![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত বিষয়সমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। বহুল আলোচিত এ প্রত্যয়টিকে এখন সামাজিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেবলমাত্র মানবেতর অবস্থা থেকে নারীর মুক্তি বা নারী উন্নয়নের জন্যই নয়, পৃথিবী মুখোমুখি এমন সকল সমস্যার সমাধানে প্রধান ও প্রথম ধাপ হিসাবে নারীর ক্ষমতায়নকে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেবল আনত্মর্জাতিক পরিসরে নয়, বাংলাদেশেও স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পরিসরে যে কোনো নীতি নির্ধারনী আলোচনায় বা সমস্যা সমাধানে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও দেশজুড়ে নারী হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন ক্রমশ: বেড়েই চলেছে। নারীর পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে ক্রমশ: অবনতি হচ্ছে। তাই এ প্রসঙ্গটির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিরোনাম বিশেস্নষণ:
নারী:
নারীকে বিখ্যাত মানুষেরা নানা দৃষ্টিতে দেখেছ্নে। লিও টলষ্টয় বলেছেন- 'নারী সমাজ জীবনে এক অনিবার্য নিরানন্দের উৎস। মেয়েদের একটি সুবিধা হিসেবেই গ্রহণ করা উচিত। তাই যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। পাই যে গোরাম বলেছেন, 'বিশ্বের সৎ নীতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে শৃঙ্খলা, আলো ও পুরূষ, আর অশুভ নীতি সৃষ্টি করেছে অরাজকতা, অন্ধকার ও নারী। সম্রাট নেপোলিয়ান বলেছেন, 'মেয়েরা আমাদের দাসী হবেুএটাই প্রকৃতির নিয়ম, মেয়েরা আমাদের সম্পত্তি গাছের ফল যেমন বাগানের মালিকের সম্পত্তি । মেয়েদের সমান অধিকার পাগলামো ছাড়া আর কিছু নয়, মেয়েরা শুধুই সনত্মান উৎপাদনের যন্ত্রমাত্র'। জার্মান প্রবাদে আছে, 'একটি নারীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে একটি বিবাদ কমে যায়'। টেনিস বলেন, পুরুষ থাকবে মাঠে আর নারী থাকবে রান্নাঘরে। পুরুষের হাতে তলোয়ার মেয়েদের আঙ্গুলে ছুঁচ, পুরুষের আছে মাথা, আর মেয়েদের আছে হৃদয়, পুরুষ আদেশ করে আর মেয়েরা পাালন করে; এর ব্যত্যয় হলেই বিশৃঙ্খলা আর নৈরাজ্য।" আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট বলেন, কোনো মেয়ে যখন ভাবে তখন সে অশুভ জিনিষই ভাবে। '
এ ধরনের নেতিবাচক ধারণা বিখ্যাত ও জ্ঞানী-গুণী মানুষদের কথায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও প্রায় সব দেশেই নারীদের সম্বন্ধে কতগুলি প্রচলিত কথা হচ্ছে, 'মেয়েদের স্থান ঘরে, গৃহবধুরা অত্যনত্ম বুদ্ধিহীন, মেয়েরা যা কথা বলে সেগুলি কেচ্ছা। বুদ্ধিমতি মেয়েরা পুরুষালী হয়। চাকুরে মেয়েদের নারীত্ব থাকেনা। একজন চালাক চতুর মেয়ের মসত্মিষ্ক বলে কিছু থাকেনা । মেয়েদের নিজেদের আকর্ষণীয় করে তোলাটা তাদের কর্তব্য। সব মেয়েরাই কেবল পোষাক পরিচ্ছদের কথা ভাবে। মেয়েরা সব সময়েই কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে। মেয়েদের নিয়মিত ভাবে পেটানো উচিত। মেয়েরা অর্থের মূল্য বুঝেনা। মেয়েরা সর্বদাই পুরুষদের ফাঁদে ফেলতে ইচ্ছুক। একজন মেয়ে যদি কোনো পুরুষকে বাধতে না পারে তাহলে সে যথেষ্ট মেয়েই নয়। মেয়েরাই মেয়েদের ঘৃণা করে । মেয়েরা প্রায়শই পরনিন্দা চর্চা করে।
বর্তমানে এধরণের নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে।
ক্ষমতায়ন:
ক্ষমতায়ন একটি জটিল ও বহুমুখি প্রত্যয়। ক্ষমতায়ন প্রত্যয়টির সাথে ক্ষমতার ধারণাটি জড়িত। বস্তুগত, মানবিক ও বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রনকে ক্ষমতা বলে। এধারণকে চারভাগে ভাগ করা যায়।
