![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিগ্রেডিয়ার তারেক মাহমুদ শাহেদ, যিনি বিগ্রেডিয়ার টিএম হিসেবে খ্যাত এবং বর্তমানে টিএম শাহেদ নামে। (৮অক্টোবর ১৯৩৮- ২৯ মে ১৯৮৯)। তিনি ছিলেন একজন পাকিস্তানি সৈন্য। যদিও তার নামের আদ্যক্ষর টিএম। কিন্তু এখানে টিএম দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘টক্কর মার’। এর পিছনের ঘটনাটা হচ্ছে, একবার ট্রেনিং চলাকালীন সময়ে তারা রক ক্লাইম্বিং করছিল। এমতাবস্থায় তার উপরের জনের পায়ের ধাক্কায় একটা বড় পাথর এসে তার মাথায় আঘাত করে নিচে পরে যায়। সবাই ধারণা করে তিনিও হাত ফসকে নিচে পরে যাবেন। কিন্তু দেখা গেল তিনি শক্ত করে পাহাড় আকড়ে দাড়িয়ে আছেন। তার কপাল থেকে রক্ত ঝরছে এবং ব্যাথায় ঘাড় নাড়াতে পারছেননা। তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপর থেকে তার নাম হয়ে যায় টক্কর মার বা টিএম।
তিনি এসএসজির কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন, যখন তিনি ১৯৮৯ সালে গুজরানওয়ালার নিকটে রাহওয়ালিতে একটি প্যারাসুট দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন সেইসমস্ত শীর্ষ অফিসারদের একজন যিনি এসএসজির হয়ে দুটি যুদ্ধ ও বিভিন্ন স্পেশাল অপারেশনে অংশ নিয়েছেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাদীক্ষাঃ
মাহমুদ ৮ই অক্টোবর ১৯৩৮ সালে মুলতানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সরকারি কলেজের প্রফেসর ছিলেন আসগরমল রাওয়ালপিন্ডিতে। ১৯৫৬ সালে রাওয়ালপিন্ডির গর্ডন ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে লাহোর গমন করেন। সেখানের সরকারি কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করেন। তিনি কলেজের ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন যার অধিনায়ক ছিল জাভেদ বুকরি। সেখান থেকে আইনশাস্ত্র পড়ার জন্য পেশওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় গমন করেন। একইসময় পাকিস্তান আর্মিতেও নির্বাচিত হন। তখন তিনি দেশের সেবা করাটাকেই প্রাধান্য দেন এবং ১৯৬০ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে একজন ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৩সালে পিএমএ থেকে মিলিটারি সাইন্স ও ওয়ার স্টাডিজ উভয় বিষয়ে ডাবল বিএসসি সহকারে গ্র্যাজুয়েশন করেন। তিনি কোয়েটা কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজে যোগদান করেন এবং ১৯৬৯সালে স্টাফ কোর্স শেষ করেন।
মিলিটারি ক্যারিয়ারঃ মাহমুদ বেলুচ রেজিমেন্টে ১৯৬০ সালে কমিশন পেয়েছিলেন। পিএমএ থেকে পাসিং আউট হয় ১৯৬৩ সালে। একই বছর তিনি ৫১তম প্যারা ট্রুপার ডিভিশন এয়ারবোর্ণ কর্পসে অভিষিক্ত হন,সেখান থেকে এসএসজির জন্য নির্বাচিত হন। এসএসজির স্পেশাল ট্রেনিং শেষ করার পর তাকে ১ম কমান্ডো ব্যাটালিয়ন(ইয়ালদ্রম) শাহিন কোম্পানিতে পোস্টিং দেয়া হয়।
১৯৬৫ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধঃ ১৯৬৫ সালে এসএসজি কাশ্মীরে কভার্ট অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইতিমধ্যে মাহমুদ ইউএস আর্মি স্পেশাল ফোর্সের সাথে অ্যাডভান্সড কোর্সের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেকে কভার্ট অপারেশনের জন্য বেছে নেন কোর্সের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পরিবর্তে। তিনি সিতারা-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত হন ১৯৬৫ ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারনে। তিনি ১৯৭০ সালে মেজর পদে উন্নীত হন এবং পেশোয়ারে অবস্থান করছিলেন। তাকে পোস্টিং দেয়া হয় প্যারাসুট ট্রেনিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট হিসেবে।
