নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

আমি সত্যে অবিচল।

আনোয়ার আলী

যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।

আনোয়ার আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাদিসের পক্ষে-বিপক্ষের অন্ধ অনুসারীরা এবং মুসলিম আকিদা-

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:০৩

হাদিসের পক্ষে বিপক্ষে শুধু আধুনিক সময়ে নয়, সেই মহানবির আমল থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি। মহানবি হাদিস লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে মানুষ কোরআনের পাশাপাশি আরেকটি গ্রন্থকে স্থান না দেয়। চার খলিফার আমলে কেউই হাদিস গ্রন্থনা করতে সাহস করেননি। মহানবির আদেশকে উপেক্ষা করে তার মৃত্যুর ২৫০-৩০০ বছর পরে মূলতঃ চূড়ান্তভাবে হাদিস গ্রন্থনা শুরু হয়। সর্বপ্রথম ইমাম বাগাবী ও ইমাম মালেক (রা) হাদিস গ্রন্থনা করেন। কারো কারো মতে ইমাম মালেকই প্রথমে গ্রন্থনা করেন। ইসলামী স্কলারদের মতে, ইমাম বুখারী ও মুসলিমমরাই ‘সহি’ হাদিস গ্রন্থনা করেন।

হাদিস গ্রন্থনার পক্ষে যুক্তি:
মহানবি হাদিস লিখে রাখতে নিষেধ করেছিলেন, এ কথাটাও মানুষ জেনেছে সরাসরি হাদিস গ্রন্থ থেকেই। লিখে রাখতে নিষেধ করার কারন হলো, কোরআনের সাথে যাতে মহানবির কথা মিশ্রিত হয়ে না যায়। তবে মহানবি বিদায় হজ্বের সময় বলেছিলেন, তার বক্তব্য যাতে অন্যান্যের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। মহানবির মৃত্যুর পর হাদিস প্রচার প্রসারে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
উপরন্তু পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলিল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা (উসুওয়াতুল হাসানা) রয়েছে। (৩৩:২১)

“বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সমুদয় পাপ মার্জনা করবেন। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল করুণাময়।” (সূরা আলে ইমরানঃ ৩১)

আল্লাহ ও রাসুলের অনুগত হও। যদি তারা মূখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখ আল্লাহ কাফিরদের পছন্দ করেন না। [৩: ৩২]

তোমরা আল্লাহ-রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তাদের আদেশ পালন করো। [৪: ৫৯]

হে মুমিনগণ! রাসুল যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদের প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিবে। [৮: ২৪]

আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর। [৮: ১]

কেহ রাসুলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং বিমূখ হলে তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করিনি। [৪: ৮০]

“তিনি নিজের পক্ষ থেকে প্রবৃত্তি তাড়িত হয়ে কোন কথা বলেন না, তিনি যা বলেন তা ওহী, যা তাঁর নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।” (সূরা নাজমঃ ৩-৪)

“আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল কোন বিষয় ফায়সালা করলে কোন ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।” (সূরা আহযাবঃ ৩৬)

কোরআনের উল্লেখিত বানী মতে, হাদিস প্রচার প্রসার অবশ্যই পালনীয়। আবার এই আয়াত সমুহের ভিন্ন ব্যাখ্যাও অনেকে দিয়েছেন। তাদের মতে কোরআন মানা মানেই নবিকে মানা। নবিই কোরআন, কোরআনই নবি। এখানে হাদিসের কোন প্রসঙ্গ নেই।

