নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় চিকিৎসক। এখন কাজ করছি সিলেটে। টুকটাক লিখতে ভাল লাগে বলে লিখি।

আত্মমগ্ন আিম

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। প্রকৃতিগতভাবে একটু নিঃসঙ্গ ধরনের। এমন কি অনেকের মাঝেও একা। পেশায় একজন চিকিৎসক। মানুষের উপকার হয় এমন যেকোন কাজে আমি আছি। আপনারা ডাকলে ইনশাল্লাহ পাশে থাকব।

আত্মমগ্ন আিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেডিসিন ওয়ার্ডের স্মৃতি ও একটি যৌথ কবিতা

২০ শে মে, ২০১১ সকাল ৮:৪৭

আমার ইন্টার্ন লাইফ শুরু হয়েছিল সার্জারী দিয়ে। মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিলাম, কাজ করেছি আনন্দ নিয়ে। কিন্তু মেডিসিন ওয়ার্ডে প্লেসমেন্ট এগিয়ে আসতে দেখে মনটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। বন্ধুরা বলত, মেডিসিনের সবাই নাকি খুব গম্ভীর!! পড়াশুনা ছাড়া নাকি আর কিছু নিয়ে কথা বলে না!!



অবশেষে একদিন সকালে মেডিসিন ওয়ার্ডের ডিউটি শুরু হল। ভাব গতিক বেশ একটা ভাল ঠেকল না...সব সময় সবাই রোগী নিয়ে ব্যাস্ত...আর পড়া...

আস্তে আস্তে আমিও কেমন অভ্যস্ত হয়ে গেলাম...কাজ করে বেশ মজাও পেতে লাগলাম...আদিল ভাই আমার মত অলসকে জোর করে ধরে নিয়ে যেতেন রোগীর কাছে..."আসো আমরা খুঁজে দেখি কিছু আমরা মিস্ করলাম নাকি...পুরো হিস্ট্রি নিয়ে ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন কর.."



কাঠখোট্টা এই কাজ করতে মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগত। পরে অবশ্য বেশ মজা পেতাম। এমনিতেই রোজ ২ বার ওয়ার্ডের সব রোগী দেখা হত...এছাড়া যে যার দায়িত্বে থাকা বেডের রোগী প্রায়ই দেখত।



আ্যাডমিশন ডিউটিগুলো ছিল ভয়ংকর...ক্রমাগত রোগী আসতেই থাকে...মর্নিং,ইভনিং বা নাইট ডিউটি...কোন বিরাম নেই।

মেজাজ খুব খারাপ হত এইজন্য যে, প্রায় অর্ধেক রোগীই থাকত আজাইরা টাইপ...উঠতি বয়সের পোলাপাইন...বাপে বকছে দেইখা ধানের বিষ গিলছে...মেয়ে/ছেলে প্রেমে রাজি হয় নাই দেখে বিষ খাওয়া...জামাই বউ ঝগড়া কইরা ঘুমের ট্যাবলেট গিলছে...পেটে একটু ব্যাথা করচে দেইখা ছুটি লেখায়া নিতে হাসপাতালে ভর্তি হইত...এই টাইপ রোগীগুলা হইত আবার ভি আই পি!! অমুক নেতার তমুক...স্যাররা উপরমহলের চাপ খাইয়া মন মেজাজ খারাপ থাকলে আমরাও চাপের শিকার হতাম।



এই আজাইরা টাইপ রোগীগুলোর যন্ত্রনায় যে রোগীগুলোর আসলেই চিকিৎসা দরকার, তাদের ভাল সার্ভিস দেয়া যেত না। এমনিতেই রোগীর তুলনায় ডক্তারের সংখ্যা অপ্রতুল...একটা রোগী ম্যানেজ করার মধ্যে আরো ৩/৪ জন এসে হাজির...মানুষের আবার তখন ধৈর্য বলতে কিছু নাই!!! সরকারী অফিসে খেয়ে না খেয়ে একটা ফাইলের সইয়ের জন্য দিনের পর দিন ঘুষ দিয়েও বসে থাকলেও তাদের ধৈর্যচ্যুতি হয়না!! আর ডাক্তারের কাছে আসলে শুরু হয় তাড়া!! পাবলিকও মাশাল্লাহ!



