নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণতন্ত্র এখন বাণিজ্যতন্ত্র হয়ে গেছে। নিবাচনে খরচ করাটা লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে চিহ্নিত। জনগণের ভোটে নিবাচিত প্রতিনিধিরাও জনসেবার কথা বলে নিজের সেবায় সবশক্তি নিয়োজিত করে। রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন সাধারণ জনগণের দু:খ কষ্টের সীমা থাকেনা। বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে। অথচ যে আশা আকাংখা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, যে স্বপ্ন নিয়ে সংবিধান রচিত হয়েছিল সেই স্বপ্ন আশা আজও পূরণ হয়নি।
ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার খায়েশ মিটাতে যেয়ে বারবার পদদলিত হচ্ছে সংবিধান। দুনীতি ও সন্ত্রাসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা গণতন্ত্রের কফিন সম্পন্ন করেছে। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে, পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়: (ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা; (খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার;(গ)যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার; এবং (ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্যলাভের অধিকার৷ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের স্বাধীন পতাকা,বিশ্বমানচিত্রে অবস্থান ও সাবভৌমত্ব নিশ্চিত করেছে তবে দুভাগ্যজনকভাবে সাংবিধানিক অধিকারগুলো আজও উপেক্ষিত। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ১২-এ উল্লেখ আছে,কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তাঁর গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশীমত হস্তক্ষেপ কিংবা তাঁর সুনাম ও সম্মানের উপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
অহরহ লংঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। আইনের দৃষ্টিতে সমতাবিধানের নিশ্চয়তা প্রদানে সংবিধানের ২৭ নং ধারায় বলা আছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। অথচ বিশেষ জেলার লোক কিংবা বিশেষ দলের লোক অন্য জেলা বা অন্যদলের তুলনায় বিশেষ সময়ে ঠিকই বিশেষ সুবিধা পায়। অথচ সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা বিধানে সংবিধানের ২৯ নং ধারায় উল্লেখ আছে, (১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না। সংবিধান নিয়ে যত বেশি কথা হয় বাস্তবে ততবেশি মানা হয় না। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ২-এ উল্লেখ আছে, স্বাধীনতা এবং অধিকারসমূহে গোত্র, ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষা, ভাষা, রাজনৈতিক বা অন্যবিধ মতামত, জাতীয় বা সামাজিক উত্পত্তি, জন্ম, সম্পত্তি বা অন্য কোন মর্যাদা নিবিশেষে প্রত্যেকেরই সমান অধিকার থাকবে।
ধর্মভেদ কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে অনেকে। অথচ সংবিধানের ২৮ ধারায় বলা আছে,(১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। (২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। (৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না। (৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ১-এ উল্লেখ আছে, সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে ; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত্।
আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার সংক্রান্ত সংবিধানের ৩১ নং ধারায় বলা আছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকাররক্ষণ ৩২ নং ধারায় বলা আছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না। অথচ আমরা কি দেখতে পাই? মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ৩-এ উল্লেখ আছে, জীবন, স্বাধীনতা এবং দৈহিক নিরাপত্তায় প্রত্যেকের অধিকার আছে। তাহলে বিরোধীদলকে দমনের নামে গণগ্রেফতার, গ্রেফতার বাণিজ্য, সাজানো মামলা, সাধারণ মানুষকে পুলিশী হয়রানি,স্বাভাবিক কাজকমে বাঁধা, রিমান্ডে নিয়ে নিযাতন, গুম –এসব কেন বৈধতা পায়? যেখানে সংবিধানের ৩৫ ধারার ৪-এ বলা আছে, কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না। (৫) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। সেখানে সন্দেহজনিতভাবে আটককৃতদেরকে অশ্লিল গালি গালাজ,শারীরিকভাবে নিযাতন,সম্পদ নষ্ট করা কোন গণতান্ত্রিক সমাজের সভ্য আচরণ হতে পারে না। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ৫-এ উল্লেখ আছে, No one shall be subjected to torture or to cruel, inhuman or degrading treatment or punishment. অথাৎ কাউকে নির্যাতন করা যাবে না; কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না অথবা কাউকে এহেন শাস্তি দেওয়া যাবে না।