নানা বিধি নিষেধের পরও মুসলমানেরা নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, শিয়া, সুন্নি, সালাফী, হানাফি, হাম্বলী, শাফেয়ী, আহলে হাদিস, আহলে কোরআন, বেরেলভী, দেহলভী, ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কি। এদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ আঙ্গিকে হাদিস মানেন। একেকজনের মানদন্ড একেক রকম। প্রধান দুটি দলের মধ্যে সুন্নিরা মানেন সিহাহ সিত্তা মানে ৬টি হাদিসগ্রন্থ আর শিয়ারা মানেন সিহা খামছা বা ৫টি হাদিসগ্রন্থ। হাদিস লিখিত হওয়ার বিষয়ে এই দুই দলেই তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে সুন্নিরা বুখারীর মানদন্ডে হাদিসকে গ্রহন বর্জন করেন। তা হলো, সনদ (কে কার কাছ থেকে শুনেছেন তার ধারাবাহিকতা), রাব্বি (যিনি বর্ণনা করেছেন), মতন (হাদিসের মুল কথা)। হাদিস সহি জইফের এই মানদন্ড ইমাম বুখারীর প্রবর্তিত। তিনি নিজেই লক্ষ লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করেছেন এবং নিজের মানদন্ডে লক্ষ লক্ষ হাদিস বাদও দিয়েছেন। ইমাম মুসলিম ও অন্যান্যের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। শিয়াদের হাদিসের মানদন্ড হলো কোরআন। অর্থাৎ তারা সনদ, রাব্বির ধার ধারেননি, হাদিসের বক্তব্য কোরআনের সাথে না মিললে তারা সেটা গ্রহন করেননি। উপরন্তু তারা আলী ও আহলে বাইতকে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেক সাহাবীকেও অবজ্ঞা করেছেন। এরপরও শিয়ারা নিজেরাই নানা দলে উপদলে বিভক্ত। কতেক দলকে তো মুসলিমই বলা যায় না। অন্যদিকে সুন্নিদের সিহা সিত্তা আবু হুরাইরা দিয়ে পরিপূর্ণ হলেও, আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। নিরপেক্ষতার খাতিরে কিছু রেওয়াত নেয়া হয়েছে মাত্র। কাজেই হাদিস গ্রন্থনার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়।

শিয়া সুন্নি উভয় দলেই কট্টর হাদিস অনুসারী আছেন। কট্টর হাদীস অনুসারীরা হাদিস অস্বীকার আর কোরআন অস্বীকারকে একই রকম মনে করেন। যারা হাদিস অস্বীকার করেন, তাদেরকে কাফির ফতোয়া দেন তারা।

