নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুরুষ বিয়ে করে নারীর জীবনসঙ্গী হয় আর নারী হয় পুরুষের। সারা জীবনের সাথীটি নির্বাচন সঠিক হওয়াটা স্রষ্টার অফুরন্ত অনুগ্রহ। সঙ্গীর রুচি ও চাহিদার সাথে নিজের রুচি ও চাহিদার সমন্বয় হলে সংসারে সুখ ও শান্তি নিশ্চিত হয়। ভাল ও বিশ্বস্ত সঙ্গী জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার। সুখময় দাম্পত্য জীবনের জন্যে পরস্পরকে বুঝার আন্তরিক চেষ্টা থাকতে হবে। সঙ্গীর জ্ঞান -বুদ্ধি,মন-মানসিকতা, স্বভাব-প্রকৃতি, দক্ষতা-গুণাবলী দোষ ত্রুটি, প্রিয় ও অপ্রিয় বিষয়গুলি জেনে বুঝে চলতে হয়। মনের মত মন গড়ে তুলতে আন্তরিকভাবে ভালোবাসার বিকল্প নেই। সঙ্গীর যোগ্যতা-প্রতিভা-গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করা, দোষ ও ত্রুটি কৌশলে সারিয়ে তোলা,হাসি মুখে খুশি মনে কথা বলা, সাথে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া, ভদ্র-নম্র-বিনয়ী আচরণ করা, যে কাজ কিংবা গুণ ভালো লাগে তার প্রশংসা করা, ভরসাপূর্ণ-বিশ্বস্ত-ব্যক্তিত্ববান হওয়া,পরামর্শ করে সকল দিক যাচাই-বাছাই সিদ্ধান্ত নেয়া,অবদানের স্বীকৃতি দেয়া, মানসিক ও জৈবিক দাবী পূরণ করা,কথা-কাজে রাগে-অনুরাগে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রাণখুলে প্রকাশ করা, ছোটো খাটো ত্রুটি বিচ্যুতি উপেক্ষা করা, মাঝে মাঝে উপহার দেয়া, সাধ্যানুযায়ী মন রক্ষা করা,নিজেকে পরিছন্ন রাখা, যৌক্তিক আবদার রক্ষা করা,আপনার জন্য কষ্ট করলে ধন্যবাদ জানান, নিজের কর্মব্যস্ততার পরিধি জানিয়ে রাখা, নিজের দায়িত্ব ও সংকট নিয়ে প্রয়োজনে আলোচনা করা-খুবই কল্যাণকর। সম্পকে আস্থা ও বিশ্বাস খুব গুরুত্বপূণ। স্ত্রী উপাজনক্ষম হলে নিয়মিত হাতখরচ দিতে হয় না এমনকি সমোঝতা করে সংসার চালানোর দায়িত্বও স্ত্রীকে দেয়া যায়। তবে তার উপার্জিত অর্থ খরচ করায় খুব বেশি হস্তক্ষেপ ঠিক না।
যে লক্ষণগুলো দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটলের নির্দেশ দেয়, সেগুলো হচ্ছে, খুঁড়ে খুঁড়ে অতীত বের করে আনা। কটুক্তি, অশোভন আচরণ, অশালীন ভাষা ব্যবহার বা গালি-গালাজ করা, শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের খাটো করে দেখানোর চেষ্টা। একেবারে তুচ্ছ কোন বিষয় নিয়ে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া, নিজেদের এড়িয়ে চলার প্রবণতা, বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছা না করা, কোন সিদ্ধান্তই আর যৌথভাবে না নেয়া, ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কোন যুক্তি না থাকা,অহংবোধ, ঈর্ষা, নিজেদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতার মনোভাব, নিজের ভুলগুলো চেপে গিয়ে অপরের ত্রুটিগুলোকে সামনে আনা, অন্যের সামনে একজন আরেকজনকে হেয় করে দেখানোর চেষ্টা, সবসময় শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবা, কারো নিজেকে বঞ্চিত বা উপেক্ষিত মনে হওয়া, নিজেকে পরিবারের কোন অংশ বলেই মনে না হওয়া, আমাদের নয় বরং আমার পরিবার বিষয়টাই মুখ্য হয়ে উঠা, কারো গোপনে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়া-এগুলো দাম্পত্য জীবনকে অসহনীয় করে তোলে। দাম্পত্য সম্পর্কটা বেশি যান্ত্রিক হয়ে উঠলে সমস্যাগুলো থেকে দুজনই পালিয়ে বেড়ানোর পথ খুজে। একসঙ্গে বসে সমাধান বের করার চেষ্টা, পারস্পরিক যোগাযোগ হওয়া তাই খুব গুরুত্বপূণ।
