![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্যস্ত শহরে জীবন-যাপন
বছর কয়েক আগেও এতো কোলাহল ছিল না এই শহরে। জনসংখ্যা এতো বেড়েছে? তাই কোলাহল বেড়েছে। রাস্তাঘাটে লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আজকাল বাজারে ঢোকা রীতিমতো একটা ব্যাপার! চারিদিকে শুধু মানুষের মাথা আর মাথা। ডানে ঘুরলে মানুষ, বামে ঘুরলে মানুষ, একটু নড়াচড়া করলেই মানুষের সাথে টক্কর, গায়ে-গায়ে গুতোগুতি। সামনে-পিছনে সরারও উপায় নেই। মানুষের স্রোত যেন শহরজুড়ে। এই শহরে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, নাকি শহরটাই ছোট হয়ে গেল? হয়তো নগর-আর্কিটেচার প্রয়োজন-মাফিক স্ফীত হচ্ছে না; অথবা শহরও বাড়ছে, মানুষও বাড়ছে। একটা গাণিতিক হারে আর একটা জ্যামিতিক হারে। জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে শহরের আয়তন বাড়তে পারছে না। আয়তন না বাড়লে অল্প জায়গায় তো মানুষের সংখ্যা বেশি মনে হবে, ভিড় বাড়বে। এখন গায় গায় মানুষ ঘোরে-ফেরে, কথা বলে, কেনাকাটা করে। অথচ কেউ কারো সাথে কথা বলে না। কারো সংবাদ রাখে না কেউ। নিজের সংবাদ, নিজের প্রয়োজন মেটাতেই ব্যস্ত এ নগরের সব মানুষ। ব্যক্তির জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় আরাম-আয়েশপূর্ণ করে তুলতে কত আয়োজন; নানান আধুনিক উপকরণে ঠাসা বিপণিবিতানগুলো। ব্যক্তি নিজেকে নিয়ে আর শহর ব্যস্ত মানুষের পদভার সামলাতে। জনাকীর্ণ শহরময় আজকাল মানুষের মুখে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার ছাপ। কেউ হাসপাতালে যায়, কেউ যায় বিউটি পার্লারে। কারো দেহে মরণ ব্যাধির বাসা; কেউ কৃত্রিম সৌন্দর্য বানায় দেহে। রুগীর দরকার দ্রুত চিকিৎসা। আমাদের নগরে সরকারি হাসপাতাল আছে, কিন্তু রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি নেই। ক্লিানিকের দালালরা ঘোরাফেরা করে সরকারি হাসপাতারে চত্বরেই।
হাসপাতালের পাশেই বিলাসবহুল ক্লিনিকে অথবা প্রাইভেট হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসার সব যন্ত্রপাতি, সব উপকরণ আছে রোগ নির্ণয়ের। একটু চার্জ বেশি পড়ে। আইয়ুব খানের আমলে স্থাপিত সরকারি এ হাসপাতালে রোগ নিরাময়কারী ডাক্তার সাহেব থাকলেও, তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। সিডিএম হাসপাতালে আধুনিক রোগ-নির্ণয়কারী যন্ত্রপাতির মতো যথার্থ রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও মেলে সহজে। শুধু দরকার টাকার। দ্বিগুন, তিনগুন বেশি চার্জ দিলেই চিকিৎসা সেবা মেলে প্রাইভেট ক্লিনিকে। চিকিৎসা নিতে আসা সব মানুষ বাঁচে না। হয়তো রুগীর হায়াৎ ছিল না; ভুল চিকিৎসার কারণেও হায়াৎ ফুরায় কারো কারো। ক্লিনিকের রুগী মারা গেলে মৃদু জটলা সৃষ্টি হয় কখনো-সখনো; পরে রফ-দফা হয়ে গেলে পুরনো চেহারা ফিরে পায় ক্লিনিক। ব্যবসা কমে না।