এক হাতে কখনো তালি বাজে না।

রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত বিরক্তিকর আচরন মাঝে মাঝে মেজাজ গরম করে দিত। এমনিতেই একেক জনকে অনেক রোগী দেখতে হত,তার মধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন বা পরীক্ষা সময়মত আনত না রোগীর লোকেরা...ভাব যেন এমন,যে হাসপাতালে আইনাই পাবলিক খালাস...রোগীর সব যোগাড় করার দায় আমাদের!

এইরকম আচরনগুলো আমাদের মধ্যে কারো কারো টলারেট করা সম্ভব হত না...যে ডাক্তার আগের দিন সকালে ৮ ঘন্টা ডিউটির পর, ১০ ঘন্টা নাইট ডিউটি করে পরদিন সকালে আরো ৭/৮ ঘন্টা কাজ করে আবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত কাজ করে, তার কাছে রোগীর লোকেরা আজাইরা পেচাল পাররে তার মেজাজ আইস কুল থাকবে??

এইরকম ডিউটি সাইকেল প্রতি ৩ দিন পর পরই থাকত...শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে অ্যাডমিশন থাকলেও এই অবস্থা চলত।



কাজ করতে আমাদের কোনই অভিযোগ নাই। কিন্তু আমাদেরও তো বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। সরকার পর্যাপ্ত ডাক্তার না দিতে পারার দায় পড়তেছে পরোক্ষভাবে আমাদের ওপর...আমাদের অনেকেরও দোষ আছে...থানা হেলথ কমপ্লেক্সে সবাই যেতে চায় না...আমাদের ক্যারিয়ার বিল্ড আপের সময়ই হল এইটা...যখন সরকার এই উঠতি ডাক্তারকে ওখানে পাঠায় সে চিন্তা করতে থাকে কেমনে মেডিকেল কলেজে আসবে। লিংক না থাকলে তো মহাবিপদ!! ২বছরের জন্য গিয়ে আর ট্রান্সফারও হওয়া যায় না।এর মধ্যে যে কোয়াটার দিবে, তা থাকে প্রায় থাকার অযোগ্য...কোথাও কোথাও বেদখল!

আর ডাক্তারদের নিরাপত্তার দিকটা দেখার তো কেউ নাই। যে কয়েকজন ডাক্তার কর্মস্থলে মারা গিয়েছেন দুর্বৃত্তের হাতে, তার কয়টার বিচার হয়েছে??



রাগ হবেন না ভাই,

কথার খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম বলে।



এরকম ব্যাস্ততার মাঝেও আমরা আনন্দ যে করতাম না,তা নয়।

ফেসবুকিং ও চলত...

একবার একটা যৌথ কবিতা লিখেছিলাম আমরা...



"একটা জীবন একটু করে,

কাটছে সময় গভীর ঘোরে।

জীবন যেন শূন্য খাতা,

যাচ্ছে দিন,ভরছে পাতা।

কাটছে জীবন ব্যাস্ততাতে,

কারো কাটে যন্ত্রনাতে।

চলছে জীবন ফুরায় দিন,

স্বপ্ন নিয়ে বা স্বপ্নহীন।" ...... ডা.আরিফ ভাই



"এইত জীবন, এইত খেলা

এমনি সময় বয়ে চলা।

পেছন ফেরার নেইত তাড়া,

চলছে যেন পথহারা।

একদিন সব পথের শেষে,

জীবন যেথায় শূন্যে মেশে-

বসব খুলে হিসেব খাতা,

হয়ত পাব শূন্য পাতা।" .....ডা.ফেরদৌস ভাই



"হঠাৎ আমার ঘুমটা ভাঙ্গে,

জীবন এখন ধরাধামে!

জানজট আর লোডশেডিং এ,

অন্ধ জীবন হাতড়ে মরে।

আবছা আলোয় দরজা খোলা,

'এবার তবে দৌড়ে পালা!'

বাইরে এসে হঠাৎ থামে!

সবাই কেমন যাচ্ছে চলে।

পুতুল নাচে সুতোয় বাঁধা,

মিছেই তবে বেঁচে থাকা?

জীবন বলে,'কেন রে কবি,

কানাগলিতে পথ হারালি?

এটা তো এক রঙ্গশালা,

যে পারে সব,সেই তো ভালা।' " .....ডা.অপু



"বাহবা কবি,তোমায় সালাম,

পড়ে খুবই আরাম পেলাম।

কালকে থেকে ফলো আপে-

একটু যেন কাব্য থাকে।

মন খারাপের ভাবটা চেড়ে,

কাশবে তুমি একটু ঝেড়ে!" .....ডা.ফেরদৌস ভাই



"গুরুর থেকে পেয়ে সেলাম,

লাজে মাটিতে মিশে গেলাম।

কাব্য দিলে ফলো আপে,

হাসবে সবাই মজা পেয়ে!

