নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।
ইমাম হুসাইনের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার:
১। রাজতন্ত্রপন্থীরা মনে করেন হুসাইন ক্ষমতার দাবিদার ছিলেন বিধায় তিনি কুফাবাসীর প্ররেচনায় যুদ্ধে যেতে উদ্ভুদ্ধ হয়েছিলেন। অনেক সাহাবী তাকে কুফায় যেতে নিষেধ করেছিলেন।
প্রকৃত সত্য: হুসাইন মোটেই ক্ষমতার লোভে বের হননি। ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার দিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেই তিনি জীবন দিতেও কুন্ঠিত ছিলেন না। [বিস্তারিত জানার জন্যে পড়ুন, মুহররমের শিক্ষা, সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী] আর বিশিষ্ট সাহাবীরা তাকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন, কুফাবাসীদের বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে আঁচ করতে পেরেই। অন্য কারনে নয়।
২। হযরত উসমান এবং আলীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা সবাই হুসাইনের চেয়ে বেশী মর্যাদাশীল ছিলেন। কিন্তু মুসলমানেরা কেবল হুসাইনের মৃত্যুকেই শোকবহ মনে করে।
প্রকৃত সত্য: ইসলামের ইতিহাসে অনেক নবী রসুলসহ খলিফা হযরত উসমান, হযরত আলীসহ হুসাইনের চাইতেও বেশী মর্যাদাপূর্ণ আরো অনেক বড় বড় মহান ব্যক্তির হত্যাকান্ডের ঘটনা থাকলেও ৬১ হিজরীর কারবালার ঘটনা এতোটাই পৈচাশিক ও নির্মমতম ছিল যে এটা যুগে যুগে কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দিয়েছে, এখনো দেয় এবং নিঃসন্দেহ তা কেয়ামত পর্যন্ত জালিমদের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাতে ও ইসলামী খেলাফতের পক্ষে মুমীনদের উদ্ভূদ্ধ করায় নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে। ১৪০০ বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষ এখনো শোকার্ত হয়। সাম্প্রতিককালের আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া রাজন হত্যার কথাই ধরুন, প্রতিদিনই অনেক শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু রাজন হত্যায় যে নৃশংসতা হয়েছে, তা কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দিয়েছে। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে সরকারকে বাধ্য করেছে।
৩। হিজরত ও জিহাদ ও বিপদে ধৈর্য্য ধারনের তাদের (হাসান ও হুসাইন) ভাগ্যে জোটেনি, যা আহলে বাইতের অন্যান্যের নসীব হয়েছিল। [আশুরা ও কারবালা, আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল, পৃষ্ঠা-৪০]
প্রকৃত সত্য: হুসাইনের জীবনী এবং ইতিহাস পাঠ করলে এটা সুষ্পষ্ট যে, হিজরত, জিহাদ এবং বিপদে ধৈর্য্য ধরন সবকিছুই তার ভাগ্যে জুটেছে। হিজরত এবং জিহাদ করেই তো তিনি জীবন দিলেন। অপপ্রচারকারী রাজতন্ত্রের এজেন্টরা অতীতেও ছিল এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কোন মুসলমান তাদের কথায় কর্ণপাত করেন না।
৪। হুসাইনকে যারা সমর্থন করেন, তার জন্যে শোক প্রকাশ করেন, তারা শিরক বিদআতে লিপ্ত।
প্রকৃত সত্য: কারবালার ঘটনাকে ঘিরে শিয়া নামধারী কতিপয় গোষ্টির কিছু শিরকী কর্মকান্ড বিদ্যমান আছে-একথা সত্য। কিন্তু সেসবকে উপাদান ধরে পুরো ইতিহাস পাল্টিয়ে দেয়ার ধুরন্ধর অপচেষ্টা রাজতন্ত্রের দরবারী আলেমরা হরহামেশাই করে যাচ্ছেন। রাজতন্ত্রীরা যতই চেষ্টা করুন, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা কারবালার নৃশংসতাকে ঘৃনা করেই যাবে। ঘৃনা হুসাইনের হত্যাকারীর প্রতি, ঘৃনা রাজতন্ত্রের প্রতি। মুসলমানের বুক পূর্ন থাকবে আহলে বাইতের প্রতি এবং তাদের আদর্শের প্রতি।
৫। কেবল শিয়ারাই হুসাইনকে ইমাম বলে। অন্য সাহাবীদের ইমাম বলা হয় না। হুসাইনকে কেন?
