নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপরাজিত এয়ারবোর্ন

অপরাজিত এয়ারবোর্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্কুবা ডাইভিং বিদ্যার খুটিনাটি

১৩ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭


সর্দি অথবা ঠাণ্ডা লাগা অবস্থায় পানির নিচে নামা উচিৎ না। কারণ এ অবস্থায় কপালের সাইনাস বন্ধ থাকে। পানির নিচে একজন ডাইভারের উপর প্রচণ্ড চাপ পরে। এমতাবস্থায় সাইনাস ফেটে যেতে পারে। সাইনাস ফেটে রক্ত বের হলে হাঙ্গরের আক্রমণের আশঙ্কা প্রবল, এ জন্য কোন ধরনের ক্ষত নিয়েও পানির নিচে যাওয়া ঠিক না। পানির নিচে কোন কাজে তাড়াহুড়া করাও উচিৎ না। বিশেষত দ্রুত উপরে উঠে আসাটা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। নিচে পানির অধিক চাপকে মোকাবেলা করার জন্য অক্সিজেন ট্যাংক থেকে সমান অনুপাতের প্রেশারাইজড বাতাস শরীরে সরবাহ করা হয়। তাড়াহুড়ো করে উপরে উঠলে হঠাৎ করে পানির চাপ কমে যায়। ফলে শরীরের ভিতর প্রেশারাইজড (ঘনীভূত) বাতাস পাতলা হয়ে দ্রুত আয়তনে বাড়তে থাকে। এই বাতাসের চাপ বেড়ে যাওয়াটা সাংঘাতিক তীব্র হয়। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়েও ফুসফুস খালি করা যায়না। পরিণামে বাতাসের চাপে লাং ফেটে যায়। এই বিপদের নাম ‘এয়ার এমবোলিজম’ বা লাং বার্স্ট।
দ্রুত উপরে উঠার আরও একটা বিপদ আছে। পানির নিচে অক্সিজেন ট্যাংক থেকে যে প্রেশারাইজড বাতাস ফ্রগম্যান নেয়। তার তিন চতুর্থাংশ নাইট্রোজেন। এই নাইট্রোজেন সরাসরি ফুসফুস থেকে রক্তে মেশে। রক্তের সাথে একাকার হতে নাইট্রোজেনের কিছুটা সময় লাগে। দ্রুত উপরে উঠে আসায় নাইট্রোজেনের যে অংশটা রক্তের সাথে মিশতে পারেনা, সেটা পানির চাপ কমে আসায় রক্তের ভিতর বুদবুদ সৃষ্টি করে। ফ্রগম্যান যতই দ্রুত উপরের দিকে উঠতে থাকে, বুদবুদের আয়তন ততই দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে বুদবুদগুলো শরীরের প্রতিটি সংযোগস্থলে আটকে যায়। ফলে ডুবুরির শরীরের সংযোগস্থলগুলো বিকৃত হয়ে যায়। এতে সে তৎক্ষণাৎ মারা যায়না, কিন্তু মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে। এর কোন ডাক্তারি চিকিৎসা নেই, এই বিপদের নাম ‘বেন্ড’। বেন্ডে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে পানির নিচে পূর্বের গভীরতায় নিয়ে যেতে হয়। সেখানে কিছুক্ষন অবস্থান করলে পরিমিত পানির চাপে রক্তের ভিতরের নাইট্রোজেনের বুদবুদগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। তারপর ডুবুরিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠিয়ে আনতে হয়। এয়ার এমবোলিজম বা বেন্ড থেকে বাচতে হলে একজন ডুবুরিকে নির্দিষ্ট একটা গতিতে উপরে উঠতে হবে। তা হচ্ছে, নিঃশ্বাস ছাড়ার সাথে সাথে যে বুদবুদের সৃষ্টি হয়, তা উপরে উঠে আসার গতির সাথে সাথে উপরে উঠে আসতে হবে। প্রতি ত্রিশ ফুট পরপর ডুবুরি স্থির হয়ে কয়েক মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিবে। পানির নিচে ডুবুরিদের বিভিন্ন বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ডুবুরিদের জোড়ায় জোড়ায় যাওয়া উচিৎ।
