![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইন্দোনেশীয়ায় ঘুরার শেষ দিন আমি এমন এক জিনিস দেখেছিলাম যা আমার জীবন বদলে দেয়।
দেশে ফিরে সোজা গ্রামের বাড়ি। তারপর:
--- তুই মাছের চাষ করবি?
-- হ্যাঁ বাবা।
--- মাস্টার্স পাশ করে মাছ চাষ। ফাজলামি হচ্ছে। তোর বড় ভাইদের দেখ সবাই ভালো চাকরি করে।
-- বাবা আমি সারাজীবন তোমার অবাধ্য সন্তান ছিলাম আর থাকবো।
--- আমার চোখের সামনে থেকে যা।
ছোট বেলা থেকেই আমি এমন। কখনো নিয়ম মেনে কাজ করি নাই। জীবনে বহু বার আমি এমন উল্টাপাল্টা কাজ করেছি। কিন্তু নিজের ইচ্ছাগুলো কে মরতে দেই নাই। ফলাফল অনেক সময় ভয়াবহও হয়েছে।
-- কি রে রনি তুই নাকি মাছ চাষ করবি?
--- হ্যাঁ বড় ভাই।
-- কি মাছ চাষ করবি? পাবদা চাষ কর। তোর ভাবি খেতে ভালোবাসে।
-- বড় ভাই মজা করো না তে।
--মজা না। মাছ চাষ করলে করবি। আমার কোন সাহায্য দরকার হলে বলবি।
-- বড় ভাই টাকা রেডি রাইখো অনেক টাকা লাগবো।
-- মাছ চাষে অনেক টাকা কেন লাগবো?
-- লাগবে লাগবে। নতুন ভাবে হবে চাষ।
বড় ভাই আমাকে সারা জীবন সমর্থন করে গেছে। আজও করলো। ভাই ভালো চাকরি করে। ভাবিও অনেক টাকা বেতন পায়। তার উপর বাড়ির জায়গা জমির আয় তো অাছেই। টাকা অনেক কিন্তু তার সন্তান নাই। সে সব সময় আমাকে কাছে রেখেছে। তার কষ্ট আমি বুঝি। দিন শেষে কেমন একা হয়ে যায়।
আমার বাড়ি মফস্বলে। সব সুযোগ সুবিধা আছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ইন্টারনেট সবই আছে। তবুও অনেক বন্ধু যারা আমার সাথে প্রাইমারিতে পড়ত। তারা বেকার। কাজ খোঁজার ইচ্ছাও মনে হয় নাই।
আমার ফিরে আসার খবর শুনে শুভ আসলো বাসায়। শুভ আমার ছোট বেলার বন্ধু। প্রচণ্ড দারিদ্রের কারনে ইন্টার পাশ করে পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। এখন বিকাশের ব্যবসা করে। লোক ভালো। এত অভাবেও কোন দিন স্বভাব নষ্ট হয় নাই।
আমার এই বন্ধুর একটা বিশেষ গুন আছে তা হলো অসম্ভব রকমের শারীরিক পরিশ্রম করতে পারা। জীবনের এক সময় গাছের ব্যবসাও করছে। গাছ কেটে নিজে শ্রমিকদের সাথে তা মাথায় তুলে নিয়া আসতো। এত কষ্টের পরও উন্নতি নাই। কারন বাংলাদেশে শ্রমিকের উন্নতি হয় না।
আমার মাছের প্রজেক্ট এর জন্য শুভকে দরকার। কারন ও আমার চেয়ে বেশি ভালোকরে এই এলাকা ও মানুষ চিনে।
--- কিরে শুনলাম তুই না কি মাছের কাম করবি?
-- হ। কবরো।
-- এতো পড়ে শেষ পর্যন্ত এই কাম কেন?
-- চুপ কর। তোর কি অবস্তা বল?
--- ভালো না বন্ধু। তুই আমাকে কয়দিন পড়া না। একটা পিয়নের চাকরি নিবো। তারপর নিপারে বিয়া করবো।
--- যা বেটা। পড়ালেখা আমি ছেড়ে দিছি। টাকা কামাইতে চাস?
-- হ চাই তো।
---আমার পার্টনার হয়ে যা। ১ বছর ১০ লক্ষ টাকার মালিক হবি।
--- কি কস। তুই পাগল সালা।
-- হ্যাঁ আমি পাগল। টাকা কামাইতে চাইলে কাল সকালে চলে আসিস।
সকালে শুভ আসলো কিন্তু মুখ ভয়ানক কালো। তার তিন বছরের প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। মেয়ের বাবা শুভর সাথে বিয়া দিবো না। পোলা ফকিন্নি। সমাজে কোন দাম নাই।
আমার হাত ধরে শুভ বলে
--- বন্ধু আমি গরিব কিন্তু নিপারে খাওইতে পারবো। আমার যা ইনকাম তা দিয়ে ছোট্ট সংসার চলে যাবে। তুই কিছু কর।
-- আমি কি নিপার বাবার সাথে কথা বলবো?
