![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
… অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা চলছিলো তখন সরকারি বাঙলা কলেজে আমাদের কেন্দ্র হওয়ায় খুব তড়িঘড়ি করেই বাসা থেকে বের হতে হয়, তাই একটু আগে গিয়েই দাঁড়িয়ে থাকি মাঝে মাঝে সেদিন ও আমি আর আমার একমাত্র বিভাগীয় বন্ধু দাঁড়িয়েছিলাম। আমি আর আমার বন্ধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেক ক্ষণ কথা বললাম কিন্তু ও আমার দিকে না তাকিয়েই কথা বলছে দুই হাত দিয়ে মোবাইল ফোন এ কি যেন কাজ করছে খুবি ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলেই আমার মনে হল।
দাঁড়িয়ে থাকার অবসান ঘটলো গেইট খোলা হল ভিতরে প্রবেশ করছি বন্ধুটি তখনো মোবাইলে তার সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। পরিক্ষার টেনশনে আমি তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম না!
চার ঘন্টা পরিক্ষা শেষে যখন হাফ ছেড়ে বাচার উপক্রম আমার বন্ধুটি তখনও মোবাইলে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেই যাচ্ছেন। এবার আমার সন্দেহ হল, কি এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে!
জিজ্ঞেস করলাম,কি করছিস?
_দোস্ত দাড়া অনেক বড় একটা এটাক দিতাছি একটু দাড়া।
আমার রাগ উঠে গেল ওর মোবাইলটা ওর কাছ থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিলাম!
বল্লাম, এটা কি?
ও বল্লো, "দোস্ত তাড়াতাড়ি দে, আমারে মাইরা ফালাইবো।"
আমি বললাম, কে মাইরা ফালাইবো?
ডাক দে দেখি কে মারে!!
বল্লো, আরে বেটা গেইমস খেলতাছি তাড়াতাড়ি দে এটাক দিছি মইরা যামু না দিলে।
আমি সত্যি ই অবাক হয়েছিলাম!
মোবাইলটা ওর হাতে দিয়ে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলাম, কি নাম গেইমসের?
বল্লো, "ক্লাশ অফ ক্ল্যান।"
আমি সত্যি কিছুক্ষণ ভাবতে বাধ্য হয়েছিলাম, কিভাবে একটা গেইম মানুষের জীবনে এতটা প্রভাব ফেলতে পারে!
এইভাবেই আমার "ক্লাশ অফ ক্ল্যান" গেইম টার সাথে পরিচয় হয়।
তার কিছুদিন পরে ছোট খালার বাসায় গেলাম দাওয়াত ছিল, রাতে ওখানেই থেকে গেলাম! খালাতো ভাই ইউসুফ বল্লো, " ভাই তুমি একটু ঐ পাশে ঘুমাবা?"
বললাম, "কেন?"
বল্লো, "ভাই রাতে ওয়ার আছে, ফোনে চার্জ না থাকলে সমস্যা। এই পাসে শুইলে ফোনে চার্জ দিতে পারুম!"
বললাম, "কাল খেলিস কি এমন খেলস এতই কি গুরুত্বপূর্ণ এটা?"
বল্লো, "ভাই আমি লিডার তো, আমাকে থাকতেই হবে।"
জিজ্ঞেস করলাম, "কি খেলস?"
বল্লো, "ক্লাশ অফ ক্ল্যান" তুমি খেলনা?
বললাম, "না"
মনে মনে ভাবতে শুরু করলাম, কি এমন খেলা যা সবাই খেলার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে! গেইমটার প্রতি একটা আকর্ষণ অনুভব করলাম। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলনা।
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি বিছানার পাসে সোফায় বসে ভাগিনা আমার মোবাইল নিয়ে কি যেন করছে।
বলে রাখা ভাল ভাগিনা রাজউকে পড়ে তাকে আপা অনেক চাপে রাখে আর তার কাছে ফোন ও নাই।
জিজ্ঞেস করলাম, "মামা কি কর?"
বল্লো,"মামা এটাক দেই, আম্মু আম্মুর মোবাইল লুকায় রাখছে এই গেইম খেলতে দেয়না তাই তোমার টা নিছি। ইন্সটল ও দিয়ে ফেলছি মামা, তুমি প্লিজ গেইমটা ডিলেট কইরোনা। আমি স্কুল থেকে এসে আবার খেলবো।
কিছুই বল্লাম না। বলার মত কিছুই ছিলনা। ও চলে যাওয়ার সাথেই সাথেই গেইমটা ডিলেট করলাম এবং ফোনে পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলাম।
তারপর ও ভাগিনা পাগলের মত রিকুয়েস্ট করে এতিমের মত আবেদন করে যতবার ই গেইমটা আমার ফোনে ইন্সটল দিছে, ততবার ই ডিলেট করেছি।
ঈদের বেশ কিছুদিন আগেই বাড়িতে আসলাম, পরিক্ষা শেষ অনেকদিন থাকবো এই রকমি একটা প্লান!