চিকিৎসা নিতে আসা মরণাপন্ন লোকগুলোই কী তাহলে নগরের রাস্তায় ভিড় বাড়িয়ে দেয়? তারাই দোকানে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক দ্রব্য কেনে। মেয়ের নেইল পলিশ, বউয়ের জন্য কাঁচের চুড়ি এখন আর কেনে না। নিউ মার্কেটের চোখ-ধাঁধানো কোনো কোনো দোকানে তবুও অসংখ্য কাঁচের চুড়ি শোভা পায়। একালের মেয়েরা তো চুড়িই পরে না। হাতে ব্রেসলেট, কেউ কেউ বাহারি ঘড়িও পরে। ক্রেতার চাহিদা মাফিক হরেক পণ্যের পসরা দোকানগুলোতে শোভা পায়। সাধারণত দোকানগুলোতে চলতি পণ্যের যোগানই বেশি। বরিন্দের পাড়া গাঁ থেকে কালো কালো দেহ নিয়ে এই নগরে আসে কেউ কেউ। কালো পুরুষ অথবা মেয়েটির চাই মাজার বিছা, পায়ের খাড়ু আর মল। অবাক হয় দোকানী। দুই যুগ আগে পাওয়া যেত এসব। এসব কোনো দোকানে এখন পাওয়া যায় না। দোকানী বলে, ‘বরং ‘আপনি অন্যকিছু পছন্দ করেন। এখন আরো অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস এসেছে বাজারে।’
কালো মেয়েটি হতাশ হয়, পথে নামে বাড়ি দিকে। তখন শহরের মোড়ে ট্র্যাফিক হয়। মানব-জট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে সন্ধ্যার ঘণ্টাখানেক আগে। এ সময় নগরের সব মানুষ যেন উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকে, সবাই ঘরে ফিরবে। রাত্রির নিরাপদ আশ্রয় চাই।
মানুষের রাশ পড়ে যায় সন্ধ্যার দিকে নগরজুড়ে। যেদিকেই তাকাই শুধু কালো কালো মাথা দেখা চোখে পড়ে। কালো মাথাগুলো টুপির মতো প্রত্যেক মানবদেহের উর্ধ্বে লেগে থাকে। দেখতে মাথাগুলো ভূগোলকের মতো। মানুষের মাথা- ডানে-বামে, সামনে-পেছনে নড়াচড়া করে। এরা সবাই কী ঘরে ফিরছে? এদের সবারই কী ঘর আছে? না থাকলেও ক্ষতি নেই। কর্মক্লান্তি অপনোদনের জন্য বিশ্রামের দরকার সবারাই। কেউ শহরের উত্তরে, কেউ দক্ষিণে ভাড়া থাকে। পুবে-পশ্চিমেও সুদৃশ্য আকাশচুম্বী অট্টালিকার জঠরে হয়তো কেউ কেউ বাস কারে। কর্মজীবীদের হোস্টেলে ফিরে যায় কেউ কেউ। রুমমেটের নাক-ডাকার বদ অভ্যেস নীরবে হজম করে রাত কাটিয়ে দেবে হয়তো। দু-একজন কাচা বাজারে ঢুকে পড়ে, একটা ব্যাগ হাতে। আলু-পটলের দাম করে; দর কষাকষি করে কিছু পরিপুষ্ট তরতাজা বেগুন ব্যাগের ভেতরে চালান করে দিয়ে মাছের বাজারে যায়। মৌমাছির মতো একটা গুঞ্জন থাকে মাছের বাজারে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায়। তার ভিতরেই গলায় স্বর সপ্তমে চড়িয়ে দর-দাম করে দেশী পুঁটি মাছ, মোয়া মাছ হাইব্রিড কৈ-শিং-মাগুর কিনে ফেলতে হয়। প্রয়োজনীয় এটাসেটা কিনে ব্যাগ ভরে গেলে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ভাড়া বাসার দুই রুমে ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী অপেক্ষা করছে তার জন্য।
মনোহারী অথবা স্টেশনারি দোকানগুলোতে ভিড় উপচে পড়ে। স্নো-পাউডার, চুড়ি-ফিতা, মাথায় পরবার ক্লিপ কেনে কেউ কেউ। শখের জিনিষপত্র ছাড়াও প্রয়োজনীয় সাবান-শ্যাম্পু-পেস্ট-ব্রাশ না কিনে ঘরে ফেরা যায় না। এসব কিনতে কিনতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। তখন রাস্তায় নামলে ট্র্যাফিক হয়। সন্ধ্যা নামলে নগরজুড়ে সড়ক-বাতি জ্বলে ওঠে। নিয়ন আলোর মোহমুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। ট্র্যাফিক পুলিশ রাস্তার একদিকে চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বাঁশিতে ঘনঘন ফুঁ দিতে থাকে। উৎসাহী দু-একজন ট্র্যাফিক পুলিশ হাতের রুলার টাইপের মাঝারি মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে পথচারীদের হঁটিয়ে দিতে থাকে; অল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তার এক পাশ ফাঁকা হয়ে যায়। যতদূর সোজাসুজি চোখ যায়- কোথাও কিছু চোখে পড়ে না, শূন্য রাস্তাটা ছাড়া। সহসা দেখতে না দেখতেই পাজেরো জিপ গাড়ির সামনে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের গাড়ির বহর পার হয়ে যায় ঝড়ের বেগে।
