![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.মাস্টার্স পাস করে যথারীতি ব্যাচেলর খেতাব লাভ করলাম কিন্তু কাজের কাজ হলো না।না আছে চাকরি না থাকার জায়গা।হোস্টেল ছেড়ে পড়লাম থাকার জায়গার সংকটে।একমাত্র এবং সম্ভবত এই দেশের সবচেয়ে সহজলভ্য আর জনপ্রিয় কাজ তথা টিউশনিতে জড়িত আছি দীর্ঘদিন যাবৎ।ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হবে এক বাল্যকালের বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো একদিন পথে।কুশলাদি বিনিময়ের পর আসল কথা পারলাম।"থাকার জায়গা নাই রে।কেউ ব্যাচেলর বাসা ভাড়া দিতে চায় না।তুই কোথায় কিভাবে আছিস?" ও বললো "আমি তো মেসে থাকি।কোনরকম একটু জায়গায় ঘুমাই আর খাওয়াটা চালাই।বাকিসময় চাকরির ধান্ধায় ঘুরি।"ওকে চেপে ধরলাম।এমন সুযোগ ছাড়া যায় না।"দোস্ত,আমাকে একটু ব্যাবস্থা করে দে না।খুব কষ্টে আছি।খালার বাসায় আশ্রিত ৩ দিন ধরে।বেশিদিন থাকতে পারবো না।তোর মেসে একটু জায়গা পেলে চলবে।প্লিজ দোস্ত মানা করিস না।"ও রীতিমত আতকে উঠলো "মাথা খারাপ নাকি তোর?আমি নিজে ঘুমাই ফ্লোরে তোরে কই জায়গা দিমু?আমারে মাফ কর এমনি বহুত কষ্টে আছি।"আমি তখন মহাবিপদে।ওকে ছাড়ি কিভাবে?বললাম "তাহলে একটু জায়গা খুজে দে।বেশিদিন না আমি একটা ব্যাবস্থা করে ফেলবো(মিথ্যা আশ্বাস দিলাম)।নিজের ব্যাবস্থা তো করবোই তোরও একটা ভালো ব্যাবস্থা করে দেবো।এই কয়টা দিন আমার ব্যাবস্থা কর।"ও খুব একটা প্রভাবিত হলো না।"নারে দোস্ত আমার ভালো ব্যাবস্থা লাগবো না।আমারে আর বিপদে ফালাইস না।সরি দোস্ত।"মেজাজ ঠিক রাখতে পারলাম না।রাগে চিৎকার দিলাম "শালা তুই একনাম্বার স্বার্থপর।বন্ধুর জন্য এটুকু পারবিনা কি পারবি?"ও মর্মাহত আর বিস্মিত হলো।আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম।একটুপর বুঝলাম বেশি বলে ফেলেছি।বললাম "সরি।ভেরি সরি।মাথা ঠিক নাই রে।কিছু মনে করিস না।আসলে খুবই বিপদে আছি।"ও বললো "বিপদ তো বুঝছি কিন্তু এই কথা তোর কাছে আশা করি নাই।যাই হোক তোর নাম্বারটা দিয়া যা দেখি কি করা যায়।"দিলাম নাম্বার আর অনেক বার সরি বলে শেষে তাড়াতাড়ি করার তাগাদা দিয়ে বিদায় নিলাম।
২.ভাগ্যটা আরও সুপ্রসন্ন হলো যখন দুইদিন পর বন্ধু ফোন করলো।"দোস্ত সুখবর আছে।তোর জন্য জায়গা পাওয়া গেছে।কিন্তু মেসে না।সাবলেট।একটা ফ্যামিলি তোকে একটা সিঙ্গেল রুম দিবে।ভাড়া ৩ হাজার।অ্যডভান্স দিতে হবে।আর খাওয়া দাওয়া তোর দায়িত্ব।আর ওই ফ্যামিলির একটা মেয়ে আছে।আমি তোর ব্যাপারে যতটুকু জানি এইসব কাজে তুই নাই।তবুও বলি মেয়েদের থেকে যত দূরে থাকতে পারস তত ভালো।এখন দেখ চলবো কিনা?"