১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ ১৯৭১ সালে মাহমুদ স্বেচ্ছায় পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে যুদ্ধে যোগদান করতে আসেন। তাকে শাহজালাল এয়ারপোর্টে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে একটি অপারেশনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য পাঠানো হয়। এয়ারপোর্টটি মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা খুবই সুরক্ষিত ছিল এবং তারা এটাকে নো ফ্লাই জোন বিবেচনা করছিলো। মাহমুদ শাহিন কোম্পানিকে নেতৃত্ব দেন। ১ম কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এবং তার কোম্পানি সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। ৩৪ ঘণ্টা পর শাহিন কোম্পানি এয়ারপোর্ট ও তার আশেপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সমর্থ হয়। এলাকাটা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। উভয়পক্ষই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং যুদ্ধে এয়ারপোর্ট প্রায় ধংস হয়ে যায়।
১৯৮৪ সিয়াচেন যুদ্ধঃ ১৯৭৯ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৪ সালে বিগ্রেডিয়ার পদে উন্নীত হন। মাহমুদ এখন একজন এক তারকাবিশিষ্ট জেনারেল। তাকে এসএসজির কমান্ড্যান্ট বানানো হয়েছে। ১৯৮৪ সালে মাহমুদ সিয়াচেন যুদ্ধে এসএসজিকে নেতৃত্ব দেন। এসএসজি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি আগ্রাসী ঝটিকা অপারেশন পরিচালনা করে এবং মাহমুদ ১৯৮৪ সালে একটি বিজয় নিশ্চিত করেন।
যাইহোক সে এলাকাটা পুনরায় ভারতীয়দের হাতে চলে যায় তারা একটি সফল মিলিটারি অপারেশন পরিচালনা করার পর। যার নাম ‘অপারেশন মেঘদূত’। এটি পরিচালিত হয় সিয়াচেন হিমবাহকে পুনর্দখল করার জন্য।
অন্যান্য অপারেশনঃ ১৯৮০ দশকের পুরোটাই এসএসজি ও আইএসআই ঘনিষ্ঠভাবে ইউএস স্পেশাল ফোর্স ও স্পেশাল একটিভিটিস ডিভিশনের সাথে সহযোগিতা করছিলো সিক্রেট অপারেশনে। যা অপারেশন সাইক্লোন নামে পরিচিত। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারি মাসে হিল ৩২৩৪ এর যুদ্ধে মাহমুদ কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। যদিও সোভিয়েত এয়ারবোর্ণ ট্রুপস তাদের পজিশন ধরে রাখতে সমর্থ হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ সালে প্যান অ্যাম ফ্লাইট ৭৩ করাচীতে ছিনতাই হয়। মাহমুদ দ্রুত করাচী আসেন সন্ত্রাসীদের হাত থেকে প্লেন মুক্ত করার অপারেশনের প্ল্যানিং করতে। তিনি সাধারণ মানুষের নজরে চলে আসেন যখন তিনি ছিনতাইকৃত প্লেনটি মুক্ত করতে অপারেশন পানাম নামে একটি সফল অপারেশনে নেতৃত্ব দেন। ছিনতাইকারীরা এসএসজি টিমের উপর গুলি করে ও যাত্রীদেরকে হত্যা ও আহত করতে শুরু করে কিন্তু এসএসজি দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ও অনেকগুলো জীবনকে রক্ষা করে। পরে ১৯৮৭-৮৮ সালে তিনি সিন্ধু অঞ্চলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকারঃ মাহমুদ নিহত হন ২৯ মে ১৯৮৯ সালে। যখন তিনি গুজরানওয়ালার রাহওয়ালিতে পাকিস্তান আর্মি এভিয়েশন স্কুলে এসএসজির প্যারাট্রুপারদের একটি ফ্রি-ফলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। জাম্পটি ছিল আর্মি এভিয়েশন এর পাসিং আউট প্যারেডের একটি অংশ। দুর্ঘটনাটা ঘটে আর্মির একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার থেকে পরীক্ষামূলক জাম্প দেয়ার সময়। তখন মাহমুদ তার মেইন এবং রিজার্ভ উভয় প্যারাসুট খুলতে ব্যর্থ হয়। দুর্ঘটনা তদন্তের সময় দেখা গেছে, তার প্রথম প্যারাসুট খুলে নাই। দড়িগুলো বাজেভাবে পেচিয়ে গিয়েছিল। মাহমুদ তার ছোড়া দিয়ে দড়িগুলো কেটে ব্যাকআপ প্যারাসুট খোলার চেষ্টা করেছিলেন। কেন্তু নিজের অজ্ঞাতে মেইন ও ব্যাকআপ উভয় প্যারাসুট কেটে ফেলেন এবং প্রচণ্ড গতিতে মাটিতে আছড়ে পরেন।
©somewhere in net ltd.