নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নযাত্রার প্রতিধ্বনি

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

অনন্ত আরেফিন

এ এক ভয়ংকর খেলা, কবিতার রাশান রোলেট- যিনি সবচে ভালো পদ লিখবেন তাকে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলা হবে। আমার হাতে কলম কম্পমান সবচে সুন্দর পদ এসে গেছে আমার মুঠোয়।

অনন্ত আরেফিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউঃ সাম্ভালা ট্রিলোজি (লেখকঃ শরীফুল হাসান)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:১৩

পৃথিবীর পথ ধরে হাজার বছর ধরে ছুটে চলেছে প্রাচীন এক পথিক, সভ্যতার নানা ঘাত সংঘাত পেরিয়ে ক্লান্ত পথিক তার সর্বশেষ গন্তব্য সাম্ভালার খোঁজে বেরিয়েছে অবশেষে। কিন্তু তার এই চলার পথটা কি আসলে এত সরল? ওদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ রাশেদ। তার বন্ধু শামীম হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার আগে রাশেদের কাছে রেখে গেল অনেকগুলো টাকা আর রহস্যময় এক বই। পরে জানা গেল শতাব্দী প্রাচীন এই বইতে হদিস দেয়া আছে সাম্ভালার। মরিচীকা সদৃশ এই সাম্ভালার খোঁজে বছরের পর বছর ধরে ছুটেছে মানুষ। ড. আরেফিন আর ড. কারসনের সাহায্য নিয়ে এই বই এর রহস্যের সমাধান করার জন্য নামলো রাশেদ। পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো আকবর আলী মৃধা নামের এক অমানুষ, প্রেতসাধনা করে নিজেকে শয়তানের কাছে বিলিয়ে দিয়েছে এই লোক। নিজের হারিয়ে যাওয়া সম্পত্তি আবার নিজের অধিকারে ফিরিয়ে আনবার ব্যাপারে কোন ছাড় না দেবার প্রতিজ্ঞা করেছে সে।



সংক্ষেপে এই হল সাম্ভালা সিরিজের কাহিনী। যথেষ্ট কৌতূহলদ্দীপক, সন্দেহ নেই। একজন থৃলারপ্রেমী হওয়া স্বত্ত্বেও বইটা নানা কারণে অনেকদিন পড়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যখন একদিন পত্রিকায় খবরে দেখলাম পাশের দেশ ভারতে এই বই ইংরেজীতে অনুবাদ হচ্ছে, তখন আর দেরী করা গেলনা। ঝটপট বই তিনটা কিনে পড়া শুরু করে দিলাম।







বইটা পড়ে ভালো লেগেছে কারণ, বাংলাদেশে এমন সিরিয়াস ধরণের মৌলিক থ্রিলার এর আগে আমার চোখে পড়েনি। থ্রিলার ঘরানার লেখা পড়ার জন্য আমাদেরকে সবসময়ই বাইরের লেখকদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। শরীফুল হাসানের মত নতুন লেখকেরা যদি চালিয়ে যান তবে সেই দিন আশা করি শেষ হতে চলেছে। আপনার পরিচিত পরিবেশে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অথবা ধানমন্ডিতে যখন বই এর কোন ঘটনা ঘটে এবং তার সাথে আপনি যখন রিলেট (relate) করতে পারেন তখন তা আসলেই এক আনন্দদায়ক অনুভূতির জন্ম দেয়। ভিনদেশি বিভিন্ন বই পড়েতো আমার ধারণাই হয়ে গিয়েছিলো যে জমজমাট একটা গল্প ফাঁদতে হলে তার ঘটনা গুলো অবশ্যই ইটালির ফ্লোরেন্সে কিংবা প্যারিসের কোন কানাগলিতে অথবা নিউইয়র্কের রাজপথে ঘটাতে হবে, নয়তো বিষয়টা ঠিক যুঁতসই হয়না। ভ্রান্ত ধারণা গুলো ভেঙ্গে দেয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ! সাম্ভালার পড়ার পর আপনি লেখকের কল্পনাশক্তি আর বর্ণণার ক্ষমতার প্রশংসা করতে বাধ্য হবেন। বই এর কাহিনী বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাড়িয়ে নেপাল আর তিব্বত অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। এই ধরণের একটা এ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর জন্য যেটা প্রয়োজন তা হল বই এর কাহিনী এবং পরিবেশটা এমন ভাবে বর্ণণা করা যাতে পাঠকের মনে হয় বইতে যা ঘটছে তা যেন একদম তার চোখের সামনেই ঘটছে। এই দিক থেকে ‘সাম্ভালা’ কোন অংশে দুর্বল নয়। বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত অনেক গুলো গল্পকে লেখক সফলতার সাথেই একীভূত করেছেন। বিশেষ করে আমার প্রিয় অংশটুকু হল বই এর ইতিহাস ভিত্তিক অংশটা। প্রাচীন কাহিনী গুলো দিয়ে একটি চরিত্র দাঁড় করানোর ব্যাপারটাই অসাধারণ ছিলো!



