![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোমাকে একটি নতুন সকাল এনে দিবো ...
বছর দশেক আগের কথা। আমি তখন গাজীপুরের এপেক্স গার্মেন্টস এ চাকরিরত।রমজান মাস, অপিসে যাবার সময় খেয়াল করলাম অপিস গেটে একজন মাঝ বয়সী মহিলা সাথে ১৮/১৯ বছরের একটি মেয়ে সহ দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেরই হিজাব পড়া। চোখে পড়লো কিন্তু এটা নিয়ে ভাববার কোনো যুক্তি পেলাম না। কারন কত লোকই তো প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে। সন্ধ্যার পর যখন তারাবি নামাজ পড়তে যাবো তখন দেখি ১০/১৫ জনের একটা জটলা আর মাঝখানে সেই দুই মহিলা। এবার আগ্রহী হয়ে কাছে গিয়ে জানতে পারলাম “ মহিলার একমাত্র ছেলে যে বছর খানি আগে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হয়ে গেছে। কোন এক মাধ্যমে খবর পেয়েছে যে তার সেই ছেলে এই এপেক্সে চাকরি নিয়েছে। মহিলার ধারনা সে নিজে আসলে তার ছেলে আর রাগ করে থাকতে পারবে না তাই অন্য কোনো অভিবাবক না থাকায় তার ছোট মেয়েকে নিয়ে এখানে আসতে বাধ্য হয়েছে।“
গল্পটা নিখুঁত, যে কেউই গলে যেতে পারে অন্য আরো ৫/৭ জনের সাথে আমিও মহিলার বিপদে বিচলিত হয়ে গেলাম বিশেষ করে তার সাথে ঐ বয়সী একটা মেয়ে থাকার জন্য। মহিলা শুধু তার ছেলের নাম বলতে পারে কিন্তু যেখানে প্রায় ১০ হাজার কর্মী সেখানে কোন সেকশনে বা ছবি ছাড়া চিনতে পারা কঠিন। আমার মত সেখানে যারা ছিলো কেউই তার ছেলেকে আইডেন্টি করতে পারলাম না।
যাই হোক পরবর্তী করনিয় কি ঠিক করতে গিয়ে মহিলা বললো – তার বাড়ি বরিশাল, একমাত্র ছেলেকে খুঁজতে প্রায় খালি হাতে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। এখন লঞ্চ এর ভাড়াটা হলে আবার বড়িতে ফেরত যেতে পারে। সেখানে যারা নরম হৃদয়ের ছিলো সবাই সাধ্যমত দিলো আমিও আবার মেসে এসে হিসাব করে ১৫০ টাকা বের করে মহিলাকে দিলাম। ততখনে তারাবি নামাজ প্রায় শুরু হয়ে যাবে কিন্তু আমার কাছে তখন নামাজের চেয়ে মহিলাকে বিপদ কে বেশি বড় মনে হলো।
আমাদের অপিসের একজন মহিলাকে বললো “ আজ তে রাত হয়ে গেছে আমার বাসায় আমার ফ্যামিলির সাথে আজ রাত থাকেন, কাল সকালে দিনের বেলায় আস্তে ধীরে যাবেন” আমরা সবাই তার কথায় সায় দিলাম কিন্তু মহিলা থাকতে নারাজ সে বললো “ আমাদের বাড়ির যে লঞ্চ সেটা শুধু রাত ২টায় যায়, আজ থাকলেও কালকে তাকে আবার সেই রাতের জন্যই বসে থাকতে হবে” আমাদের তখনও কিছু সন্দেহ হয় নাই। লোকটা বললো ঠিক আছে আপনারা সারাদিন কিছু খান নাই আমার বাসায় চলেন কিছু খেয়ে তারপর রওনা হয়েন। মহিলা প্রথমে একবার না করলেও সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করাতে রাজি হয়ে গেলো।
