নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অসময়ে অপেক্ষা

এই বেশ ভালো আছি

অনুপম জীবন

এই বেশ ভালো আছি

অনুপম জীবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনানন্দের বাড়ি ধানসিড়িতে এক বেলা

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪৫

বরিশাল এখন বিভাগীয় শহর হলেও রাস্তাঘাট রয়ে গেছে মফস্বলের মতোই ভাঙাচোরা। খানাখন্দভরা বগুড়া রোড এগিয়ে গেলে পথে পড়ে আম্বিয়া হাসপাতালের বিরাট ভবন। হাসপতালের পাশেই একটা বড় রিক্সার গ্যারেজ। তার পাশেই গাছ-গাছালি ঘেরা ছায়া সুনিবিড় একটি বাড়ির দরোজা। প্রবেশ পথের মোট থামে হালকা লালচে মোটা থামে একটা নামফলক। ওই ফলকে কালো হরফে লেখা 'ধানসিড়ি'।



হ্যাঁ, অনেক দিন আগে এ বাড়িতে থাকতেন একজন কবি। তার নাম জীবনানন্দ দাশ। বেঁচে থাকতে যিনি কদর পান নি, সমাদর পেয়েছেন মৃত্যুর পর।



বরিশাল সদরের ধানসিড়ি নামের এ বাড়িটির পূর্বনাম ছিল সর্বানন্দ ভবন। জীবনানন্দ দাশের পিতামহ সর্বানন্দ দাশের নামানুসারেই বাড়িটির এই নামকরণ করা হয়েছিল। সর্বানন্দ দাশের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগনার পদ্মাপারের গাউপাড়া গ্রামে। জীবনানন্দের পিতামহ বরিশালের কালেক্টরেট অফিসে চাকরি নিয়ে গাউপাড়া থেকে বরিশালে আসেন। বংশগতভাবে তাঁরা ছিলেন হিন্দু। আদিতে তাঁদের পদবি ছিল দাশগুপ্ত। কিন্তু এ পরিবারে সর্বানন্দই প্রথম ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন এবং পদবি দাশগুপ্তের শেষাংশ অর্থাত্ 'গুপ্ত' ছেঁটে ফেলে নামশেষে ব্যবহার করা শুরু করেন দাশ উপাধিটুকু। সর্বানন্দ দাশের সাত ছেলে, চার মেয়ে। সর্বানন্দের ছেলেমেয়েরা বরিশাল শহরে বাড়ি তৈরি করে বাবার নামে সেই বাড়ির নাম রাখেন 'সর্বানন্দ ভবন'।



জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ সালে। তাঁর বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন সর্বানন্দের দ্বিতীয় ছেলে। জীবনানন্দের মায়ের নাম কুসুমকুমারী দাশ। জীবনানন্দ দাশের বাল্যশিক্ষার সূত্রপাত বাড়িতে, মায়ের কাছেই। তারপর ব্রজমোহন স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ১৯১৫ সালে মেট্রিক পাস করেন জীবনানন্দ দাশ। ১৯১৭ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ, ১৯১৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন তিনি। এ বছরই প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তাঁর। 'বর্ষ-আবাহন' নামে এই কবিতাটি জীবনানন্দের বাবা সত্যানন্দ দাশ প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত ব্রহ্মবাদী পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।



১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন তিনি। ১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন জীবনানন্দ দাশ। ১৯২৫ সালে প্রথম গদ্যরচনা প্রকাশিত হয় তাঁর। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতাগ্রন্থ ঝরা পালক। ১৯২৯ সালে খুলনা জেলার বাগেরহাট কলেজে মাস তিনেক অধ্যাপনা করেন তিনি। ওই বছরের শেষদিকে যোগ দেন দিল্লির রামযশ কলেজে। ১৯৩০ সালের মে মাসে চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরেন জীবনানন্দ দাশ। ৯ মে বিয়ে করেন রোহিণীকুমার গুপ্তের মেয়ে লাবণ্য গুপ্তকে। বিয়ের পর অনেক দিন কর্মহীন জীবন যাপন করেন জীবনানন্দ দাশ। ১৯৩৫ সালে তিনি আবার যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়। এবার বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে যোগ দেন জীবনানন্দ দাশ। ১৯৪৬ সালের ৮ জুলাই কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতা যান তিনি। কিন্তু ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টকারী দাঙ্গাসহ নানা প্রতিকূল কারণেই আর দেশে ফেরা হয়নি জীবনানন্দ দাশের।