এমন অফার ফিরিয়ে দেওয়ার কোন কারণ নেই।তবু অ্যাডভান্সটা নিয়ে টেনশন ছিলো।যাই হোক বন্ধুকে জানিয়ে দিলাম চলবে।মনোস্থির করলাম টিউশনির টাকাটা তাড়াতাড়ি নেয়ার চেষ্টা করবো।জানি না পাবো কিনা!না পারলে আবার ধার করতে হবে।তবু যেভাবে হোক এই সুযোগটা ছাড়া যাবে না।আপতত চিন্তা হলো আমার থাকা নিয়ে।খাট একটা আছে কিন্তু অবস্থা সুবিধার না।তবু এটা দিয়ে চালানো যাবে।কিন্তু.....ধূর মাস শুরু হতে বাকি মাত্র ৩ দিন।যাই আগে টাকাটার ব্যাবস্থা করি।২ টিশনির সাড়ে ৩ হাজার জোগাড় করতে ভালোই কষ্ট হলো তবুও সফলভাবে পারলাম।টুকটাক কিছু জিনিষপত্র কিনলাম।ব্যাস চলবে।আপাতত আর কিছু কেনার সঙ্গতি কিংবা খুব একটা প্রয়োজন নেই।
৩.যে পরিবারের সাথে থাকবো আমি সে পরিবারের কর্তা আবদুস সামাদ সাহেব একজন নিরীহ দর্শন ভালো মানুষ।সরকারী চাকুরিজীবি হিসেবে দূর্নীতির যে সুবর্ন সুযোগ থাকলেও অন্তত আমার প্রাথমিক ধারনা হলো তিনি সে অবৈধ সুযোগ গ্রহন করেননি।করলে এই ফ্ল্যাটে না থেকে নিজের বাড়িতে উঠতেন সন্দেহ নেই।এক ছেলে আর এক মেয়ের আদর্শ পরিবার তার।বন্ধুর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও আমার চঞ্চল চোখ মেয়েটিকে খুজেছিলো কিন্তু চোখে পড়েনি।পরিচয়পর্বে ভদ্রলোকের স্ত্রী মাথায় ঘোমটা টেনে পরিবারের রক্ষনশীলতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দিয়ে দিলেন।ছেলেটা স্কুলে পড়ে।দেখে বুঝলাম বেশ সেয়ানা।দুশ্চিন্তা যদি করতে হয় একে নিয়ে করতে হবে।কথায় কথায় জানালেন তার মেয়েটা কলেজে পড়ে ফাস্ট ইয়ারে।তারপর আমার কাঙ্ক্ষিত ঘর আমাকে দেখানো হলো।আকারে যা আশা করছিলাম তাই।একটি দরজা ঘরের সাথে সংযুক্ত যা ভেতর থেকে দৃ্ঢ়ভাবে আটকানো সন্দেহ নেই।আরেকটি দরজা সিড়ির সাথে যুক্ত।যাক আমার কেটে পড়ার ভালো সুযোগ আছে।প্রথম দিন তাদের আয়োজনে নাস্তা করলাম।তারপর বের হলাম আমার কাজে।আহামরি কোন কাজ না।টিউশনী,আড্ডা,চাকুরীর খোজ,হাটাহাটি,লাঞ্চ আর টুকটাক।সন্ধ্যা হলে ফেরা।কেটে গেলো কয়েকটা দিন খুব সাধারনভাবে।বাসায় আসলে ছোট ছেলেটা আমার রুমে হাজির হতো।বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতো অধিকাংশ উত্তর দিতে গিয়ে নাকাল হতাম।ছেলেটা মজা পেত।নাম জিসান,খুব দুস্ট আর বাচাল।খারাপ লাগতো না।একদিন খুব সকালে দরজা খুলে বের হওয়ার সময় দেখলাম একটা বোরকা পড়া মেয়ে বের হয়ে যাচ্ছে অন্য দরজা দিয়ে।বুঝলাম সেই এই বাসার মেয়ে।পোষাক পরিচ্ছদ দেখে ভালো লাগলো।তবে চেহারা না দেখতে পাওয়ায় কিছুটা আক্ষেপও হলো।ওইদিন বাসায় ফিরে জিসানকে বেশ সময় দিলাম।কৌশলে ওর আপু সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করলাম।নাম সামিয়া,কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে।দুই ভাই-বোন দুই মেরুর বাসিন্দা।তাই আপু সম্পর্কে জিসানের ধারনা কম।মাথা থেকে মেয়েটার চিন্তা ঝেড়ে ফেললাম।
