নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

আমি সত্যে অবিচল।

আনোয়ার আলী

যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।

আনোয়ার আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বনু কুরাইযার হত্যাযজ্ঞ: মুসলমানদের খুশীর দিন?

১৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৩৫

ইসলামের ইতিহাসে বনু কুরাইযার ঘটনাটা নিঃসন্দেহে একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। মহানবি(স) তার মাদানী জীবনে বনু কুরাইযা গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা নিয়ে ইসলাম বিদ্ধেষীরা নানা কল্পকাহিনী আর মিথ্যার পাহাড় গড়ে তুলেছে। এটা সত্য যে, ইতিহাস লেখক তাবারি, ইবনে ইসহাক আর বুখারী প্রমুখরা এ সম্পর্কে অনেক শুনা কাহিনী লিপিবদ্ধ করে গেছেন। অমুক তমুকের থেকে তমুক আরেক তমুকের থেকে শুনেছেন মর্মে অনেক মুখরোচক কাহিনী শুনা যায়। সেই যুগের শুনা কথাগুলোকে যদিও কোনভাবেই অথেনটিক বলার জো নেই, তথাপি আর কোন সুত্র না থাকায় সেই আদিগ্রন্থের উপরই নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তরও নেই। কিন্তু বেদনা দায়ক এটাই যে, তাদের লিপিকৃত ঘটনাকে নিজেদের মত বিকৃত করে নানা মুখরোচক কল্পকাহিনী ফাঁদা হয়েছে। পৃথিবীতে কোরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা নাজিল হওয়ার সাথে সাথেই মুখস্ত করে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং সাথে সাথেই লিখে রাখা হয়েছে। কাজেই কোরআন ব্যতীত আর কোন কিছুই চূড়ান্তভাবে বিশুদ্ধ নয় সেটা বলাই বাহুল্য। হাল আমলে ইহুদীদের তৈরী উইকি-ইসলাম, জিহাদ-ওয়াচ, ফেইথফ্রীডম নামের ওয়াবসাইটগুলোকে অনুকরন করে বাংলার নাস্তিকেরাও বনু কুরাইযার ঘটনা নিয়ে ‘নতুন কিছুর বিশাল’ আবিস্কার করে হৈচৈ ফেলেছেন। তাদের বর্ণনার ধরনই এমন যে কোরআন-হাদিস আর আদিগ্রন্থে তাদের বর্ণিত কাহিনীই যেন হুবহু লিপি আছে। রেফারেন্স দিয়ে যেন তাদের কথা ভরপুর। পাঠক সতর্ক না হলে তাদের এইসব চাতুর্য্যপূর্ণ কথাগুলোকেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
মনে রাখতে হবে যে, মহানবি(স) কেবল একজন রাসুলই ছিলেন না, তিনি একাধারে ছিলেন যোদ্ধা, সামরিক প্রধান, বিচারক এবং শাসক। দেশ, মানুষ এবং ধর্মের প্রয়োজনে কোমলতার সাথে সাথে তাকে কখনো কখনো কঠোরও হতে হয়েছে।
মহান আল্লাহপাকও কেবল রহমানুর রহিমই নন, তিনি কাহহারও। তিনি রহম যেমন করবেন, তেমনই যারা তার অবাধ্য হয়েছে তাদের শাস্তিও দেবেন। সে কারনে মানুষের জীবনে যুদ্ধ আছে, ক্ষমা আছে, সহানুভূতি আছে, আছে প্রতিশোধপরায়নতাও। ইসলাম ধর্ম মানুষের জন্যে অবতীর্ণ হয়েছে, ফেরেস্তাদের জন্যে নয়। মহানবি(স) তাঁর জীবদ্দশায় শত্রুদের বিরুদ্ধে মোট ২৭টি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। ৯টি যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঐসময়ে পৌত্তলিকদের সাথে যুদ্ধ করা অনিবার্য ছিল। যুদ্ধ ছাড়া এগুনো একেবারেই সম্ভব ছিল না। যুদ্ধ বিগ্রহ সে সময়কার স্বাভাবিক ঘটনা।

এবার আসুন বনু কুরাইজা গ্রোত্রকে মহানবি কেন শাস্তি দিয়েছিলেন সেটা দেখি-
রাসুল (স) মদিনাতে আসার পরে সবার সম্মিলিত স্বার্থরক্ষার জন্য মুসলিম, ইহুদী, ও পৌত্তলিকদের নিয়ে এক অভিনব সাধারণতন্ত্র গড়ে তুলেছিলেন। ‘একটি রাজনৈতিক জাতিতে’ পরিণত করার জন্যে তিনি একটি সনদ তৈরী করেন।সনদে তিনপক্ষই স্বাক্ষর করেন। এই অভিনব ও অশ্রুতপূর্ব চুক্তি বা সনদের কিছু ধারা হলো-
১।ইহুদী ও মুসলিমরা একজাতি (রাষ্ট্রীক কাঠামোর মধ্যে বসবাসকারী ‘জাতি’)।
২।এই সনদের অন্তর্ভূক্ত কোন গোত্র শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবার সমবেত শক্তি নিয়ে তা প্রতিহত করবে।
৩।কেউ কোরাইশদের সাথে কোনো রকমের গোপন সন্ধিতে আবদ্ধ হবে না ও তাদের সঙ্কল্পকে সাহায্য করবে না।
৪।মদিনা আক্রান্ত হলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সবাই মিলে যুদ্ধ করবে এবং সম্প্রদায়গুলো নিজেদের যুদ্ধ ব্যয় নিজেরা বহন করবে।
৫।ইহুদী-মুসলিমসহ চুক্তিবদ্ধ সকল সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম পালন করবে, কেউ কারুর ধর্ম-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না।
সনদের এগুলো ছিল মুল ধারা।
মদিনার সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে চুক্তি অনুসারে বনু কুরাইযাসহ সব ইহুদীগোত্র প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল যে তারা মুসলিমদের কোন শত্রুকে কোনরকম সাহায্য করবে না। কোন বহিঃশত্রু মদিনা আক্রমণ করলে তারাও মুসলিমদের মতো স্বদেশ রক্ষার্থে নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করবে। কিন্তু চুক্তির শর্ত ও স্বদেশের স্বাধীনতা ও সম্মানকে উপেক্ষা করে কুরাইযাসহ বাকী ইহুদীগোত্র একাধিকবার শত্রুপক্ষের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