গ্রামের এক ছোট ভাই অটো চালায় খুবি নিরহ প্রকৃতির ছেলে, আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,"ভাই কেমন আছেন? অনেকদিন পরে দেখলাম।"
বললাম হ্যা ভাল আছি!
কেমন চলছে তোর সব কিছু?
বল্লো, আছি ভালই ভাই কিন্তু ম্যাজাজটা গরম!
বললাম,"কেন কি হইসে?"
বল্লো,"ভাই একটা জি-মেইল খুইলা দিবেন? ক্লাশ অফ ক্ল্যান এর পাসওয়ার্ড ভুইলা গেছি আরেকটা আইডি খুলুম।"
এখানেই শেষ নয়, একদিন রাস্তায় এক রিক্সা ওয়ালে কে জিজ্ঞেস করলাম মামা যাবেন?
বল্লো,"না মামা এখন আমার একটা এটাক দেওয়া লাগবো ২ মিনিট দাঁড়ান।
এলাকার ভাতিজা ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখে রাত তিনটার সময় এটাক দিবে তাই।
চার, পাচ জন সর্বদা এক সাথে হলে হয় এই গেইম টাই খেলে নয়তো এই নিয়েই কথা বলে। এই নিয়ে মারামারি ও করে, "ওরে লিডার দিছে, আমি কি দোষ করছিলাম!"
এই ধরনের কথাও শুনি।
এক ছোট ভাই জানালো, যেই শিক্ষক এর ক্লাস ভাল লাগেনা সেই ক্লাসে বসে বসে ও নাকি "ক্লাস অফ ক্ল্যান" খেলে।
কোথায় যাচ্ছি আমরা?
যেই সময়টায় আমরা হুমায়ুন আহমেদ, তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম, সেই সময়টায় ওরা কি নিয়ে যুদ্ধ করছে?
কার সাথে যুদ্ধ করছে?
কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে?
এই সময়টাতে আমরা কত ধরনের আঞ্চলিক খেলা ধুলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, বউচি, সাত চারা, বরফ পানি,মাংস চোর, দাড়ি বাধা, চই চই এবং হাডুডু ইত্যাদি কতকিছু নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সব বাদ দিয়ে ওরা "ক্লাস অফ ক্ল্যান" কে বেছে নিয়েছে।
আমাদের খেলা ধুলার নির্দিষ্ট সময় ছিল, সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে হত। ওদের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাত তিনটার সময় ঘুম থেকে উঠে ওরা গেইম খেলে এট্যাক দেয়।
এ থেকে ওরা কি শিক্ষা পাচ্ছে?
"ক্লাশ অফ ক্ল্যান "কি তিন গোয়েন্দা, ফেলুদার থেকেও ওদের বেশি কিছু শেখাতে পারছে। এত কি রহস্য এর ভিতর যা ওদের এভাবে আকৃষ্ট করে রেখেছে! আবদ্ধ করে রেখেছে মায়াজালে বেধে রেখেছে?
আজকাল ওরা সাহিত্য নিয়ে একটি কথাও বলেনা, বর্তমান পরিস্থিতি বা রাজনীতি নিয়েও ওদের মাথা ব্যাথা নেই।
এর পর যদি আরেকটি হুমায়ুন আহমেদ, বা মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্ম এই দেশে না হয়, এর জন্যে দায়ী কে হবে?
সবশেষে যারা ক্ষমতায় আছেন বা যাদের ক্ষমতা আছে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, "ক্লাস অফ ক্ল্যান" কি ডোরেমনের মত বিষাক্ত নয়? আর যদি তাই হয় তাহলে ডোরেমনের মত "ক্লাশ অফ ক্ল্যান" কেন বন্ধ করা হবেনা?
২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৫৯
সামহোয়্যার ব্লগ বলেছেন: সাহায্য সহ্যোগিতা একান্ত কাম্য ভাই!
আমি মোটেই ভাল লেখক নই কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে শিখতে চাই!!!
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৫০
ফুলন দেবী বলেছেন: এখানেই শেষ নয়, একদিন রাস্তায় এক রিক্সা ওয়ালে কে জিজ্ঞেস করলাম মামা যাবেন?
বল্লো,"না মামা এখন আমার একটা এটাক দেওয়া লাগবো ২ মিনিট দাঁড়ান।
যে যুগের যা।
কলিকাল এরে বলে।
২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:০২
সামহোয়্যার ব্লগ বলেছেন: এর থেকে কি বের হতে পারবোনা আমরা?
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:০২
আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: প্রযুক্তির ব্যবহার খারাপ না তবে এতে আসক্ত হওয়াটা খারাপ।
ভাল লিখেছেন।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:০৩
সামহোয়্যার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ! আরিয়ান রাইটিং
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪৮
সুমন কর বলেছেন: শুভ ব্লগিং.............