নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অধ্যয়ন মনুষকে সম্পূর্ণ করে তোলে, আলাপ-আলোচনা তাকে প্রস্তুত করে এবং লেখালেখির দ্বারা হয়ে ওঠে সঠিক - ফ্রান্সিস বেকন

আনিস৫১

বিভিন্ন বিষয় জানতে, শিখতে এবং তা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে ভালবাসি ।

আনিস৫১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ (৯) :- বহুত্ববাদ

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২০

বহুত্ববাদী দার্শনিকদের মধ্যে এম্পিডক্লেস (Empedocles of Agrigentum) হচ্ছেন প্রথম দার্শনিক।





এম্পিডক্লেস (আনুঃ ৪৯০-৪৩০ খ্রিঃ পূঃ)



যেখানে পারমেনাইডিস বলেন, " সবই এক, অভিন্ন ও অপরিবর্তনীয় " সেখানে তিনি বিশ্ব সৃষ্টির মৌলিক উপাদান হিসাবে ৪টি উপকরণের উল্লেখ করেন, যেগুলোকে তিনি "মূল" বলে আখ্যায়িত করেন ।

এম্পিডক্লেসের মতে, " বিশ্ব আগুন, বায়ু, পানি ও মাটি এই চারটি প্রাথমিক উপাদানে সৃষ্টি "। এগুলোর সংমিশ্রণেই প্রত্যেকটি জিনিস গঠিত। উপাদান চারটি এত নিবিড়ভাবে সংযুক্ত যে মধ্যবর্তী শূন্য স্থান অসম্ভব । তবে তিনি পারমেনাইডিসের মতো শূন্যতার ধারণা অস্বীকার করলেও উপাদানের স্থান পরিবর্তন স্বীকার করে নেন ।







এখন প্রশ্ন হলো, উপাদানগুলো কিভাবে সংযুক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয় ।

এম্পিডক্লেসের মতে, "প্রেম" ও "বিদ্বেষ বা সংঘাত" এই দুই শক্তির ফলেই তা হয়ে থাকে । প্রেম(Love) ও বিদ্বেষই(Strife) গতির কারণ । প্রেম উপকরণগুলোকে সংযুক্ত আর বিদ্বেষ বা সংঘর্ষ এদেরকে বিচ্ছিন্ন করে। তবে এ দুটোকেই তিনি জাগতিক শক্তি বলে মনে করেন ।

তিনি তাঁর বিশ্বতত্ত্বে চারটি পর্যায়ের কথা উল্লেখ করেছেনঃ



১ম পর্যায়ঃ এ পর্যায়ে প্রেমের প্রাধান্য থাকে এবং উপাদান ৪টি গোলকের আকারে সংমিশ্রিত থাকে যেখানে বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই । এই পর্যায়কে তুলনা করা চলে কল্পিত স্বর্গীয় রাজ্যের আদর্শ অবস্থার সঙ্গে ।



২য় পর্যায়ঃ এ পর্যায়ে আবির্ভাব ঘটে বিদ্বেষের যেখানে প্রেমের শক্তি থাকে কম এবং বিদ্বেষ ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে উপাদানগুলোকে বিছিন্ন করতে থাকে। এই বিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া যখন মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকে অর্থাৎ উপাদান গুলো যখন আংশিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়, তখনই উদ্ভব ঘটে বস্তুসমূহের।



৩য় পরজায়ঃ তৃতীয় পর্যায়ে সার্বিকভাবে বিদ্বেষ প্রভাবশালী হয়ে উঠে। ফলত উপকরণ চতুষ্টয়ও সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন এবং সংগঠিত হয় সৃষ্টিবিপর্যয়। এমতাবস্থায় পূর্ণ অস্তিত্ব বলে কিছু থাকে না ।



৪র্থ পরজায়ঃ এ পর্যায়ে এসে শুরু হয় বিপরীত গতির। প্রেম পুনরায় শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং পুনরায় উপাদানসমূহকে একত্রিত করে, সূচিত করে প্রগতির। কিন্তু জাগতিক প্রক্রিয়ার এখানেই শেষ নয়। আবার শুরু হয় পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া । এভাবে প্রেমের প্রভাবে মিলন এবং বিদ্বেষের প্রভাবে বিচ্ছিন্নতা ক্রমান্বয়ে চক্রাকারে চলতে থাকে। কিন্তু সম্পূর্ণ মিলন এবং সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ এই দুই চরম অবস্থার কোনোটিতেই বস্তুর অস্তিত্ব থাকে না বরং বস্তুর অস্তিত্ব সম্ভব আংশিক মিশ্রণ এবং আংশিক বিচ্ছিন্নতায়।