বনু কুরাইজার এই অপরাধ আগে অন্তত একবার ক্ষমা করে দেয়া হয়। ভেঙ্গে ফেলা প্রতিজ্ঞাপত্র উহুদযুদ্ধের পরে কুরাইযাগোত্র পুনর্বহাল করে এই শর্তে যে, এরপরে আর কখনোই তারা মুসলিমদের শত্রুদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ ও সাহায্য করবে না। ফলে তখন তাদেরকে বিনাদণ্ডে ও বিনা ক্ষতিপূরণে মাফ করে দেয়া হয়।

কিন্তু খন্দকের যুদ্ধের সময়ে প্রথম সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা এই সন্ধিপত্র ছিঁড়ে ফেলে এবং শত্রুদলে যোগদান করে। কুরাইযা গোত্রের এই বিদ্রোহের খবর পাওয়া মাত্র আওস ও খাযরায গোত্রের প্রধান সাদ বিন উবাদা (রাঃ) ও সাদ বিন মুয়াদ (রাঃ) সহ আরও কিছু সাহাবিকে রাসুল (স) খন্দকের প্রান্ত থেকে কুরাইযা পল্লীতে পাঠান। তাঁরা কুরাইযা পল্লীতে উপস্থিত হয়ে আগের বারংবার চুক্তিভাঙ্গার কথা তুলে ধরেন ও তাদেরকে এই বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু আহযাবে মুসলিমদের পরাজয় সুনিশ্চিত ও খায়বার থেকেও ইহুদীদল মদিনা আক্রমণে আসছে – এই দুই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তারা উল্টা মুসলিমদের গালাগালি করা শুরু করে। তাদের দলপতি কাব বিন আসাদ বলে ওঠেন, “মোহাম্মদ কে? আমরা তাকে চিনি না। আমরা কোনো সন্ধিপত্রের ধার ধারি না। তোমরা চলে যাও।”
এগুলো তো সীরাতেগ্রন্থ থেকেই বল্লাম। এবার বলুন, বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতকতার নাকি কোন প্রমাণ নেই?
খন্দক যুদ্ধের সময় যখন কুরাইশরা দশ হাজার বাহিনী নিয়ে মদীনা ঘেরাও করে তখন মুসলিম সেনা সদস্য ছিল মাত্র তিন হাজার। এক অসম যদ্ধে অবতীর্ণ দুই শিবির। এ সময় মিত্র শক্তির সহযোগিতা ছিল বড়ই প্রয়োজন। সহযোগিতার চুক্তিও ছিল। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, মিত্র বানু কুরাইজা সহযোগিতা করবে তো দূরে থাক বরং শত্রুর সাথে হাত মিলালো। উপরন্তু আল্লাহর রাসুলকে নানাভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করল।

সীরাতগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়,
বনু নাজির গোত্রের হোয়াই-বিন-আখতাব মদিনা থেকে বিতাড়িত হবার পরে খাইবারে আসন গেড়ে বসেন। তিনি কুরাইযা গোত্রপ্রধান কাব-বিন-আসাদকে বোঝাতে সক্ষম হন যে আরবের সকল পৌত্তলিক এখন একত্রিত। গাতাফান আর নজদের পৌত্তলিকরাও সাথে যোগ দিয়েছে। আর ঐদিকে খাইবার থেকে ইহুদীদের কয়েক হাজার সদস্যের বাহিনী খুব তাড়াতাড়ি এসে যোগ দিতে যাচ্ছে আহযাবে। সুতরাং এটাই মুসলিমদের সমূলে উৎপাটন করার সুবর্ণ সুযোগ। কাব প্রথমে নিমরাজী থাকলেও শেষে খন্দকে আহযাব পক্ষে যোগ দিতে রাজী হন।
খন্দক থেকে মদিনায় ফিরে এসে রাসুল (স) যখন গোসল সারলেন তখন জীব্রাঈল (আঃ) এসে বনু কুরাইযা গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতার কথা রাসুল (সাঃ)-কে স্মরণ করিয়ে দেন, তার পরপরই মুসলিম বাহিনী কুরাইযা অভিমুখে রওয়ানা হন। মুসলিম বাহিনী কুরাইযার দূর্গের সামনে এসে পৌঁছলে তারা দূর্গ-তোরণ থেকে রাসুল (সাঃ) ও তাঁর সহধর্মীনিদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন। তাদের ধারণা ছিল খায়বার থেকে খুব তাড়াতাড়ি ইহুদীবাহিনী এসে পড়বে, আর তারপরে দুই ইহুদী বাহিনীর যৌথ আক্রমণে মুসলিমদের বিধ্বস্ত করে ফেলবে। মক্কার কোরাইশরা যুদ্ধ ছেড়ে চলে গেছে বলে তারা বরং খুশীই ছিল, কেননা মদিনা প্রদেশের বিশাল সাম্রাজ্য এখন কেবল ইহুদীদের হয়ে যাবে। এরপরে যথারীতি অনেকদিন দূর্গের মধ্যে অবরূদ্ধ থেকে যখন তারা দেখলো যে খায়বার থেকে ইহুদী বাহীনির আসার কোনোই সম্ভবনা নেই তখন তারা আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে রাসুল (স) এর কাছে আত্মসমর্পন না করে তারা তাদের পুরোনো মিত্র সাদ-বিন-মুয়াদের (রাঃ) কাছে নিজেদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেন। সাদ বিন মুয়াদ ইহুদী ধর্মগ্রন্থের অনুসরনে সিদ্ধান্ত দেন যে, বনু কুরাইযা গোত্রের সকল যোদ্ধাদের প্রাণদণ্ড দেয়া হোক আর মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হোক, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক।
যে সীরাতগ্রন্থগুলো থেকে ইসলাম বিদ্বেষীরা রেফারেন্স দেন, সেই সীরাতগ্রন্থেই জিব্রাইল কর্তৃক মহানবিকে অবহিত করনের উল্লেখ রয়েছে। সীরাতে ইবন ইসহাকের রেফারেন্স দিয়ে বনু কুরাইযার নিরপরাধ হওয়ার যে শক্ত যুক্তি তারা তুলে ধরেন, সেই একই বইয়ের মাত্র ২ পাতা আগে উল্লেখ করা কুরাইযা গোত্রের প্রতারণা আর বিশ্বাসঘাতকতার কথা বেমালুম চেপে যান।
হাদীসে আছে [মুসলিমে বর্ণিত; Book 019, Number 4364:],
It has been narrated on the authority of Ibn Umar that the Jews of Banu Nadir and Banu Quraizi fought against the Messenger of Allah (may peace be upon him) who expelled Banu Nadir, and allowed Quraiza to stay on, and granted favour to them until they too fought against him.
আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের (রাঃ) উপরের হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট যে কুরাইযা গোত্র একবার না, বরং ২ বার চুক্তিভংগ করে, প্রথমবার বনু নাজিরের ঘটনার সময় (অর্থাৎ উহুদের যুদ্ধের পরে); যে অপরাধ রাসুল (সাঃ) নিজ মহানুভবতার গুণে ক্ষমা করে দেন এবং আগের করা চুক্তিটি আবার ফিরিয়ে আনেন। আর দ্বিতীয়বার চুক্তিভঙ্গ করে খন্দকের যুদ্ধ চলার সময়। আর এ সময়টা ছিল বড়ই নাজুক।