অদ্ভুত দেশের, উদ্ভট নগরে আমাদের বসবাস। নেতারা রাস্তায় নামলে পুলিশ বাহিনীর লোকজন জনগণকে রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়, নয়তো আটকে রাখে। নেতারা হেঁটে যান না, গাড়িতে যান। সামনে পেছনে মোসাহেবদের গাড়ি। বিশাল এক গাড়িবহর চলে নেতার সাথে। তাঁর গাড়িবহর নির্বিঘ্নে চলার ব্যবস্থা করে পুলিশ, কষ্ট করে জনগণকে- অপেক্ষায় থাকে কখন নেতার গাড়িবহর পার হবে, কখন বাড়ি ফিরবে সে। ভোটের আগে মন্ত্রীর গাড়িবহর থাকে না। কোথায় পাবে গাড়ি! পায়ে হেঁটে এ শহরের প্রত্যেক ওয়ার্ডে গিয়েছেন; ছোটবড় সবার সাথে হাত মিলিয়েছেন, আর ভোট প্রার্থনার নামে ভিক্ষা চেয়েছেন। ভোটের পরে সেই নেতা এলাকার জনগণকে কত দ্রুত পাশ কাটিয়ে যেতে পারবেন সেই ব্যবস্থা সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী দিয়ে করেন।
সন্ধ্যার ট্র্যাফিক উপেক্ষা করে, জিরো পয়েন্টে ঢাউস টিভি স্ত্রিনে শব্দহীন বিজ্ঞাপনের রগরগে দৃশ্য চলতেই থাকে অবিরাম। বিজ্ঞাপনের টিভি স্ক্রিনটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের কথা মনে পড়ে। জিরো পয়েন্টে ফুলের দোকানগুলো থেকে তরতাজা ফুলের ঘ্রাণ এসে মানব কোলাহলে অনাদরে অবহেলায় ভেসে বেড়ায়। অটো-রিক্সাওয়ালারা যাত্রী তুলতে ব্যস্ত হয়ে কাজলা-বিনোদপুর, রেলগেট-নওদাপাড়া, সাধুর মোড়, কোর্ট-বাইপাস বলে যাত্রীদের ডাকে। ভুল করে উল্টো দিকের রিক্সায় উঠে পড়ে কেউ কেউ। অনেক হৈচৈ থাকায় ড্রাইভারের কথা ঠিকঠাক বুঝতে না পারায় ভুল হয়। জিরো পয়েন্টের ঠিক একশ গজ পুবে আকাশী রঙের পুলিশের ঢাউশ একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। বিকট শব্দে সাদা রঙের একটা পুলিশের টহল গাড়ি যাওয়ার সময় মানব কোলাহল হারিয়ে যায়।
সন্ধ্যা নামার ঘণ্টাখানে আগে আসামী ভরা একটা পুলিশ ভ্যান চলে যাওয়ার সময় দেখা যায়, অনেকগুলো মানুষের হাতের আঙুল। মাথার অংশ দেখা গেলেও কাউকেই চেনা যায় না। আসামী ভ্যানের ভিতর থেকে শহর আর মানুষজনের মধ্যে হয়তো ওরা নিজেদের পরিচিত কাউকে খোঁজে। কেউ কী কখনো স্বজনকে দেখতে পারে! নাকি আদৌ দেখা যায় না ভ্যানের ভিতর থেকে। শুধু দেখার চেষ্টা করে তারা। আসামীদের নিয়ে পুলিশের গাড়িটি চিৎকার করতে করতে চলে যায়। দ্রুতগামী লোকজন না দেখার ভান করেই দোকানের সামনে ফুটপাতের উপর পড়ে থাকা বয়স্ক লোকটিকে পার হয়।
লোকটির বয়স নব্বই না হলেও আশি যে পার হয়েছে এতে শহরের কারো দ্বিমত নেই। একে বয়স তাকে অচল করেছে, তার উপর লোকটির ডান হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ থেকে কাটা। বাম পায়েও শক্তি নেই অনেকদিন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করেই বয়স্ক লোকটি বসে থাকে, কথা বলে না কারো সাথে। কেউ কখনো তাকে কথা বলতে শোনে নি। লোকটি দেখে শহরের দ্রুতগামী লোকজন কিভাবে তাকে পার হয়ে যায়।