৪.আমার দিনগুলো খুব কষ্টে কাটছিলো।হাতে টাকা নেই,চাকরীও নেই।গ্রামে যাবো মাকে দেখতে তাও পারছি না।খালি হাতে মাকে দেখতে যাই কিভাবে?অসয়হাত্বে মাঝে মাঝে কান্না পেতো কিন্তু কাদতেও পারতাম না।ছোটবেলা থেকে এই জিনিষটার সাথে আমার পরিচয় নেই।প্রতিদিন যাওয়ার সময় জিসানকে স্কুলে ছেড়ে দিতাম।সামিয়ার সাথে দেখা হয়নি আর।এর মাঝে জ্বরে পড়লাম।মাঝরাতে জ্বরে কাপছিলাম কিন্তু একটা কাথাও ছিলো না।সকালে জিসান এসে এই অবস্থা দেখে গেলো কিন্তু সামাদ চাচা বাসায় না থাকায় কিছু করার ছিলো না ওদের।আমার অবস্থা যখন বেহুশপ্রায় তখন ঘোরের মধ্যে একটা কন্ঠ শুনতে পাচ্ছিলাম আমাকে ডাকছে "সায়েম ভাই,উঠুন নাস্তাটা খেয়ে নিন।তারপর ঔষধ খান।"প্রথমে মনে হচ্ছিলো ভূল শুনছি কিন্তু চোখ মেলে আমার খাটের পাশে একটা নারীমূর্তি দেখে বুঝলাম ভূল শুনি নাই।ওড়না ঢাকা মুখ দেখে বুঝলাম এই সামিয়া।জ্বরে মাথা ঠিকমতো কাজ করছিলো না।মুখে রুচি ছিলো না।ওর আনা নাস্তা একটা রুটি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলাম।ও খাটের পাশে দাড়িয়ে দেখছিলো আমার খাওয়া।জিজ্ঞেস করলাম "চাচা বাসায় নেই?" জবাব এলো "না আব্বু সকালে চলে গেছে।"আর কিছু বলতে পারছিলাম না।ওর মুখটা ভালোমতো দেখতে পারছিলাম না।সেদিন সারাদিন শুয়ে কাটালাম।জিসান কিছুক্ষন আমার পাশে বসে ছিলো।বাকি সময় একাই কাটলো।
৫.পরদিন জ্বর একটু কমলো।ওইদিনও সামিয়া নাস্তা নিয়ে এলো।ওর সাথে কিছু কথা বললাম।ওর মুখটাও ভালোমতো দেখলাম।ডানাকাটা পরী কিংবা বিশ্বসুন্দরী না কিন্তু অসম্ভব মায়াবী চেহারা আগে কখনো দেখিনি।পরদিন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলাম।সামিয়ার অপেক্ষা করলাম কিন্তু এলো না।শেষে নিঁচে নেমে দেখলাম ওকে।প্রথমদিনের মতো বোরকা পড়া কাধে ব্যাগ।কলেজে যাচ্ছে।প্রথমে পিছু নিলাম কিন্তু পরে ডাক দিলাম।ও আমাকে দেখে বিস্মিত হলো।বললো "আপনি?"জিজ্ঞেস করলাম "কলেজে যাও?"বললো "হ্যা" আমিও ওদিকে যাচ্ছি।চলো একসাথে যাই।"ও কিছু বললো না কিন্তু মুখের ভাব দেখে বুঝলাম নিমরাজি হয়েছে।পাশাপাশি হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলাম "তুমি আমার নাম জানো কিভাবে?"প্রশ্নটা বোকার মতো ছিলো।ও কিছুক্ষন পর উত্তর দিলো "জিসানের কাছে।"আরো কিছুক্ষন উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করলাম।বেশ নার্ভাস ছিলাম কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।