নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Born genius ..dumb by choice!

ভুড়ির চাক্‌

ভুড়ির চাক্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি বাংলায় কথা বলি, কিন্তু আর কতদিন ?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্ক শহরে এক ঝাঁক বাঙালি কবি, লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী সর্বোপরি সাহিত্যমোদী মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন। তাদের একত্র হওয়ার সুযোগ ঘটেছিল মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২৩তম বইমেলাকে কেন্দ্র করে। গত ২৩ বছর থেকে হয়ে আসা এই বইমেলায় উত্তর আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বহু সাহিত্যপ্রেমী তাদের প্রিয় লেখক সাহিত্যিকদের এক নজর দেখা, তাদের কথা শোনা, সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের জন্য ছুটে আসেন এই নিউইয়র্ক শহরে। এটি উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাঙালির জন্য এক বিরাট প্রাপ্তি। বলতে গেলে সাধারণ মানুষের জন্য এই প্রবাসের জলহীন শুষ্ক আবহে জলসিঞ্চনে সিক্ত হওয়ার মতো।



বইমেলায় আয়োজিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে সাধারণ মানুষ এসব বরেণ্য ও জ্ঞানী-গুণীজনদের বহু বিষয়ে যেমন তাদের অভিমত জানতে পারেন তেমনি তারাও মতামত ব্যক্ত করতে পারেন।



ফলে প্রতি বছরই এসব আয়োজনগুলো হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত, ফলপ্রসূ ও হৃদয়গ্রাহী।



যা হোক আসা যাক আজকের লেখার মূল আলোচনায়। এবারের বইমেলায় এমন দুজন বিশিষ্টজনের মন্তব্য নিয়েই আমার আজকের লেখা। তাহলো বাংলা ভাষা শেখা না শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা এমন দুজন ব্যক্তিত্ব এক সেমিনারে মন্তব্য করেন যে, আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলা ভাষা শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের মতে, বিশ্বায়নের এই সময়ে বাংলা ভাষা শিক্ষা বা জানার দরকার কতোটুকু। এ ধরনের কথা এই প্রথম নয়, বাংলা ভাষার লেখকদের কাছ থেকে এধরনের মন্তব্য বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়শই উচ্চারিত হতে শোনা যায়। মুশকিল হয়েছে এই যে, সাধারণ মানুষ যারা অল্প বিস্তর লেখাপড়া জানার দাবি রাখে যারা বাংলা দেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস কিছুটা অবহিত, যারা এসব ইতিহাসের নীরব সাক্ষী, যারা বাংলা ভাষার আন্দোলন, বাঙালির হাজার বছরের শিক্ষা, সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের অন্তর্গত তাদের কাছে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে বিচরণকারী এমন ব্যক্তিদের মন্তব্য বক্তব্য অভিমত নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে। কখনও বিস্ময় জাগায় আবার কখনও কখনও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়।



কেন বিস্ময়? সে প্রসঙ্গে পরে আসবো। কিন্তু বিভ্রান্তির বিষয়টি আগে আলোচনা করতে চাই। যেহেতু বিভ্রান্তির যাঁতাকলে পড়ে নানা প্রশ্ন আমাদের চারিধারে ঘুরপাক খাচ্ছে তাই সেগুলো উত্থাপনের মধ্য দিয়ে ভেতরের অস্থিরতা কিছুটা লাঘব করতে আমার এই প্রয়াস।



কৌম সমাজ ও সামন্তবাদী শাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ভাষা ও সংস্কৃতির কথা অনুল্লিখিত রেখেও যদি ৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের পূর্ব অংশের বাঙালি জাতির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, জীবনদান সর্বোপরি জাতিসত্তা ও রাষ্ট্রীয় পরিচয় তুলে ধরতে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ঐতিহাসিক বিজয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সবই কী মিথ্যে হয়ে যাবে? ব্যর্থ হয়ে যাবে বাঙালির এতো বড় অর্জন তার মানবিক জাগরণ। ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা বা স্বাতন্ত্র্যবোধের আর কোনো দরকার হবে না আগামী দিনগুলোতে? যার একমাত্র যুক্তি হচ্ছে বিশ্বায়ন!



