নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।
২০১৩ সালে জুলাই মাসে মুরসীকে অপসারনের প্রতিবাদে গড়ে উঠা তুমুল বিক্ষেোভে হাজার হাজার ইসলামপন্থীকে যৌথবাহিনী পাখির মত গুলি করে মারলেও ঐ আন্দোলনে বিক্ষোভ দমনে আসা একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হওয়ার অপরাধে মিশরের এল আদওয়ার এক বিচারিক আদালত সংক্ষিপ্ত শুনানীর পর ৬৮৩ জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। ইতিপূর্বে কায়রো শহরের দক্ষিণে অবস্থিত মিনারা শহরে পুলিশ কনস্টেবল মারা যাওয়ার ঘটনায় ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করা হয় এবং ২৪ মার্চ এক রায়ে ৫২৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। বিচারকের নাম সৈয়দ ইউসুফ। আসামীপক্ষের আইনজীবীদের কোন বক্তব্যই রায়ে বিবেচনায় আনেননি তিনি। আনার কোন প্রয়োজনও অনুভব করেননি। বিচার সংক্ষিপ্ত না হয়ে দীর্ঘ হলেও রায় একই হতো। গণমৃত্যুদন্ড ঘোষনা করার জন্যে তিনি মুখিয়ে ছিলেন। যে কোন মূল্যে সরকারের আদেশ বাস্তবায়নই ছিল তার মূখ্য উদ্দেশ্য।
মুসলিম ব্রাদারহুডের ইসলামপন্থী নেতা মুহাম্মদ মুরসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াই যেন কাল হয়েছে সাধারণ ইসলামী মনোভাবাপন্ন মিশরীয়দের। মিশরে ইসলামী আন্দোলন সফলতা পেলে তা সারা আরবে ছড়িয়ে পড়ার কড়া আশঙ্কা করে বৃহৎ রাষ্ট্র সৌদি আরব। আর ষড়যন্ত্রের শুরু সেখান থেকেই। মুরসী একজন পিওর সুন্নী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অন্য প্রচারনায় না গিয়ে সরাসরি মিশরের গাদ্দার সেনাবাহিনীর সাথেই হাত মিলিয়েছেন সৌদির শাসকগোষ্টী। মিশরের ফেরাউনখ্যাত হুসনী মোবারক সৌদি শাসকদের বন্ধু ছিলেন। তার পতন সৌদির উপর এক চপটাঘাত বলেই বিবেচনা করা হয়। শুরু হয় গোপন ষড়যন্ত্র। মাত্র এক বছরের মাথায় মুরসীকে সরিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেয় সেনাবাহিনী। এতে বিপুল অর্থসহ সার্বিক সহায়তা দেয় সৌদি আরব। মার্কিণ ও ইইউর আইনে সামরিক শাসকদের সাহায্য করার বিধান না থাকলেও ইসরাইলের স্বার্থে তারা নীতি পাল্টাতে বাধ্য হন।
একটা জায়গায় এসে সৌদি আরব, ইসরাইল আর মার্কিনীদের স্বার্থ এক হয়েছে, তাহলো আরবে ইসলামী আন্দোলন থামিয়ে দেয়া। মুহাম্মদ মুরসীকে সরিয়ে দিয়ে এবং ব্যাপক ধরপাকড় ও দমন নিপীড়নের মাধ্যমে তারা আপাততঃ সেলক্ষ্যে সফল হয়েছে বলা যায়। কিন্তু এ আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসা সব ইসলামপন্থীকে হত্যা করতে না পারলেই যেন নয়। এর ধারবাহিকতায় হয়তো শুরু হয়েছে এই বিচারিক গণহত্যা। এ ধরনের বিচার কার্য্ নিয়ে পশ্চিমারা মৃদু প্রতিবাদ করলেও, তেমন জোরালো প্রতিক্রিয়া কেউই দেখায়নি এখনো পর্যন্ত। ‘বিচার’-এর নামে এমন গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই মে মাসেই প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আবদুল ফাত্তাহ সিসি নামীয় আরেক হুসনি মুবারক। তিনি ইতিমধ্যেই ১৪০০ ইসলামী আন্দোলনকারীকে হত্যা করেছেন। দম্ভভরে ঘোষনা দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে আর ফিরতে পারবে না ব্রাদারহুড। নীল নকশা সেভাবেই কষা হয়েছে।
বলাই বাহুল্য যে, মিশরের সাধারণ মানুষজন ইসলামপন্থী এবং ইসলামী জীবনধারায় বিশ্বাসী হলেও, সমাজের এবং রাষ্ট্রের উচ্চস্তরে নাস্তিক্যবাদ, সেকুলারিজম এবং কমিউনিজমের আধিক্য অত্যন্ত প্রকট। তারা এখন আর সাধারণ ইসলামপন্থীকেও সহ্য করতে রাজি নয়।
©somewhere in net ltd.