কুরআনের ইরশাদ হয়েছ- ‘আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীনীদেরকে, যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে।-সূরা আর-রূম, আয়াত : ২১। অর্থাৎ তোমরা যেন তাদের কাছে আশ্রয় খুঁজে পাও, প্রশান্তি পাও। নারীজাতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের অন্যতম হলো সংসার আগলে রাখা। কর্মক্ষেত্র থেকে প্রত্যাবর্তন করা ঘর্মাক্ত স্বামীর সান্ত্বনা ও আশ্রয়স্থল হওয়া। সরলতা হচ্ছে নারীর সুন্দরতম অলঙ্কার। স্বামীকেও স্ত্রীর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা ইরশাদ করেন-তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রী-পরিজনের কাছে উত্তম।-তিরমিযী : ১৯৭৭; বাইহাকী, সুনান : ১৬১১৭।‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তার স্ত্রীগণের কাউকে প্রহার করেন নি। কোনো খাদেমকে প্রহার করেন নি, এবং নিজ হাতে তিনি যুদ্ধের ময়দান ছাড়া কখনও কাউকে আঘাত করেন নি। - শামায়েলে তিরমিযী : পৃষ্ঠা ২৩, সুনানে বায়হাকী : ১৩৩০২। একজন নারীর কাছে স্বামী পরিচয়ের চেয়ে বড় মর্যাদার কোনো পরিচয় নেই। ফলে স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পকটা এমন হওয়া উচিৎ যে, পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকবে, সহানুভূতিশীল হবে। রাগ-গোস্বা-জিদ-অভিমান করে খুব বেশি লাভ নেই। একটি আঞ্চলিক প্রবাদ এরূপ : ‘পুরুষের জেদে বাদশা, আর নারীর জেদে বেশ্যা।
সমাজের সাথে মিলেমিশে চলা, সামাজিক আচারগুলোর ক্ষেত্রে সহনশীল ও সংবেদনশীল হওয়া সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য হওয়া উচিত। অন্যের সম্ভ্রমের মূল্য দেয়া একজন মানুষের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যথায় সমাজে কেবল মানুষই বাস করবে কিন্তু মনুষ্যত্বের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। আভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি ও নিষ্কলুষতা নারীর সবচেয়ে ঈর্ষণীয় গুণ। যে নারীর আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়, সে নারীর সতীত্বও রক্ষিত হয় এবং সেই নারীর সংসারে শান্তি অবশ্যম্ভাবী হয়। উমর (রা বলেন- ‘সেই কওমে কোনো কল্যাণ নেই যেখানে কোনো উপদেশদাতা নেই এবং যারা উপদেশদাতাকে পছন্দ করে না।-রিসালাতুল মুস্তারশিদীন। বিখ্যাত বুযুর্গ হারেছ মুহাছিবী রহ. বলেন- ‘যে তোমাকে উপদেশ করে মনে রেখো সে তোমার কল্যাণ কামনা করে। সাহাবী হাসান বসরী রহ. বলতেন, যারা দুনিয়াতে জীবনের হিসেব কষবে আখেরাতে তাদের হিসেব সহজ হবে। আর যারা হিসেব কষবে না, নিজের জীবনের ভালোমন্দ ঘটনাগুলোর বিচার করবে না, সভ্যতার সৌন্দর্যে শামিল হওয়ার ব্যাপারে তৎপর হবে না, হিসেবটা তাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। মোহে পড়ে এমন কিছু করা উচিত নয় যা ভবিষ্যত জীবনে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই মোহকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই হবে একজন খাঁটি মুমিনের অন্যতম গুরুদায়িত্ব।
বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান থাকা উচিত। বয়সের ব্যবধান বেশি হওয়া যেমন উচিত নয় তেমনি একেবারে সমান সমান হওয়াও উচিত নয়। অনেককে দেখা যায় ক্লাসমেট বা সমবয়সী নারী বা পুরুষকে বিয়ে করে। বয়সের সমতাটা এক সময় তাদের জন্য বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ খুব স্বাভাবিক ভাবেই নারীরা দ্রুত বুড়িয়ে যায়। পুরুষের বেলায় তা ঘটে অনেক পরে। উন্মত্ত যুবককে যৌবনের সূচনাকালে নিবৃত রাখা হয় নাবালেগ বলে আর পূর্ণযৌবনে আটকে রাখা হয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলে। তাহলে অধ:পতিত এই সমাজের চারিত্রিক অবস্থা ধরে রাখার উপায় কী?