মনটা আমার পাঁচমিশালী,

খুশী মনেও গোমড়া থাকি।

এত আলো চারিদিকে,

তবু আঁধার আমায় ঘিরে।

বিলিয়ে আলো সবার মাঝে,

শূন্য প্রদীপ আমার হাতে!

একাকী আমার এইত জীবন,

সুখে থেকো তোমরা সুজন।।" .....ডা.অপু







আপনারা সবাই ভাল থাকবেন।

আজ আসি।।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১১ সকাল ৯:০৩

সরলতা বলেছেন: এখনো ডাক্তার হইনি। কিন্তু মেডিকেলের জীবন সত্যি অনেক মজার। আপনার লেখাটা ভালো লাগল ভাইয়া। :)

২০ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৪

আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু।
মেডিকেলের জীবন সত্যিই অনেক মজার,কিন্তু কষ্টও কম না।
আশা করি তুমি আমার মত ফাঁকিবাজী কর না।
ভাল থেকো।

২| ২০ শে মে, ২০১১ সকাল ৯:০৩

জিসান শা ইকরাম বলেছেন:
যৌথ কবিতা ? ভালো ভালো :) ++

২০ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৫

আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২০ শে মে, ২০১১ সকাল ১১:৪২

বড় বিলাই বলেছেন: এই দুঃখ ডাক্তার ছাড়া আর কেউ বুঝবে না রে ভাই।

২০ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮

আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: হ রে ভাই...কিন্তু কি আর করা...তবু আমরা সেবা দেবার চেষ্টা করে যাই।

৪| ২০ শে মে, ২০১১ বিকাল ৪:৩২

ত্রিনিত্রি বলেছেন: বড় বিলাই বলেছেন: এই দুঃখ ডাক্তার ছাড়া আর কেউ বুঝবে না রে ভাই।
দীর্ঘশ্বাস!

৫| ১৬ ই জুন, ২০১১ রাত ৯:০৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: আত্মমগ্ন আমি,
একজন বাস্তববাদীর মতোই আপনার অনুভব । কষ্টের পাশাপাশি আপনাদের সকলের কষ্টকে সইয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা ( যা কবিতা হিসেবে এসেছে) ভালো লাগলো । ইন্টার্ণ জীবনের যে ছবি একেছেন তা স্থান-কাল ভেদে একই রকমের আছে এবং ছিলো্ও । কেবল উনিশ বিশ ।
তবে জানেন নিশ্চয়ই, আপনার পেশাটি কোন্ও পেশার সাথেই তুলনীয় নয় । জীবন মৃত্যুর সাথে যাদের পেশা জড়িত তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী । পান থেকে চূন খসলেই সেখানে অমার্জনীয় অপরাধ বলে গন্য হয় । কারন একজন চিকিৎসকের হাতেই আর একজনের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করে । আর এখানেই ঈশ্বরের পরেই তার স্থান ।
এটুকু মনে রাখলে দেখবেন কোন্ও কষ্টই কষ্ট নয়, কোন্ও অপ্রাপ্তিই অপ্রাপ্তি নয় । (আমার ব্লগে একটু ঢু মেরে আসলে খুশি হবো কারন ওখানে আপনাদের কথা লেখা আছে । )
এই পেশাকে অন্য পেশার সাথে মিলিয়ে দেখবেন না, এমোন বিশ্বাস রাখি ।

২০ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:১৮

আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য...ধন্যবাদ সহমর্মিতার জন্য।
আমাদের পথ খুব মসৃন নয় ভাই...এজন্যেই মাঝে মাঝে খারাপ লাগে।
এখনো অনেক পড়া বাকি!!
আমাদের জীবনটা আর একটু সহজ হতে পারত...সবাই যদি বোঝার চেষ্টা করত আমরাও মানুষ।
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হতেই ৩৫/৩৮ বছর চলে যায়...এরপর জীবন নিয়ে সংগ্রাম...
দোয়া রাখবেন।
ভাল থাকবেন।

