নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক. খাদ্য সংকট ও ক্ষুধার্ত মানুষ
কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি। আমি ভেবে দেখলাম তিনি কি গভীর ভাবনা থেকেই না লাইন দু’টা লিখেছিলেন। বিশ্বে প্রতি বছর যত খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে, তার অন্তত ৩০% থেকে ৫০% অপচয় হচ্ছে। নষ্ট হওয়া এই খাদ্যের পরিমান প্রায় ২০০ কোটি টন। ব্রিটেনে প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী ২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯৫০ কোটি। ড: টিম ফক্সের ভাষায়, যেখানে বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যান, সেখানে এই অপচয় মেনে নেয়া যায় না। আমিও ড: টিম ফক্সের সাথে একমত। ইসলাম ধর্মের স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে, যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে অথচ সে পেট পুরে খায় সে ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয়। এই মূলনীতি অনুযায়ী পারিবারিক পর্যাায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় পর্যা য়ে চিন্তা করুন। তাহলে সোশ্যাল বিজনেস, সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি, এনজিও তথা স্বেচ্ছাসেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা, কিংবা বৈশ্বিক সংগঠনগুলোর দায় দায়িত্বের পরিসরটা বুঝা সহজ হবে। এ প্রসঙ্গটি কবি না হয়েও কবিতায় লেখার একটি প্রচেষ্টা-
একজন ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে-
হুজুরের বয়ান নয় তবারকই প্রিয়।
গানের সুর, কবিতার আবৃত্তি-
তার হৃদয়ে ঢেউ জাগাতে পারে না।
জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, মানবতাবাদী বুলিতে-
বিরক্তি ছাড়া কিছুই জাগে না।
একজন অভুক্ত মানুষ-
মঞ্চের অভিনয় কিংবা বক্তৃতায় নয়,
খাবারের প্যাকেটেই বেশি আকৃষ্ট হয়।
পারফিউমের গন্ধ, ফুলের সৌরভ কিংবা প্রশংসা-
তাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে না।
যার পেটে ক্ষুধার জ্বালা আছে-
নৈসর্গিক দৃশ্য অর্থহীন তার কাছে।
চমৎকার প্রচ্ছদ, উৎকৃষ্ট লেখা, আকর্ষণীয় বই-
তার নয়ন ও মনকে জুড়াতে পারে না।
খাদ্য নেইতো মনের জোরও নেই;
মুখে হাসি নেই, রুপচর্চা নেই, আন্দোলনে নেই।
বিপ্লবী শ্লোগান, দেয়াল লিখনে অঙ্গীকার, লিফলেট-
তার চেতনাকে জাগাতে পারে না।
ব্যানার, ফেস্টুন, ব্যানার আর কার্ড-
তার কাছে বেহুদা কাজ বলে মনে হয়।
একজন ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে-
দু’মুঠো অন্নই হয়ে ওঠে মুখ্য,
রহম দিলটাও হয়ে যায় রুক্ষ।
গরম গরম বিতর্কও-
তার ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব কাটাতে পারে না।
সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গোলটেবিল আলোচনাও-
তার তন্দ্রাকে দূর করে না।
খাবার নেইতো সাহসও নেই, স্বপ্নও নেই,
আদর্শের আবেদনেও সরব সাড়া নেই;
মতবাদ মতাদর্শ তাকে গতিশীল করেনা।
পৃথিবী সুন্দর করে গড়তে পারবে তখন-
সেরা সৃষ্টি আনন্দের সাথে বাঁচবে যখন।
(লেখার সময়কাল ০৪/০৬/২০১৪ )
দুই. সম্পর্ক রক্ষা ও দায়িত্ব পালন
যে সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী লোক থাকে, সেখানে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয় না। অথচ আজকাল স্বচ্ছল বড়লোকরা অনেক সময়ই গরীব আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর রাখেন না। এমন কি অনেক সময় অসহায় আত্মীয় স্বজনের পরিচয় পর্যান্তও গোপন করেন। অথচ উচিৎ হচ্ছে সামর্থ্যানুযায়ী সৃষ্টির সেবা করা। এমনকি এক গ্লাস পানি দিয়ে পিপাসার্তের পিপাসা দূর করে হলেও। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করানো কিংবা শুধু এক গ্লাস পানি দিয়ে কারো পিপাসা মেটানোর- এসব কি আর এমন মূল্যবান কথাবার্তা। অথচ ভেবে দেখুন-
পিপাসার্ত হলে-চলে কি পানি ছাড়া?