এম্পিডক্লেস আরো বলেন, পৃথিবীর বর্তমান অবস্থায় উপনীত হওয়ার পথে বায়ু প্রথম পৃথক হয়ে যায় আর তখনই সৃষ্টি হয় আকাশমণ্ডলের। তারপর পৃথক হয় আগুন এবং সৃষ্টি করে নক্ষত্রপুঞ্জের। পৃথিবী নিংড়েবের হয়ে আসে পানি এবং সৃষ্টি হয় সমুদ্র। আগুনের উত্তাপে যখন পানি বাষ্পীভূত হয় তখন সৃষ্টি হয় বায়ুমণ্ডলের।প্রাণের প্রথম আবির্ভাব ঘটে মাটিতেঃ প্রথমে উদ্ভিদ, ক্রমে বাহু, চোখ, মাথা প্রভৃতি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জীবসমূহের।

এসকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রথমে গঠনবিহীন ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ছিল। পরবর্তীতে ক্রমশ একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করলো নানান বিচিত্র জীবের- দুইমুখো জন্তু, মানুষের মুখবিশিষ্ট ষাঁড়ের শাবক, ষাঁড়ের মাথা বিশিষ্ট মানব শিশু ইত্যাদি। এরা আবার পৃথক হয়ে নানান ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এমন আকার ধারন করলো যা বেঁচে থাকার অনুকূল অর্থাৎ তারাই টিকে রইল যাদের আকার ও আকৃতি বেঁচে থাকার উপযোগী। এ যেন ডারউইনের বিবর্তনবাদের পূর্ব ইঙ্গিত, "Survival of the fittest"







এছাড়াও এম্পিডক্লেস মানুষের আদলে দেবতা এবং এর অন্তর্গত প্রচলিত ধর্মতত্ত্বের বিরোধিতা করেন। জেনোফেনস ও অন্যান্য পূর্বসূরিদের মতো তিনিও বিশ্বসত্ত্বায় দেবত্ব আরোপ করেন । তাঁর মতে, ঈশ্বরকে আমাদের চোখের সামনে হাজির করা কিংবা হাত দিয়ে স্পর্শ করা কোনোমতেই সম্ভব নয়, কারণ ঈশ্বরের দেহের উপরে মানুষের মাথা নেই, কাঁধের দুই পাশে হাত, হাঁটু কিংবা চুলবিশিষ্ট কোনো অঙ্গ নেই। প্রকৃত প্রস্তাবে ঈশ্বর হচ্ছেন প্রজ্ঞাবান সত্তা বা চেতনা, যিনি সারা বিশ্বে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছেন।

তিনি তাঁর কাব্যের দার্শনিক অংশে, বিশ্বকে ঈশ্বর এবং বিশ্বের উপাদানগুলোকে স্বর্গীয় বলে বর্ণনা করেছেন।





(ভুল-ত্রুটি নিজগুণে ক্ষমা করবেন, এবং ভুল-ত্রুটি কেউ উল্লেখ করলে যথাসম্ভব সংশোধন করে নেব)



আরও জানতে:- ১) এম্পিডক্লেস ২) এম্পিডক্লেস ৩) এম্পিডক্লেস



A History of Western Philosophy by Bertrand Russell(chapter 6)



প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাশ্চাত্য দর্শন - ডঃ আমিনুল ইসলাম,(পৃষ্ঠা ৮০-৮৫), শিখা প্রকাশনী, পুনর্মুদ্রণ-২০০২



দর্শন-দিগ্‌দর্শন (১ম খণ্ড,২য় মুদ্রণ)- রাহুল সাংকৃত্যায়ন,(পৃষ্ঠা ৩৬),রুক্কু শাহ্‌ ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স



পূর্ববর্তী পোস্টঃ

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ (১) :- পানি বা জল তত্ত্ব

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ(২) :- অসীম বা সীমাহীনতা তত্ত্ব

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ(৩) :- বায়ু মতবাদ

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ (৪) :- সংখ্যা মতবাদ

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ (৫) :- গ্রিক একেশ্বরবাদ

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ (৬) :- অনিত্য বা পরিবর্তনশীলতা

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ (৭) :- চিরস্থায়িত্ববাদ

বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ (৮) :- দ্বান্দিকতাবাদ











মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭

শংখনীল কারাগার বলেছেন: গিয়ানী পোস্ট।

+++++

২| ২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:০৬

আনিস৫১ বলেছেন: " গিয়ানী পোস্ট" হা..................হা...............হা.......হা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.