৬| ২১ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১:৩৯

সৈয়দ মোহাম্মদ আলী কিবর বলেছেন: ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার লিখাটা ১০০% সত্য। আপনি হয়ত আশ্চয্য হবেন যে, হাসপাতালে রোগীদের সাথে কত অমানবিক ব্যবহার করেন ডাক্তার এবং চিকিৎসকগণ। ইমারজেন্সীতে রোগী এসে কতইনা হয়রানীর স্বিকার হতে হয়। মুমুর্ষ রোগী ডাক্তারকে হাত জোড় করে বললেও এসে দেখেন না। অনেক সময় দেখা যায় রোগী মারাই গেছে কিন্তু ডাক্তার তখনও রোগীর কাছেও আসেননি।

বেডে ডাক্তার বা নার্স রোগীর স্বজনকে একর পর ওষুধের স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছেন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আবার দেখা যায় পাশের বেডের রোগীকে একই ওষুধ হাসপাতাল থেকে ফ্রী দিচ্ছেন।

এছাড়া অপারেশনের সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে ডাক্তার বা নার্স কিছুক্ষণ পর পর রোগীর স্বজনের কাছে এক একটা স্লীপ ধরিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন তাড়াতাড়ি এই ইনজেকশন, সেলাইন বা ওষুধ নিয়ে আসেন (অপারেশনের আগেতো একটা বেগ ভর্তি ইনজেকশন, সেলাইন বা ওষুধ নিয়েই ঢুকেছেন তার পরও)। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এত ইনজেকশন, সেলাইন বা ওষুধ এর প্রয়োজন হয়নি। এগুলা পরে কই যায়।

(আমি এম. এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজের কথা বলছি)

এবার একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরি- আমার চাচা গত এক বছর আগে হঠাৎ বুকের ব্যথা শুরু হয় ফেঞ্চুগঞ্জ হাসপাতালের ডাক্তারগণ হার্ট এটাক বলে তাড়াতাড়ি সিলেট নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাৎক্ষনিক সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়। ইমারজেন্সিতে তারা (ডাক্তার) কাছেই আসছেন না। চাচা ছটফট করছেন। পরে সিভিল সার্জন অফিসে চাকরী করেন এমন একজন পরিচিত ব্যক্তিকে ফোন করে নিয়ে আসলাম হাসপাতালে। তিনি আসার পর ডাক্তারকে নিয়ে এলেন। ডাক্তার দিলেন মেডিসিন ওয়ার্ডে (৪ তলায়) পাঠিয়ে। লিফট তখন চলছে না। কোলে করে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে। সেখানেও ধীর গতিতে ডাক্তার আসলেন দেখলেন অনেক পরে ২য় তলায় সিসিইউতে পাঠালেন্। আবার কোলে করে সেখানে নিয়ে আসা হলো। এখানেও যারা আছেন তাদের কোন অনুভুতি নেই। দেখলাম রোগী আসছে লাশ হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। চাচাকে মিশিন টেশিন লাগানো হলো কিছু ইনজেকশনের এবং সেলাইনের জন্য স্লীপ দিলেন আনা হলো। একটা ইনজেকশনের জন্য পরে স্লীপ দিলেন নার্স বললেন এটা তাড়তাড়ী নিয়ে আসেন নাহলে রোগী বাঁচানো যাবে না। কিন্তু সারা সিলেট ঘুরেও এই ইনজেকশন পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ মাথায় আসলো এই ওয়ার্ডের একজন নার্সের স্বামী আমার কলীগ ছিলেন। তাঁর কাছে ফোন দিলাম এবং ইনজেকশনের নাম বললাম তিনি বললেন এটা ঘুমের এবং ব্যথার ইনজেকশন এটা কোন ফার্মেসীই এরকম স্লীপ নিয়ে গেলে দেবে না। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বললেন (তখন তাঁর ডিউটি ছিলনা) ঐ নার্স ডিউটিরত নার্সকে ফোন দিয়ে বলে দিলেন। পরে ডিউটিরত নার্স তাঁর কাছ খেতে ইনজেকশনটি পুশ করলেন। আমরা ফিরে এসে নার্সকে বললাম, উক্ত ইনজেকশনটি পাইনি। তখন তিনি বললেন আপনারা আপনাদের পরিচয় আগে দিলেননা কেন ? আর রোগীকে আরো আগে কেন এখানে নিয়ে এলেন না। এখন আল্লাহর কাছে বলেন। রাত ১২ টা বাজার একটু আগে চাচা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

২২ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৩:২১

আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার চাচার মৃত্যুতে আমি দুঃখিত, আমার চিকিৎসক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে।
আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন।

এবার পোস্টের বিষয়গুলোতে আসি...