হাদিস অনুসারীরা কোরআনকে পরিপূর্ন গ্রন্থ স্বীকার করলেও এটাও স্বীকার করেন যে, হাদিস ছাড়া কোরআন বোঝা সম্ভব নয়। কোরআনে অনেককিছুই নেই, যা কেবল হাদিস থেকে বোঝা সম্ভব। উদাহরন দিয়ে তারা বলেন, হাদিস ছাড়া কোরআন বুঝার প্রচেষ্টা করতে গেলে অন্ধের হাতী দেখার মত অবস্থা হবে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় কোরআনের অনেক আয়াতে বাহ্যত কন্ট্রাডিকশন মনে হয়, যেমন কখনও কোরআনে দেখা যায় মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে কাফিরদেরকে হত্যা করতে (সুরা: ৯-৩) কখনও মুসলিমদেরকে হুকুম দেয়া হচ্ছে অবিশ্বাসী তথা কাফিরদেরকে তাদের পৌত্তলিক ধর্ম পালনে তথা মূর্তি পূজায় বাঁধা না দিতে (সুরা ১০৯: ১-৬)। হাদিসের ব্যাখ্যা ছাড়া এসব কন্ট্রাডিকশান দুর করা সম্ভব নয়। কোরআনে বলা হয়েছে মৃত প্রাণী খাওয়া হারাম। তাহলে তো মৃত মাছ খাওয়া যায় না। হাদীস বলছে পানির মাছ মৃত হলেও তা খাওয়া হালাল। কুরআনে পশুকুলের মধ্যে শুধু শুকরকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুকুর-শিয়াল, বিড়াল, বাঁদর, বাঘ-ভল্লুক, সাপ-বিচ্ছু, পোকা-মাকড়, কিট-পতঙ্গ, ঈগল, চিল, বাজ, শুকন খেতে নিষেধ করা হয়নি। এগুলোর মুলনীতি হাদিসেই পাওয়া যায়। যেমন “দাঁত দ্বারা শিকার করে এরকম সকল হিংস্র পশু হারাম। আর থাবা দিয়ে শিকার করে এমন প্রত্যেক পাখি হারাম।” (বুখারী ও মুসলিম)। কোরআনের ব্যাখ্যা এবং মাসালা মাসায়েল জানতে হলে হাদিসের অনুসরন ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। হাদিস ছাড়া সুন্নাহর তথ্য পাওয়ার কোন বিকল্প রাস্তা নাই। যেসব হাদিসবেত্তা হাদিস গ্রন্থিত করেছেন, তাদের ধারাবাহিকতা নিম্নে দেয়া হলো-
০১. ইমাম বাগাবী মৃত্যু: ১৫৬ হিজরী
০২. ইমাম মালেক মৃত্যু: ১৭৯ হিজরী
০৩. ইমাম শাফেয়ী মৃত্যু: ২০৪ হিজরী
০৪. ইমাম আহমেদ মৃত্যু: ২৪১ হিজরী
০৫. ইমাম দারেমী মৃত্যু: ২৫৫ হিজরী
০৬. ইমাম বুখারী মৃত্যু: ২৫৬ হিজরী
০৭. ইমাম মুসলিম মৃত্যু: ২৬১ হিজরী
০৮. ইমাম ইবনে মাজাহ মৃত্যু: ২৭৩ হিজরী
০৯. ইমাম আবু দাউদ মৃত্যু: ২৭৫ হিজরী
১০. ইমাম তিরমিযী মৃত্যু: ২৭৯ হিজরী
১১. ইমাম নাসায়ী মৃত্যু: ৩০৩ হিজরী
১২. ইমাম দারা কুতনী মৃত্যু: ৩৮৫ হিজরী
১৩. ইমাম বায়হাকী মৃত্যু: ৪৫৮ হিজরী
১৪. ইমাম রাযীন মৃত্যু: ৫২৫ হিজরী
১৫. ইমাম ইবনে জাওযী মৃত্যু: ৫৯৭ হিজরী
১৬. ইমাম নববী মৃত্যু: ৬৭৬ হিজরী

সুন্নি, সালাফি আর আহলে হাদিসের মতানুসারীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, উপরোক্ত সকল গ্রন্থের মধ্যে কেবল বুখারী এবং মুসলিম পরিপূর্ণ সহি গ্রন্থ। কোরআনের পরেই বুখারীর স্থান। এ হাদিস যারা অস্বীকার করবে তারা মুসলমান নয়। আল্ আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত আলেমদের মতে যারা শিয়া ফিকাহকেও ইসলামের ৫ম মাজহাব (school of Islamic thought) হিসাবে গ্রহণ করেন তাদের মতে "কোরআন অনলিরা" অমুসলিম। ড: ইউসুফ আলবাদরি ( Member, Higher Assembly of Islamic Affairs,Egypt ) বলেন,
কোরআন অনলিরা যদিও বলে কোরআনকে মানে কিন্তু তারা কোরআনের আয়াতে যে বলা হয়েছে "He who obeys the messenger obeys God?" তা মানতে চায় না! যারা নবীকে মানেনা নবীর সুন্নাহকে অস্বীকার করে শুধু কোরআন নিয়ে থাকতে চায় এরা বিপথগামী, মুরতাদ বা apostates. তাদের মতে হাদিস অস্বীকার করা মানে কোরআন অস্বীকার করা।

