নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় চিকিৎসক। এখন কাজ করছি সিলেটে। টুকটাক লিখতে ভাল লাগে বলে লিখি।

আত্মমগ্ন আিম

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। প্রকৃতিগতভাবে একটু নিঃসঙ্গ ধরনের। এমন কি অনেকের মাঝেও একা। পেশায় একজন চিকিৎসক। মানুষের উপকার হয় এমন যেকোন কাজে আমি আছি। আপনারা ডাকলে ইনশাল্লাহ পাশে থাকব।

আত্মমগ্ন আিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের এক ফোড় অসময়ের দশ ফোড়

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০৬

মিসেস রব(ছদ্মনাম) যেদিন বি এস এম এম ইউ এর কেবিনে ভর্তি হলেন, সেদিন আমার ২৪ ঘন্টার ডিউটি চলছে। বিকেল আনুমানিক ৪ টার দিকে নার্স ফোন দিলেন সি ব্লকের ৫ম তলায় নিউরোসার্জারী বিভাগের ডিউটি রুমে। জানালেন একজন জরুরী রোগী ভর্তি হয়েছেন। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখলাম রোগী ভয়ংকর বমি করছে। নাকে একটা ন্যাজোগ্যাস্ট্রিক টিউব দেয়া।
ওনাকে প্রাথমিকভাবে খানিকটা ম্যানেজ করে একটু আরাম দেয়া গেল। কিন্তু কোন কথা বলতে একদম অপারগ তিনি। এতটাই নিস্তেজ।

তার স্বামী অবশেষে মুখ খুললেন। বললেন আগেও একবার উনি(রোগী) ভর্তি ছিলেন ব্রেন টিউমার নিয়ে। একই ইউনিটে, একই স্যারের আন্ডারে। তখন তার সমস্যা ছিল মাথা ব্যথা করত, মাঝে মাঝে বমি ভাব করত। একটা সি টি ব্রেইন করালেন, এম আর আই টাও করালেন।

ধরা পড়ল একটা ব্রেন টিউমার! টিউমারের পজিশন ও সাইজ অপারেশনের যোগ্য বলে চিকিৎসকবৃন্দ অপারেশনের জন্য রোগী রেডী করতে বললেন।

ইতিমধ্যে রোগীর স্বামী পরিচিত অনেকের কাছ থেকে এই ব্রেন টিউমারের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি ভাল কাজ করে বলে খবর নিয়ে আসলেন।

অপারেশনের ঝক্কি-ঝামেলা নিতে পারবেন না রুগি, স্বামীও চাননা! হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সারের ভাল ঔষধ কি আমার ঠিক জানা নেই। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতেই আস্থা তাদের।

ওই হোমিওপ্যাথের ঔষধ চলতে লাগল, রোগীর অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হলনা। যতবার ডাক্তারকে বলেন,ভাল তো হচ্ছেনা! হোমিওপ্যাথ গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, সবে তো শুরু, ক্যান্সার বাবাজি কিছুদিনের মধ্যেই খতম হয়ে যাবে।

এভাবে কেটে যেতে থাকে দিন, রোগীর কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়, খাবার খেতে গেলে নাক দিয়ে চলে আসা শুরু করল।রোগীর সাময়িক কিছুটা ভাল লাগল মাঝে মাঝে ঔষধে, কিন্তু ধীরে ধীরে চলার শক্তিও যেন হারাতে লাগলেন।

প্রায় ১১ মাস পর মিসেস রব সেদিন বিকেলে সেই ব্রেইন টিউমার নিয়ে আবার বি এস এম এম ইউ এর নিউরোসার্জারী বিভাগে এসে ভর্তি হলেন। এম আর আই করা হল, টিউমার বড় হয়ে ব্রেইনের অতি সংবেদনশীল গুরুতর একটা জায়গা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