পানি শূণ্য হলে- ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।
বিশুদ্ধ খাবার পানি না পেলে-
তৃার জ্বালায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হলে-
পিপাসায় ছটফটানো প্রাণ চায়না-
ডাবের পানি, খেজুরের কিংবা আখের রস;
চায় এক গ্লাস সাধারণ পানি।
ঝর্ণার পানি, বৃষ্টির পানি কিংবা নলকূপের পানিও-
স্বর্ণ রৌপ্য হীরক মণিমুক্তার চেয়ে দামি হয়ে ওঠে।
নদী কিংবা সাগরের বক্ষে যে চলে,
বিশুদ্ধ খাবার পানি না পেলে-
তার অবস্থাটাও হয় বড়ই করুণ।
(লেখার সময়কাল ০৪/০৬/২০১৪)
তিন. জীবিকার সন্ধানে জীবন হারানো নয়; চাই মানবিক বিশ্ব
যারা প্রবাসে থাকেন তাদের অনেকেরই নিজ দেশের প্রতি, নিজ দেশের মানুষের প্রতি, নিজ জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ২২ কোটি লোক নিজ জন্মভূমিতে থাকে না। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বিশ্ব অভিবাসীদের ৪ শতাংশ আমাদের হলেও রেমিট্যান্সের মাত্র আড়াই শতাংশ আমাদের ভাগে আসে। আসলে পরিবার পরিজন রেখে প্রবাস জীবন যাপন কিংবা পরিবার পরিজন সহ বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ভিন দেশীয় পরিবেশে বসবাস–দুটোরই কিছু ভাল কিছু মন্দ দিক আছে। আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে এর শক্তিশালী প্রভাবও আছে। কয়েকটি ঘটনা প্রসঙ্গটি বুঝায় সহায়ক হবে।
এক. যিনি ডিগ্রী পরীক্ষায়ও অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। এক যুগ ধরে সিঙ্গাপুরে আছেন। ভাল পারফরমেন্সের ফলে সুযোগ সুবিধা বেড়েছে, পদোন্নতি হয়েছে; এমনকি মাসে আড়াই লক্ষ টাকা আয় করছেন। ছুটিতে দেশে এসে তিনি যখন ছোটবেলা থেকে মেধাবী বলে পরিচিত, বৃত্তি প্রাপ্ত, নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কারো মাসিক আয় সম্পর্কে জানতে চান তখন সেই উচ্চশিক্ষিত মানুষটি উত্তর এড়িয়ে যায়, বিব্রতবোধ করে। এই প্রবাসী মানুষটির গাড়ি, বাড়ি, বিত্ত দেখে যদি কেউ শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করেন তবে কি তা ঠিক হবে?
দুই. তিনি দাখিল পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ায় রাগ করে অভিভাবকরা লিবিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে। তিনি সেখান থেকে কোন এক প্রক্রিয়ায় ইটালিতে গেছেন। যে বাড়ির লোকজনের তিন বেলা আহার জুটতো না এখন সেটি তিন তালা বাড়ি, অনেকে প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন। জেলার অন্যতম ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ের এক বাবা উচ্চশিক্ষিত পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে মেয়েকে এই প্রবাসীর সাথে বিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো মেয়ের বাবার এই দৃষ্টিভঙ্গি যদি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি হয় তবে এটি কি ঠিক?
তিন. দেশে ব্যবসা করতেন। আরো ভাল জীবন যাপনে সক্ষম হবেন এমন আশায় বিদেশে গেছেন। অনেক কষ্ট করে উপার্জিত অর্থ বাবা মাকে উপেক্ষা করে স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। প্রাণপ্রিয় স্ত্রী প্রণয় জনিত কারণে পর পুরুষের হাত ধরে ঘর ছেড়েছেন। এখন দেশে ফিরে তিনি উন্মাদ প্রায়। পাগলের মতো আচরণ করেন। প্রশ্ন হলো নীতি নৈতিকতার উচুঁ মান না থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের বিশ্বাস কতটা যৌক্তিক কিংবা স্ত্রীর অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোই কি আসলে যথেষ্ট হয়?
