নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবৈধ বিলবোর্ড শুধু শহরের সৌন্দর্যহানিই করে না, প্রাণহানিও ঘটায়। সড়কের দুই পাশ দখল করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়াই কিছু প্রতিষ্ঠান বিলবোর্ড স্থাপন করে। অথচ মহাসড়কগুলোতে কোনো বিলবোর্ড থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন খোদ পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিলবোর্ডবিলবোর্ড বাংলাদেশে এক নতুন দুর্ভোগ। অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের সঙ্গে নিজেদের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড বানিয়ে তা মহাসড়কের পাশে লাগায়। আসলে তারা নেতা হওয়ার জন্য নয়, নিজের ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করতেই এসব করে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং ভুঁইফোড় নেতাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরির প্রয়াসে মহাসড়কের দুই পাশে লাগানো রাজনৈতিক বিলবোর্ড অপসারন করা দরকার। বিলবোর্ড চালকদের মনোযোগ আকৃষ্ট করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
আমরা দেখি জেলা প্রশাসন কিংবা সিটি কর্পোরেশন অনেক সময় বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু বিলবোর্ড উচ্ছেদ বা জরিমানাই একমাত্র সমাধান নয়, অবৈধ বিলবোর্ড যাতে স্থাপনই না করতে পারে সেজন্যে কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয় না। যারা অবৈধ বিলবোর্ড স্থাপন করে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় বিলবোর্ডে নেতার ছবি, নেতার সঙ্গে পাতিনেতা, উপনেতা, সিকিনেতা সবার ছবি থাকে। বিতর্কিতরাও নিজেদের শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শনার্থে বিলবোর্ডকে ব্যবহার করে। বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘আউটডোর অ্যাডভারটাইজিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-অভিযোগ করেছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে যেখানে-সেখানে বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য ব্যবসায়ীরা এককভাবে দায়ী নন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথসহ যেসব কর্তৃপক্ষ এত দিন বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে এসেছে তারাও এর জন্য দায়ী।
পত্র পত্রিকায় ছবি প্রকাশিত হয়েছে ছাত্রলীগের দখলে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড। বাংলাদেশ আউটডোর অ্যাডভার্টাইজিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) নেতাদের দাবি, শুধু ছাত্রলীগ নয় বর্তমানে রাজধানীর প্রায় ২০ শতাংশ বিলবোর্ড ‘হাইজ্যাক’ করে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠন এমনকি সংসদ সদস্যদের নামেও ব্যানার টাঙানো রয়েছে। ইজারাপ্রাপ্ত বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোকে বিলবোর্ডের ভাড়া দেয়া দূরে থাক অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি এ নেতারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিলবোর্ডগুলো বৈধ।
অভিযোগ রয়েছে যারা এই বিলবোর্ড অপসারণের দায়িত্বে থাকেন তারা এই সেক্টর থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকেন। বস্তুত একারণেই পত্র পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হলেও বিলবোর্ড অপসারণ করা হয় না। অনেক সময় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশও অধীনস্থরা আমলে নেয় না। এমনকি মন্ত্রীদের নির্দেশও উপেক্ষিত হয়। তোপের মুখে লোক দেখানো বিলবোর্ড অপসারণ করা হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই চিত্রটি পূর্বের চেহারায় ফিরে যায়।
ইদানীং এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের জোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ২দিনে ৩শতাধিক অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরের রোড ডিভাইডারের ওপরে ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড সরানো হয়েছে। পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ নগরী বিনির্মাণে ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযানের পাশাপাশি অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড অপসারণ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আগামী এক মাসের মধ্যে সব ধরনের অবৈধ বিলবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বিলবোর্ড সরাতে প্রয়োজনে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে।
সাম্প্রতিক রাজধানীর শাহবাগে একটি বিলবোর্ড পড়ে দুজন রিকশাচালক তারা মিয়া (৩৩) ও শুকুর আলী (৫০) আহত হয়েছেন। বিমানবন্দর সড়কের বনানীর কাকলীতে বিলবোর্ড উপড়ে পড়ে একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রিন রোডে একটি বহুতল ভবনের প্রায় ৩০ ফুট লম্বা সাইনবোর্ড ফুটপাতে এসে পড়ে। তাই জননিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দিয়ে এসব বিলবোর্ড অপসারণ করা উচিৎ।
©somewhere in net ltd.