![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব ২
সময়ঃ ৫ এপ্রিল, ২০২৫
ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে ফেরা।
বাড়ির পুকুরগুলো এখন একেবারেই জীর্ণ! চৈত্রের দাবদাহে পানি শুকিয়ে মৃতপ্রায়। কোন কোন পুকুরের পানি পুরোপুরিই শুকিয়ে গেছে, সেখানে চলছে শেষ মুহূর্তের মাছ ধরা, হাত দিয়ে কালো কর্দমাক্ত মাটিতে ছোট ছোট মাছ খুঁজে বেড়ানোর মাঝে মনে হয় একটা আনন্দ আছে। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেরা এই কাদামাটি ঘাটতে খুবই পছন্দ করে!
অথচ গতবছর সেই যে ফেনীর বন্যা হলো, আমাদের পুকুরগুলো উপচে পড়েও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, জলাবদ্ধতায় সবাই ঘরবন্দী ছিল। বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটুপানি। কেউ কেউ ভেবেছিল মেঘনা নদীর পানিই বুঝি এখানে এসে গেছে! না, তা নয়। চাঁদপুরে অনেক পুকুর তখন ভেসে গিয়েছিল, ভেসে গিয়েছিল প্রজেক্টের মাছ!
এখন এই শুষ্ক মৌসুমে ফরিদগঞ্জ সীমানা পার হয়েই ডাকাতিয়া নদীর উপরে ব্রিজে এলাম, দেখি সারা নদী ভরা কচুরীপানা! তার উপরে অনেক অনেক হালকা বেগুনী রঙের ফুল ফুটে আছে। দেখতে অনেক চমৎকার! কিন্তু এর আরেকটা মানে কিন্তু নদীতে স্রোত নেই! তাই জলা জমে আছে। পানির স্তর অনেক নিচেই। আরো এগোলে আরেকটা শাখা দেখলাম, সেখানে পানি অনেকটা প্রবাহমান! দুঃখজনক হলো, এই খরস্রোতা তেজস্বিনী ডাকাতিয়া নদী ফেনীর কাছে গিয়ে ম্যাপ থেকে হারিয়ে গেছে অবৈধ দখলে।
এরপর রফরফ-এ চড়ে বসলাম। ঢাকায় আসবো, বেশ বড় লঞ্চই। অনেকে আগেই কেবিন বুক করে রেখেছিল, তাই সিঙ্গেল কেবিন পেলাম না। বিজনেস ক্লাসে পেছনের দিকে দুটো সিট পেলাম। তাই সই। ভালই! বরাবরই সোনার তরী, ঈগল, রফরফ, আব-এ-জমজম এ ফার্স্ট ক্লাস, বিজনেস ক্লাস বা কেবিন, যেকোনটাই চলনসই। এছাড়াও আছে মেঘনার তরী, বোগদাদীয়া, এম্ভি হাসান ইমাম, কালকে আরেকটা লঞ্চ দেখলাম পারাবত! এসব লঞ্চে এ জীবনে এ কত চড়েছি! তার কোন ইয়ত্তা নেই! লঞ্চে চড়ে জার্নি করতে আমিও পছন্দ করি! আমার ছেলেরও অনেক পছন্দ! অনেক দৌড়াদৌড়ি, ছুটোছুটি করতে পারে। লঞ্চে চড়ে পাউরুটি, ডিম-এর স্যান্ডউইচ আমার খাওয়া চাই-ই চাই, খিদে পাক আর না পাক! অনেক মজা লাগে এই কম্বিনেশন! বেঞ্চমার্ক খাবার লঞ্চের। ঠিক যেমনটা দূরপাল্লার ট্রেনের কাটলেট। আজকাল অবশ্য ট্রেনে চিকেন ফ্রাই, বার্গার এসবও দেয়।
আর লঞ্চ ঘাটে ভরা বর্ষাকালে তাজা তাজা ইলিশ ভাজা খাওয়া! অনেক মজা!
এই বিলাসিতা পদ্মায় বেশি হয়, বিশেষ করে ফেরীঘাটে! আমাদের মেঘনার ইলিশও কম নয়!
বরাবরের মতো বুড়িগঙ্গার কালো পানি দিনশেষ! আজ আর বড় আক্ষেপ করি না। দেখে দেখে অভ্যস্ত! লঞ্চ থেকে নেমে অটোতে উঠলাম। সিএনজির ড্রাইভাররা জোট বেঁধে ভাড়া বেশি চাচ্ছিল। আমার সন্দেহ হচ্ছিল অটো শহরের মাঝখান দিয়ে যেতে পারবে কিনা! যাক, অটোচালক বেড়ীবাঁধের উপর দিয়ে চলে এলেন। প্রায় ফাঁকাই বলা চলে এই রাস্তা। আমার জন্য অনেকটাই নতুন অভিজ্ঞতা। রাস্তায় জ্যামের ঝক্কি পোহাতে না হলেও আসতে আসতে দেখলাম শুকিয়ে যাওয়া, দখল হওয়া সরু বুড়িগঙ্গা, আবর্জনার স্তুপ কোথাও কোথাও। কামরাঙ্গীচর, সোয়ারী ঘাট, হাজারী বাগ, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, মোহাম্মদপুর বসিলা পার হয়ে অটো এগিয়ে চললো। এতো নিরিবিলি রাস্তা, মাঝে মাঝে ভয়ও লাগছিল! এখানে কাউকে মেরে ফেলে রেখে গেলে কেউ দুইদিনেও খুঁজে পাবে না! বধ্যভূমির পাশে বিশাল কবরস্থান! অটোওয়ালা বললো, এটা নাকি ঢাকার সবচেয়ে বড় কবরস্থান! মনে পড়লো, অনেক শহীদ বুদ্ধিজীবি এখানে শুয়ে আছেন। অটো চলতে চলতে গাবতলীর নয়নয়াভিরাম বাঁক পার হয়ে মিরপুর বধ্যভূমির পাশ দিয়ে মাজার রোডে এসে উঠলো। আরো কিছুক্ষণ পর শাহ আলী মাজার পেরিয়ে চেনা রাস্তা মিরপুর ১ এ এসে উঠলো! এবার হাঁফ ছাড়লাম। কিছুক্ষণ পর বাসায় এসে পৌঁছালাম। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে গোসল করে কিছুটা খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। লঞ্চে এতোটুকু কষ্ট হয়নি, কিন্তু বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে আসার সময়ে বুড়িগঙ্গার এই জীর্ণ দশা মনে ভীষণ রকমের অবসাদ ঢেলে দিলো। সারাটা অঙ্গই যেন ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে গেল! মিরপুরের কাছে এসে অবশ্য তুরাগ নদী দেখেছি। সেখানে পানির অবস্থা ভালই ছিল, টলমলে।
মনে যখন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, সারা দেহই নিথর হয়ে থাকে। সেই নিথর অবস্থা কাটতে আমার সারারাতই লেগে গেল!
...
২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১২
ঊণকৌটী বলেছেন: বাহ্ দারুণ,খুবই ইচ্ছে করে লঞ্চ করে বাংলাদেশের নদী তে ভ্রমণ করার |
৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকায় কেন ফিরলেন?
ঢাকা তো এক নিষ্ঠুর শহর।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১৬
আহমেদ জী এস বলেছেন: নাজনীন১,
নদীর সুখ-দুঃখ নিয়ে যে আক্ষেপের দেখা মিললো এই লেখাতে তাতে তেমনই আক্ষেপ সম্বলিত আমার এই পোস্টটির কথা মনে পড়ে গেলো---“এখানে এক নদী ছিলো”