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, দুটি কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। প্রথমত, মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত হচ্ছে। তারা এখন অনেক সচেতন। মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য না করে বিচ্ছেদের পথ বেছে নিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোম্পানিগুলোর নানা অফার, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক ইত্যাদি সহজলভ্য উপাদান থেকে আকৃষ্ট হয়ে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে বিয়ের মতো সুদৃঢ় সম্পর্ক এবং নৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে একটু সংকোচ করছে না তারা। নানা কারণে মানুষের ঘর ভাঙে। সামাজিক অস্থিরতা, মাদকাসাক্তের প্রভাব, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, পরস্পরকে ছাড় না দেয়া ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কারণে ঘর ভাঙে। এগুলো হলো অতি সাধারণ ও পরিচিত কারণ, যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
স্বামী এবং স্ত্রী দুইজনই সম্পূর্ণ ভিন্ন দুইজন মানুষ। তাদের বেড়ে ওঠা, পরিবার, পড়াশোনা, অভ্যাস একজন থেকে আরেকজনের আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কেউ কাউকে বশে আনার চিন্তা না করে প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া উচিত। স্বামী শাসক হয়ে ওঠা এবং স্ত্রী নিজেকে স্বামীর দাসী ভাবা কোনোটাই কাম্য নয়। শরীয়ত কাউকে এমন ভাবার অধিকার দেয়নি। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তাদের জন্য রয়েছে তেমন হক যেমন রয়েছে নারীদের প্রতি পুরুষদের হক।-সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২২৮। সংসারে, দাম্পত্যজীবনে সমস্যা আসতেই পারে। মতানৈক্য কিংবা মৃদ ঝগড়াঝাটিও হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এটাকে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেয়া কিংবা পরে এটাকে কেন্দ্র করে কটুক্তি করা বা নিন্দার পথে হাঁটা মোটেই কাম্য নয়। আর এতে তৃতীয় কাউকে টেনে তো চরম অরুচিকর ব্যাপার। স্বামী স্ত্রী উভয়কেই মাথা গরম না করে যে কোনো বিষয় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সংসারী ব্যাপারকে পাড়া-প্রতিবেশী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াও কাম্য নয়।
সাংসারিক টানাপোড়নের অন্যতম হলো স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আলাদা করে ফেলার তড়িৎ উদ্যোগ। বিষয়টা একেবারেই অযৌক্তিক। স্বামী যে পরিবেশে জন্মেছেন,বড় হয়েছেন,যে সব মানুষের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন রাতারাতি সেসব বস্তু দূরে ঠেলা দেয়া একেবারেই অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে নারীকে স্বামীর পরিবার ও অন্যান্য সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এরূপ করতে পারলে অনেক ঝামেলাই নিজ থেকে দূরে সরে যাবে। আর বিয়ের পর মনের কথা ব্যক্ত করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ ব্যক্তি হচ্ছে স্বামী। তবে সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। স্বামীর কাছে শ্বশুরবাড়ির কারো সমালোচনা করা বা কোনো বিষয়কে একেবারে ঘৃণা করা উচিত নয়। এতে স্ত্রীর প্রতি স্বামী মারাত্মক বিরক্ত হয়ে উঠতে পারেন। আবার অনেক পরিবারে পুত্রবধুকে একেবারে দাসি বা কাজের মেয়ের অসম্মান করা হয়। তাদেরকে সারাজীবন একান্নে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হয়। এদুটির কোনোটাই উচিত নয়।