সম্পদ
১)ভৌত(জমি, পানি, বল) ২)মানবিক(মানুষ, তাদের শারিরীক শ্রম ও দক্ষতা) ৩)অর্থনৈতিক(অর্থ, অর্থে অভিগম্যতা ) ৪) বুদ্ধিভিত্তিক (জ্ঞান, তথ্য, ধারণা)
ক্ষমতায়ন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন Paulo Faire (1973)আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতায়ন শব্দটি একটি জনপ্রিয় পরিভাষা হয়ে উঠে এবং তা Welfare, Development, Participation, Control, Access, Conscientisation ইত্যাদি শব্দগুলোর স্থলাভিষিক্ত হয়(longwe,1990:204)।
ক্ষমতায়ন হচ্ছে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার একটি প্রক্রিয়া। Material resources, Intellectual resource ও আদর্শগত ধারণার উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে ক্ষমতায়ন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
ক্ষমতায়ন সম্পর্কে Chandra বলেন “Empowerment in the simplest form means the manifestation of redistribution of power that challenges patriarchal ideology and the male dominance” ( Chandra 1997).
ক্ষমতায়ন সম্পর্কে Pillai বলেন
Empowerment is an active, multidimensional process which enables woman to realize their full identity and power in all spheres of life. Power is not a commodity to be transacted; nor can it be given by away as aims. Power has to be acquired and it needs to be exercised, sustained and preserved (Pillai, 1995).
ক্ষমতায়ন যার উপর নির্ভর করে
i) Ability to participate in decision making
ii) Control over economic resources and
iii) Change and equal opportunity
ক্ষমতায়নের স্বরূপ অনেক রকমের হতে পারে। যেমন: সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক। তবে ক্ষমতায়ন শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের বিষয়কে ঘিরে (নুরুল আলম, ১৯৯৯:৭৬)
ক্ষমতায়ন ধারণাটি কাঠামোগত ও বিদ্যমান সমাজের কতগুলো সম্পর্ক দ্বারা নির্ধারিত হয়। ক্ষমতায়ন সম্পর্কে ড. শওকত বলেন, 'রাষ্ট্র এবং সমাজের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় কর্মপদ্ধতি এবং কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধানত্ম প্রহণে এবং বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকে ক্ষমতায়ন বলা হয়'।
মাহমুদা ইসলাম তার নারীবাদী চিনত্মা ও নারী জীবন গ্রন্থে বলেন 'ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা নারী কল্যাণে সমতা এবং সম্পদ আহরণে সমান সুযোগ অর্জনের লক্ষ্য সামনে নিয়ে জেন্ডার বৈষম্য অনুধাবন নিশ্চিত করণ ও বিলোপ সাধনের জন্য একজোট হয়।
Rowland ক্ষমতায়নকে ত্রিমাত্রিক বলে মনে করেন। তার মতে এটা হলো ব্যক্তিগত, সম্পর্কগত এবং সমষ্টিগত, ব্যক্তিগত দিক হচ্ছে,
‘a sense of self and individual confidence and capacity and undoing the defects of internalized opposition.
সম্পর্কগত দিক হচ্ছে Developing the ability to negotiate and influence the nature of a relationship and decisions made within it.
সমষ্টিগত দিক বলতে বুঝায়, where individual work together to achieve a more extensive impact than each could have had alone. This includes involvement in political structures but might also cover collective action based on co-operation rather than competition, Collective action may be locally focused for example, groups acting at village or neighborhood level or be more institutionalized such formal procedures of the United Nations.