বনু কুরাইজা গোত্রের অন্তরে আল্লাহপাক ভীতির সঞ্চার করে দিয়েছিলেন মর্মে সুরা আহযাবের ২৬নং আয়াত-এ বর্ণিত আছে। সীরাতগ্রন্থ, হাদিসগ্রন্থ এবং কোরআনে বনু কুরাইজাদের বিশ্বাসঘাতকতার স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যেটা ইসলাম বিদ্বেষীরা খুঁজে পান না।
এখানে একটা কথা বলে রাখি, ইসলাম বিদ্বেষীরা বড় গলার বলেন যে, বনু কুরাইজার লোকেরা কোন যুদ্ধ করেনি। এমন প্রমান কেউ দেখাতে পারবে না। বলুন তো, এমন কথা কি কস্মিনকালেও কেউ বলেছে যে, বনু কুরাইজাগোত্র যুদ্ধ করেছে? বরং সব জায়গাতেই বলা হয়েছে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এ বিশ্বাসঘাতকতা বড়ই নাজুক সময়ে, যা ছিল চরম দেশদ্রোহিতা। যুদ্ধকালীন এই বিশ্বাসঘাতকতা হত্যার চেয়েও বেশী জঘন্য অপরাধ ছিল। কুরাইশরা যদি জয়ী হতে পারতো, তাহলে সকল মুসলমানকে কচু কাটা করে ফেলতো। দুনিয়ার বুকে একটি মুসলমানও বেঁচে থাকতো না। বনু কুরায়জার বিষয়টি আসলে যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে মিলিয়ে ফেললে চলবে না ওটা ছিল মুসলমানদের সাথে তাদের পারস্পরিক মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা বিষয়ে।
এ প্রসঙ্গে আমার একটা প্রশ্ন-
যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাদের দেশের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমাদের এ দেশের নাগরিক যেসব রাজাকাররা পাকিস্তানীদের পক্ষে কাজ করেছিল, সেসব গাদ্দার রাজাকারদের ক্ষেত্রে কথিত মানবতার ধর্ম গ্রহনকারী নাস্তিক ভাইদের অভিমত কী? সেই সমস্ত রাজাকারদের কি ছেড়ে দেয়া হবে? বনু কোরাইজা গোত্রের ক্ষেত্রে আরও দুবার তাদের ক্ষমা করা হয়েছিল। এইরূপ বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষেত্রে কোন ক্ষমা তো নেইই, বরং শাস্তিটাও ‍ছিল কঠোর, তথা চূড়ান্ত।
মনে রাখবেন, মহানবী তার জীবনের এতো যুদ্ধেও এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেননি। বনু কুরাইজার ঘটনা অবশ্যই ব্যতিক্রমী। ফয়সালা ছিল চূড়ান্ত, তথা মৃত্যুদন্ড।
এবার দেখা যাক বনু কুরাইজাদের বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছিল কিনা?
২০১৭ সালে প্রথমা কর্তৃক প্রকাশিত শহীদ আখন্দ অনুবাদকৃত সীরাতে রসুলুল্লাহ গ্রন্থের ৫০৩-৫০৪ পৃষ্ঠা পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। মুহাম্মদ (স) বনু করাইজাদের ২৫ দিন অবরোধ করে রাখলেন। পড়ে তারা আত্মসমর্পন করলে সাদ বিন মুয়াদেকে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছিল। সাদ ইবনে মুয়াদ কে ছিলেন শুনুন। উক্ত বইয়ের ৫০৩ পৃষ্ঠা থেকে হুবহু বলছি। রাসুল (স) খাজরাজের মিত্র বনু কায়নুকা অবরোধ করেছিলেন। তারা আত্মসর্মপণ করলে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার কাছ থেকে তাদের চেয়ে নিয়েছিলেন। এখন আল আউসের কথা শুনে রাসুল (স) বললেন, তোমাদেরই একজন যদি তাদের উপর রায় প্রদান করে তাহলে খুশী হও, আউস? ওরা বললো, তাতে ওরা খুশী। রাসুল সাদ ইবনে মুয়াদকে ঠিক করলেন। খন্দকের যুদ্ধে সাদ তীরবিদ্ধ হয়েছিলেন। এই সাদই ছিলেন বিচারক। সাদ উভয়পক্ষ তার বিচার মানবে কিনা প্রথমেই তা নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ রাসুলও তার বিচার মানবে কিনা সেটাও নিশ্চিত হয়ে নেন। বিস্তারিত বর্ণনা পাবেন একই বইয়ের ৫০৪ -৫০৫ নং পৃষ্ঠায়।
ইবনে হিশামেও একই রকমই লিখা আছে।
লিংক-http://bjibook.org/home/jamaat/132/95