হাদিস বিরোধীদের বক্তব্য-
হাদিস বিরোধীরা বলেন, কোরআন মানা আর রাসুলকে মানা একই কথা। আর রাসুল তো হাদিস গ্রন্থনা নিষিদ্ধ করেছেন। চার খলিফা এবং সাহাবীদের কেউই একাজ করেননি। মহানবির মৃত্যুর পরও এই নিষেধাজ্ঞা বজায় ছিল, কেননা খলিফা আবু বকর ও খলিফা ওমর তাদের নিজেদের সংরক্ষিত লিখিত হাদিসগুলো বিনষ্ট করে ফেলেছিলেন। কেবল আলীই তার তলোয়ারের খোপে কিছু হাদিস লিখে রেখেছিলেন মর্মে জানা যায়। মহানবি বলেছেন, আমার কাছ থেকে তোমরা কোরান ছাড়া আর কিছুই লিখবে না।যদি কেউ লিখে থাক তবে অবশ্যই তা নষ্ট করে ফেল।'' [মুসলিম, ভলিউম১, পৃষ্ঠা ২১১, হাদীস নং ৫৯৪, প্রিন্টার-মতকবে আদনান, বৈরুত,১৯৬৭; বংগানুবাদ: আ. ফা ভূইয়া, ১ম খ. ১ম সংস্করণ, পৃ: ৫১]।

মহানবির মৃত্যুর ২৫০-৩০০ বৎসর পর মহানবির নামে অমুক তমুকের থেকে, তমুক আরেক তমুকের থেকে শুনা কথার গ্রন্থনা মুসলমানদের জন্য পালনীয় নয়। কথিত সহি হাদিসগ্রন্থ আদৌ সহি নয়। এইসব হাদিসগ্রন্থগুলো আবু হুরাইরা দিয়ে পরির্পূণ, যাকে মা আয়শা মিথ্যাবাদী বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং খলিফা ওমর অর্থ আত্মসাতের দায়ে পদচ্যুত করেছিলেন। আবু হুরাইরা চাতুর্য্যের মাধ্যমে আলী বিরোধী হাদিস বর্ণনা করে হযরত মুয়াবিয়ার দরবারে ঠাই করে নিয়েছিলেন। আর উমাইয়া বংশ সুদীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকায় আবু হুরাইরা বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছিলেন। যদিও মুহাদ্দেসরা বলেছেন খলিফা ওমর আবু হুরাইরাকে পদচ্যুত করলেও পরে তদন্ত করে নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং তাকে পদ নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আবু হুরাইরার আত্মসন্মানে আঘাত লাগায় তিনি আর পদ গ্রহন করেননি। হাদিস বিরোধীদের মতে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই মিথ্যা। কেননা যে ওমর নিজ পুত্রকে শাস্তি দিতে কুন্ঠিত হন না, তিনি তদন্ত না করেই সাহাবী আবু হুরাইরাকে পদচ্যূত করেছিলেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য হতেই পারে না। এতে ওমরের সামর্থ্যকে হাদিস-বিশারদরা অপমান ও খাটো করেন। আবু হুরাইরা নিজেই স্বীকার করেছেন, ওমরের বেতের ভয়ে তিনি হাদিস বর্ণনা করতেন না। হাদিস বিরোধী কট্টরপন্থীরা বলেন, যারা মহানবির হাদিস গ্রন্থনার নিষেধাজ্ঞার বানীকে অস্বীকার করে হাদিস গ্রন্থিত করেছেন, তারা কোনভাবেই মুসলমান থাকেননি। হাদিসপন্থীরা বিশ্বাস করেছে, হাদিস লিখে না রাখলে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যেতো। হাদিস-বিরোধীরা কথিত হাদিসপন্থীদের এ ধরনের আকিদাকে কুফরি ও ইসলাম বিধ্বংসী বলে মন্তব্য করেন। হাদিসের সহি জইফ নির্ধারনে হাদিসবেত্তরা নিজেরাই কতেক মানদন্ড তৈরী করে নিয়েছেন, যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। কেননা তাদের বর্ণিত হাদিসে কোরআনের বিপরীত অনেক হাদিস আছে এবং মহানবির পবিত্র চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন হাদিসকেও সহি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যা কোনভাবেই সত্য হতে পারে না। আবার এক হাদিসের সাথে অন্য হাদিসের কন্ট্রাডিকশান তো আছেই।