আরেকটি বিপদের নাম ‘গ্যাস পয়জনিং’। এতে আক্রান্ত ডুবুরির মৃত্যুর সম্ভাবনা শতকরা একশত ভাগ। কার্বন মনো অক্সাইড পয়জনিং, কার্বন ডাই অক্সাইড পয়জনিং, অক্সিজেন পয়জনিং ও নাইট্রোজেন নারকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এর থেকে বাচতে হলে ডুবুরিকে ঘড়ির পেন্ডুলামের মত তাল মিলিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে। একে বলে ‘পেন্ডুলাম ব্রিদিং’।
ফ্রগম্যান (সামরিক ডুবুরি) এর ক্ষেত্রে পানির তলায় বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। আন্ডার ওয়াটার ডেমলেশন এর সময় বিস্ফোরণের ফলে পানির নিচে নির্দিষ্ট একটা এলাকা জুড়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এর আওতায় পরলে শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। প্রতি এক পাউন্ড টি.এন.টি বিস্ফোরনের ক্ষেত্রে ফ্রগম্যানকে এক হাজার গজ নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
‘SKUBA’ এর পূর্ণরূপ হচ্ছে, ‘সেলফ কনটেইন আন্ডার ওয়াটার ব্রিদিং অ্যাপারেটাস’। ‘মলিবডেনাম’ নামক শক্ত ধাতুতে তৈরি সিলিন্ডারের সাথে লাগানো আছে একটি ডিমান্ড ভাল্ব ও হোস পাইপ। প্রেশারাইজড বাতাস সিলিন্ডারে ভরা হয়। প্রয়োজনীয় বাতাস ঢুকলো কিনা সেটা মিটার দিয়ে চেকআপ করতে হয়। একটা সরু তারের মতো রড সিলিন্ডারের মাথার দিক থেকে বের হয়ে তলার দিকে গিয়েছে। ডুবুরি যদি বেখেয়াল হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ টের পায় যে, ট্যাংকের বাতাস শেষ হয়ে গেছে। তখন সরু রডটা নিচের দিকে টান দিলে রিজারভড বাতাস ব্যবহার করতে পারবে। এটার সর্বোচ্চ সময়সীমা পাঁচ মিনিট। সিলিন্ডারের মাথায় একটা ডিমান্ড ভাল্ব লাগানো থাকে। এটার কাজ হল ডুবুরি পানির যত গভীরে যাবে, পানির চাপ বাড়ার সাথে সাথে ভাল্ব থেকে আনুপাতিক হারে প্রেশারাইজড বাতাস সরবাহ করবে। ডুবুরি যত নিচে যাবে, পানির চাপ ততই বাড়তে থাকে, সেই চাপকে মোকাবেলার জন্য ট্যাংক থেকে বাতাস সরবাহ করা হয়। ডিমান্ড ভাল্ব থেকে একটা গোলাকৃতির হোস পাইপ কানের দুই পাশ দিয়ে সামনে এসে মুখের সামনের মাউথপিসে সংযুক্ত হয়েছে। এই পাইপের একটি টিউব দিয়ে ডুবুরি ট্যাংক থেকে বাতাস নেয় ও অপর টিউব দিয়ে ব্যবহৃত বাতাস বুদবুদ আকারে বেরিয়ে যায়। এই ধরনের স্কুবা সেট ট্যাকটিকাল কাজে ব্যবহৃত হয়না। কারণ বেরিয়ে যাওয়া বুদবুদের কারণে শত্রুর কাছে অবস্থান ফাস হয়ে যায়। সেজন্য আন্ডার ওয়াটার মিলিটারি অপারেশনের সময় ক্লোজ সার্কিট স্কুবা সেট ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের স্কুবা সেটে ব্যবহৃত বাতাস হোস পাইপে ছাড়ার পর তা একটি কনটেইনারের ভিতর দিয়ে যায়। সেই কনটেইনারে বাতাস পরিশোধনকারী কেমিক্যাল থাকে। পরিশোধিত বাতাস পুনরায় এয়ার ট্যাংকে ফিরে যায়, ফলে কোন বুদবুদ সৃষ্টি হয়না। এই স্কুবা সেটের ব্যবহার ঠিকমতো জানা না থাকলে ডুবুরি মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হবে। ক্লান্ত বা উত্তেজিত অবস্থায় ডুবুরি যদি ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় তাহলে বাতাস কেমিক্যাল দ্বারা পরিপূর্ণরূপে পরিশোধিত না হয়েই এয়ার ট্যাংকে ফিরে যাবে। কিছুক্ষন এভাবে চলতে থাকলে সিলিন্ডার অপরিশোধিত বাতাসে পূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে ডুবুরি পরিশোধিত বাতাসের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে। এছাড়া অনিয়মিত নিঃশ্বাস গ্রহণের ফলে গ্যাস পয়জনিং এর সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই এসব বিপদ এড়াতে হলে পানির নিচে ডুবুরিকে ক্লান্ত বা উত্তেজিত হওয়া যাবেনা। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বা ‘পেন্ডুলাম ব্রিদিং’ চালাতে হবে।
স্কুবা ডাইভিং এর জন্য রাবারের একটি বিশেষ স্যুট পরতে হয়। পাতলা মজবুত রাবারের তৈরি এই স্যুটের বুকের সামনে একটি রাবারের চোঙ আছে। যার ভিতর দিয়ে ডুবুরিকে শরীর ঢুকাতে হয়। বুকের সামনে রাবারের চোঙ শক্ত করে রাবারের ব্যান্ড দিয়ে বাধতে হয়। স্যুটের ভিতরে সামান্য বাতাস থাকলেও ডুবুরি সহজে পানির নিচে যেতে পারেনা। একটা বিশেষ কৌশলে স্যুটের ভিতর থেকে সামান্যতম বাতাসও বের করে দিতে হয়। সেটা হচ্ছে, স্যুটের থুতনির নিচের অংশটা টেনে ধরে তার ভিতরে মুখ ঢুকিয়ে শ্বাস নিয়ে তা বাহিরে ছাড়তে হবে। এভাবে কয়েকবার করলে সামান্যতম বাতাস বের হয়ে যাবে ও স্যুট পুরোপুরি শরীরের সাথে আটকে যাবে। পানির নিচে যে কোন গভীরতায় যে কোন অবস্থায় বা পজিশনে থাকার জন্য একজন ডুবুরিকে ‘বয়ানসি’ (BOUYANCY) বা ভেসে থাকার ক্ষমতাশূন্য হতে হবে। সেজন্য ডাইভিং এর সময় প্রত্যেক ডুবুরির বয়ানসি টেস্ট করা হয়। যাদের বয়ানসি পজিটিভ অর্থাৎ বুকভরা শ্বাস নেয়া অবস্থায় পানিতে ভাসে, তাদেরকে রাবার স্যুটের উপর কোমরে একটি ওয়েট বেল্ট পরে নিতে হয়। বয়ানসি জিরো না হওয়া পর্যন্ত একটার পর একটা ওয়েট আটকে নিতে হয় বেল্টে। আর বয়ানসি নেগেটিভের ক্ষেত্রে ওয়েট বেল্ট তো দূরের কথা বরং তাকে রাবারের স্যুটের ভিতরে খানিকটা বাতাস ভরে নিতে হবে যতক্ষণ না বয়ানসি জিরো হয়।
এছাড়া স্কুবা ডাইভিং এর অন্যান্ন সামগ্রীগুলো হচ্ছে সুইমিং ফিন, ডেপথ গেজ, কম্পাস ও আন্ডার ওয়াটার ক্যামেরা। ফিনের সাহায্যে পানির নিচে হাত ছাড়াই অনায়াসে পা দ্বারা সাতার কাটা যায়। ডেপথ গেজ দ্বারা পানির নিচে গভীরতা নির্ণয় করা হয়। ডাইভিং মাস্ক রাবার জাতিয় জিনিষের তৈরি। যদি মাস্কের ভিতর পানি ঢুকে দেখতে সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলে তাহলে সামান্য নিঃশ্বাস ব্লো করতে হবে, তখন কাচ পরিষ্কার হয়ে যাবে। জেনারেটর বা এয়ার কমপ্রেশারের সাহায্যে সিলিন্ডারে বাতাস ভরা হয়। এর দ্বারা প্রায় তিন হাজার পি.এস.আই পর্যন্ত প্রেশারাইজড এয়ার সিলিন্ডারে ভরা যায়। ভরা অবস্থায় একটা সিলিন্ডারের ওজন হয় প্রায় আঠারো কেজি। পানির নিচে চাপ প্রতি তেত্রিশ ফুট গভীরতায় ওয়ান অ্যাটমোসফিয়ারিক (সি লেভেলে জা প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৬.৬ কেজি)। ৩৩ ফুট গভীরতায় একজন ডুবুরির উপর পানির চাপের পরিমাণ দাড়ায় প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৩.৩ কেজি। এভাবে প্রতি তেত্রিশ ফুট গভীরতায় একজন ডুবুরির উপর চাপ বৃদ্ধি পায় প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৬.৬ কেজি। এডভান্সড ফ্রগম্যান ট্রেনিংয়ে প্রতি ফ্রগম্যানকে ১৮০ ফুট গভীরতায় যেতে হয়।