আমারও চললাম তার সাথে। মহিলার এই ধরনের বিপদ শুনে সবাই সাধ্য মত দান করেছিলো তাই টাকার এমাউন্ট ভালোই হয়েছিলো। মহিলাটা খুব তাড়াতাড়ি করতে ছিলো এবং ভাত খাচ্ছিলো খুব তাড়াতাড়ি। এবং পরের দিকে তার ছেলেকে নিয়ে আর কোনো কথা বলছিলো না। খাওয়া শেষ এখন মহিলা যাবর জন্য অস্থির। সবাই আমকে বললো তুমি তাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে এসো, নতুন জায়গা তাদের একলা চিনতে সমস্যা হবে। আমি বিনা বাক্যে রাজি হলাম।
বাসস্ট্যন্ডে যেতে যেতে মহিলা আমাকে কয়েকবার অনুরোধ করলো যে তারা একা একা চিনে নিতে পারবে। আমি বললাম একা একা হয়তো চিনতে পারবেন কিন্তু তাতে সময় নষ্ট হবে তাতে লঞ্চ ফেল কারতে পারেন। মহিলা চুপ থাকলো। চান্দরা বাস স্টপ থেকে গাজিপুর চৌরাস্তা প্রায় ১ ঘন্টার পথ। চৌরাস্তা থেকে সদরঘাটের সরাসরি বাস আছে। এই রাতে চৌরাস্তা পর্যন্ত যাবো কিনা ভাবছিলাম। মহিলাকে বললাম এখান থেকে আপনাদের যদি চৌরাস্তার বাসে তুলে দেই সেখান থেকে টিকেট কেটে সদরঘাট যেতে পারবেন তো? মহিলা রাজি হলো। চৌরাস্তার বাস আসলে বাসে তুলে দিয়ে শেষ বারের মত বললাম যেতে পারবেনতো? মহিলা হাসি মুখে বললো “ পারবো বাবা তুমি যাও, চৌরাস্তা থেকে আমি সব রাস্তাই চিনি”
বাস ছেড়ে দিচ্ছে বলে নেমে দাঁড়ালাম কিন্তু শেষ কথাটা কানের মাঝে আবার বাজলো “চৌরাস্তা থেকে আমি সব রাস্তাই চিনি” এর আগে মহিলা কথা প্রসঙ্গে বলেছিলো সে গাজীপুর-ঢাকা তো দূরের কথা বরিশালই নাকি ভালো করে চনে না। আমার যখন হুশ এলো ততখনে বাস অনেক দূরে চলে গেছে। মনের মধ্যে খুব রাগ হচ্ছিলো। একে তো তারাবি নামাজটা গেলো তার চেয়ে বড় কথা এতো গুলি মানুষের সরলতা নিয়ে ব্যবসা করলো। একা একা মসজিদে নামাজ শেষ করে বাকিদের আর প্রকৃত ঘটনা বললাম না। অন্তত তারা একটি অসহায় মহিলাকে সাহায্য করতে পেরেছে এই শান্তিটুকু তাদের অন্তরে থাকুক।
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
ভাই! আমরা আসলে এত খারাপ না! বেশির ভাগ বাঙ্গালী সহজ-সরল বলে প্রতারকরা প্রতারণার সুযোগ পায়।
ভালো থাকবেন!
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭
নতুন বলেছেন: আমাদের এক সহকমী` বাবার অসুস্হতার কথা বলে বাড়ী ফিরে যাচ্ছিলো... সবাই তার বিমানের টিকিটের ব্যবস্হাও করে দিয়েছিলো...
কিন্তু এক সহকমী বললো যে তার কাছ থেকে ব্যাংক কাড চুরি করে নিয়ে টাকা নিয়ে গেছে এবং তার কাছ থেকে আগেও ধার করেছিলো...
এখন এয়ারপোটে গিয়ে তাকে সরি বলে এসএমএস করেছে...
সাথে সাথে আমাদের সিকিরিউটি কে বলে ...পুলিশে জানিয়ে... ঐ মেয়েকে বিমানের বোডিং এরিয়া থেকে নিয়ে এসে তার কাছের থেকে ঐ ছেলের টাকা উদ্দাধার করে তার পরে পুলিশ তাকে দেশে যেতে দেয়...
আমাদের দেশের মানুষের ভেতর ভন্ডামীটা ক্রমেই বাড়ছে...
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
এই ভাবে চলতে থাকলে "মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করা বন্দ করে দিবে"
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
ঢাকাবাসী বলেছেন: পৃথিবীর নিকৃস্টতম জাতি হলাম গিয়ে আমরা বাংলাদি...