ক্ষমতায়নকে একটি প্রক্রিয়া এবং প্রক্রিয়ার ফলাফল হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যেখানে সমাজের ক্ষমতাহীনরা বা কম ক্ষমতাবানরা বস্তুগত এবং মানবিক সম্পদের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রন অর্জন করে এবং বৈষম্য ও অধ:সত্মনতার মতাদর্শ যা এই অসম বন্টনকে গ্রহণীয় করে তাকে চ্যালেঞ্জ করে।
নারীর ক্ষমতায়ন :
দক্ষিণ এশিয়াতে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। যথা:
Integrated Development, Economic Development and Awareness raising (Sushama, 1998:50)
সমন্বিত উন্নয়ন তত্ত্বের মূল দর্শন হলো, পরিবার ও সামাজিক সমাজের উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো নারী উন্নয়ন।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো, যে বিষয়গুলো নারীর অধসত্মনতা সৃষ্টি করে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।
DAWN ( Development Alternative with Woman for New era)নারীর ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা ব্যখ্যা করতে গিয়ে বলেছে এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে জেন্ডার বৈষম্য বিহীন এক পৃথিবী গড়ে তোলা। যে পৃথিবীতে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী তার নিজের জীবনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
নারীর ক্ষমতায়নের মূল লক্ষ হচ্ছে ক্ষমতার উৎস ও কাঠামোর পরিবর্তন। নাজমা চৌধুরী 'নারীর ক্ষমতায়ন : রাজনীতি ও নারী" শীর্ষক প্রবন্ধে যে লক্ষ্যগুলির বর্ণনা করেন তাহলো- নারীর সুপ্ত প্রতিভা এবং সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ, নারীর জীবনের ওপর প্রভাব বিসত্মারকারী সিদ্ধানত্ম সমূহে অংশগ্রহণের সুযোগ নিজের জীবন সম্পর্কিত সিদ্ধানত্ম গ্রহণের পরিমন্ডল, পরিধি ও সম্ভাবনার বিসত্মার।
নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য হচ্ছে,
১. পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ ও নারীর অধ:সত্মনতার অনুশীলনকে চ্যালেঞ্জ এবং রূপানত্মর করা।
২. কাঠামো ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান যা নারীর প্রতি বৈষম্যকে সমন্বিত ও জোরদার করে তা পরিবর্তন করা। যেমন: পরিবার শ্রেণী, জাতি, বর্ণ, প্রথা, ও সামাজিক, অর্থনৈতিক, , রাজনৈতিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান ধর্মীয়, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রচার মাধ্যম, আইন এবং উপরনীচ উন্নয়ন মডেল ইত্যাদিসহ সবকিছু রূপানত্মর করা।
৩. বস্তুগত সম্পদ জ্ঞান এবং সম্পদের উপর অভিগম্যতা ও নিয়ন্ত্রন।
নারীর ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া:
নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় যে সকল বিষয় লক্ষ্য করা প্রয়োজন তা হচ্ছে,
ক)সচেতনতার সত্মর পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয় নারীর মনে।
খ) বাইরের শক্তি দ্বারা অবশ্যই ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াকে উদ্বুদ্ধ বা উৎসাহিত করতে হবে।
গ) ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া যৌথভাবে শুরু করতে হবে।
ঘ) নারীর ক্ষমতায়ন উপর-নীচ বা একমাত্রিক প্রক্রিয়া হতে পারে না।
ঙ) নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া অবস্থা ও অবস্থান পরিবর্তনের জন্য হতে হবে।
চ) রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যনত্ম নারীর ক্ষমতায়ন সমাজকে রূপানত্মর করতে পারে না।
ছ) নারীর ক্ষমতায়ন বিদ্যমান ক্ষমতার ধারণা ও পরিবর্তন করবে।
নারীর ক্ষমতায়নের দ্বারা বিশ্বকে এমন দিকে ধাবিত করতে হবে যেখানে নারী এবং সচেতন পুরুষকে নিশ্চিত করতে হবে যে সম্পদ কেবল সুষমভাবে ব্যবহৃত হবে, নিরাপদভাবে ব্যবহৃত হবে। যেখানে যুদ্ধ এবং নির্যাতন নিমর্ূল করতে হবে। যেখানে যুদ্ধ এবং নির্যাতন নির্মূল হবে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদের পৃথিবীকে পরিচ্ছন্ন সবুজ পৃথিবীতে পরিণত হবে।
নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিবন্ধকতা সমূহ:
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিবন্ধকতা সমূহ হচ্ছে:-
ক) পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ
খ) পিতৃতন্ত্রের সপক্ষে রচিত আইন কানুন
গ) ধর্মীয় আবেগ অনুভূতি
ঘ) আধুনিকায়ন উন্নয়ন কৌশলের অনুসরণ
ঙ) পরিবেশ বিপর্যয় ইত্যাদি।
নারীর ক্ষমতায়নের উপায়:
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের উপায় হচ্ছে:-
ক) রাজনৈতিক কাঠামোয় নারীর অংশগ্রহণ ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত নারীদের দায়িত্ব প্রাপ্তি
খ) নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টিকারী আইন পরিবর্তন
গ) সার্বজনীন পারিবারিক আইন বাসত্মবায়ন
ঙ) প্রচার মাধ্যমে নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বন্ধ
চ) নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদান
ছ) সকল প্রকার কাজ অভিগম্যতা ও গৃহস্থলী কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ
জ) স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন ধারা অনুসরণ
ঝ) রাজনীতির গণতন্ত্রায়ন
ঞ) সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের বর্তমান বাসত্মবতায় নারীর ক্ষমতায়নের প্রাসঙ্গিকতা :
জেন্ডার ক্ষমতায়ন সূচকে বাংলাদেশের স্থান ১০৪ টি দেশের মধ্যে ৭৭ তম। এদেশে পারিবারিক নির্যাতনও মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে।
একটি জরিপে গ্রামের সবচেয়ে প্রকট সমস্যাগুলো চিহৃিত করতে গিয়ে মাত্র ৩% পুরুষ গ্রামবাসী নারী নির্যাতনের কথা উলেস্নখ করেছেন ।বাকি ৯৭% পুরুষ এলাকার বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে নারী নির্যাতনকে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে । নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য প্রসঙ্গে ৩০% উত্তরদাতা পুরুষ কোন মনত্মব্য করেননি ।জরিপে উত্তরদাতা পুরুষের ৫৩.৬% নারীর অধিকারের পক্ষে তাদের মত ব্যক্ত করেছে । আর ৬০% পুরুষ উত্তরদাতা মনত্মব্য করেছে যে নারীদের অধিকার সম্পর্কে কিছু জানানোর দরকার নেই । জাতিসংঘ জনসংখ্য তহবিলের পরিচালিত এই জরিপে ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের ৫০২ টি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা অংশ নিয়েছিল ।এই পুরুষ সদস্যরা নারীর অধিকার নিয়ে যা ভাবে তা নিম্নরুপু:-
৬৫% পুরুষ ধমর্ীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে স্ত্রীকে মারধর করা সমর্থন করে
৫১%পুরুষ মনে করে সমাজে নারীর অবাধে চলাফেরা উচিৎ নয় ।
৬০% পুরুষ মনে করে নারীর চলাফেরা পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিৎ ।
৭০% পুরুষ মনে করে মেয়েদের অবশ্যই পর্দা করা উচিৎ ।
৯৭% নারী নির্যাতনকে তার এলাকা বা সমাজের একটি সমস্যা বলে মনে করে না
৬০%পুরুষ মনে করে স্বামীর কথা মত স্ত্রীর চলা উচিত।
৯৭ % নারীর ধারণ মাতৃত্ব নারীর একটি প্রধান চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য।
৬০% উত্তরদাতা পুরুষ মনে করে স্বামী পরিত্যক্তা নারীর কাছ থেকে কোন রকম অর্থনৈতিক সুবিধা বা সাহায্য পাওয়া উচিত নয়।
তথ্যসূত্র: জাতিসংঘ জনসংখ্য তহবিল জরিপ
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবেও নারীর যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। জাতীয় বাজেটের বরাদ্দই তার উজ্বল প্রমাণ।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১৯৯৬ সালে ৮০ টি,১৯৯৭ সালে ১১৭ টি, ১৯৯৮ সালে ১৩০ টি এবং ১৯৯৯ সালে ১৬৮ টি। সার ভাইভরস ফাউন্ডেশন (এস.এস.এফ) থেকে প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী ২০০০ সালে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ২২৬ টি, আর ২০০১ সালের অক্টোবর মাস পর্যনত্ম এসিড দগ্ধ হয়েছেন ২৭১ জন। এসিড দগ্ধ নারীর মধ্যে বেশীর ভাগই কিশোরী । দি ইনষ্টিটিউট অব ডেমোক্রেটিক রাইটস এর হিসাব অনুযায়ী ২০০০ সালের মার্চ মাসেই এসিড দগ্ধ হয়ে মারা গেছে ২০জন।