আমাদের সকলেরই জানা যে, বিশ্ব ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্যের ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত এখন এতো নিকবর্তী হয়ে যাচ্ছে যেন তা হাতের নাগালের মধ্যে এসে গেছে। ছোট্ট একটি মুঠোফোন ধারণ করে আছে সমগ্র বিশ্বের বিশাল ক্যানভাস। যে ক্যানভাসে ভেসে আসে মুহূর্তের মধ্যে যে কোনো ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন। বিশ্বায়ন হয়তো একদিন পৃথিবীর ভৌগোলিক সীমা রেখাকে বিলুপ্ত করে দেবে। বদলে যাবে পৃথিবীর মানচিত্র। স্বভাবত প্রশ্ন জাগে সেখানে কী একটি মাত্র ভাষাই স্থান পাবে। আর কোনো ভাষা কী কোনোভাবেই সেই পৃথিবীতে স্থান করে নিতে পারবে না? তাহলে পৃথিবীর শত শত ভাষাভাষী মানুষ তাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘোষণা করবে। দ্বিভাষিক, বাহুভাষিক শব্দগুলোর আর কোন অর্থবহন করবে না। হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মুছে ফেরতে হবে। নাকি তারা নিজস্ব গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে বিশ্বসভায় তুলে ধরবে দেবে আর নেবে, মেলাবে এবং মিলবে। সৃষ্টি হবে নতুন ধারার শিল্প, সংস্কৃতি। সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হবে বিশ্বসভা।



যা হোক, বলছিলাম বাংলা ভাষা না শেখার বিষয়ে বইমেলার সেমিনারে বিদগ্ধজনদের পরামর্শ নিয়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কাদের প্রতি বাংলা ভাষা না শেখার কথা বলা হচ্ছে বা হয়েছে; তা কি শুধু প্রবাসে জন্মগ্রহণকারী নতুন প্রজন্ম নাকি তা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের জন্যও প্রযোজ্য? বিষয়টি পরিষ্কার নয়। মনে হয় বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের জন্য ও এই পরামর্শ প্রযোজ্য কারণ ইংরেজি জানলেই যখন চলে তখন আর কেন অন্য ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন।



পাঠক মনে করবেন না যে আমি ইংরেজি শিক্ষার বিরোধী অথবা সনাতনপন্থী। এর কোনোটির একটিও আমি নই। নোয়াম চমস্কিসহ বিশ্বের বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে একজন শিশু একাধিক ভাষা শিখতে পারে এবং তাদের মস্তিষ্কে সেই ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কারণ ভাষা ব্যবহারের জন্য দরকার কগনিটিভ সিস্টেমের আর যারা একাধিক ভাষা ব্যবহার করে তাদের কগনিটিভ সিস্টেম সক্রিয় হয়ে তাতে সহায়তা দেয়। ফলে দ্বিভাষিক বা একাধিক ভাষা শিখতে-জানতে শিশুদের কোনো বাধাই নেই।



যাক ফিরে আসি আসল কথায়। বলছিলাম বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে কতিপয় বাংলা ভাষার কবি লেখকের মন্তব্যের বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করেছি যে, সাধারণ মানুষের মাঝে এসব মন্তব্য বিভ্রান্তি ও বিস্ময়ের সৃষ্টি করে তা নিয়েই আজকের আলোচনা। এবার আসি বিস্ময় প্রসঙ্গে। এসব বুদ্ধিজীবী বা গুণীজনরা দেশ অথবা প্রবাসে যখন বাংলা ভাষা সাহিত্যের কোনো আসর বা প্রবাসের কোনো বাংলা সংস্কৃতি চর্চায় নিয়োজিত সংগঠনের প্রধান বক্তা বা প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হন তখন তারাই নতুন প্রজন্মের প্রতি মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষার ফতোয়া জারি করেন এবং সেই সব সংগঠন বা অনুষ্ঠান আয়োজকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনে মুখর হন।