দেশকে একটি পুলিশী রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলা কোন রাজনৈতিক দলের জন্যে আখেরে কল্যাণ বয়ে আনবে না। কেউ বক্রপথে হাটলে অন্যরাও সহজে সে বক্রপথটি চিনে যায়। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় চলা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের জানমাল হেফাজতের দায়িত্বে নিয়োজিত। তারা কোন রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে লেজুরবৃত্তি করতে পারেনা। সংবিধানের ৩৩ ধারায় উল্লেখ আছে, (১) গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। (২) গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে তদতিরিক্তকাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না। তাহলে কোন যুক্তিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আন্দোলন দমন ও নাশকতা সৃষ্টির আশংকার অজুহাতে অসহায় নিরীহ মানুষকে আটকানো হবে? মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ৯-এ উল্লেখ আছে, কাউকেই বেয়ালখুশীমত গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ করা কিংবা নির্বাসন দেওয়া যাবে না।
চলাফেরার স্বাধীনতা কি আছে? গ্রেনেড হামলা, ককটেল ফোটার আওয়াজ,গুলি,অস্রের মহড়া, লাঠি মিছিল,বাসে-ট্রাকে আগুন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া,আসবাবপত্র ভাঙ্চুর,রেল লাইন উপরে ফেলা,মানুষকে আহত নিহত করা এসব কিসের আলামত? সবত্র রণসজ্জায় আতংক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভয়-শংকা!সংবিধানের ৩৬ ধারায় আছে, জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ- সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তাহলে জনগণকে কেন জিম্মি করা হয় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্য? মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ১৩-এ উল্লেখ আছে,১.নিজ রাষ্ট্রের চৌহদ্দির মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং বসবাস করার অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। ২. প্রত্যেকেরই নিজ দেশ সহ যে কোন দেশ পরিত্যাগ এবং স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে।তাহলে আইনের শাসন আছে এমন কোন রাষ্ট্রের নাগরিকগণ কেন বেআইনীভাবে আটক হবে কিংবা ইচ্ছেমত যেখানে ইচ্ছা সেখানে যৌক্তিকভাবেও বসবাস করতে পারবেনা?
এখন দেশে সমাবেশের স্বাধীনতা নেই? বিরোধীদলকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়না।বিরোধী দলের নেত্রীকে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।নেতা কমীদের রাস্তায় নামতে দেয়া হয়না। অথচ সংবিধানের ৩৭ ধারায় আছে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। সংগঠনের স্বাধীনতা নেই? অথচ সংবিধানের ৩৮ধারায় স্পষ্ট আছে, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ২০-এ উল্লেখ আছে,১.প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণ ও সমিতি গঠনের স্বাধীনতায় অধিকার রয়েছে। ২.কাউকে কোন সংঘভূক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না।
সংবাদমাধ্যম, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বিরোধীদলীয় মতের সমথক মালিকানার টিভি চ্যানেল,পত্রিকা,অনলাইন পত্রিকা, ব্লগ। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা নেই। অথচ সংবিধানের ৩৯ ধারায় আছে, (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ১৯-এ উল্লেখ আছে,Everyone has the right to freedom of opinion and expression; this right includes freedom to hold opinions without interference and to seek, receive and impart information and ideas through any media and regardless of frontiers. অথাৎ প্রত্যেকেরই মতামত পোষণ এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতায় অধিকার রয়েছে। অবাধে মতামত পোষণ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যে কোন মাধ্যমের মারফত ভাব এবং তথ্য জ্ঞাপন, গ্রহণ ও সন্ধানের স্বাধীনতাও এ অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ৪১ ধারায় আছে, (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ১৮-এ উল্লেখ আছে,Everyone has the right to freedom of thought, conscience and religion; this right includes freedom to change his religion or belief, and freedom, either alone or in community with others and in public or private, to manifest his religion or belief in teaching, practice, worship and observance. অথাৎ প্রত্যেকেরই ধর্ম, বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতায় অধিকার রয়েছে। এ অধিকারের সঙ্গে ধর্ম বা বিশ্বাস পরিবর্তনের অধিকার এবং এই সঙ্গে, প্রকাশ্যে বা একান্তে, একা বা অন্যের সঙ্গে মিলিতভাবে, শিক্ষাদান, অনুশীলন, উপাসনা বা আচারব্রত পালনের মাধ্যমে ধর্ম বা বিশ্বাস ব্যক্ত করার অধিকারও অন্তর্ভূক্ত থাকবে। তাহলে কোন যুক্তিতে ধমীয় বইকে জিহাদী বই, ধমীয় সংগঠনকে জঙ্গী সংগঠন বলে এসব বইয়ের লেখক-প্রকাশক-পাঠক-গ্রাহক-বিতরণকারী-সংরক্ষণকারী কিংবা বিভিন্ন ধমীয় সংগঠনের সাথে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক-নিপীড়নমূলক-নিযাতনমূলক ব্যবস্থা নেয়াটা যৌক্তিক বিবেচিত হবে?