পুরুষের জীবনে আজ গৃহ ও গৃহিণীর প্রয়োজন সামান্যই। তার খাওয়ার জন্য আছে রেস্তোরাঁ, শোয়ার জন্য আছে হোটেল, রোগে পরিচর্যার জন্য আছে হাসপাতাল ও নার্স। সন্তান-সন্ততিদের লালন-পালন ও শিক্ষার জন্য স্ত্রীর যে অপরিহার্যতা ছিল, বোর্ডিং-স্কুল ও চিলড্রেনস হোমের উদ্ভব হয়ে তারও সমাধা হয়েছে। তাই স্ত্রীর প্রভাব ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে ঠেকেছে এসে সাহচর্যে। সে পত্নীর চাইতে বেশিটা বান্ধবী। সে কর্ত্রীও নয়, ধাত্রীও নয়- সে সহচরী। নারীর পক্ষেও স্বামীর সম্পর্ক এখন পূর্বের ন্যায় ব্যাপক নয়। একদিন স্বামীর প্রয়োজন মুখ্যত ছিল ভরণ-পোষণ ও রক্ষাণাবেক্ষণের। কিন্তু এ যুগের স্ত্রীরা একান্তভাবে স্বামী- উপজীবিনী নয়। দরকার হলে তারা অফিসে খেটে টাকা আনতে পারে। তাই স্বামীর গুরুত্ব এখন কর্তারুপে নয়, বন্ধুরূপে।
রাগে, ক্ষোভেই মানুষ। মানুষের সত্তার মধ্যে ভালোমন্দ এসব গুণ থাকবেই। কিন্তু তার একটা পরিমাণ থাকা চাই। পরিমাণের অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। রাগ, জেদ বস্তুটা নারীদের জন্য একটু বেশি বেমানান। নারীর প্রকৃতি আর সামাজিক জীবনে যেখানে তার অবস্থান, সাংসারিক জীবনে তাকে যেখান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয় সেখানে রাগ আর জেদের পরশ থাকা বেশ ঝুঁকিপূর্ণই বটে। একথা নারীকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে অভিভাবকদেরকেও। রাসূলুল্লাহর (সা কন্যা রুকাইয়া (রা স্বামী উসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসলে তিনি বলেছিলেন, ‘নারীরা স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করুক তা আমার একদম পছন্দ নয়। যাও, স্বামীর ঘরে চলে যাও।-আওযাজুস সিয়ার (ইবন ফারিস রহ. প্রণীত)। বাবা মা তার কন্যাকে এভাবে বিয়ের আগে এবং পরেও দীক্ষা দিবে। কন্যার রাগ ও জেদকে কখনও প্রশ্রয় দেয়া ঠিক না। তার জন্য উপকারি হবে জেদকে প্রশ্রয় না দেয়া। যে ভালোবাসা ভবিষ্যত অকল্যাণ ডেকে আনে সে ভালোবাসার যৌক্তিকতা কোথায়? আবূ হুরায়রা (রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহর (সা জামাতা আলী (রা বলতেন- ‘তুমি তোমার বন্ধুকে পরিমিত মহব্বত করো। কেননা কখনও সে তোমার দুশমনে পরিণত হতে পারে। আর দুশমনের প্রতিও ভারসাম্য বজায় রেখে ক্রোধপ্রকাশ করো। কেননা কোনোদিন সে তোমার বন্ধুতে পরিণত হতে পারে।-তিরমিযী : ২১২৮।
আবূ হুরায়রা (রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা ইরশাদ করেন-‘যে ব্যক্তি অপরের স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে বিগড়ে দেয় সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। - সহীহ ইবন হিব্বান : ৪৩৬৩। মুসলিম নারী তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করলে সেও পুরুষের মতই প্রতিদান পাবে। পারিবারিক সম্পর্কের ব্যাপারে কুরআনে ব্যবহৃত শব্দ হলো — ‘আল মুহসানাত’, ‘আল মুহসিনিন’ যা ‘ইহসান’ শব্দটি থেকে এসেছে। এই শব্দটির একটি অর্থ যেমনটা বুঝায় তা হলো — কোন একটি দুর্গ চারিদিকে সেনা দিয়ে শক্তিশালীভাবে সুরক্ষিত। সেইসূত্রে, একজন স্ত্রীকে দুর্গের ন্যায় কঠিন সুরক্ষা দেয় তার স্বামী — সুরক্ষা দেয় যাবতীয় দুঃখ থেকে, অস্থিরতা-শঙ্কা থেকে, অজ্ঞতা থেকে, লজ্জাহীনতা থেকে। একজন স্ত্রীরও একই রকম দায়িত্ব রয়েছে। তারা একে অপরের পোশাকের মতন। বিয়ে তাই কেবল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস নয়, দায়িত্ববোধের ব্যাপারও বটে। একজন মু’মিন কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার উপরেই ভরসা করে। তার সমস্ত চাওয়া, সমস্ত আকাঙ্ক্ষার কথা কেবল আল্লাহর কাছেই হয়। মাটির তৈরি দুর্বল মানুষের উপরে যখন অনেক আশা-আকাংখার ভার ন্যস্ত হয় — তখন নিঃসন্দেহে সেই মানুষ এতটা ভার নেয়ার যোগ্য থাকে না।
বিয়ের পর দু’জন নতুন মানুষ একসাথে থাকতে শুরু করলে সহনশীলতা খুবই দরকার পড়ে। সবাই মূলতঃ কেবল নিজের *প্রাপ্তি* বা *আকাঙ্ক্ষা* নিয়ে ভাবতে থাকে বেশি করে, আর তাই প্রবঞ্চিত অনুভব করার সম্ভাবনা থাকে। সমগ্র পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিবার। পরিবারে অশান্তি থাকলে মুসলিম সমাজে অরাজকতা তৈরি হয়, চরিত্র স্খলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরিবারে প্রশান্তি না থাকলে সদস্যরা তাদের দ্বীনের দায়িত্বসমূহ পালনে উদাসীন এবং অমনোযোগী হয়ে পড়তে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা নারীকে যেসব অনন্য বৈশিষ্ট্যে শোভিত করেছেন, তার অন্যতম হলো আচার-আচরণে আহ্লাদের প্রাচুর্য ও আবেগের বাহুল্য। তেমনি গঠন-প্রকৃতিতেও নারী কোমলতা ও এমন নম্রতায় সমুজ্জ্বল, যা পুরুষের সঙ্গে বসবাসরত পরিবেশে তার স্বাধীনতাকে করে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা নারীকে স্বভাব-চরিত্রেও বানিয়েছেন কোমল। যাতে সে শুষে নিতে পারে পুরুষের যাবতীয় রুক্ষতা। কেড়ে নিতে পারে তার হৃদয়-অন্তর। নারীর সান্বিধ্য পুরুষকে দেয় মানসিক আশ্রয়। যেখানে এলে তার টেনশন-অস্থিরতা লঘু হয়। কেটে যায় সব ক্লান্তি ও বিস্বাদ। একইভাবে সে যাতে হয় মমতাময়ী এবং শিশুর লালন-পালনে উপযুক্ত। আবেগ ও অনুভূতিপ্রবণ এক কোমল সৃষ্টি নারী। অপরের সুখের জন্য নারীই পারে সবচে বেশি ত্যাগের মহত্ব প্রকাশ করতে। এসব মানবিক গুণ ও সহজাত উপাদান ছাড়া কোনো পরিবার ও সমাজ টেকসই হয় না। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রমাণ করেছে, নারীই সবচেয়ে বেশি কঠিন মানসিক চাপ বহন করতে সক্ষম। মানসিক আঘাত সারাতে নারীই রাখতে পারে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা। অন্যদিকে আল্লাহ তা‘আলা পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন রূঢ়তা ও কঠোরতা দিয়ে। যা তাকে স্থান ও কালের বিবেচনায় বৃহত্তর অঙ্গনে বিচরণের সুযোগ এনে দেয়। মানুষ যেসব ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তা থেকে আত্মরক্ষায় শারীরিকভাবে পুরুষ অধিক সক্ষম।
রাসূলুল্লাহর (সা বক্তব্য : 'হে নারী সম্প্রদায়, তোমরা বেশি বেশি সদকা করো। কেননা, আমি তোমাদের বেশি জাহান্নামের অধিবাসী দেখেছি।' মহিলারা বললেন, কেন হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, 'তোমরা অধিকহারে অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞতা দেখাও। বুদ্ধিমান পুরুষকে নির্বুদ্ধি বানাতে অল্প বুদ্ধি ও খাটো দীনদারির আর কাউকে তোমাদের চেয়ে অধিক পটু দেখিনি।' তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের জ্ঞান ও দীনের অল্পতা কী? তিনি বললেন, 'মহিলাদের সাক্ষী কি পুরুষদের সাক্ষীর অর্ধেক নয়?' তাঁরা বললেন, জী, হ্যা। তিনি বললেন, 'এটিই তাদের জ্ঞানের অল্পতা। যখন তাদের মাসিক শুরু হয় তখন কি তারা নামায ও রোজা বাদ দেয় না?' তাঁরা বললেন, জী, হ্যা। তিনি বললেন, 'এটিই তাদের দীনদারির স্বল্পতা।
পরিবারের জীবনোপকরণ সংগ্রহের ভার ন্যস্ত করেছে ইসলাম পুরুষের কাঁধে। পুরুষের স্ত্রী-সন্তান, অক্ষম পিতা-মাতা কিংবা কামাইয়ের অযোগ্য ভাই অথবা দায়িত্ব নেয়ার কেউ নেই এমন বিবাহিত বোন হোক- সবার রুটি-রুজির দায়িত্ব তার ওপর। পক্ষান্তরে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব নারীর ওপর দেয়া হয়নি। এমনকি তার পিতা-মাতা বা যারা তাকে ছোট থেকে প্রতিপালন করেছেন- তাদের কারো দায়িত্বও তার ওপর ন্যস্ত করা হয়নি। তাছাড়া নারীরা তাদের সঞ্চিত সম্পদ স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন- চাই তার মালিক হন বিয়ের আগে কিংবা পরে। উপরন্তু তিনি আপন স্বামীকে তার নিজস্ব সম্পদের তত্ত্বাবধায়কও নিযুক্ত করতে পারবেন। ইসলাম এ জন্য বিবাহপূর্ব ও বিবাহপরবর্তী সময়ে তার স্বতন্ত্র আইনী সত্তা সংরক্ষণেরও নিশ্চয়তা দিয়েছে। সুতরাং বিয়ের আগে মেয়েরা যেমন তার পিতার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিয়ের পরও তার অবস্থা তেমনি। বিয়ের পর তার গোত্রনামে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
রাসূল (সা আরও বলেন: “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল (রক্ষণাবেক্ষণকারী), আর তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইমাম বা শাসক হলেন দায়িত্বশীল, আর তাকে তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষ তার পরিবার ও সংসারের জন্য দায়িত্বশীল, আর তাকে তার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর নারী তার স্বামীর ঘর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর খাদেম (সেবক) তার মনিবের ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ধারণা করি যে, তিনি (রাসূল) আরও বলেছেন: পুরুষ ব্যক্তি তার পিতার ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর তোমাদের সকলেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের সকলকেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” - ইমাম বুখারী র. হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা. থেকে বর্ণনা করেন ।