কোরআনের বানীকেও আল্লাহপাক হাদিস বলেই বর্ণনা করেছেন। কোরান মোতাবেক যারা নির্দেশ দেয় না, বিচার মীমাংসা করে না, তারাই কাফের, ফাছেক ও জালেম। (৫: ৪৪-৪৯)। রাসুল স্বয়ং কোরান মেনে চলেছেন, কোরান মানার নির্দেশ দিয়েছেন। কোরানের বাহিরে তিল পরিমাণ কথা কাজ করেননি; করলে স্বয়ং আল্লাহ তাঁর জীবন ধমনী কেটে ফেলতেন। [৬৯: ৪৪-৪৭] তিন শতাব্দী পরে দলীয় নেতাদের স্ব-লিখিত এবং কথিত হাদিসগুলিকেই যে রাসুলের কথা-কাজ বলে বিশ্বাস করতে হবে অথবা সিহা সিত্তা বা সিহা খামছা কিম্বা ইমাম বুখারী-মুসলিমদের উপর নিঃশর্ত ঈমান আনতে হবে, এমন কোন ইঙ্গিত-ইসারা আল্লাহর কালামে ও মহানবির বানীতে নেই। তাদের মতে মুসলমানদের মানতে হবে কোরআন ও মহানবির ইসলাম, কোনভাবেই বুখারীর ইসলাম নয়।

হাদিস বিরোধীদের মতে মহানবি, তার সাহাবা, তাবেইন এবং তাবেতাবেইনদের জীবন ছিল খুবই সহজ সরল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমানদীপ্ত স্বর্গীয় জীবন। আর মহানবির নিষেধাজ্ঞার বানীকে উপেক্ষা করে যে সময় থেকে হাদিস গ্রন্থনা শুরু হয় তখন থেকেই মুসলমানের জীবনে নেমে আসে সত্য-মিথ্যার নানা বাধা নিষেধের খড়গ আর মানুষের জীবন ক্রমে পরিণত হয় জাহান্নামে। কথিত সহি হাদিসের যাতাকলে আজো মুসলমানেরা পিষ্ঠ তো হচ্ছেই, তাদের জীবনও পরিণত হয়েছে জড় পদার্থে। কথিত হাদিসী মতে ইসলাম মানতে গেলে মানুষ এক কদমও এগুতে পাবে না। আখেরাতের আগেই দুনিয়া জাহান্নামে পরিণত হয়ে যায়।

অথচ ইসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ ধর্ম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আমি তোমার উপর কুরআন এ জন্য নাযিল করিনি যে তুমি দু:খ-কষ্ট ভোগ করবে। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১-২)

আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ্ তাই চান ও তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না...”[সূরা বাকারাহ্; ০২:১৮৫]

আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ৬)

“তিনি (আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি’ ”[সূরা হজ্ব; ২২:৭৮]

‘আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাজিল করেছি; সেটি এমন যে, প্রত্যেক বস্তুর সত্য ও সুস্পষ্ট বর্ণনা; হেদায়াত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ (সূরা নাহল, আয়াত ৮৯)।

আল্লাহতালা সহজ করে দিলেও, গোমরাহীতে লিপ্ত লোকেরা কঠোরতার পথ বেছে নিয়েছে। আল্লাহপাক বলেন, ‘একদল লোককে তিনি সঠিক পথ দেখিয়েছেন, আর দ্বিতীয় দলটির উপর গোমরাহী ও বিদ্রোহ ভালোভাবেই চেপে বসেছে; এরাই (পরবর্তী পর্যায়ে) আল্লাহ তালাকে বাদ দিয়ে শয়তানদের নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে, (এ সত্বেও) তারা নিজেদের হেদায়াতপ্রাপ্ত মনে করে। (সুরা আল আ’রাফ ৭: ৩০)

জীবনকে শরীয়ত সম্মতভাবে উপভোগ করার জন্যে আল্লাহপাক বরং তাগিদ দিয়েছেন, একই সুরার পরবর্তী আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, হে আদম সন্তানেরা, তোমরা প্রতিটি এবাদতের সময়ই তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহন করো, তোমরা খাও এবং পান করো, তবে কোন অবস্থাতেই অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা আল আ’রাফ ৭: ৩১)