সুইমিং ফিন

ডেপথ গেজ

স্কুবা ডাইভিং মাস্ক

স্কুবা ডাইভিং সিলিন্ডার

ডিমান্ড ভাল্ব
ফ্রগম্যান এর পানির চাপ সহ্য করার ক্ষমতাটা কমপ্রেশন টেস্টের মাধ্যমে দেখা হয়। কঠিন পদার্থের তৈরি চেম্বার। শক্ত কাচের তৈরি কয়েকটি ফোকর রয়েছে। যার দ্বারা ভিতরের অবস্থা দেখা যায়। বাহিরে যোগাযোগের জন্য ভিতরে একটা টেলিফোন থাকে। ধারাল কোন জিনিস নিয়ে ভিতরে ঢোকা নিষেধ। সেটা কোন কিছুর সাথে ঘষা লাগলে আগুন ধরে যেতে পারে। কারণ ভিতরে প্রচণ্ড প্রেশারাইজড বাতাস সরবাহ করা হয়। বাতাসের চাপ বাড়ানোর মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পানির গভীরতা বাড়ানো হয়। দেখা গেল একজনের একশত ফুট যাওয়ার পর সাইনাস ও কানের পর্দা ব্যাথা শুরু হল। তখন তাকে সেখানে আরও কিছুক্ষন রাখা হবে, এরপর ধীরে ধীরে নিচে নামানো হবে। এরপর শুরু হবে ডিকম্প্রেশন। এখানে ধীরে ধীরে গভীরতা কমানো হবে। এটা বেশি ঝুকিপূর্ণ। সেই পূর্বের বিপদগুলোর আশংকা রয়েছে। সেখানেও দেখা গেল একশত ফুটে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে তাকে সেখানে কিছুক্ষন রেখে উপরে উঠানো হবে। একশত ফুট তার জন্য ক্রিটিকাল ডেপথ হিসেবে ধর্তব্য হবে।

কমপ্রেশন চেম্বার


আন্ডার ওয়াটার ডাইভিং এর আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে স্নোরকেলিং। যেখানে ডাইভার একটি ১৬ ইঞ্চি লম্বা পাইপের মতো ব্যবহার করে, যার নিচের অংশটি পানির উপরে থাকে এবং উপরের দিকটি সাতারুর মুখে থাকে। এর দ্বারা সে প্রাকৃতিকভাবে শ্বাস গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে সাতারু সুইমিং ফিন ও ফেস মাস্ক ব্যবহার করে।

স্নোরকেলিং গিয়ার
বাংলাদেশে ওশেনিক ডাইভিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেইন্ট মারটিন দ্বীপে স্কুবা ডাইভিং শিখায়। ১৮ হাজার টাকা, ৬ হাজার টাকা বিভিন্ন ধরনের কোর্স আছে তাদের। এছাড়াও কেউ ইচ্ছে করলে শখের বশে ২ হাজার টাকার বিনিময় স্কুবা ডাইভিং এর চেষ্টা করতে পারে। তারা ৬০০ টাকার বিনিময়ে স্নোরকেলিং গিয়ারও ভাড়া প্রদান করে।
সুত্রঃ এ.এইচ রনজু সংকলিত ‘হেল কমান্ডো’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.