দেশভাগের পর কবি-পরিবারও চলে যায় কলকাতায়। ১৯৫৫ সালে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বানন্দ ভবন সংরক্ষণের আইনসিদ্ধ অনুমতি প্রদান করা হয় আইনজীবী পবিত্র কুমার ঘোষকে। তবে আইনসিদ্ধ এই অনুমতি প্রদানের অনেক আগে থেকেই এ বাড়িতে বাস করতেন কালেক্টরেটের কর্মচারী আবদুর রাজ্জাক। তিনি ১৯৬০ সালের ১৭ জুন বাড়িটির বেশ কিছু অংশ ক্রয় করেন। পরবর্তীকালে বাড়িটির ৭০ ভাগ জমি হুকুম-দখল করে সরকার। বর্তমানে সেখানে রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি আবাসিক ভবন এবং সিটি করপোরেশনের একটি জল উত্তোলন প্রকল্প। সরকারি এই স্থাপনা, প্রকল্প সহজেই চোখে পড়ে আমাদের। বিষণ্ন মনে সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আমরা ধানসিড়ি নামের বাড়িটির প্রবেশদ্বার অতিক্রম করি। ভেতরে ছায়া সুনিবিড় সরুপথ। একহারা গড়নের সুপারি গাছের সারি পথের দুই পাশে। এ ছাড়া আছে চিত্র-বিচিত্র পাতাবাহার আর বাহারি পুষ্পবীথির সুসম বিন্যাস।



ক্রয়সূত্রে কবির সম্পত্তির কিয়দংশের মালিক মরহুম আবদুর রাজ্জাকের তৃতীয় ছেলে জলিল ফারুক এখন এ বাড়িতে থাকেন। জীবনানন্দ দাশের বসতবাড়ির আগের রূপ এখন নেই বললেই চলে। কবির সময়ের চিহ্ন বলতে দুটি সিমেন্টে নির্মিত খুঁটি ছাড়া তেমন কিছুই নেই বলা যায়। কবির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ এখন কেবল আছে এই খুঁটি দুটির অস্তিত্ব।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:২০

সরদার হারুন বলেছেন: কবি, 'তুমি নাই তাই সারা বাংলার দিকে দিকে ওঠে ঘোর হাহাকার
তোমার বিরহে ছল ছল চোখে সারা ধরা মৃয়মান'

লেখায় দিলেম ++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৩২

লেখোয়াড় বলেছেন:
লেখক আপনাকে ধন্যবাদ এটি শেয়ার করার জন্য।

যতদিন যাচ্ছে জীবনানন্দ ততই মহান হয়ে উঠছেন।

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৩

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেল জীবনানন্দ সম্পর্কে , পোস্টে + ।

৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৩১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++++++++

বাঙালী সবসময়ই তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য পায়ে ঠেলে এসেছে । ভুলেছে অবহেলায় । ভয় হয় , একসময় না এ সবই হারিয়ে আমরা ভিখেরি হয়ে পড়ি !
এই স্মৃতিগুলো রক্ষার বেলায় দেশের সরকার ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সবসময় এতো উদাসীন কেন !?

ভালো থাকবেন ।

৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

সুমন কর বলেছেন: বেশ চমৎকার তথ্যবহুল একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য অাপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

সবকারকে এ সকল বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা উচিত।

৬| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৪

সকাল হাসান বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্ট! সরকারের অবশ্যই উচিৎ গুনি ব্যক্তিদের ইতিহাস ভাল করে সংরক্ষন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাদের সম্পর্কে যাতে ভাল ভাবে সঠিক ভাবে জানতে সেই রকম একটা উদ্যোগ নেওয়া!

কিন্তু তা কি করবে সরকার??

৭| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১১

তুষার কাব্য বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট...অনেক ভালো লাগলো প্রিয় কবি'র কিছু অজানা তথ্য জানলাম...

৮| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৪

সপ্নডানা বলেছেন: ধন্যবাদ,
ভাল লাগলো।

http://tech-tips99.blogspot.com

৯| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৮

পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট । জীবনানন্দ বাঙ্গালী সাহিত্য ও তার পাঠকদের কাছে আমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন ।

ছবি আরও দু'চারটা যোগ করলে বোধ হয় ভালো হতো ।

ভালোলাগা রইলো ।

১০| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪৯

অনুপম জীবন বলেছেন: সব্বাইকে এত্তোগুলা ধন্যবাদ

১১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৯

কোলড বলেছেন: Why bother about his house as he left it for India?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.