কিন্তু এইসব আয়াতের বিপরীতে হাদিসপন্থীরা মানুষের জীবনকে কঠিন থেকেও কঠিনতর করে নানা ফেতনার জন্ম দিয়েছেন, জন্ম দিয়েছেন কট্টরতার। কেউ যদি কোরআনের একটা আয়াত বলেন, হাদিসপন্থীরা তার বিপরীতে হাজারটা হাদিস এনে হাজির করে ফেলেন। সংক্ষেপে এই হলো হাদিস বিরোধীদের যুক্তি।

হাদিস বিরোধীতার সবচেয়ে পুরানো যে দলিল পাওয়া যায় , সেটা হলো ৭৬হিঃ/৬৯৫খৃঃ খলিফা আব্দুল মালেককে লেখা আব্দুল্লাহ ইবনে ইবাদের লেখা একটা চিঠি। উক্ত চিঠিতে কুফাবাসীদেরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে কোরানকে পরিত্যাগ করে হাদিসকে ধর্মের ভিত্তি হিসাবে গ্রহন করার জন্য।"তারা এমন একটি বইতে বিস্বাস করে যা আল্লাহর থেকে নয় , মানুষের হাত দ্বারা রচিত এবং এটাকে রসূলের বাণী বলে দাবী করে।"(Michael Cook, Muslim Dogma, Cambridge University Press, Cambridge, 1981)

আব্বাসীয় আমলে ও পরবর্তিতে সেলজুক খলিফাদের শাসনামলে হাদিস বিরোধীদের সকল বই ও গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেয়ার কারনে হাদিস বিরোধী লেখা পাওয়া যায় না। তবে এদের উপস্থিতি ও যুক্তি সম্পর্কে জানা যায় শরিয়া আইনের জনক ও প্রবর্তক ইমাম শাফেয়ীর বই 'জিমা আল ইলম' ও ইবনে কুতাইবার লেখা থেকে। তাদের লেখা থেকে জানা যায় তাদের সময়ে হাদীস বিরোধীতা ছিল সর্বব্যাপি এবং তাদের লেখায় তারা হাদিস বিরোধীদের যুক্তিকে খন্ডন করার চেষ্টা করেছেন।

চতুর্দশ শতাব্দির দুই স্কলার আব্দুর রহমান বিন আবু বকর সুয়ুতি (লেখক 'তাদরিব আর রাওয়ি' ১৩৭৯সাল) ও ইবনে হাজার ( লেখক 'হায়দাল-সারি' ১৩৮৩সাল) এবং বিংশ শতাব্দির পাক ভারত উপমহাদেশের সাইয়িদ আহমদ খান (১৮১৭-১৮৯৮) ও মিশরের মুহাম্মদ তৌফিক সিদকির ("al-Islam huwa ul-Qur'an Wahdahu" "Islam is the Qur'an Alone"১৯২০) লেখা পাওয়া যায়। এরা সকলেই হাদিস বিরোধী ও সমালোচক ছিলেন।