প্রকৃত সত্য: পুরো মুসলিম বিশ্ব এক কথায় তাকে ইমাম বা নেতা মেনে নিয়েছেন। ইয়াজিদ জনতার উপর চেপে বসেছিলেন। ইয়াজিদ মুসলিম বিশ্বের নির্বাচিত নেতা ছিলেন না। সেই সময় থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা ইয়াজিদকে ইমাম বা নেতা হিসাবে মেনে নেয়নি নেবেও না। হুসাইনকে ইমাম বলার অর্থ ইয়াজিদকে স্বীকার না করা। ইমাম বা নেতা হুসাইনই। সেকারনে তখন থেকেই যুগে যুগে হুসাইন-এর নাম নেয়ার আগে 'ইমাম' বলা হয়। ইমাম হাসানকেও বিষ প্রয়োগে অত্যন্ত কৌশলে হত্যা করা হয়েছিল। তিনিও মুসলিম জাতির ইমাম। ইয়াজিদের বংশধরদের যতই গা জ্বলুক, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা হাসান এবং হুসাইনকে ‘ইমাম’ হিসাবেই ঘোষনা দেবেন। আর অন্যদিকে নৃশংসতার প্রতীক ইয়াজিদের নামে আজ পর্যন্ত কোন মুসলমান সন্তানের নাম রাখা হয়নি, কেয়ামত পর্যন্ত হবেও না। যদিও মুসলিম নামধারী শীর্ষ দেশগুলোতে এজিদী শাসন এখনো বলবৎ রয়েছে। সক্রীয় রয়েছে তাদের এজেন্টরাও।
ইয়াযীদের পক্ষে যত প্রচারনা-
১। ইয়াজিদ কারবালার হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন না।
প্রকৃত সত্য: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ৮ম খন্ডে তার একটা উক্তি দেখা যায়। তাহলো-মৃত্যু কালে তিনি প্রার্থনা করছেন এই বলে যে, ‘‘হে আল্লাহ তুমি আমায় পাকড়াও করো না এই জন্যে যে যা আমি চাইনি এবং প্রতিরোধও করিনি। তুমি আমার ও ওবায়দুল্রাহ বিন জিয়াদের মধ্যে ফয়ছালা করো।’’ তার এই প্রার্থনায় তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি ঐ ঘটনার প্রতিরোধ করেননি। অথচ ইচ্ছা করলেই প্রতিরোধ করতে পারতেন। এই হত্যাকান্ডে তিনি নিজের চাইতেও ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে বেশী দায়ী করেছেন।
কিন্তু সত্য তো এটাই যে, এই হত্যাকান্ড তার অমতে হয়নি। হত্যাকারীকে তিনি কোন সাজাও দেননি, অপসারনও করেননি। প্রতিরোধও করেননি। ঘটনা ঘটতে দিয়েছেন এবং পৃথিবীর নৃশংসতম হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েও হত্যাকারীর পক্ষাবলম্বন করেছেন। কোন শাস্তি দেননি। রাস্ট্রপ্রধান হিসাবে এ হত্যাকান্ডের দায় তারই। এক্ষেত্রে তাকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার মত কোন কিছুই ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় না।
২। ইয়াযীদ হুসাইনের কর্তিত মস্তক দেখে ব্যাথিত হয়েছিলেন।
প্রকৃত সত্য: ইয়াযীদ হুসাইনের শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে প্রথমে খুশীই হয়েছিলেন। তারপর তিনি লজ্জিত হন। [দেখুন আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৪২৩]
৩। ইয়াযীদের ক্ষমা প্রাপ্তি সংক্রান্তে সহি হাদীস আছে।
প্রকৃত সত্য:
‘‘হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, রোম সাম্রাজ্যে প্রথম যে সেনাদলটি যুদ্ধ করবে, তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমা রয়েছে। আর এ সেনাদলটিকে রাসুল (সা) উম্মে হারাম (রা)এর ঘরে স্বপ্নে দেখেছিলেন। উম্মে হারাম (রা) বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের দলভূক্ত করেন। রাসুল (সা) বললেন, তুমি হবে প্রথম দলের যোদ্ধাদের অন্তর্ভূক্ত। উসমান ইবনে আফফানের (রা) এর আমলে ২৭ হিজরীতে সাইপ্রাস বিজয় হয়। আমীর মুয়াবিয়া (রা)-এর পরিচালিত সৈন্যদল যখন সাইপ্রাস যুদ্ধে রত ছিল তখন তাদের সাথে উম্মে হারাম (রা) যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তারপর তিনি সাইপ্রাসে ইনতিকাল করেন। এরপর দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর আমীর ছিলেন তার পুত্র ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া। উম্মে হারাম (রা) ইয়াযীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। এটা ছিল নবুওয়াতের অন্যতম প্রধান দলীল।’’
(আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৪১৯, প্রথম প্রকাশ-২০০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন)
খেয়াল করুন, রোম সাম্রাজ্যে প্রথম যে সেনাদলটি যুদ্ধ করবে, কেবল তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমা রয়েছে। ইয়াযীদ কিন্তু প্রথম সেনা দলের নন। ১ম সেনাদলটি যুদ্ধ করেছেন ২৭ হিজরীতে। ইয়াযীদ ছিলেন দ্বিতীয় সেনাদলের। রাজতন্ত্রের দরবারী আলেমেরা ইয়াযীদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে এ হাদীসটিকে বরাবরই ব্যবহার করে আসছেন।
৪। ইয়াযীদ সম্পর্কে যত খারাপ কথা বলা হয়, তার সবই মিথ্যা, কেবল শিকার করা ছাড়া।
প্রকৃত সত্য: ইয়াযীদ কেবল হুসাইনের হত্যাকারীই নন। তিনি মক্কা ও মদীনা আক্রমনকারী। মদীনায় সাহাবী হত্যা ও নারীদের গণধর্ষনের অনুমতি দিয়ে তিনি মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে গেছেন মর্মে অনেক বিশিষ্ট আলেম অভিমত দিয়েছেন।
৫। ইয়াযীদ-এর নামের সাথে ‘রাহমাতুল্লাহি’ বলা উচিত।
প্রকৃত সত্য: রাজতন্ত্রের দরবারী আলেমরা এতোই বেপরোয়া যে, তারা হুসাইনের বিপরীত শক্তি ইয়াযীদ-এর নামের সাথে ‘রাহমাতুল্লাহি’ বলা শুরু করেছেন। অবশ্য অতীতে রাজতন্ত্রীদের এতোটা নির্দয় আচরন করতে দেখা যায়নি। আহলে বাইতের দুশমনেরা চিরকাল মুসলমানের দুশমনই থাকবেন। মক্কা-মদীনা আক্রমণকারী, প্রচুর সাহাবীর হত্যাকারী, মদীনায় লুন্ঠন ও ধর্ষনের নিদের্শদানকারী, কারবালার ঘটনার মুল রূপকার ইয়াযীদকে কি কারনে ‘রাহমাতুল্লাহি’ বলার দরকার পড়লো তা কি সহজেই অনুমেয় নয়?
পরিশিষ্ট: যারা ইয়াযীদের পক্ষাবলম্বন করে রাজতন্ত্রকে ইসলামে হালাল বলে গন্য করতে ব্যতিব্যস্ত, তারা কি আসলেই হুসাইনের প্রতি সহানুভূতিশীল? তাদের লেকচার বা নানা লেখায় তারা হুসাইনের ভক্ত সাজার ভান করেন। এমন একটা ভনিতা করেন যে, তাদের হৃদয় হুসাইনের জন্য পরিপূর্ণ। এটা আসলে ঠিক শিয়াদের মতই মেকিতা। ইয়াযীদ আর হুসাইন তো কখনোই প্যারালাল নয়। হক আর বাতিল কি একই সরলরেখায় চলতে পারে? কোন মানুষ সরকারের পক্ষেও আছেন আবার বিরোধীদলের পক্ষেও আছেন-একথা কি বাস্তবসম্মত?
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: রাজতন্ত্রীরা যতই চেষ্টা করুন, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা কারবালার নৃশংসতাকে ঘৃনা করেই যাবে। ঘৃনা হুসাইনের হত্যাকারীর প্রতি, ঘৃনা রাজতন্ত্রের প্রতি। মুসলমানের বুক পূর্ন থাকবে আহলে বাইতের প্রতি এবং তাদের আদর্শের প্রতি।
শতভাগ সত্যি!
ধন্যবাদ মুহররমের শুরুতে শোকের শিক্ষাকে স্মরণ করিয়ে দেয়ায়!
ইয়া ইমাম হোসাইন আমাদের প্রেমকে কবুল করুন। আমরাতো অবাগা- আপনার আত্মত্যাগাের প্রতি বিন্দুমাত্র সুবিচার করতে পারিনি, পারছীনা... সেই শীক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাক্তিজীন, পরিবার রাষ্ট্র কোথাও কোন ছাপ রেখে যেতে পারছিনা।
আপনার মহান আতমত্যাগ ইসলামের চিরকারীন প্রেরণা হয়ে আছে থাকবে।
ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের মাসে তাঁ প্রতি অনন্ত অসীম ভক্তি সালাম ও শ্রদ্ধা।