এখন তারা অপারেশন করাতে চান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে টিউমারের গ্রেডিং ও স্টেজিং অনুযায়ী অপারেশন করাপ্রায় দু:সাধ্য এবং প্রানঘাতীও বলা চলে, অপারেশন টেবিলেই তিনি মারা যেতে পারেন। তাই চিকিৎসকগন অপারেশনের সিদ্ধান্তের পক্ষপাতী নন।

রব সাহেবের মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, এতটাই ভেংগে পড়েছেন তিনি। এখন তিনি বুঝতে পারলেন কত বড় একটা ভুল তিনি করেছেন ১১ মাস আগে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কথা পাত্তা না দিয়ে পাবলিকের কথায় হোমিওপ্যাথি খাইয়ে তিল তিল করে শেষ করে দিয়েছেন নিজের স্ত্রীকে।
অনেকেই বলেছিল, “টাকার লোভে ডাক্তার অপারেশন করতে চায়।” কেউ কেউ বলেছিল, “হোমিওপ্যাথি দিয়ে টিউমার-ক্যান্সার সব ভাল হয়ে যায়। হোমিও খাওয়ান।”

আজ তার এই ভয়ংকর দুর্দিনে এরা কেউ নেই পাশে, যারা এই পরামর্শ দিয়েছিল একদিন তাকে যেচে যেচে।

ছোট ছোট ২ টা বাচ্চা তার, কতই বা হবে বয়েস, ৯ আর ১২ বছর।

আমি লক্ষ্য করলাম চেয়ারম্যান স্যার খুব হতাশ হয়ে বলছেন, “আর তেমন কিছু করার নেই, এভাবে নাকের নল দিয়ে খাওয়াতে হবে, ধরে হাটাতে হবে, সেবা করে যেতে হবে যে ক’দিন উনি এভাবে ভাল থাকেন। অপারেশন করে আর কিছু করা যাবে না, করতে গেলে আমরা উনাকে অপারেশন টেবিলেই হারাতে পারি। তারপরও জ্ঞান ফেরার কোন নিশ্চয়তা নেই।এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের।”

কিছুক্ষণ পর রব সাহেব জানালেন উনারা ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যাবেন। সরকারী বলে এখানে যে খরচে উনি আগেরবারই অপারেশন করাতে পারতেন, তা তিনি ব্যয় করেছেন হোমিওপ্যথি খাইয়ে। তারপরও যদি কিছু করা যেত!

আমি সেদিন ডিসচার্জ পেপারটা লিখে দিয়েছিলাম। মনটা যেমন ভয়ংকর খারাপ হচ্ছিল, তেমনি রাগ হচ্ছিল সেইসব শুভাকাংখী নামধারী খুনী মানুষগুলোর উপর,যারা এই পরিবারটিকে ভুল পথে নিয়ে আজ আর্থিকভাবে ও মানষিকভাবে নি:স্ব করে দিল। হোমিওপ্যাথির মত অপবিজ্ঞান এর ভুয়া কথায় যারা প্রতিদিন মানুষের সর্বনাশ করছে, এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনা, মিডিয়া চুপ, মানুষও চুপ!

তাই যে যাই বলুক না কেন, নিজের বুদ্ধিতে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিন, যার তার কথায় যাচাই না করে আপনার রোগীকে যেকোন ঔষধ বা চিকিৎসা দেবেন না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১০

বাবু বিসি বলেছেন: খুব খারাপ লাগলো লেখাটা পড়ে। ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য..

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫

নতুন বলেছেন: খুবই খারাপ লাগলো। কাছের মানুষের নিশ্চিত মৃত্যুর চিন্তার চেয়ে খারাপ কিছু হয়না।

এই কাহিনি গুলি আরো প্রচারের দরকার। মানুষের সচেতনতা দরকার।
হোমিওপ‌্যাথির বিষয়ে লিখেছিলাম বলে মানুষ এলোপ‌্যাথির দালাল বলেছিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.