![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোমাকে একটি নতুন সকাল এনে দিবো ...
আগের পর্বের পর...
যেহেতু রেলস্টেশন আমাদের গ্রামেই তাই পরিচিত কেও আছে কিনা দেখে সাবধানে চট্টগ্রামের একটি টিকিট কাটলাম । চট্টগ্রাম সিলেক্ট করার কারন হলো সেটা আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূর আর সেখানে আমাদের পরিচিত কোনো আত্বীয় সজন নাই। টিকেট কেটে শেষের দিকে একটি বগিতে বসলাম। গাড়িতে লাইট নাই, শীতের দিন , চাদর দিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে গাড়ি ছাড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। ট্রেন ছাড়ার সময় ৩:০০ টা ।
অপর দিকে মেজো আপা ২:৩০ এ উঠেছে বাথরুমের জন্য। পিছনের দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন আগে থেকেই খুলা। প্রথমে সন্দেহ করেন হয়তো চুর এসেছে, তার পর আমার বিছানায় গিয়ে দেখেন আমি নেই । আপা তাড়াতাড়ি আব্বা কে ডেকে তুলে বলেন "এখনই স্টেশনে যান ৩ টা এখনও বাজে নাই , আরমান মনে হয় পালিয়েছে"
আপা আর আমি ছিলাম পিঠা-পিঠি, তাই মন মানসিকতা কাছাকাছি ছিলো । তাছাড়া কয়েকদিনের আচরণেও হয়তো সন্দেহ করতে পারে। বাবা হাতে একটি টর্চ নিয়ে ছুটলেন স্টেশনের দিকে। আমিতো নিশ্চিন্ত মনে বসে আছি। রাতের ট্রেনে যাত্রি সংখ্যা এমনিতেই কম। বাবা একদিক থেকে সবগুলি বগি চেক করতে লাগলেন। কিছুখনের মধ্যেই পেয়ে গেলেন কাঙ্খিত আমাকে। ঘাড়ে ধরে নিয়ে আসলেন বাসায়।
রাতেই পরিবারের সদস্য নিয়ে মিটিং এ বসলেন । সবাই আমাকে বকা ঝকা করলো । দু-একবার পালানোর কারন জিজ্ঞাসা করলো। কিন্তু এইভাবে রাগের সাথে জিজ্ঞাসা করলে তো আর এতো দিনের জমানো ক্ষোভ/কারন একবারে বলা সম্ভব না , তাই চুপ থাকলাম কিন্তু মনের ভিতরে সমাধান/বুঝ পেলাম না ।
এর পর প্লান করলাম দিনে পালাবো। কারন দিনে বিকেল পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকলেও কেও আমাকে খুঁজবে না, ততখনে আমি অনেক দূরে চলে যাবো। একদিন ১৮/১২/১৯৯৮ সকাল ১০টার দিকে ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে চুপি চুপি বাসা থেকে বের হলাম অজানার উদ্দেশ্যে। ব্যাগে ছিলো বাবার একটি বড় চাদর, আমার দু-একটা কাপড়, একটা কাগজ, মানি ব্যাগে কিছু টাকা আর একটা মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি। কারন শীতে আমার ঠোঁট প্রচন্ড টানে, এটা ছাড়া স্বস্থি পাই না ।
স্টেশনে গিয়ে দেখি, একটি ট্রেন আসবে লোকাল । ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাবে। এটাতেই উঠার চিন্তা করলাম, কারন আপতত বাসা থেকে যত তাড়াতাড়ি দূরে সরতে পারি। ট্রেন আসলে চারপাশ দেখে ছাদে চড়ে বসলাম। ট্রেন দুই স্টেশন পার হলে নিশ্চিত হলাম যে মনে হয় আমাকে আর বাড়িতে ফেরত নেয়া হবে না ।
কিছুটা মন খারাপ লাগছিলো আবার ভালোও লাগছিলো এই ভেবে যে "এখন আমি স্বাধীন যেভাবে ইচ্ছা জীবন টাকে শুরু করতে পারি। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার বাড়তি কোনো প্রেসার নেই, নেই কর্তব্য বোধের অনাগত বুঝা"
দুপুরের সময় ট্রেন ময়মনসিংহ পৌঁছল । নেমে দেখি একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে সিলেট যাবে । যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য ঠিক করি নাই তাই চড়ে বসলাম সেই ট্রেনে । মাঝ রাতের দিকে একটি স্টেশনে ট্রেন অনেকখন থামলো সম্ভবত ভৈরব। এখানে কিজেনো এক সমস্যার কারনে দেখলাম সব যাত্রী নেমে বাসে যাবার চিন্তা করছে । বাসে যাবার ইচ্ছা ছিলো না (টাকার জন্য) কিন্তু যেহেতু সব যাত্রীই চলে যাচ্ছে তাই অচেনা জায়গায় এক চলার সাহস পেলাম না । চললাম তাদের সাথে।