ইমারজেন্সীতে যে সমস্যা আপনি ফেইস করেছেন, তা আসলেই সত্যি!
বাংলাদেশে সরকারী হাসপাতালের ইমারজেন্সী হিসেবে যে বিভাগগুলো আছে, তা আসলেই কোন কাজের না।
এখানে পর্যাপ্ত লোকবল থাকে না।
পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকে না।
তাই ডাক্তাররাও এখানে কেমন যেন গা ছাড়া!!!
যদিও তা আমাদের কাম্য নয়।
আমি ইমারজেন্সীতে ডিউটির সময় দেখেছি, ইন্টার্ণ চিকিৎসক হিসেবে যে রোগীই আসে, আমি অ্যাটেন্ড করতে গেলে, সাথে কর্মরত সিনিয়র অনেকেই বলতেন, যাওয়ার দরকার নাই, ওরা নিজেরাই আসবে।
এরপর রোগীর সিম্পটম শুনে অন্য কিছু সন্দেহ না হলে ডাক্তার তার শোনা ডায়াগনোসিস মত রোগীকে ওয়ার্ডে ভর্তি দেন।
এটা আসলে ঠিক না।
অনেকসময় ওয়ার্ডে পৌছার পর রোগীর সে বিভাগের রোগ না থাকলে আমরা রোগী ট্রান্সফার করতাম!
অনেক অনেক দিন ধরে চলে আসা কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের উদাসীনতা আমাদের ইমার্জেন্সী বিভাগের এ হাল করেছে!!!

ওষুধের স্লিপের ব্যাপারে যা বললেন...
আমি স্বীকার করি আমাদের নার্স-ওয়ার্ড বয়রা কেউই ১০০% সৎ না।এদের অনেকেই এরকম করে থাকতে পারে।
এটা টের পেলে আমরা নিজ উদ্যোগেই নার্সের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করি এবং তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।
আরেকটি ব্যাপার এখানে কাজ করে...হাসপাতালে পেইং বেডের রোগীরা বিনা মূল্যের ওষুধ সাপ্লাই পান না।এটা হাসপাতালের নিয়ম। আর পেইং ব্লকেও প্রচুর রোগী ফ্লোরে থাকে...এরা ফ্রি বেড হিসেবেই কাউন্ট হয়।তাই কাউকে ওষুধ আনতে দেয়া হয়, কাউকে সাপ্লাই দেয়া হয়।
অনেক ক্ষেত্রে সরকার পর্যাপ্ত পরিমান ওষধ সরবরাহ করে না।এতে ওয়ার্ডে রোগীরা ওষুধ না পেলে ডাক্তারদের দোষ দেয়!!!এটা মোটেই ঠিক না।

অপারেশনের ওষুধের কথা বললেন...
ওষুধ কিনে আনার পর দয়া করে আপনি পারলে একবার ডাক্তারের স্লিপ ও রোগীর আনা ওষুধ মিলিয়ে দেখবেন...তাহলেই আপনার কাছে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

একটা অভিগ্গতা বলি...

একবার এক সার্জারী অ্যাডমিশনে একটা পারফুরেশনের রোগী এল...তীব্য পেটে ব্যাথা...ডায়াগনসিসের পর আমরা ইমারজেন্সী অপারেশনের জন্য ওষুধের স্লিপ দিলাম।
রোগীর বাবা ২ঘন্টা পর এক বাক্স ওষুধ নিয়ে এলেন...
আমি কৌতুহলবশত জিগ্গেস করলাম কত টাকা নিয়েছে??
উনি জানালেন...৩৫৬০ টাকা!!এবং ফার্মেসীওয়ালার অনেক প্রশংসা করলেন...কার্ড বের করে দেখালেন যে,লোকটা তাকে ১৫০০টাকা বাকীতেও ওষুধ দিয়েছেন!!!
(আপনি দেবেন এরকম অচেনা কাউকে এত টাকার ওষুধ বাকীতে??)

অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে বাক্স খুললাম...
হিসেব মেলেনা!!!
৮ তেকে ১০ টা বিভিন্ন জাতের স্যালাইন...দুই একটা ইন্জেকশন...পুরোনো সার্জিক্যাল সুতা একটা...আমাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের অর্ধেকও নাই!!!
আর যে ওষুধ উনি এনেছেন, তার মূল্য হিসেব করে দেখলাস ৭৮০ টাকার মত!!!
অথচ উনি বিল দিয়ে এসছেন ২০০০ টাকা!!!
ঘটনা নিশ্চই বুঝতে পারছেন।

মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল...দুপুরে না খেয়ে অপারেশনের জন্য বসে রইলাম...বিকেল হয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে...প্রয়োজনীয় ওষুধই এলো না!!!
অপারেশনও আটকে থাকছে!!!