তারাই আবার অন্য অনুষ্ঠানে বলে থাকেন নতুন প্রজন্ম যদি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা করে এবং বাংলা টেলিভিশন দেখে তাহলে মূল ¯্রােতধারায় সম্পৃক্ত হতে তা বাধাগ্রস্ত করবে। তাদের এই দ্বৈত ভূমিকা বিস্ময় সৃষ্টি না করে পারে না।



অথচ অভিবাসী দেশ হিসেবে খ্যাত এই উত্তর আমেরিকায় হাজারো ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীর সরব উপস্থিতি তারই সাক্ষ্য দেয় এবং তারা নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবকে ধারণ করে, লালন ও পালন করে এ মাটিতে শাক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে চলেছে দিনের পর দিন। বছরের প্রায় প্রতি মাসেই এই নিউইয়র্ক শহরে কোনো না কোনো দেশের জাতীয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যের গৌরবগাথার ঔজ্জ্বল্যে ছড়িয়ে বিশাল বর্ণাঢ্য প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। আর এসব প্যারেডে শামিল হয়ে থাকেন শহরের মেয়র, গভর্নরসহ মূলধারা শীর্ষ প্রতিনিধিরা। এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে পেছনে ফেলে আসা নিজ দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা না করার কোনো প্রবণতা দৃষ্টিগোচর হয় না। বরং বহুজাতির এই সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় নতুন বাস্তবতাকে উপলব্ধিতে নিয়ে নতুন করে শেকড় প্রথিত করার নব আনন্দে মেতে থাকেন। অন্যদিকে তাদের চিন্তকরাও জাতির উদ্দেশে এমন পরামর্শ দেন বলে শোনা যায় না।



উপসংহার টানতে গিয়ে বলতে হয় যে, এখন থেকে ঘোষণা দিয়ে কী বাংলা ভাষা শিক্ষা বন্ধ করা প্রয়োজন নাকি বিবর্তনের ধারায় একদিন তার প্রয়োজনীয়তা নিঃশেষ হয়ে যাবে? আগামী দিনে যদি এই ভাষা ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন না থাকে তাহলে তা শেখা বা জানার দরকারইবা কতোটুকু? সে সঙ্গে এই ভাষা না শেখার পরামর্শ কী কেবল প্রবাসের নতুন প্রজন্মের জন্য নাকি তা বাংলা দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে? বিশ্বায়নের এই যুগে যদি বাংলা শিক্ষার কোনো প্রয়োজনীয়তা না থাকে তাহলে কেন বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাই বা কষ্ট করে বাংলা ভাষা বা সংস্কৃতি জানবে, শিখবে বা চর্চা করবে?



কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে, যারা এসব কথা বলছেন, তাদের প্রায় সকলেই দেশ কিংবা বিদেশ যেখানেই অবস্থান করেন না কেন সাহিত্য চর্চা বা মিডিয়ায় কাজ করছেন কিন্তু বাংলা ভাষার মাধ্যমগুলোতেই তাদের খ্যাতি, পরিচয় ও সুনাম অর্জন সবকিছুই বাংলা ভাষার মাধ্যমেই। দীর্ঘকাল প্রবাসে কাটিয়েও তাদের কোনো সম্পৃক্ততা মূল ¯্রােত ধারায় এ যাবৎকালে দৃশ্যমান হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তাদের অনেকেরই প্রায় অর্ধশতাব্দীকালের প্রবাস জীবন ও কেবলি প্রবাসী বাঙালিদের অনুষ্ঠানাদিতে পৌরহিত্য করা ও বাংলা লেখনীর আবর্তে ঘূর্ণায়মান।



স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এসব জ্ঞানী-গুণীজনরা কেন ইংরেজি মাধ্যমে কাজ করার প্রয়াস করেননি এবং মূল ¯্রােত ধারায় নিজেদের অংশীদারিত্বের বীজটি পর্যন্ত বপন করতে সক্ষম হননি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.