হত্যাকান্ড কার্যকর করার সময়ও বুন কুরাইজার ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরনের বিবরণ আছে ইবনে হিসামে-
ইসলামের জঘন্যতম দুশমন হুয়াই ইবনে আখতাবকে আনা হলো। তার গায়ে গোলাপী রংয়ের একটা পোশাক ছিল। সে এর সব জায়গায় ছোট ছোট করে ছিঁড়ে রেখেছিলো যাতে তা কেড়ে নেয়া না হয়। তার দু’হাত রশি দিয়ে ঘাড়ের সাথে বাঁধা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দৃষ্টি পড়তেই সে বললো, “তোমার শত্রুতা করে আমি কখনোই অনুতপ্ত হইনি।
লিংক-লিংক

সাদ ইবনে মুয়ায ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের বিধান মতে যুদ্ধকালীন চুক্তি ভঙ্গের অপরাধে বনু কোরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদিকে হত্যা করা এবং ইহুদি নারীদেরকে দাসী হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হোক এই রায় দেন। এরপরে বনু কোরাইজা গোত্রের ৪০০ পুরুষ ব্যক্তিকে একই দিনে হত্যা করা হয় এবং বনু কোরায়জা গোত্রের প্রত্যেকটা যুদ্ধবন্দী নারীকে সাহাবিদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল যেন তারা Public Property তে পরিনত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাহাবিরা তাদেরকে বিয়ে করে তাদের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন।
আরবে সেই সময়ে হাটে বাজারে দাস দাসী বেচা কেনা হতো। হত্যাকান্ড আর নৃসংশতা ছিল নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার। আজকালকার যুগের মত কারাগার ছিল না যে যুদ্ধবন্দীদের সেখানে বন্দি করে রাখবেন। পনেরশত বছর আগের পতভুমিতে আমাদেরকে ঘটনার বিশ্লেষন করতে হবে। আজকের মূল্যবোধের পটভুমিতে নয়।
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. বলেন, বনু কুরাইযার একজন মহিলা ছাড়া আর কোন মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছিল হত্যার অপরাধে। ইবনে হিশাম বলেন, এই মহিলাই যাঁতার পাথর ছুঁড়ে সাহাবা খাল্লাদ ইবনে সুয়াইদকে হত্যা করেছিলো।
নাস্তিকেরা যেসব বইয়ের রেফারেন্স দেন, সেসব বইয়েই কথাগুলো লিখা আছে। সাদ যখন বনু কুরাইজার সকল যোদ্ধাকে হত্যা, নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের বন্দি এবং তাদের ধন সম্পদ বাজেয়াপ্তের রায় ঘোষনা করেছিলেন তখন রসুল তাতে খুশী হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু রাসুল নিজে যদি রায় প্রদান করতেন তাহলে তিনি হয়তো ক্ষমা করে দিতেন। কেননা এর আগে নাজির গোত্রের সাথে এবং মক্কা বিজয়ের পরেও তিনি সকল মক্কাবাসীর সাথে তেমনটাই করেছিলেন।
বনু কুরাইজার প্রতি সিদ্ধান্ত ছিল চূড়ান্ত। তাদের অপরাধও ছিল ক্ষমার অযোগ্য। এতো যুগ পরেও এখনো অনেক দেশেই দেশদ্রোহিতার সাজা মৃত্যুদন্ডই আছে। হয়তো আরো অনেক যুগ সেরকম থাকতে পারে। আর এইরূপ অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকরে মানবিকতার প্রশ্ন থাকে না। এখানে মানবিক হলে তো মৃত্যুদন্ডের আর কোন প্রশ্নই আসে না।
প্রসঙ্গক্রমে বলি, বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামীদের মৃত্যুদন্ড কিভাবে দেয়া হয়েছে, কোন আসামী কিভাবে কেঁদেছে তা অনেক উৎসাহী পত্রিকা রসালো করে লিখেছিল। তাতে কিছু মানুষের মনে দয়ার উদ্রেক হয়েছিল। মানবতাবোধ জেগে উঠেছিল। কিন্তু আসামীদের অপরাধের মাত্রা যদি খেয়াল করা যায়, তাহলে আর ব্যথিত হওয়ার কারন থাকে না। তারপরও মানুষের মৃত্যুর জন্যে মানুষ ব্যথিত হয়ই। রাসুল ও তার সাথীরা হননি তেমন কোন প্রমাণ কি আছে? ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রচার করেন তাবারীর ৮ম খন্ডে আছে, মদিনার লোকেরা খুশী হয়েছিল। নাস্তিকদের ব্যাখ্যা হলো, বনু কুরাইজার ধন সম্পদের জন্য তারা খুশী হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মদীনার সাধারণ লোকেরা কি গনিমতের মাল পেয়েছিল?
সদ্য নাস্তিকতা গ্রহনকারী মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ সাহেব বলেছেন, মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ মানবিক ছিল এবং এপ্রসঙ্গে তিনি সাহাবি ছাবিতের কথা বলেছেন। সাথে সাথে অমানবিকভাবে জাবিরকে হত্যার প্রসঙ্গ এনেছেন। প্রথমা প্রকাশিত ইবনে ইসহাকের বইয়ের ৫০৫ পৃষ্ঠায় সে বর্ণনাও আছে। শুনুন।
জাহিলী যুগে ছাবিত নামের সাহাবীর উপকার করেছিলেন বুন কুরাইজার জাবির নামের এক ব্যক্তি। ছাবিত জাবিরকে বললেন, আপনি আমার জন্যে যা করেছেন আমি তার প্রতিদান দিতে চাই। জাবির বললেন, মহৎ মহতের দেনা শোধ করে থাকে’। ছাবিত রসুল (স)-এর কাছে গিয়ে সব বর্ণনা করলে রাসুল বললেন, তাকে মুক্তি দাও। ছাবিত সেকথা জাবিরকে বললে জাবি বললেন, আমার পরিবারের কেউ না থাকলে আমি বৃদ্ধ মানুষ এই জীবন দিয়ে কি হবে?’ ছাবিত আবার গেলেন রসুলুল্লাহর কাছে এবং জাবিরের পরিবারে প্রাণ ভিক্ষা নিয়ে ফিরলেন। তখন জাবি বললেন, হিজাজের একটা পরিবার সহায় সম্পত্তি ছাড়া বাঁচে কেমন করে?’
ছাবিত আবার গেলে নবীর কাছে। তার সহায় সম্পত্তি ফেরতের হুকুম নিয়ে এলেন। তখন জাবি বললেন, কাব ইবনে আসাদের কি হলো যার চীনে আয়নার মত চেহারায় গোত্রের সব কুমারী মেয়ে মুখ দেখতো?
ছাবিত বললেন, নিহত।
জাবির বললেন, আর মরুভুমি ও মরুদ্যানের যুবরাজ হুইয়াই ইবনে আখতাব এর খবর কি?
ছাবিত বললেন, নিহত।
জাবির বললেন, আমাদের আক্রমণের সময়ের সম্মূখভাগের সৈনিক আর পলায়নের সময়কার পশ্চদপ্রহরী আজ্জাল ইবনে সামাওয়ালের কি হলো?
ছাবিত বললেন, নিহত।
জাবির বললেন, দুই জোটের খবর কি?
দুই জোট মানে হলো বনু কাব ইবনে কুরাইজা এবং বনু আমন ইবনে কুরাইজা।
ছাবিত বললেন, নিহত।
জাবির বললেন, তাহলে ছাবিত আমাকে একটা অনুগ্রহ কর। তোমার উপর আমার যে দাবী আছে, তার বদলে আমাকে আমার দলের মানুষের কাছে পাঠিয়ে দাও। ওরা সব চলে গেছে। আমার জীবনে আর কোন আনন্দ নেই। প্রিয়জনদের কাছে যাওয়ার জন্যে আমার আর তর সইছে না।’
তখন ছাবিত ওর কাছে এসে ওর শিরচ্ছেদ করলেন। কারন বিকল্প কোন উপায়ই ছিল না।
ভিউয়ারস লক্ষ্য করুন, রসুল বলেননি যে, তুমি কেন জাবির জন্যে ক্ষমা চেয়েছ, তুমিই তাকে হত্যা করো, যেমনটা ‍মিথ্যুক নাস্তিক মুফতি বলেছেন। নাস্তিক মুফতির প্রিয়গ্রন্থ ইবনে ইসহাক থেকেই বললাম। সত্য কি মিথ্যা আপনারা মিলিয়ে দেখুন। ইবনে হিসামে লিখা হয়েছে,
খন্দকের দু’পাশে সেনা সমাবেশের অবসান ঘটলে এবং কাফিররা পরিখা ত্যাগ করলে রাসূলুল্লাহ বললেন, “এরপর কুরাইশরা আর কখনো তোমাদের ওপর আক্রমণ চালাবে না বরং এরপর তোমরাই তাদের ওপর আক্রমণ চালাবে।”
বস্তুত তারপর কুরাইশ পক্ষ থেকে মুসলমানদের ওপর আর কোন আক্রমণ হয়নি। বরং রাসূলুল্লাহ তাদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেছেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁকে মক্কা বিজয়ের সুযোগ দেন।
লিংক-http://bjibook.org/home/jamaat/132/95