চার. গ্রামটির প্রায় অধিকাংশ পরিবার থেকেই এক বা একাধিক বিদেশে গেছেন। চরম দারিদ্রতা থেকে হঠাৎ নগদ টাকা পয়সা আয় রোজগারের সুবাদে অনেকের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে আবার পরিবারে থাকা শিশু কিশোররাও বখাটে হয়ে গেছেন। এদিকে টাকা পয়সা বিদেশ থেকে আয়রোজগার করে যারা পাঠাচ্ছেন তাদের পরিবার হিসাব নিকাশ ছাড়া খরচ করছে। ফলে দ্রব্য মূল্যের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। এখন যারা শিক্ষকতা করেন, চাকুরী করে সীমিত আয়ে খুব কষ্ট করে চলেন তাদের সমস্যা বেড়ে গেছে। এইযে ভারসাম্যহীনতা এটা কি ক্ষতিকর নয়?
চার. চাই পারস্পরিক সম্মানবোধ; নয় অবহেলা
পৃথিবীতে যত শ্রম বিক্রি হয় তার ৬৬ শতাংশ নারী থেকে আসে। কিন্তু শ্রমের জন্যে যে বিনিময় হয় তার মাত্র ১০ শতাংশ পায় নারী। পৃথিবীর মোট সম্পত্তির শতকরা একভাগ মালিকানা নারীর। অনেকে হয়ত যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলবেন, বৈশিষ্ট প্রভাব ফেলে কাজে আর কাজ প্রভাব ফেলে ভুমিকায়। আসলে গর্ব অহংকার মূর্খতা বা অজ্ঞতা থেকে আসে। সেজন্যে মানবিক কল্যাণে নিরহংকারী মনে এগিয়ে আসতে হবে। যখন উদ্যোক্তার চেয়েও উদ্যোগটা বড় হয়ে ওঠে তখনই উদ্যোক্তার স্বার্থকতা লাভ হয়।
ভুলে কি গেছো হোঁচট খেয়ে হাঁটা শেখার কথা!
ব্যর্থ না হয়েই সফল হবে এমন আশা বৃথা।
বৃষ্টির দিনে ছাতার মূল্য অন্যসময় থেকে বেশি।
সময়ের কাজ সময়ে করলে থাকবে হাসিখুশি।
লিখতে সহায়ক বলেই কলমের এত দাম লেখকের কাছে।
কালি ফুরালে কলমের ডাস্টবিন ছাড়া উপায় কি আর আছে?
এজগতকে যদি দিতে পার কিছু তবেই জগতের কাছে তুমি মূল্যবান;
কিছু না দিয়ে শুধু নিয়ে গেলে তাতে মানুষেরেই অপমান।
মানুষের জন্যে এই বিশ্বজগত স্রষ্টার উপহার জেনো,
ভোগের সুখে দায়িত্ব ভুলা বড় অকৃতÁতা মানো।
তুমি যদি বল পার হবে নদী, ভেজাবে না হাটুঁ জলে;
বিকল্প উপায় করে নিতে হবে-এটা যেয়ো নাকো ভুলে।
নগন্য মানুষ বড়ত্ব দেখায়- সংকীর্ণতার বেড়াজালে পড়ে;
ছোট হয়েও যে বড় হওয়া যায়-উদারতার পথ ধরে।
মিষ্টি ফল খাবার ইচ্ছে তার হবে পূরণ, বীজ লাগাবেন যিনি।
যিনি করেন শুরু শেষটা দেখে যেতে নাও পারেন তিনি।
এগিয়ে এলে অনেকেই দাঁড়ান তার পাশে-
উদ্যোক্তা নি:শেষ হলেও উদ্যোগ টিকে থাকে সকাশে।
২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৭
হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: সোমালিয়ায় নিজে খেতে পায় না, ইসলামের বাণী শুনে তাদের কি হবে?
৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৭
হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: অনেক ডাটামাটা ছিল, তবে লেখাটা হাউকাউ মনোভাবের।
৪| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৯
হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: "আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি । "
-এটা আপনার প্রোফাইল থেকে; কিভাবে দেশকে ভালোবাসেন?
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৫
হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: "
ইসলাম ধর্মের স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে, যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে অথচ সে পেট পুরে খায় সে ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয়। "
-যেখানে, যেসব দেশে মানুষ পেট পুরে খায়, অথচ আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার কথা মনে রাখে না, সেখানে ইসলাম চালু করা হোক!