মুসলিম আকিদা
কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী মুসলিমরা মধ্যপন্থা অনুসরন করে থাকেন। আর মুসলমানেরা শিয়া, সুন্নিদের মত কোন দল-উপদলে বিভক্ত নন। তাদের পরিচয় কেবলই ‘মুসলিম’। এর সাথে তারা অন্য কোন কিছুই যুক্ত করেন না। কেননা আল্লাহপাক বলেন,
আর কে বেশী উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে এবং আল্রাহর নির্দেশ মেনে চলে এবং বলে, আমি 'মুসলিম' [আল কোরআন, ৪১: ৩৩]
সুরা আল ইমরানে বলা হয়েছে, তাহলে বলে দিন (ওদেরকে) তোমরা সাক্ষী থাকো একথার যে আমরা সর্বান্তকরনে আল্লাহতে আত্মসমর্পনকারী 'মুসলিম' [৩: ৬৪] এখানে হাদিসপন্থীরা নিজেদের নানা নামে অভিহিত করার পক্ষে যে যুক্তি দেন তা হলো, মহানবিকে আল্লাহপাক কয়েকটি নামে উপনামে ডেকেছেন, কাজেই মুসলিমরাও নিজেদের মানহাজ অনুযায়ী ভিন্ন নামে পরিচিত হতে কোন অসুবিধা নেই। একটু লক্ষ্য করলেই বুঝবেন, এই যুক্তি আসলে কোরআনের বিরুদ্ধেই একটা খোঁড়া যুক্তিমাত্র। আর কাঠমোল্লাদের যুক্তির কোন অভাব নেই, যেখানে সাথে রয়েছে কথিত ‘সহি’ হাদিস। পর্যালোচনা দেখা যায়, হাদিস লিখে রাখার বিষয়ে মহানবির নিষেধাজ্ঞা রহিত হয়ে যায়নি। সে রকমটা হলে চার খলিফা হাদিস গ্রন্থনা করতে বারন করতেন না। তথাপি ইমাম মালেক, বুখারী, মুসলিম গং যে সব হাদিস গ্রন্থনা করেছেন, সেগুলোকে বাতিল বলারও কোন উপায় নেই। তারা ইস্তেখারা করে হাদিস গ্রন্থিত করেছেন মর্মে শোনা যায়। এইসব হাদিস দ্বারা কোরআনের ব্যাখ্যা করা যায়। তবে সহি হাদিসের মানদন্ড কেবল সনদ, রাবী আর মতন-এর উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে সেটা কোরআনের বিপরীত কিছু বলছে কিনা তার উপর। কোরআনের বিপরীত হলে সনদ-রাবী-মতন যতই শুদ্ধ হোক না কেন, মুসলমানেরা তা কোনভাবেই গ্রহন করেন না। মুসলমানেরা সব সময় কোরআনকেই একমাত্র ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করেন। কোরআনের পাশাপাশি মানব-রচিত আর কোন গ্রন্থই তাদের কাছে ধর্মীয় গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয় না। হাদিস বিরোধীদের সাথে তাদের পার্থক্য হলো, হাদিস বিরোধীরা সকল হাদিস বর্জন করেন এবং কট্টরতার আশ্রয় নেন। কিন্তু মুসলমানেরা কেবলমাত্র কোরআন পরিপন্থী হাদিসগুলোকে বর্জন করেন এবং কোন ব্যক্তি বিশেষকে ‘বিশেষ’ গুরুত্ব দিয়ে কোরআনের সমপর্যায়ের করে ফেলেন না। কোরআনের পরিপন্থী নয়, এমন লিখিত বা অলিখিত সকল হাদিসই তারা মেনে চলেন। কেননা মধ্যপন্থা গ্রহন করতেই আল্লাহপাক মুসলিমদের তাগিদ দিয়েছেন।
আল্লাহপাক আমাদেরকে সত্যটা বোঝার তৌফিক দিন।


[তথ্যসুত্র: ইফা প্রকাশিত বুখারী, মুসলিম হাদিসগ্রন্থ, বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিক বিভিন্ন প্রবন্ধ নিবন্ধ অনুসরনে]
আরো জানতে ভিজিট করুন: http://www.anwarali.net

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মীয় বিষয় নিয়ে পড়তে, লিখতে এবং মন্তব্য করতেও ভয় করে।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬

আনোয়ার আলী বলেছেন: আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্যে প্রথমেই আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। ধর্মীয় বিষয়ে ভয় করার কোন কারন নেই। আপনি আপনার অভিমত অবশ্যই জানাবেন। কেবলমাত্র কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য হলেই আমি মুছে ফেলি।

২| ১৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৩

সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর আলোচনা।

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: বিষযটি নিয়ে আরো বিশদ আলোচনার অবকাশ আছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.