একটু পর ওর কলেজে পৌছে গেলাম।ওকে বিদায় দিয়ে আমার গন্তব্যে রওনা দিলাম কিন্তু আমার মাথা জুড়ে ওর চিন্তা রয়ে গেলো।বুঝতে পারছিলাম না কেনো এমন হচ্ছে।এরপর থেকে ওর সাথে আমার প্রতিদিন দেখা হতো কারন আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ওর বের হওয়ার অপেক্ষা করতাম।জানালা দিয়ে ওকে বের হতে দেখলে আমি নেমে ওর পিছনে পিছনে যেতাম এবং ও আমার জন্য দাড়িয়ে পড়তো।এমন একটা দিন ছিলো না যেদিন ওর চোখ ফাকি দিতে পারতাম।কিন্তু আমার খারাপ লাগতো না।এভাবে সবার অলক্ষ্যে ওর সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হলো।আমি বুঝতে পারছিলাম এই সম্পর্কটা এখানে থামিয়ে দেয়া উচিত কিন্তু মনকে তা বোঝাতে পারতাম না।ফলে যা হওয়ার তাই হয়ে গেলো।
৬.আমি আর সামিয়া প্রতিদিন একসাথে যেতাম।বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতাম।ও আমাকে বিভিন্ন হাদিস শোনাতো আর নামায পড়তে বলতো।ওর কথায় আমি নামায ধরলাম।ও কথা বলতো কম কিন্তু প্রতিটি কথা আমাকে চুম্বকের মত আকৃষ্ট করতো।এভাবে আমি ফেসে গেলাম অর্থাৎ ওর প্রেমে পড়ে গেলাম।সবসময় ওকে ভাবতাম আর স্বপ্নের বাড়ি গড়তাম ওকে নিয়ে।কিন্তু সম্পূর্ন গড়ার আগে ভেঙে পড়তো যখন চিন্তা করতাম ও কি আমাকে ভালোবাসে?আমি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোন প্রেম করিনি।শুনলে অনেকে বিশ্বাস করে না।সামিয়ার মোবাইল ছিলো না।ওর সাথে আমার কথা বলার একমাত্র উপায় ছিলো সামনাসামনি।ওকে আমার ভালোবাসার কথা জানানোর তাগাদা অনুভব করলাম কিন্তু প্রত্যাখানের ভয়ে পারছিলাম না।একদিন হাটতে হাটতে বললাম "তোমাকে একটা কথা বলবো"।ও বললো "বলুন।"আমার কথা গলায় আটকে গেলো।কয়েকবার ঢোক গিলে বললাম "মাইন্ড করবে না তো?"।"আগে শুনি কি বলতে চান।""না,থাক আরেকদিন বলবো।"ও কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো "এভাবে কথা বাকি রাখবেন না।পারলে বলুন অথবা ভূলে যান।"আমি আরও বেশি ভীতু হয়ে পড়লাম।পরদিনও প্রস্তুতি নিলাম কিন্তু বলতে পারলাম না।শেষে ঠিক করলাম চিঠি লিখবো পুরানো দিনের মতো।লিখলাম আবার ছিড়লাম কিন্তু ওর হাতে দেওয়ার সাহস হলো না।অবশেষে দৈব সহায়তা পেলাম।একদিন ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো "আপনি কাউকে ভালোবাসেন?"অপ্রাসঙ্গিক কথা ও এধরনের কথা বলে না।আমি অবাক এবং আশাবাদী হলাম।জবাব দিলাম "হ্যা।"ও আবার প্রশ্ন করলো "কে?নাম বলা যায়?"আমি দুরুদুরু বুকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম "তুমি ভালোবাসো কাকে?"ও বললো "একটা ছেলেকে।"আমি প্রশ্ন করলাম "কে?"