এবার আসুন বনু কুরাইজার সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল কিনা সেটা জানা যাক।
সেযুগটা ছিল গোত্র ভিত্তিক। যুদ্ধ, শান্তি, চুক্তি, সন্ধি, দৈনন্দিন কিংবা রাষ্ট্রিক সব কার্যাদি ছিল গোত্রভিত্তিক। তাই গোত্রের প্রাপ্ত বয়স্ক সবাই স্বভাবতই যোদ্ধা ছিলেন। এমন কোন গোত্র ছিল না যার প্রতিটি সদস্যই যোদ্ধা ছিল না। পুরুষেরা ব্যবসা বা কৃষিকাজ যা-ই করুক না কেন, তারা প্রত্যেকেই গোত্র বাঁচানোর জন্যে যোদ্ধা ছিলেন। সে কারনে সকল যোদ্ধাকেই মৃত্যু দন্ড প্রদান করা হয়েছিল। খেয়াল করুন, সকল ইহুদী নয়, বরং ইহুদীদের অনেক গোত্রের মধ্যে বনু কুরাইযা গোত্রের সকলকে।
সেজন্যে যদিও ইবন ইসহাকের সীরাতে সকল পুরুষদের হত্যা করার আদেশ দেয়া হয় বলে বলা হচ্ছে কিন্তু প্রাসঙ্গিক হাদীসগুলো মূল আরবীতে পড়লে দেখা যায়, সকল পুরুষদের নয় বরং সকল যোদ্ধাদের হত্যা করা হোক একথা বলা আছে। আয়েশা (রাঃ) ও আবু সাইদ আল খুদরীর হাদীসের হত্যার আদেশ সংক্রান্ত অংশে বলা হয়েছে পুরুষ (রাজুল) নয়, সেখানে সকল যোদ্ধা (মোকাতেল) বলা হয়েছে। সাবালক না হলে তারা যোদ্ধা হতো না। সেকারনে গুপ্তাঙ্গের কেশ দেখে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কিনা তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়নি।ইবন ওমরের (রাঃ) হাদীস অনুযায়ী যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে ইসলাম গ্রহন করেছিল তাদেরকে হত্যা করা হয়নি।
সীরাতের বিভিন্ন বর্ণনা এক করে দেখলে দেখা যায় যে ছয় থেকে নয়’শ কুরাইযা গোত্রের পুরুষ যোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। হাদীসশাস্ত্রে গেলে আমরা দেখি বোখারী ও মুসলিমে কোথাও কতজনকে হত্যা করা হয় তার সংখ্যা পাওয়া যায় না। কোরানেও কুরাইযা গোত্রের সর্বমোট কতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তার হিসেব পাওয়া যায় না। সুতরাং কোরান ও বিশ্বস্ত হাদীসগ্রন্থের সাথে সীরাতের বর্ণনার অসামঞ্জস্যতা থাকাতে আমাদের সতর্কতার সাথে এগুতে হবে। দেখতে হবে অন্য কোনো হাদীসগ্রন্থে সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা । হ্যাঁ, সংখ্যার হিসেব দিয়ে কিছু হাদীস পাওয়া যায় অবশ্য নেসায়ী, তিরমিযী প্রমুখ হাদীসগ্রন্থে ।ওখানে বলা হচ্ছে যে সাদ বিন মুয়াদ (রাঃ) যখন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন তখন চারশ’র মতো কুরাইযা গোত্রের পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। এখন যদি ধরাও হয় যে সব পুরুষকেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তাহলেও সংখ্যা হাদীসের ইঙ্গিত অনুসারে বলা যায় যে সর্বোচ্চ হয়ত বা চারশ লোকের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোরান কিংবা বুখারী ও মুসলিম প্রমুখ অধিক বিশ্বস্ত হাদীসগ্রন্থের বর্ণনায় এটা আগে প্রমাণ করা হয়েছে যে কুরাইযার সব পুরুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। তবে যাই হোক না কেন সীরাতে বর্ণিত ৬ থেকে ৯শ লোককে মৃত্যুদণ্ড কিন্তু হাদীস অনুসারেই বিশ্বস্ত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। শ’তিনেক কুরাইযা পুরুষকে ঐদিন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ও অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়, যারা সিরিয়ায় চলে যায়।
মুসলমানেরা মধ্যপন্থা অনুসরন করে থাকেন। কোরআন ব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থের অন্ধ অনুসরন করেন না। এমনকি বোখারী মুসলিমের সংগ্রহীত কোন হাদীস যদি কোরআনের সাথে কন্ট্রাডিক্টরী হয়, (হদিসের অন্ধ অনুসারী কট্টরপন্থীরা ব্যতীত) সেটা মুসলমানেরা গ্রহন করেন না। কাজেই কোনটা গ্রহন করতে হবে, কোনটা বাদ দিতে হবে সেটা যার যার বিবেকের উপরই ছেড়ে দেয়া যায়।