সদ্য বিবাহিত স্ত্রী নিজের বাড়ি ছেড়ে, যেখানে জন্মেছিল, যে বাসস্থানে প্রতিপালিত হয়েছিল তা ছেড়ে এমন পরিবেশে আসে যার সঙ্গে সে মোটেও পরিচিত নয়। মিলিত হয় এমন সঙ্গীদের সঙ্গে যাদের সে চেনে না। এমতাবস্থায় যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করলে স্বামী স্ত্রীর জন্য সঞ্চিত ধন হয়ে যাবে তা হচ্ছে, স্বামীর সঙ্গে থাকবে অল্পে তুষ্টির সঙ্গে এবং জীবনযাপন করবে আনুগত্য ও মান্যতার ভেতর দিয়ে। স্বামীর নজরে পড়ার জায়গাগুলো দেখাশোনা করবে এবং তার নাকে লাগার স্থানগুলো খুঁজে ফিরবে। স্বামীর দুই চোখ যেন স্ত্রীর কুৎসিত কিছুর প্রতি পতিত না হয়। আর সুবাস ছাড়া স্ত্রীর কাছে যেন কোনো গন্ধ না পায়। সুপ্রসিদ্ধ সুন্দরের সর্বোত্তম হলো চোখের সুরমা। আর পবিত্র সুবাসগুলোর আদি ও সেরা হলো সাবান ও পানি। স্বামীকে খাওয়াবার সুযোগ তালাশ করবে। এবং তাঁর নিদ্রার সময় নিরব থাকবে। কারণ, ক্ষুধার তাপ মানুষকে তাতিয়ে দেয়। আর ঘুম থেকে কেঁপে ওঠা তাকে ক্ষেপিয়ে দেয়। স্বামীর বাসা ও সম্পদের যত্ন নেবে। এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। তার কোনো নির্দেশ অমান্য করবে না এবং তার কোনো দোষ খুঁজে বের করবে না। কারণ, তুমি তার নির্দেশের অবাধ্য হলে অর্থ তার মনটাকে চটিয়ে দিলে। যদি তার কোনো দোষ প্রকাশ করলে তো তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় অনিরাপদ হয়ে গেলে। তাঁর বিষণ্নতার সময় আনন্দ প্রকাশ করবে না। আবার তাঁর আনন্দের সময় বিষণ্নতা প্রকাশ করবে না। কারণ, প্রথমটি তার কাছে অবহেলা মনে হবে এবং দ্বিতীয়টি তাকে বিরক্ত করবে। তাকে সবচেয়ে মর্যাদা তুমি তখনই দেবে যখন তাঁকে সবচেয়ে বেশি সম্মান করবে। আর এ অবস্থায় স্ত্রী সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না যাবৎ না স্ত্রীর পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়ে স্বামীর সন্তুষ্টিকে স্ত্রীর সন্তুষ্টির ওপর এবং স্বামীর চাওয়াকে স্ত্রীর চাওয়ার ওপর অগ্রাধিকার না দেবে।
বস্তুত নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্রকে খোদ প্রকৃতিই স্বতন্ত্র করে দিয়েছে। প্রকৃতি মাতৃত্বের পবিত্র দায়িত্ব সম্পূর্ণ নারীর উপর সোপর্দ করেছে এবং সেই সংগে দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত স্থান কোথায়, তাও বাতলিয়ে দিয়েছে। অনুরূপভাবে পিতৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে পুরুষের ওপর এবং সেই সংগে মাতৃত্বের মতো গুরুদায়িত্বের বিনিময়ে তাকে আর যেসব কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাও প্রকৃতি সুস্পষ্টরূপে নির্ধারণ করে দিয়েছে। উপরোন্তু এ উভয় প্রকার দায়িত্ব পালনের জন্য নারী ও পুরুষের দৈহিক গঠন, শক্তি সামর্থ ও ঝোঁক প্রবণতায়ও বিশেষ পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রকৃতি যাকে মাতৃত্বের জন্য সৃষ্টি করেছে, তাকে ধৈর্য, মায়া মমতা, স্নেহ ভালবাসা প্রভৃতি কতকগুলো বিশেষ ধরনের গুণে গুণান্বিত করেছে। নারীর ভেতরে এসব গুণের সমন্বয় না হলে তার পক্ষে মানব শিশুর লালন পালন করা সম্ভবপর হত কি? বস্তুত মাতৃত্বের মহান দায়িত্ব যার উপর অর্পণ করা হয়েছে; তার পক্ষে এমন কোন কাজ করা সম্ভব নয়, যার জন্যে রুক্ষতা ও কঠোরতার প্রয়োজন। এ কাজ শুধু তার দ্বারাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে, যাকে এর উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেই সংগে পিতৃত্বের মতো কঠোর দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। স্বামীর ভালবাসা অর্জন করতে হলে স্ত্রীকে নারীসুলভ আচরণ করা,পরিচ্ছন্ন ও সুরভিত থাকা,স্বামী বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে যাবতীয় সমস্যার কথা বলা শুরু করা, মানসিক বিরতি না দেয়া, বার বার ‘কি ভাবছ?- জিজ্ঞেস করা’ অনবরত দোষারোপ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ স্ত্রীকে আসলেই সত্যিকার অর্থে অভিযোগ করার মত কিছু দেন।