ও বললো "আগে আপনারটা শুনি।"বলে দিলাম "আমি ভালোবাসি একটা মেয়েকে।অনেক সুইট একটা মেয়ে।নাম সামিয়া।কিন্তু জানি না সে আমাকে ভালোবাসে কিনা।"ও সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালো জীবনে প্রথম।বাস্তববাদী মেয়ে বলে আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে আবার প্রশ্ন করলো "আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন তো।"আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম।দৃঢ়স্বরে বললাম "আমি তোমাকে ভালোবাসি।"ও মাথা নিচু করে ফেললো।কি বলবো বুঝতে পারলাম না।এভাবে হাটতে হাটতে ওর কলেজে পৌছে গেলাম।আমি ওর উত্তর জানতে পারলাম না।
৭.কথাটা বলতে পারায় যতটা খুশি হওয়ার কথা তারচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম ওর সরাসরি উত্তর না পাওয়ায়।সেদিন রাতে আমার মোবাইলে ফোন এলো।ফোন ধরলাম "হ্যালো"।ওপাশে চাপা নারীকন্ঠ:
"কি করেন?"
"কে বলছেন?"
"বলুন তো কে?"
আমার যা মনে হলো তাই বললাম "সামিয়া?"
ওপাশের উত্তর "যাক চিনতে পারছেন।"
আমি ওকে চেপে ধরলাম "তুমি বললে না তুমি কাকে ভালোবাসো?"
"সব কথা মুখে বলতে হয়?বুঝে নিতে পারেন না?"
আমি বুঝে নিলাম।প্রশান্তির শীতল ছোয়া পেলাম অন্তরে।
"এটা কার নাম্বার?"
"আম্মুর।"
"আমার নাম্বার পেলে কোথায়?"
"বলবো না।"
"তোমার আম্মু টের পাবে না?"
"না।আপনি কেনদিন এই নাম্বারে ফোন দিয়েন না"
"আমাকে আপনি বলবে না।তুমি বলবে।"
"ওকে।এখন রাখি।"
কপালে সুখ বেশিদিন সইলো না।সাতদিনের মাথায় ধরা খেলো ও মোবাইলসহ হাতেনাতে।আর সহজে উদঘাটিত হয়ে পড়লো আমাদের সম্পর্ক।আমাকে সেদিন ঘর ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিলেন সামাদ সাহেব।অগত্যা খালার বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।একটিবার ওর মুখটা দেখতে পারলাম না।নিজের চেয়ে বেশি ভাবছিলাম ওর কপালে কি আছে।একটা ব্যাপার ভেবে কষ্টের মাঝে সুখ খুজে পেলাম।সেটা হলো আমার মতো বেকার একটা ছেলের চেয়ে বহুগুন ভালো ছেলে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
৮.তিনদিন পর ওর খোজ পেলাম।মানে ওই আমার খোজ নিল।জানি না কার নাম্বার থেকে কিভাবে ফোন দেওয়ার সুযোগ পেল কিন্তু কন্ঠটা শোনার পর চেপে রাখা কষ্টগুলো দীর্ঘশ্বাসে রুপ নিল।ও কাঁদছিলো না কিন্তু আমার কাছে ওর বিষন্ন কন্ঠ কান্নামাখা মনে হলো
"আমার সাথে দেখা করে গেলে না?"
"সুযোগ পাইনি তো।"
"আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম।একবারও তাকাও নাই এদিকে।"
"তাকালে কি কষ্ট বাড়তো না?"
"তুমি আসবে না?"
অবাক হলাম "কই?"
"আমার সাথে দেখা করতে?"
"কোথায়?কিভাবে?"