-- না তুই না। তোর বাবা কে দেখা করতে বল।
-- বাবা তো আমার উপরে রেগে আছে রে।
-- ভাই প্লীজ ( চোখের জল পড়তেছে)
-- কান্না থামা। দেখি চল বাবার কাছে।
হাজার চেষ্টা করেও নিপার বিয়ে ঠেকাইতে পারি নাই। কারন একটাই পোলার টাকা কম সমাজে সম্মান কম।শুভর কান্না আমার ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠলো। টাকা খুব দামি জিনিস। যার মূল্য কোনদিন আমি বুঝি নাই। চাইলে ভাইরা বা বাবা দিয়া দিত। বড়ভাই তো কোনদিন না বলে নাই। শেষ ইন্দোনেশিয়াও তার টাকায় গেছি। যদিও বাবা অনেক হইচই করছে।
বড় ভাই কে ফোন দিলাম। ১৫ লাখ টাকা চাইলাম। বড় ভাই এক শর্তে টাকা দিতে রাজি হলো তা হলো এক পুকুরে যেন পাবদা চাষ করি। বড় ভাই অাজব লোক। পাবদা চাষের শর্তে কেউ এত টাকা দিতে রাজি হবে তা আমার বড় ভাইকে না দেখলে জানতাম না। কিন্তু তার পাবদার আইডিয়াটা হিট ছিলো।
১৫ লাখ টাকা নগদ আমি কোনদিন একবারে দেখিও নাই। কিন্তু আমার পরিকল্পনা মতে কাজ করতে হলে ১৫ লাখ টাকাই লাগবে।
বায়োফ্লক একটা জটিল বিষয়। অভিজ্ঞ হওয়া খুবই দরকারি ছিলো। কারন ঠিক মত ফ্লক তৈরি না হলে সব টাকা জলে। অভিজ্ঞ লোকের ব্যবস্থা আমি করেই রেখেছিলাম।
ইন্দোনেশীয়ায় এক বন্ধু বানাইছি। বায়োফ্লক এক্সপার্ট। বন্ধু আমাকে সাহায্য করবে কিন্তু শর্ত হলো তাকে বিরিয়ানি রান্না করে খাওইতে হবে যখন বাংলাদেশে আসবে।
আমি যখন বায়োফ্লক শুরু করি তখন তা ব্যয়বহুল ছিলো। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নতুন। বায়োফ্লক হলো ছোট টাংকি তে এক সাথে অনেক মাছ চাষ করা। উদাহরন যদি দেই তো সাধারন বাথরুমের চেয়ে একটু বড় জায়গায় ৩-৪ মাসে ৮০০ কেজি মাছ উৎপাদন সম্ভব।
বায়োফ্লকের বড় সমস্যা হলো ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ লাগে। তাই কারেন্ট গেলেই জেনারেটর স্টার্ট করা লাগতো। তাই দুই বন্ধু মিলে ১ম চার মাস সাইটেই অস্থায়ী ঘর বানিয়ে থাকা শুরু করলাম।
অন্য দিকে আমার বাবা সকাল বিকাল আমাকে গালি দিতো।
তার কথা হলো এতো ছোট জায়গায় মাছ মরে যাবে। টাকা সব জলে যাবে।
কিন্তু বড় ভাই মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে আসতো। মহা অন্দদে মাছ দেখতো। মনে হতো নিজের সন্তানদের সাথে খেলা করছে।
আমাকে বলতো টাকা লাগলে বলবি আমি আছি।
১ বছরে ৪ মাস করে ৩ শিফট এ আমাদের সব বিনিয়োগ উঠে আসার পরও আমরা দুইজন ১০ লাখ এর উপরে লাভ করি। ১ম বছর লাভ কম হয় কারন অনেক কিছুতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছিলাম। যেমন পাকা করা স্থায়ী টাংকি।
বড়ভাই একটু মন খারাপ করে কারন প্রথম বছর আমরা পাবদা চাষ করি নাই।
কারন সময় মত পোনা পাই নাই।
কিন্তু ২য় বছর পাবদা চাষে এক রকমের বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলি। পাবদার দামও বেশ ভালো ছিলো।
বিশ্বাস করেন বা না করেন। ২ বছর পর আমি প্রায় ৪০ লাখ টাকার মালিক। বন্ধু শুভও একই।
গ্রামের মানুষ বুঝেই পায় না। এতো ছোট টাংকিতে কেমনে এতো মাছ বাঁচে। ১ম ২ বছর আমরা চাষ পদ্ধতি গোপন রাখি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে বায়োফ্লক জনপ্রিয় হয়ে উঠে তত দিনে আমরা কোটিপতি।
শুভ বাড়ি বানিয়ে নাম রাখছে শুভরপ্রাসাদ। যার ছবি তুলে সে নিপার বাপরে পাঠাইছে।
তারপরও দিন শেষে আমি শুভর মুখে না পাওয়ার বেদনা দেখতে পাই। মানুষ যত যাই করুক সব কিছু মানুষ পায় না। এইটাই নিয়ম। যা মেনে নিতেই হয়।
( কিছুটা বাস্তবতার অবলম্বনে কাল্পনিক কাহিনী)
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৭
কৃষ্ণ কমল দাস বলেছেন: সবাই সব বুঝবে না তা স্বাভাবিক। আবর্জনা উত্তম সার। অধিক ফলনের জন্য সার খুবই দরকারী।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৫
নেওয়াজ আলি বলেছেন: বস্তুনিষ্ঠ লেখা।
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৪
কৃষ্ণ কমল দাস বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: কোনো মানুষই পুরোপুরি মিথ্যা লিখতে পারে না। হয়তো লেখার সাথে কিছুটা আবেগ মিশান। সব কিছু মিলিয়ে লেখাটা ভালো লেগেছে।
আপনার জনু শুভ কামনা।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২৩
কৃষ্ণ কমল দাস বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
মানুষের সময় নষ্ট করার মতো আবর্জনা