অন্যের কাছে নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর সমস্যার কথা বর্ণনা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন; এমনকি সাহায্য বা পরামর্শ চাওয়ার অজুহাতেও না! আপনি যদি মনে করেন আপনার বৈবাহিক সমস্যার আইনানুগ সমাধান প্রয়োজন, তাহলে এমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যান যেঃকোন অন্যায়ের ব্যপারে ভুল সংশোধনের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে দিতে পারে, যাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আবার সুন্দর সমন্বয়ে মিল হয়ে যায়, অথবা উভয়পক্ষের সম্মতিতে সৌহার্দপূর্ণভাবে বিচ্ছেদ করাতে পারেন। আপনার শাশুড়ির সাথে ভাল আচরণ করুন, যেমনটি আপনি চান আপানার স্বামী আপানার মায়ের সাথে করুক। ইসলামে স্বামী স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানুন। অধিকার আদায়ের চেয়ে আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পাদনের ব্যপারে আগে সজাগ হন। যখন সে ঘরে আসে, দরজায় এমন ভাবে ছুটে যান যেন আপনি তারই অপেক্ষায় ছিলেন। হাসিমুখে তাকে সালাম দিন। আপনার বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন; অন্তত আপনার স্বামী যতটুকু পরিচ্ছন্ন দেখতে পছন্দ করে।
সঙ্গীর পরিবার পরিজনের সাথে প্রায়ই যোগাযোগ করুন। কোন কাজে সহযোগিতা করলে তাকে ধন্যবাদ জানান। সে যখন কোন একঘেয়ে কথা বলে, তার কথা ধৈর্য ধরে শুনুন। মাঝে মাঝে তাকে প্রশ্নও করুন যাতে সে বুঝতে পারে আপনি তার কথা আগ্রহ নিয়ে শুনছেন। সঙ্গীকে ভাল কাজে উৎসাহিত করুন। সঙ্গীর মেজাজ যখন খারাপ থাকে, তাকে কিছুটা সময় একা থাকতে দিন। ইনশাআল্লাহ, একসময় তার মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে। সে যদি আপনার সাথে রেগে গিয়ে চেঁচাতে থাকে, আপনি চুপ থাকুন। দেখবেন আপনাদের বিবাদ অনেক দ্রুত থেমে গেছে। পরে যখন সে শান্ত হবে, তখন আপনি আপনার কথা বোঝাবেন। যখন আপনি তার উপর রেগে যান, তখন বলবেন না যে তিনি আপনাকে রাগিয়েছেন বরং বলুন তার কাজে আপনি আপসেট হয়েছেন। আপনার রাগকে তার দিকে নির্দেশ না করে তার কাজ বা উদ্ভুত পরিস্থিতির দিকে নির্দেশ করুন। মনে রাখবেন, আপনার সঙ্গীরও আবেগ অনুভুতি আছে, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। তাকে তার বন্ধুদের সাথে কোন রকম অপরাধবোধ ছাড়া কিছু সময় কাটাতে দিন, বিশেষতঃ যদি তারা ভাল মানুষ হয়। তাকে বাইরে যেতে দিন যাতে সে নিজেকে ঘরের ভেতর ‘আবদ্ধ’ বোধ না করে। স্বামী যদি স্ত্রীর কোন সামান্য কাজে বা অভ্যাসে বিরক্ত হয় যেটি সে সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেন, তবে স্ত্রীর উচিৎ সেটি দ্রুত বন্ধ করা ।
মনের কথা খোলাখুলি বলতে শিখতে হবে। সে সবসময় বুঝে নেবে বা অনুমান করতে পারবে এমন চিন্তা করবেন না। অনুভূতি প্রকাশ করা শিখুন। ছোট ছোট বিষয়ে রেগে যাবেন না। তার সাথে হাসি মশকরা করুন, যাতে আপনাদের দুই জনের মনই প্রফুল্ল হয়। তাকে বলুন, আপনি স্ত্রী হিসাবে সেরা এবং এমন বিষয়ে নিজের উল্লেখ করুন যেটা আপনি জানেন আসলেই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু অহংকার করে নয়, বিনয় এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- "The way to a man’s heart is through his stomach" তাই স্বামীর পছন্দের খাবার তৈরি করা শিখুন। আপনার পরিচিত বা আত্মীয় স্বজনের কাছে কক্ষনও তার বদনাম করবেন না। তারা যদি একথা মেনে নেয় ও বিশ্বাস করা শুরু করে, তাহলে তা আপানকেই পাল্টা আহত করবে। আপনি নিজেই তখন হীনমন্যতায় ভুগবেন এই ভেবে যে আপনার স্বামী খারাপ, আবার অন্যরাও ভাববে যে আপনার স্বামী খারাপ। আল্লাহ বলেছেন –"ধ্বংস ওই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে পেছনে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।" -সুরা হুমাজাঃ১। বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনার সময়টাকে কাজে লাগান, এবং আপনার দায়িত্ব সুন্দরভাবে সম্পাদন করুন। এতে আপনিও খুশি হবেন, আপনার স্বামীরও ভাল লাগবে। উপরের সবগুলো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করুন; দেখবেন আপনি যা করছেন আল্লাহ তায়ালা তাতে বরকত দেবেন।