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ২২-এ উল্লেখ আছে,সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার আছে।এদেশে এখন জানমালের নিরাপত্তা সংকট তীব্রতর। একজনের অপরাধে আরেকজন শাস্তি পায়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ ধারায় আছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের (ক) প্রবেশ, তল্লাশী ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তালাভের অধিকার থাকিবে; এবং (খ) চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতারক্ষার অধিকার থাকিবে। এখন প্রশ্ন হল,জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের নামে বৈধ অস্রধারী বাহিনীগুলো কখনও কখনও অবৈধ অস্রধারীদের সাথে নিয়ে যে অভিযানগুলো পরিচালনা করে তাতে কি সংবিধানের লংঘন হয়না?
এদেশে স্বৈরতন্ত্রও এসেছে গণতন্ত্রও এসেছে। ক্ষমতাসীনদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। কিন্তু দেশের উন্নতি হয়নি কিংবা জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। দেশের ভাগ্যের ইতিবাচক পরিবতন না হলেও ক্ষমতাসীনদের সম্পদ বেড়েছে, জীবন মানের উন্নতি হয়েছে। দেশের মাটি ও মানুষের জন্যে যাদের দরদ উতলে ওঠে তারাও তাদের সন্তান সন্ততিদের বিদেশে পড়ালেখা করায়,কেনাকাটা-চিকিৎসা-শিক্ষা-ব্যবসা বাণিজ্য-চাকুরী-বসবাস সব দেশের বাইরে।দেশ গড়ার দায়িত্ব যাদের তারাই বিদেশের প্রেমে মশগুল। যে দল ক্ষমতায় আসে তারাই জনগণের মাথায় রেখে কাঠাল ভেঙ্গে নিজেরা খাওয়ায় ব্যস্ত থাকে। জয়ও বিদেশে থাকে, তারেকও বিদেশে থাকে- বিবৃতি দেয়, বক্তৃতা দেয়। সাধারণ জনগণ রাস্তায় নামে, আন্দোলন করে,গুলি খায়, মরে।
বিপন্ন মানবতা! স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে উদ্ধার করতেই হবে। অজানা দুঘটনার আশংকায় সাধারণ মানুষ উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় থাকে, এমপি মন্ত্রীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে;ক্ষমতার রদবদল হলে কেউ দেশ ছাড়ে কেউ বিদেশ থেকে দেশে ফিরে। দেশটা গোল্লায় যাক এতে তথাকথিত জনসেবক জনগণের বন্ধুদের কিছুই হবেনা।এদেশই যাদের একমাত্র ঠিকানা, এদেশের মাটিই যাদের একমাত্র আশ্রয়, এদেশেই যাদের জীবন মরণ তাদেরকে দেশটাকে গড়তে হবে। নিরব নিষ্ক্রীয় থেকে শেষ রক্ষা হবে না।দেশ রক্ষা, দেশের সমৃদ্ধি, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে দেশের সবস্তরের সাধারণ মানুষকেই উদ্যোগী হয়ে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। কোন ত্রাণকতা এসে দেশের সমৃদ্ধি ও জাতির উন্নতি করে দিয়ে যাবেনা। যার মাথা তাকেই ভাবতে হবে অন্য কেউ এসে উন্নয়ন করে দিয়ে যাবে তারপর সুখে শান্তিতে জীবন কাটাবেন এমনটি আশা করাও চরম বোকামি হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪২
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সময়ের কথা
যালিম যুলুম চালিয়েও অরা নেতা