নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপরাজিত এয়ারবোর্ন

অপরাজিত এয়ারবোর্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহমদ শাহ মাসউদ

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯

আহমদ শাহ মাসউদ ১৯৫৩ সালের ২রা জানুয়ারি আফগানিস্তানের পাঞ্জশিরের জানকালাক এলাকার বাজারাক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা দোস্ত মুহাম্মাদ খান আফগান রয়্যাল আর্মির কর্নেল ছিলেন। আহমদ শাহ মাসউদ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলবিদ্যায় ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি পশতু ছাড়াও ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজিতে ভালো দক্ষ ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন জমিয়তে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ‘সযমান-ই-জোওয়ানান-ই-মুসলিম’ (Organization of Muslim Youth) –এ যুক্ত হন। তখন জমিয়তে ইসলামির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক বুরহান উদ্দিন রাব্বানি। ১৯৭৫ সালের দিকে জমিয়তে ইসলামি ও গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের নেতৃত্বাধীন হিযবে ইসলামির মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এসময় হিযবে ইসলামির কর্মীরা আহমদ শাহ মাসউদকে হত্যা করার চেষ্টা করে। ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব আফগানিস্তান (মার্কসবাদী) এবং সেনাবাহিনীর একটি দল প্রেসিডেন্ট দাউদ খানকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। তারা সমাজতন্ত্রের বিস্তার এবং সেভাবে নীতি নির্ধারণ করতে চাইলে দেশের ইসলামি দলগুলোর সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ সময় সমাজতন্ত্রী সেনাদের হাতে সারাদেশে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ মানুষ নিহত হয়। ১৯৭৯ সালে ২৪টি প্রদেশে সংঘাত শুরু হয়। অর্ধেকের বেশি সৈন্য সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যায়। ৬ই জুলাই আহমদ শাহ মাসউদ পাঞ্জশিরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সম্মুখ যুদ্ধে সফল না হয়ে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। এ বছরেই ২৪শে ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সেনা প্রেরণ করে। সরকারবিরোধীদের তারা নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। আহমদ শাহ মাসউদ সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন এবং ক্রমেই প্রতিরোধ যুদ্ধের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে ওঠেন। ১৯৮৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী পরাজয়বরণ করে আফগানিস্তান ত্যাগ করে। তারপরও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সরকার মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। আহমদ শাহ মাসউদ সরকার বিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখেন। দেশে চরম দুরবস্থা বিরাজমান রেখে ১৯৯২ সালের ১৭ই এপ্রিল এ-সরকার ক্ষমতা ত্যাগ করে। ২৪শে এপ্রিল পেশোয়ারে সমাজতন্ত্রবিরোধী দলগুলোর মধ্যে শান্তি ও ক্ষমতাবণ্টন চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তিতে আহমদ শাহ মাসউদকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। কিন্তু হেকমতিয়ার এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন, পরে অবশ্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২৭শে সেপ্টেম্বর তালেবান ক্ষমতা দখল করে। এ সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জমিয়তে ইসলামির বুরহান উদ্দিন রাব্বানি এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হিযবে ইসলামির গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর প্রেসিডেন্ট হন মোল্লা মুহাম্মদ ওমর এবং প্রধানমন্ত্রী হন মোল্লা বুরহান উদ্দিন। আহমদ শাহ মাসউদ তখনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী। কিন্তু হেকমতিয়ার ও তালেবান নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ অব্যাহত ছিল এবং তিনি তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। যদিও তাঁরা উভয়েই তালেবান সরকারবিরোধী উত্তরাঞ্চলীয় জোটে ছিলেন।
২০০১ সালে ৯ই সেপ্টেম্বর (টুইন টাওয়ার হামলার মাত্র দুদিন আগে) উত্তর আফগানিস্তানের তাখাত প্রদেশে খাজা বাহাউদ্দিন এলাকায় এক আত্মঘাতী হামলায় শেরে পানশির আহমদ শাহ মাসউদ নিহত হন। এই হামলার জন্য আল কায়েদাকে অভিযুক্ত করা হয়। কারণ, ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। এর আগে বহুবার কেজিবি, আইএসাই, আফগান কমিউনিস্ট কেএইচডি, তালেবান ও আল কায়েদা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে; কিন্তু তাদের সেসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাঁর জন্মস্থান বাজারাতেই তাঁকে দাফন করা হয়।
কমিউনিস্ট বিরোধী যুদ্ধে অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য তাঁকে ‘শেরে পাঞ্জশির’ (Lion of Panjshir) বা পাঞ্জশিরের সিংহ নামে ডাকা হয়। তিনিই একমাত্র আফগান নেতা যিনি কখনো আফগানিস্তানের বাইরে থাকেন নি। আহমদ শাহ মাসউদের গ্রুপ রুশ-আফগান যুদ্ধের অনেক লড়াইয়ের ভিডিওচিত্র ধারণ করে, যার কিছু কিছু ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। ২০০১ সালে হামিদ কারজাইয়ের সরকার তাঁকে ‘আফগানিস্তানের জাতীয় বীর’ উপাধিতে ভূষিত করে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও পাঁচ কন্যার জনক। তাঁর স্ত্রী সাদিকা মাসউদ ২০০৫ সালে ফরাসি ভাষায় রচিত তাঁর Pour I’amour de Massoud (মাসউদের ভালবাসার জন্য) গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এতে তিনি প্রিয়তম স্বামীর ব্যক্তিজীবনের বর্ণনা দেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.