সিলেটে যখন নামলাম তখন সকাল ৮টা কি ৯টা । এরই মধ্যে মন এর ভিতরে আর একটি মন বলতেছিলো "চল অনেক হয়েছে, এবার ঘরে চল" বাস থেকে নেমে মেইন রোড়ে দেখলাম বড় একটি পুল এর মত, তার ওপাশে সকালের রোদ এসে পড়েছে । রাস্তা পার হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে অনুভব করলাম এতদিন কল্পনায় যে সপ্ন/প্লান আমি করেছি সেটা বাস্তব না । দু মিনিটেরও কম সময় এর মধ্যে পাশে চলা এক পথচারীকে জিজ্ঞাসা করলাম "ভাই রেল স্টেশনটা কোন দিকে"
স্টেশনে গিয়ে দেখি একটি ট্রেন ময়মনসিংহ যাবে । তাড়াতাড়ি সেটাতে চড়লাম। কিছুখন পরে দেখি টিটি আসতেছে, টিটি কাছে আসলে চাবার আগেই পকেটে ভাংটি ছয় টাকা ছিলো টিটির হাতে দেই। টিটি খুশি হয়ে কোথায় যাবো জিজ্ঞাসা না করেই টাকাটা পকেটে রেখে দেয়। সিনেমায় দেখেছিলাম ট্রেনের ছাদের কাছা কাছি সরু একটি জায়গায় মানুষ শুয়ে থাকে, আমিও সেখানে চাদর মোড়ি দিয়ে শুলাম কিন্তু না আরাম পেলাম না, নেমে এলাম।
মনটাতে খুশি খুশি লাগছিলো। যে ঘোরে আমি ছিলাম তা ভেঙ্গে গেছে । গার্জেন এর কাথাই যে ঠিক এখন আমি একমত। জানালা দিয়ে তাকালাম সারি সারি চা বাগান, এটাই আমার প্রথম দেখা । দূরে একটি গাছে দেখলাম বানর যেটা আমাদের এলাকায় কখনোই দেখা যায় না। একটি স্টেশনে ট্রেন ক্রসিং এর জন্য অনেক খন দেরি করলো । নিচে নেমে হেঁটে বেড়িয়ে আসলাম। আবার ট্রেনে চড়লাম। এই ভাবে যখন ময়মনসিংহ পৌঁছলাম তখন মাঝ রাত। সেখানে নেমে বাড়ি যাবার ট্রেনের জন্য বসে থাকলাম।
যখন বাড়ি পৌঁছলাম তখন ২০/১২/১৯৯৮ সকাল ৬:৩০ । বাবা তখনও ঘুম থেকে উঠে নাই । মা কে পেলাম উঠানে । আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা নিরবে চোখের পানি ঝরালেন। আমি বললাম
"মা আমি আর পালাবো না"
(আমি অপিসে কাজের ফাঁকে ব্লগ লিখি। এই লিখাটা লিখতে প্রায় ২৫-৩০ বার থামতে হয়েছে। তাই একটি লিখা একই মোডে লিখতে পারি না । আশা করি পাঠক গন ত্রুটি গুলি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
জীবন কথার বাকি লেখাগুলি পাবেন এখানে
১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৬
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
ধন্যবাদ ভিটামিন সি !
ভিটামিন সি এর মত যদি ব্লগে ভিটামিন বি, ডি , কে.... এদেরও দেখা পেতাম তাহলে ব্লগটা আরও পুষ্টিকর হতো !
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬
শায়মা বলেছেন: আহারে ভাইয়া কি মজার ঘর পালানো দৃশ্যগুলো! চা বাগান, বান্দর আর মায়ের কান্নাগুলো সবই দেখতে পেলাম! আমারও এখন ঘর পালাতে ইচ্ছা করছে কিন্তু এই বুড়িকালে ঘর পালালে তো আর কেউ ঘরেই ঢুকতে দেবেনা!
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০১
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
বুঝলাম! বেশ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন,
ধন্যবাদ!!!
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫
আদম_ বলেছেন: অসাধারণের চুড়ান্ত হয়েছে লেখাটা। আমি আপনার লেখার ভক্ত হয়েছি অনেক আগেই। এত সহজ ভাষায়ও যে লেখা যায় তা জানতাম না। সুপার ডুপার কুপার খুপার হিট। প্রিয়তে নিলাম। মন মেজাজ খারাপ হলে আবার পড়বো বলে।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৯
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
আপনার মুখে প্রসংশা শুনে লেখাটা আবার পড়লাম।
আপনার উৎসাহ পেয়েই লেখাটা আমি এক দিনেই শেষ করেছিলাম।
আপনার মত পাঠক থাকলে আমার মত লেখক জন্মাবে যুগ যুগ ধরে......
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬
ভিটামিন সি বলেছেন: আপনি একটা পাজি ছেড়া। বাপ, মা, বোনেরে শীতের রাইতে কষ্ট দিছেন। তয় পোষ্টু বালা হৈছে।