নারী সহিংসতা ও নারী নির্যাতন বৃদ্ধির হার আশংকাজনক ।সমাজে নারীর প্রতি গড়ে উঠা দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ গুলোও সুস্পষ্ট। তাই বিদ্যমান সংকট নিরসনে যৌক্তিক বিবেচনা করেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সমাজ গ্রহণ এমন ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হবে। সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস মূল্যবোধ , দৃষ্টিভঙ্গি, ঐতিহ্যকে বিবেচনায় না এনে কোন প্রক্রিয়াতেই নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। সংস্কার বা পরিবর্তন হঠাৎ করে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। আধিপত্যশীল সংস্কৃতির বিদ্যমান অবস্থার সাথে সংঘর্ষ বাধিয়ে নতুন করে সমস্যা বাড়াবে। তাই ধীরে ধীরৈ কৌশলে অত্যনত্ম সুক্ষ্মভাবে , দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। যাতে কারো প্রতি সুবিচার করতে যেয়ে কারও প্রতি অবিচার না হয়ে পড়ে। নিজস্ব স্বকীয়তা, সংস্কৃতি আত্মপরিচয় হুমকির মুখে না পড়ে। গভীরে প্রোথিত শিকড়ে টান না লাগে, মানসিকভাবে নতুন করে ভাবতে, চিনত্মা করতে, মন-মানসকে প্রস্তুত করতে হবে। এজন্য মানসিক পরিবর্তন ও চিনত্মা, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। যা হঠাৎ হয়ে যাবে না। সরকারী বেসরকারী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক মানবিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বৃহত্তর জনমানসের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে হবে।
উপসংহার:
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে চিন্তাশীল মানুষকে আরও সজাগ হতে হবে। র্সবস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী সমাজের জীবনের বাস্তব দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং তার অবস্থান কোথায় বা কোথায় থাকা উচিত তা উপলব্ধি করতে পারাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বায়নের যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির পরও আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন না হওয়াটা দু:খজনক। নারীদের নিরাপত্তা কোথাও নেই । কারণ নারীরা একা একা চলতে সাহস পায় না। সন্ধ্যার পর একজন নারীকে বাইরে বের হতে হলে তাকে ঘরে ফেরা পর্যনত্ম সন্ত্রস্ত্র থাকতে হয়। আমাদের সমাজে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহিংসতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না । যে সহিংস আচরণ করছে তাকে দোষী না করে বরং যার প্রতি সহিংসতা করা হলো তাকেই দোষী সাব্যস্থ করা হয়। সহিংসতা সম্বন্ধে সমাজে সচেতনতার এই অভাব পূরণে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংস আচরণ সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও সামাজিক সহিংসতা যথেষ্ঠ পরিমাণে বেড়েছে যা মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে। মানব সমাজ জ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে যতটা সভ্যই হোক না কেন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কোনো কেনো ক্ষেত্রে প্রত্যাশার তুলনায় নিতানত্মই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
নারীর সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন, বঞ্চনা বৈষম্য এগুলো মোটেই কাম্য নয়। আর অযৌক্তিক আচরণ দূর হোক এ প্রত্যাশা আমাদের। সত্যিকারার্থে নারীকে যথার্থ মূল্যায়ন না করে সুন্দর শানত্মিময় সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা আশা করাটাও ঠিক হবে না। নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার, এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি না করে যৌক্তিক পন্থায় সবাই এগিয়ে আসুক এটাই আহ্বান।
©somewhere in net ltd.