"আমার বাসার নিঁচে।"
"পাগলামি করো না।আবেগকে দাম না দেওয়াই ভালো।আমি বেকার আমাকে ভূলে যাওয়া তোমার জন্য মঙ্গল।"
"এতটা সহজ কাজ হলে কি ফোন করতাম?আমি এমন কিছু ভাবতে রাজি না।"
"কি বলতে চাও?"
"চলো পালিয়ে যাই।"
"পালিয়ে যাবো কোথায়?আমার সেই জায়গা থাকলে তুমি রাজি না থাকলেও নিয়ে যেতাম।"
"জানি না কই যাবো কিন্তু আমি এভাবে থাকতে পারবো না।"
"আমি তোমার বাসার নিঁচে আসবো।কিন্তু পালাতে না।জীবনে শেষ দেখা করতে।"
আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কেটে দিলাম।সারাটা দিন খুব টেনশনে কাটলো।রাত দশটায় বের হলাম বাসা থেকে।সাড়ে দশটার দিকে পৌছলাম ওদের এলাকায়।ওর বাবার সাথে রাস্তায় দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা ছিলো না।আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলাম না।ওর জানালা বরাবর নিঁচে অন্ধকার জায়গাটায় দাড়ালাম।জানি না ও কিভাবে বুঝবে যে আমি এসেছি।ওর জানালায় আলো ছিলো না।কিছু বুঝতে পারছিলাম না।রাত ১১টার দিকে এসএমএস আসলো:আমি তোমাকে দেখতে পেয়েছি।এখন সরে যাও।রাত ১২টায় সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি নামবো নিঁচে।
৯.রাত ১২টা বাজতেই আবার দাড়ালাম সেই জায়গায়।বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে।নামতে পারবে তো?নাকি জীবনে আর দেখা হবে না?অসহায় লাগছিলো নিজেকে।তখন মৃদু নড়াচড়া দেখলাম নিঁচের কলাপসিবল গেটে।একটু সরে দাড়ালাম।সাবধানের মার নেই।কিন্তু ও সরাসরি আমার দিকে এগোলো।সামনে এসে দাড়ালো।বোরকা পড়া।বললো "পাশের গলিতে চলো।এখানে ধরা পড়লে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে।"গেলাম।পাঁচ মিনিট কথা ছাড়া দাড়িয়ে থাকলাম।তারপর ও বললো "চলো যাওয়া যাক।"আমি দাড়িয়ে রইলাম "পাগলামির সময় না এটা।একটু পর তুমি বাসায় ফিরে যাবে।এবং ভূলে যাবে আমাকে।"
"আমি আর ফিরে যাচ্ছি না ওই বাসায়।"
আধঘন্টার উপর ধরে বোঝালাম।কিন্তু ও অনড়।শেষে বললাম "বাবা মায়ের কথা ভাববে না?"
"ভাববো কিন্তু সেজন্য ভালোবাসা বিসর্জন দিবো না।"
আমি ওর হাতটা ধরলাম।চোখে চোখে তাকালাম।তারপর বললাম "একদিন হয়তো অনেক আক্ষেপ করবে আজকের সিদ্ধান্তের জন্য।"
"হয়তো।"
"চলো তাহলে।"
"একটু দাড়াও।"
ও আমাকে রেখে হেটে গেলো।গেটের কাছ থেকে তুলে নিলো একটা ব্যাগ।
"ব্যাগে কি আছে?"
"খুব দরকারী কিছু জিনিষ।"
আর কথা বাড়ালাম না।ওর হাত ধরে এগোলাম অজানা ভবিষ্যতের দিকে।সামনের বাড়িটার নিঁচে একটা কম পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে মিটমিট করে।তাতে গলিটায় এক আলো আধারির পরিবেশ তৈরি করেছে।আলো আধারি আমার গোটা জীবনের এক প্রতিচ্ছবি।আমি আর ও হেটে হেটে হারিয়ে যাচ্ছি কখনো আলোতে কখনো আধারে.......
-:সমাপ্ত:-
©somewhere in net ltd.