বড়ড় ভাই এ অবস্থা শুনে বললেন, আপাতত আমাদের পুওর ফান্ডের জিনিস দিয়ে চালিয়ে নে...

পরে আমাদের কাছে থাকা ওষুধ দিয়ে জোরাতালি দিয়ে অপারেশন করা হল...
আপনারা আমাদের এদিকটি কখনোই দেখেন না।
আমাদের এ পুওর ফান্ড কিন্তু গঠিত হয় কিছুটা ফ্রি পাওয়া স্যাম্পল, কিছু ওষুধ কোম্পানীকে বলে চেয়ে জোগাড় করা আর কিছুটা কখনো কখনো রোগীর না লাগা ওষুধ জমিয়ে।
আমরা আসলে রিসোর্স অ্যালোকেশন করি...যার অনেক সামর্থ্য তার বাড়তি ওষুধ দিয়ে যার সামর্থ্য নাই তার চিকিৎসা করি...না হলে এত এত গরীব রোগীর চিকিৎসা ভাই কি করে হত??

বার বার ওষুধ আনতে দেবার কথা বলেছেন...ওই চাচার মত সব ওষুধ একসাথে না আনলে আপনাকে তো বারবার যেতেই হবে।
কখনো কখনো অপারেশনের সময় ইমার্জেন্সী অ্যারাইজ করে...বিভিন্ন ওষুধের প্রয়োজন হয়...তা তাৎক্ষণিক আনতে দিতে হয়...রোগীর পেট কেটে তো আর বসে থাকা যায়না!!

ওই চাচার কথায় আবার আসি...
ওনার ওষুধ সহ আবার ওই ফার্মেসীতে গেলাম...চাচা অভিযোগ করতেই চাচাকে কঠিন ধমক লাগাল লোকটা...আমি এরপর গিয়ে পরিচয় দিয়ে ওষুধের দাম হিসেব করালাম...৭৮০ টাকাই আসল...জিগ্গেস করলাম...এতটাকা বিল হল কেন তাহলে...সে বলে কোথাও হয়ত ভুল হয়ে গেছে...সে তখন ছিলনা...যে ছিল তাকেও সে ডাকতে রাজি হল না!!!

পরে ওষুধ বদলে রোগীর প্রয়োজনীয় সমপরিমান ওষুধ কিনলাম।

শুধু একজন না ভাই...প্রায় সব ফার্মেসীই এরকম করে সিলেট মেডিকেলের সামনে!!!
অভিযোগ করেছিলাম...কিছুই হয়নি!!!


আপনার চাচার জন্য আনতে দেয়া ওষুধটা শুনে মনে হচ্ছে মরফিন...এটা ওষুধ হলেও অ্যাডিক্টরা ড্রাগ হিসেবে ব্যাবহার করে...তাই রাতে এর চাহিদা বড়ে...তখন অসৎ ফার্মেসীওয়ালারা সুযোগ নেয়...আপনি সেই ফাদে পড়েছিলেন।
পরে সিস্টার তার কালেকশনেরটা আপনার রোগীকে দিয়েছিল...সে কোথায় পেয়েছে...সেটাও একটা প্রশ্ন!!!

আসলে ভাই চিকিৎসা সেবা বাংলাদেশে যে কিভাবে চলছে...আল্লাহই ভাল জানেন!!

ভাল থাকবেন।

৭| ২৪ শে আগস্ট, ২০১১ ভোর ৫:০৮

সৈয়দ মোহাম্মদ আলী কিবর বলেছেন: "আত্মমগ্ন আিম" ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার মন্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য। আমার মন্তব্যের জন্য আপনি কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

আপনার জবাব থেকে অনেক কিছু জানলাম। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।

২৬ শে আগস্ট, ২০১১ ভোর ৫:০৩

আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: আপনার কোন কথায় আমি কোন কষ্ট পাইনি ভাই।
ডাক্তার এবং রোগী উভয়েই যদি তাদের অভিগ্গতা শেয়ার না করে এবং ফেয়ার আলোচনায় না আসে, আমাদের পরস্পরের প্রতি যে অভিযোগ তা কোন দিনই সমাধান হবে না।
আপনাকে মনের কথা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে মং্গল দান করুন, আমিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.