নৃশংস প্রস্তাবটি কি রাসুলের(স) ছিল?
ইসলাম বিদ্বেষীরা বনু কুরাইজার প্রতি নৃশংসতা দেখাতে জঘন্য মিথ্যারও আশ্রয় নিয়ে বলেন রাসুল(সঃ) নাকি তিনটি অমানবিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
২০১৭ সালে প্রথমা কর্তৃক প্রকাশিত সীরাতে রসুলুল্লাহ গ্রন্থের ৫০১-৫০২ পৃষ্ঠা পড়ে দেখা যায়, হৃদয় কাঁপানো প্রস্তাব তার নিজ গোত্রকে কাব ইবনে আসাদই দিয়েছিলেন, যখন তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, রাসুল(স) কোন একটা হেস্তনেস্ত না করে যাবেন না।
নিজ স্ত্রী সন্তানদের হত্যা করে রাসুলের(স) সাথে যুদ্ধের প্রস্তাব গোত্রপ্রধান কাব-এর ছিল। এটা রাসুলুল্লাহ (স)-এর প্রস্তাব ছিল না। ইবনে হিসামেও একইরূপ বর্ণনা আছে।
তবে এরকম মনে করার অবশ্য কারণ নেই যে যেহেতু রাসুল(স) বনু কুরাইজা গোত্রের লোকদের হত্যার ফয়সালা দেননি কাজেই তাদের পরিণতির দায় রাসুলের (স) নয়। বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতকতা এবং চুক্তিভঙ্গের মত চরম অপরাধের জন্য এ শাস্তি তাদের অবশ্যই পাওনা এবং যুক্তিযুক্ত ছিল।

এটা কি ইহুদী বিদ্বেষ ? গণহত্যা?
ইসলাম কিতাবীদের ভাই মনে করে। ইহুদী বিদ্বেষীতার জন্যে ইসলাম আসেনি। কিন্তু ইহুদী সম্প্রদায়ের এই গোত্রটির বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে বিচারিক উপায়ে তাদের শাস্তি হয়েছিল, চরম শাস্তি। তাদের শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেয়া হলে সেটা হতো মদীনার সব মানুষকে হত্যা করার সামিল।
মজার ব্যাপার হল ইহুদী ওয়েবসাইট গুলিতে ইহুদী জাতির উপর ঘটে যাওয়া সকল অন্যায় গণহত্যা ও ধ্বংসের যেসব কাহিনী পাওয়া যায় সেখানে বনু কুরাইযার ঘটনার কোন উল্লেখ নেই। যেমন Timeline of antisemitism
এ বনু কোরায়যার কাহিনী পাওয়া যায় না। বিগত ২০০০ বছরের ইতিহাসে ইহুদীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন ও গণহত্যার বিশাল একটি লিস্ট (An overview of the persecution of Jews for the past 2,000 years)
এতবড় এই লিস্টেও বানু কুরাইযা’র ঘটনার উল্লেখ নেই। লিস্টটিতে বরঞ্চ বিগত ২০০০ বছরে ইহুদীদের উপর পেগান ও খ্রীষ্টানদের অত্যাচার-নির্যাতন ও গণহত্যার ঘটনা উল্লেখ আছে। কেবলমাত্র ইসলাম বিদ্বেষিতার কারনে বনু কুরাইযার প্রতি নাস্তিকদের কান্নার রোল পড়ে যায়।

রায়হানার প্রসঙ্গ:
বনু করাইজার বন্দিদের মধ্যে রায়হানা নামীয় সুন্দরী ছিলেন। মহানবী তাকে ইসলাম গ্রহনের ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি সেটা গ্রহন করেননি। সীরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত হয়েছে,
রায়হানা বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, তার চেয়ে বরং আমাকে আপনি দাসী হিসেবে আশ্রয় দেন। এটা আমার ও আপনার উভয়ের জন্যই অপেক্ষাকৃত নির্ঝঞ্ঝাট হবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা মতই কাজ করলেন তাকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করার সময় সে ইসলাম গ্রহণের ঘোর বিরোধিতা করেছিল এবং ইহুদী ধর্মকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিল। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে দূরে রইলেন এবং মর্মাহত হলেন। একদিন তিনি সাহাবীদের সাথে বৈঠকে আছেন এমন সময় পিছনের দিকে জুতার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই সালাবা ইবনে সাইয়া আমাকে রায়হানার ইসলাম গ্রহণের খবর দিতে আসছে। ” সত্যই সালাবা এলেন এবং জানালেন, রায়হানা ইসলাম গ্রহণ করেছে। এতে তিনি খুশী হলেন। http://bjibook.org/home/jamaat/132/95
এবার বলুন, এখানে রাসুল(স) কর্তৃক রায়হানাকে ধর্ষণ করার কথা কোথা থেকে এলো? ধূর্ত ইসলাম বিদ্বেষীরা দুই একটি রেফারেন্স দিয়েই মাঝখানে মিথ্যার খই ফুটান। এ কাজটা সব নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা নিয়মিতভাবেই করে আসছেন। মানুষ মনে করে তারা তো রেফারেন্স দিয়েই কথা বলেছেন।
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, যতগুলো বর্ণনা রাসূলের(স) চরিত্রকে কুলষিত করতে ব্যবহার করা হয় তার বেশীরভাগই দুর্বল এবং জাল। ইবনে ইসহাকে বনু কুরায়জার ঘটনার বর্ননাকে নির্ভরযোগ্য নয় বলে তৎ সময় থেকেই দাবী করা হয়। কেননা ইবনে ইসহাক খায়বারের সমস্ত ঘটনা ইহুদিদের কাছ থেকে শুনে শুনে লিখেছিলেন। নিরপেক্ষ কোন বর্ণনাকারীকে তিনি খুঁজে পাননি। ইমাম মালিক এবং ইমাম ইবনে হাজার দুজনেই ইবনে ইসহাকের বর্ননার বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সীরাত গ্রন্থকার যেখানে যার কাছেই যেসব গল্প শুনেছেন তাই তুলে দিয়েছেন বলে দাবী করেন এই ইমামরা। ইমাম মালিক(র) ইবনে ইসহাক প্রসংগে বলেন, "মিথ্যাবাদী এবং জালিয়াত যে শুধু শুনে গল্প লিখে থাকে।" ইমাম মালিক(রা) ইবনে ইসহাকের সীরাত রচনার পদ্ধতিকেও স্বীকৃতি দেন নি।