তবে কিছু হতাশার জায়গাও আছে। বইটা শুরু করার আগে এর কাহিনী সংক্ষেপ আর অন্তর্জালে অন্যান্য রিভিউ গুলো পড়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এখানে এমন একটি চরিত্র আছে যে অমর অর্থাৎ এই চরিত্রটি বেঁচে ছিলো সেই প্রাচীন কাল থেকে, সে দেখেছে পৃথিবীর অনেক সভ্যতার উত্থান আর তাদের পতন। চলার পথে তার পরিচয় হয়েছে হাজার রকমের মানুষের সাথে। তো এই ধরণের একটি চরিত্রে আমি যে ধরণের গভীরতা আশা করেছিলাম তা আমি বইতে পাইনি। বরং অনেক জায়গাতে তাকে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতই মনে হয়েছে। এই অমর চরিত্রটি বাদেও তিন খন্ডের বইটিতে আরও কিছু চরিত্র এসেছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এত বড় একটা সময় এদেরকে নিয়ে পড়ার পরেও বই শেষে আমি চরিত্র গুলোর সাথে কোন ধরণের বন্ধন অনুভব করিনি। আমার মনে হয়েছে লেখক কাহিনী বর্ণনা করতে যত সময় দিয়েছেন চরিত্র গুলো ঠিকভাবে গড়ে তুলতে অতটা মনযোগ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। খলচরিত্র গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি চরিত্র ছিল আকবর আলী মৃধা। কিন্তু তার চরিত্রটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মত শক্তিশালী না। মিচনার চরিত্রটি তার অধীনে কাজ করছে বা তাকে ভক্তি করছে, শেষ পর্যন্ত গুরু বলে মানছে এ বিষয়গুলো বিশ্বাসসযোগ্য মনে হয়নি। সংলাপ এড়িয়ে অনেক জায়গাতেই সাধারণভাবে কাহিনী বর্ণণা করে যাওয়া হয়েছে যা অনেকসময় একঘেয়েমির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিরিজটা তিন খন্ডের, মানে পরিধিটা বেশ বড়। কিন্তু এমন অনেক জায়গা ছিলো যেখানে হয়তো বই এর পাতার পর পাতা এগিয়ে গেছে কিন্তু কাহিনী সেই অনুপাতে এগোয়নি। এ অবস্থায় একজন সাধারণ পাঠকের মনযোগ ধরে রাখাটা একটু কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। কাহিনীটা আরেকটু আঁটসাট হলে বইটা আরো ভালোভাবে উপভোগ করতে পারতাম বলে মনে হয়েছে। এ ধরণের একটা বইতে লেখকেরা সাধারণত পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরণের ক্লিফহ্যাঙ্গার ব্যবহার করেন। কিন্তু, সাম্ভালায় ক্লিফহ্যাঙ্গারের ব্যবহার কম। সিরিজের শেষ বই ‘শেষ যাত্রা’য় আহমদ কবির নামের একটি চরিত্রের সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল এবং তার কিছুক্ষন পরেই জানিয়ে দেয়া হল, চরিত্রটা খলচরিত্র। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, আহমদ কবীর এর আসল রূপটি তখনই উন্মোচিত না করে যদি তাকে ঘিরে আরো কিছু রহস্যের জাল বিছানো যেত তাহলে তা ক্লিফহ্যাঙ্গার হিসেবে বেশ ভালো কাজ করতো। তবে তারপরেও আমি কোন লেখক নই। এবং একজন লেখক তার সৃষ্টি তার পরিকল্পনা মতনই সাজাবেন, তাতে তো আর কারো কোন বাঁধ সাধবার অধিকার নেই! এখানে আমি একজন পাঠক হিসেবে আমার যা ভালো লেগেছে আর যে জিনিসগুলোর অভাব বোধ করেছি তারই একটা বর্ননা দিলাম। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে বলতে গেলে, বাংলা থৃলার ঘরানার সাহিত্যের ক্ষেত্রে সাম্ভালা বেশ ভালো একটি সংযোজন।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১০

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: সাম্ভালা ট্রিলজি পড়েছি। ভালো লেগেছে। তবে কিছু কিছু ব্যাপারে আপনার সাথে একমত। যেমন চরিত্রগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক, গভীরতা, কোথাও অযথাই কাহিনী দীর্ঘ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।


বইটা পড়ে ভালো লেগেছে কারণ, বাংলাদেশে এমন সিরিয়াস ধরণের মৌলিক থ্রিলার এর আগে আমার চোখে পড়েনি।

বাংলাদেশে এখন বেশ চমৎকার কিছু মৌলিক থ্রিলার লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে। আপনি ব্লগার মাশুদুল হকের ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়ে দেখতে পারেন, "বাতিঘর" প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত। একই প্রকাশনী থেকে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা চমৎকার কিছু মৌলিক থ্রিলার রয়েছে যার প্রায় সবটুকুই দেশীয় প্রেক্ষাপটে লেখা।


বসন্তের শুভেচ্ছা রইল :)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২০

অনন্ত আরেফিন বলেছেন: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা পড়া হয় নাই, তবে এরমধ্যে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়েছি এবং বইটা আমার গুডরিডস একাউন্টে ফেভারিট শেলফ এ জায়গা করে নিয়েছে! সামনে লেখকের অন্যান্য বইগুলোও পড়বো বলে ঠিক করেছি।

আপনার মন্তব্য আর শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ!

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: বইটির প্রসার কামনা করছি।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২১

অনন্ত আরেফিন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫

এনামুল রেজা বলেছেন: মৌলিক থ্রিলারের অগ্রযাত্রা অব্যহত থাকুক। সাম্ভালা পড়া হয়নি। পড়ে ফেল্বো।

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর রিভিউ ।

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২১

সালমান মাহফুজ বলেছেন: চমৎকার রিভিউ ও মূল্যায়ন । সবল দিকগুলোর পাশাপাশি স্পষ্টতার দুর্বল দিকগুলোও চিহ্নিত করাই প্রমাণ করে আপনার সাহিত্যবোধের প্রখরতা ।

৬| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৬

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: বেশ সুন্দর রিভিউ।

শুভেচ্ছা রইলো।

৭| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

জীবন লেখা চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.