একা চলাফেরা করতে পারে না লোকটি। অথচ কিভাবে লোকটি এখনে পানের দোকানের সামনে আসে সে রহস্যও কেউ জানে না। আবার এক সময় লোকটি চলেও যায়। কিভাবে, কার সাথে যায় তাও দেখে নি কেউ কখনো। কেউ একজন আছে নিশ্চয়। অথর্ব লোকটিকে যে নিয়ে যায় এবং নিয়ে আসে। লোকটি তো উড়তে পারে নাঅ কোনো মানুষই তো পাখির মতো শূন্য দিয়ে চলাফেরা করতে পারে না। কনুইয়ের নিচের অংশ থেকে না থাকায় লোকটি ডান হাত দিয়ে কোনো কিছু করতে পারে না। হয়তো এজন্যই লোকটি কখনো কারো সামনে হাত পাতে না। হয়তো বাম হাত বাড়িয়ে কোনো কিছু প্রার্থনা করাটা অন্যায় ভাবে সে।
মুখে খোচাখোচা দাঁড়ি-গোঁফ সমেত চুপচাপ বসে থাকে লোকটি। তার বয়স সম্পর্কে সঠিক তথ্য এ শহরের অধিবাসীরা কেউ দিতে পারে না। তার বয়সের মতো লোকটির আগমনের দিনক্ষণও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। ব্যস্ত নগরের কেউ জানারও চেষ্টা করে না। তুচ্ছ একজন ভিখেরির বয়স জানার সময় কারো নেই। শহরে আগমনের দিন-তারিখও কারো কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। শহরের সবাই প্রায় এ ব্যাপারে একমত হয় যে, লোকটির আদিবাস এ শহরে না। হতে পারে অন্য কোনো জেলার অধিবাসী সে। বিগত প্রায় চল্লিশ বছরের মতো লোকটি এ শহরের বাসিন্দা। সারাদিন নিশ্চুপ বসে থাকলেও যখন বিকেল বেলা আসামীদের বহনকারী ভ্যানটি তার ছড়িয়ে রাখা পায়ের দুই ফুট দূর দিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ করে যায়, তখন লোকটির মুখের রেখায় বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তার চোয়াল শক্ত হয়। চোখ দুটোতে বয়সের ছাপ থাকলেও মণিতে বিদ্যুৎ খেলে যায়। নিবিষ্ট হয়ে তাকে খেয়াল করলেই বোঝা যায়, তার অন্তরের বিষয়-আশয় কিভাবে মুখের রেখায় ফুটে ওঠে।
কেউ ভেবে পায় না, লোকটির ডান হাতের বাকি অংশ নেই কেন! গত চল্লিশ বছর যাবৎ বয়স্ক লোকটি হাতবিহীন অবস্থায় ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাতে বসে বসে কাটিয়ে দিলে- শহরের লোকজনের কেউ কেউ তার কর্তিত ডান হাতটি নিয়ে নানান মুখরোচক গল্প তৈরি করে। কেউ কেউ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বয়স্ক লোকটির শরীরে যখন যৌবন ছিল, তখন সে ডাকাত দলের নেতা ছিল। ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়লে উত্তেজিত জনতা ইট দিয়ে ডান হাতটা পিষে দিলে হাসপাতালের ডাক্তার পরে কনুই থেকে বাকিং অংশ কেটে বাদ দিয়েছিল। অবশ্য কেউ কেউ মনে করে উত্তেজিত কেউ একজন দা-য়ের এক কোপ দিলে সেখানেই তার ডান হাতের কনুই থেকে বাকি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। যাদের বয়স পঞ্চাশের উপর তারা লোকটির ডান হাত কাটা বিষয়ে ডাকাতির ব্যাপারটি বিশ্বাস করলেও তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের ইয়াং জেনারেশন মনে করে, লোকটি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে হয়তো শ্রমিক হিসেবে কাজে গিয়েছিল, সেখানে চুরি করার অপরাধে শাস্তি স্বরূপ ডান হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে দেয়া হয়েছে। এসব নিয়ে শহরের অধিবাসীদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সবাই ঐকমত্য পোষণ করে যে, বয়সকালে লোকটি খুব একটা সুবিধার ছিল না। মূল ঘটনা কিংবা সঠিক ইতিবৃত্ত না জানলেও এ শহরের যারা স্থায়ী বাসিন্দা তারা লোকটিকে সমীহ করে। যে যতটুকু পারে, যেভাবে পারে, টাকা-পয়সা দেয়। কেউ দেয় ভিক্ষা হিসেবে, আর কেউ তার পঙ্গুত্বকে সম্মান দেখিয়ে দান করে। শহরবাসীর প্রবীণদের প্রসন্নতার অন্য একটি কারণও আছে; বয়স্ক লোকটি অন্যদের মতো হেঁটে-চলে মানুষের সামনে হাত বাড়িয়ে দিতে পারে না বলেই হয়তো শহরবাসীর মনে এক ধরনের দয়া কাজ করে।