স্বামী স্ত্রী একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ, করণীয়-বর্জনীয় বিষয়গুলো বিজ্ঞতার সাথে আলোচনা করবেন। স্ত্রী স্বামীকে এমনভাবে আদেশ বা নির্দেশ দেবেন না যেন মনে হয় সে আপনার ‘অধীনস্ত’। আপনার সঙ্গীকে বারবার বলুন আপনি তাকে কত ভালোবাসেন। সুস্থ থাকুন এবং নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, যাতে বলিষ্ঠ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আচার-আচরনে মার্জিত থাকুন (যেমনঃ ঘ্যানঘ্যান করা, অতি উচ্চস্বরে হাসা বা কথা বলা, থপথপ করে সশব্দে হাঁটাচলা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।)স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী বাড়ির বাইরে যাবে না, আর স্বামীও স্ত্রীকে জানিয়ে বের হবে। খেয়াল রাখুন পরিধেয় কাপড়গুলো যেন নিয়মিত পরিষ্কার থাকে। জরুরি অথবা বিতর্কিত বিষয়ে তার সাথে এমন সময় আলোচনা করবেন না যখন সে ক্লান্ত অথবা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে।সঠিক সময়ে সঠিক আলোচনা করুন।আপনার সঙ্গীর প্রশংসা করুন। এতে তার কাজের স্পৃহা বাড়বে।আপনার চুল সব সময় আঁচড়ানো রাখুন।মাঝে মাঝে উপহার দিন। উপহার স্বরূপ তাকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও দিতে পারেন।তার আগ্রহ ও শখের ব্যপারে আপনিও আগ্রহী হওয়ার চেষ্টা করুন।তার জন্য নিজেকে আকর্ষণীয় করে সাজান, তার সাথে খুনসুটি করুন।আপনার ত্বকের যত্ন নিন, বিশেষতঃ চেহারার। চেহারাই আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু।অন্তরঙ্গ ব্যপারে যদি আপনার কোন অসন্তুষ্টি থাকে, তাকে জানান, তার সাথে কথা বলুন। তাকে বুঝতে সাহায্য করুন। নীরব থেকে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।প্রতিদিন, প্রতি ওয়াক্তের নামাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাদের মধ্যকার ভালবাসার ও সহমর্মিতার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে দেন এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করেন। দোয়ার মত কার্যকরী কিছুই নেই। পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা তখনই থাকে যখন আল্লাহ তাদের মাঝে এটা দেন।
নিজের সঙ্গীর সাথে অন্যদের সঙ্গীর তুলনা করবেন না। যেমনঃ কখনও বলবেন না, ‘অমুকের .... তো এমন করে না, তুমি কেন এমন কর...’আপনার ....যেমন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। কারণ, কেউ নিখুঁত নয়, আপনিও নন। আর যদি, ত্রুটিহীন, নিখুঁত সঙ্গী চান তাহলে জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ সেখানে আপনি এবং আপনার স্বামী দু’জনেই হবেন নিখুঁত ও ত্রুটিহীন।তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ডাকুন এবং একসাথে নামাজ পড়তে বলুন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি দুজনকেই মুত্তাকী হতে সাহায্য করেন। যদি স্ত্রী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় রত থাকে, নিশ্চিতভাবেই স্বামীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকলে ফেরেশতারা আপনাকে ভালবাসবে, সমস্ত সৃষ্টি আপনাকে ভালবাসবে।
২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৬
সংবিধান বলেছেন: ইতু লুম্ভা?
৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪১
বিষন্ন একা বলেছেন: +++
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০
মদন বলেছেন: ++++++++++++