেন । কিন্তু রজানীতিতে তিনি বরাবরের মতই ছিলেন অপরিপক্ক । তাই এই পদপ্রাপ্তি তার জীবনে নতুন বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে । তাছাড়া হামাদানের সেনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বিদেশী ইবন সিনাকে সহ্য করতে পারছিলেননা । তাদের সাথে ইবন সিনার বিরোধের সৃষ্টি হয় । সেনাধ্যক্ষ সিনাকে গ্রেফতার করার জন্য সম্রাটের কাছে আবেদন জানাতে থাকেন । সৈন্য বাহিনীর প্রধানের অনুরোধ উপেক্ষা করার সাধ্য সম্রাটের ছিলনা । তাই তিনি ইবন সিনাকে নির্বাসন দণ্ড দিয়ে অন্য এক স্থানে কারাবন্দী করে রাখেন । তা না হলে শত্রুদের হাতে হয়তো তিনি মারা পড়তেন । শত্রুর পাশাপাশি সিনার বন্ধুও ছিল অনেক । তাদের সহায়তায় সিনা এই কারাজীবন থেকে পালিয়ে যে তে সক্ষম হন । হামাদান থেকে পালিয়ে তিনি ইরানের অন্যতম নগরী ইস্পাহানের পথে পা বাড়ান ।
ইবন সীনার পলায়নের কিছুদিন পরই ইরানের ইস্পাহান নগরীতে এক ছদ্মবেশী সাধুর আবির্ভাব হয়েছিল । ইস্পাহানের সম্রাট জানতে পারেন যে এই সাধু আসলে ইবন সিনা । তিনি তাকে নিজ দরবারে নিয়ে আসেন এবং রাজসভায় আশ্রয় দান করেন । সিনাকে আশ্রয় দিতে পেরে সম্রাট নিজেও সম্মানিত বোধ করেছিলেন । ইস্পাহানে বেশ কিছুকাল তিনি শান্তিতে দিনাতিপাত করেন । হামাদানের কেউ তাকে এসময় বিরক্ত করত না । এখানে বসেই তিনি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কিতাব আল ইশারাৎ রচনা করেন । কিন্তু এখানেও বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারেননি সিনা । অচিরেই হামাদান এবং ইস্পাহাসের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায় । ইসপাহানের সম্রাট হমাদানের বিরুদ্ধে অভিযান প্রস্তুত করেন । এসময় সম্রাট ইবন সিনাকে সাথে নেয়ার ইচ্ছ প্রকাশ করেন । চিকিৎসা সেবা প্রদানের কারণেই তাকে নেয়ার ব্যাপারে সম্রাট মনস্থির করেন । নিজে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সম্রাটের অনুরোধ তিনি প্রত্যাখ্যান করেতে পারেননি । ইস্পাহানের সৈন্যবাহিনীর নাথে হামাদানের পথে রওয়ানা করেন । হামাদানের সাথে সিনার অনেক স্মুতি জড়িত ছিল । আর এখানে এসেই তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন । তার এই অসুখ আর সারেনি । হামাদানের যুদ্ধ শিবিরে অবস্থানকালে ইবন সিনা ১০৩৭ সালে আরবী ৪২৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন ।
তথ্য সূত্রঃ ইবন সীনা মোয়াসসাসায়ে ইনতেশারাতে আমিরে কবির তেহরান প্রথম প্রকাশ ১৩৬৪ হিজরী পৃ. ১২২ ।
ইবন সীনাঃ সংক্ষিপ্ত জীবনী সৈয়দ আবদুস সুলতান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পক্ষে ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রাজশাহী থেকে প্রকাশিত । প্রকাশক মাসুদ আলী ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা বাংলা উইকি ।
২৫ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৬
আমি বন্দি বলেছেন: ধন্যবাদ আপু শুভকামনা রইল ।
২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
তথ্যপূর্ণ পোস্ট।+++
উত্তর শেয়ার।
২৫ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৭
আমি বন্দি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । শুভকামনা রইল ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪
জুন বলেছেন: বিখ্যাত পন্ডিত ইবনে সিনার বৈচিত্রময় জীবনীর সুন্দর বর্ননা, অনেক ভালোলাগলো ।
+