ইবনে হাজার পরবর্তীতে ইমাম মালিকের দৃষ্টিভংগিকে সমর্থন করেন। যতটা সতর্কতা সীরাত রচনায় স্থান পাওয়া উচিত ছিল, ততটা সতর্কতা ইবনে ইসহাকের ক্ষেত্রে অবলম্বন করা হয়নি। বিশেষত: বনু কুরায়জার হত্যাকান্ড বিষয়ে কুরানের বর্ননা শুধু এটুকু: "কিতাবীদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করলেন। ফলে তোমরা কতককে হত্যা করেছা এবং কতককে বন্দী করেছো। [৩৩:২৬]", যা ইবনে ইসহাকের বর্ননার সাথে খুব বেশী খাপ খায় না। হুয়াই ইবনুল আখতাব, কাব ইবনে আসাদ সহ অনেককে মৃত্যদন্ড দিলেও এরকম ৯০০ লোককে হত্যা করার কোন ক্লু-ও পাওয়া যায় না।বিশ্বাসঘাতক অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ায় মদীনায় স্বস্তি এসেছিল এটা অনুমান করা যায় ঠিক, কিন্তু মদীনায় খুশীর বন্যা বয়ে যাওয়ার কোন প্রমাণ কোন গ্রন্থেই নেই, যা একান্তই বাড়াবাড়ি এবং সত্যের বিপরীত।

[চরম ইসলাম বিদ্বেষী সাইট http://www.islam-watch.org-এ Ayesha Ahmed-Gk Massacre of Bani Quraiza: Muslim Ummah’s Happiest Day শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটির অনুকরনে বাংলার নাস্তিকদের নানা কুরুচিপূর্ণ প্রবন্ধ নিবন্ধ ও সদ্য নাস্তিক মুফতি মাসুদের বিদ্বেষপূর্ন ভিডিও জবাবে লেখা]

বিস্তারিত জানতে: www.anwarali.net




মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:২৯

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: পড়লাম। জানলাম। আশাকরি ইসলাম বিদ্বেষীরা লেখায় জবাব পেয়েছেন, এবং সত্য জানার চেষ্টা করবেন।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

করুণাধারা বলেছেন: কিছুটা পড়লাম। ভালো লেগেছে। আশা করি পরে পুরোটা পড়তে পারব।

ধন্যবাদ, চমৎকারভাবে লেখার জন্য।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪

বারিধারা ৩ বলেছেন: ইসলাম বিদ্বেষীরা শিরোনাম দেখেই অন্যদিকে হাঁটা দেবে। তারা কনফিউশন নিয়ে বিদ্যা জাহির করতে চায়, কোন জবাব চায়না। কনফিউশন ক্লিয়ার হবে, এমন কিছু তারা পড়বেনা, পড়লেও এমনভাবে পড়বে যাতে এর মধ্যে ফাক ফোঁকর খুঁজে বের করা যায়।

৪| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: এই পোষ্টে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।

৫| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:০৯

টারজান০০০০৭ বলেছেন: ভালো লাগিল ! অন্য ধর্মের মতন এক গালে চড় খাইয়া আরেক গাল পাতিয়া দেওয়া, বা জীব হত্যা মহাপাপ এমন ঢোড়া বিষের নীতি ইসলামে নাই ! বস্তুত তাহারাও তাহাদের ধর্মের এই নির্বিষ নীতি অনুসরণ করিতে পারে না। ইসলামে ইট খাইলে পাটকেল মারারই নিয়ম আছে ! বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি সব দেশে, সব জাতিতে চূড়ান্ত মাত্রারই হইয়া থাকে ! তাহা ছাড়া বনু কুরাইজা রাসূল স. এর উপরে বিচারের ভার ন্যাস্ত করে নাই ! ন্যাস্ত করিয়াছে সাদ রা. এর উপর !যতদূর জানা, তাহাদের ধারণা ছিল সাদ রা. পূর্ব সম্পর্কের কারণে তাহাদের পক্ষে রায় দিবেন, উনার গোত্রের লোকজনদের মধ্যেও কেহ কেহ তাহাকে রায় দেওয়ার সময় পূর্ব সম্পর্কের দোহাই দিয়াছিল ! সাদ রা. তাওরাতের আইন অনুযায়ীই বিচার করিয়াছিলেন ! এইখানে রাসূল স. এর দোষ কোনোভাবেই হইতে পারেনা ! সাদ রা. এরও নহে ! তাহারাই সাদ রা. কে বিচারক নিযুক্ত করিয়াছিল এবং সাদ রা. তাওরাতের আইনেই বিচার করিয়াছিলেন !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.