জন-কোলাহলের ভিড়ে বয়স্ক লোকটির অন্য কোনো কাজ নেই, বসে থাকা ছাড়া। তাকে কেউ আমল না দিয়েই সবাই নিজের কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকে। পানের দোকানদারই প্রথম টের পায়, বয়স্ক লোকটি গত দুই দিন আসে নি। কি হয়েছে তার? পানের দোকানী নাসিরের উদ্বেগ পাশের দোকানীর কাছে ব্যক্ত করলে কথা এক কান দুই কান করে শহরে ছড়িয়ে পড়ে; তখন নগবাসীর মনে পড়ে অথবা তারা বুঝতে পারেÑ বয়স্ক লোকটিকে দু-দিন ধরে তার নির্দিষ্ট স্থানে রাস্তার ফুটপাতে দেখা যাচ্ছে না। লোকটি গেল কোথায়? বয়স হয়েছে, লোকটি মারা যায় নি তো! লোকটির মৃত্যু বিষয়েও শহরের কেউ কোনো সঠিক সংবাদ জানে না। লোকটির সৎকার বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যদি লোকটি মারা গিয়ে থাকে, তাহলে এ শহরেই কোনো না কোনো কবরস্থানে নিশ্চয় তাকে সমাহিত করা হবে। অথচ শহরের কোনো কবরস্থান থেকেও নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না, লোকটি সম্পর্কে।
বয়স্ক লোকটির উধাও হওয়ার ঘটনা নিয়ে কয়েকদিন চাপা ও গুমোট ভাব বিরাজ করলেও ধীরে ধীরে তা বাতাসে মিলিয়ে যায়। কারণ, ব্যস্ত শহরের মানুষ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে একদিন অফিস টাইমে সেই লোকটির জায়গা দখল করে আরেক বৃদ্ধাকে বসে থাকতে দেখে শহরের লোকজন।
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১০
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: দুঃখিত। শিরোনামে ক্রমিক সংখ্যা দেয়া। নামটা নিচে ছিল বলে মাথায় শিরোনাম ঘুরছিল।
ভালো থাকুন
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯
অনুপম হাসান বলেছেন: থ্যাঙ্কস, শেষ পর্যন্ত নামটি দেখেতে পেরেছেন।
ধন্যবাদ, কষ্ট করে আমার মতো অর্বাচীনের লেখা পাঠ করে মন্তব্যের জন্য।
সময় করে উঠতে পারছি না।
নিশ্চয় আপনার ব্লগও আমি পাঠক করব।
৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
অনুপম হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।
অর্বাচীন গল্প লিখিয়ের গল্প ভালো লেগেছে ভেবে।
উৎসাহ পাচ্ছি। ভাবছি, তাহলে প্রক্রিয়াটি হয়তো চালু রাখা যাবে।
প্রথাগত কাহিনী তৈরির জন্য গল্প লেখার ইচ্ছা নেই। এ ধরনের লেখা যে আপনার ভালো লেগেছে, তা ভেবে সত্যিই ভালো লাগছে।
৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৩
উল্টা দূরবীন বলেছেন: ভালো লাগলো। আমার ব্লগে আমন্ত্রণ।
৫| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৪
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আপনার লেখার সবগুলি দৃশ্য মনে হচ্ছে চোখের সামনে ভাসছে।
ব্যস এই নগরে কতজন হারিয়ে যায়, সেই ফাঁকা জায়গা অন্য কেউ দখল করে নেয়, কে তার খোঁজ রাখে।
৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর
৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লাগে আপনার গল্পগুলো।
++
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার গল্প বলার ভঙ্গীটা খুব চমৎকার।
একটা কথা - গল্পগুলোর কোনো নাম নেই। গল্প ১,২,৩,৪,৫ এভাবে। আলাদা নাম দেয়ার কথা ভাবেননি কখনো ?
প্রিয়তে নিলাম