![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৌদিয়া লাইন্সের আমার আসন চেপে বসলাম, সম্ভবত প্রথম সারির যে কয়েকজন লোক ভিতরে এসেছে তার মধ্যে আমি একজন। ফ্লাই করতে এখনো ১৫থেকে ২০ মিনিট বাকি আছে। আস্তে আস্তে লোকজন জড়ো হচ্ছে যার যার আসনে।
গত দুইদিন বেশ ভাল ঘুম হয়নি তাই চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি, আমার ছেলেটাকে রেখে এসেছি বলে বেশ খারাপ লাগছে এর আগেও অনেকবার আসা যাওয়ার মাঝে ছিলাম তবে এতটা অনুভব করতে পারেনি। সব মিলিয়ে বেশ বিষন্নতায় ছিলাম।
কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে আমার পাশে এসে বসলো, আমি হালকা চোখ খুলে মেয়েটাকে দেখলাম মেয়েটার চোখে মুখে যেন হতাসা সিল মারা । রোগা একটা মেয়ে তবে যথেষ্ট সুন্দরী , তারপর আমি আবার আগের মত চোখ বন্ধ করে বসে আছি।
মেয়েটার কথার শব্দ শুনে চোখ খুললাম ফোনে কথা বলছে কার সাথে যেন, কিছুক্ষণ কথা বলার পরে বুঝে ফেললাম মেয়েটা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে কিছুটা ঝরগা করার মত করে। খুব কান্নাকাটি করছে সম্ভবত ছেলেটা চাইছে না মেয়েটা বিদেশে যাক, আসলে যে কেউ বলে দিতে পারবে যে মেয়েটা কাজের জন্যই সৌদিতে যাচ্ছে , আমিও তাই ধারণা করেছি।
-দয়া করে আমার জন্য অপেক্ষা করো দুইটা বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে, আর যদি সম্ভব হয় আমি কিছু টাকা জোগাড় করে তোমার জন্য একটা ভিশা পাঠাবো তারপর আমরা একসাথে থাকতে পারবো তুমি আসলে আমরা বিয়ে করে ফেলব। বেতন পেলে তোমার জন্য টাকা পাঠাবো প্রতি মাসে।
খানিক পর আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, ঘুম থেকে যখন উঠেছি প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এয়ার হোস্টেস মেয়েটি খাওয়ার দিয়ে গেল। খাওয়ার একপর্যায়ে আমার পাশের মেয়েটি বললো ভাই আপনি কোথায় থাকেন, আমি বললাম আলবাহা , মেয়েটার চোখে একটা উত্তেজনা দেখলাম ,ও তাই আমিও তো ওখানেই যাচ্ছি একটা হসপিটালের কাজ। রোগীরা যে ক্যাবিনে থাকে সেই ক্যাবিন পরিষ্কার করার কাজ ।
আমি মেয়েটিকে থামিয়ে দিয়ে বললাম।
-ছেলেটা কি আপনার বয়ফ্রেন্ড?
মেয়েটা একটু নড়েচড়ে বসে বলল জি!
-কত বৎসর ধরে সম্পর্ক?
দুই মাস, দুই মাস হলেও আমি অনেক ভালোবাসি। আমরা একই সাথে গার্মেন্টসে কাজ করতাম সেখান থেকেই সম্পর্ক।
-ওকি আপনারা কে আপনার মতই আপনাকে ভালোবাসে,যেমনটা আপনি ওকে?
সেটা জানি না তবে আমি ওকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসি।
_দেখুন ভালোবাসার ক্ষেত্রে একটা মানুষকে দুই মাসের চেনা অনেক কষ্টকর, তারপর আপনি বলছেন টাকা দেবেন ভিসা দেবেন, কিছু মনে করবেন না বিষয়টা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
কি করব বলেন ওরে বলেছি বিয়েটা করে ফেলতে, কিন্তূ ও বলল বিদেশ যখন যাবেই এসেই না-হয় বিয়েটা করি।
কিন্তু জানেন আসার দুই দিন আগেও আমাকে বিয়ে করতে বলেছে তখন আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
-কেন সম্ভব ছিল না কেন?
গ্রাম থেকে আসা যাওয়া তারওপর , তাছাড়া দুই দিনের ভিতরে নানান ধরনের সমস্যা থাকায় সেটা হয়ে ওঠেনি ।
-ছেলেটা যে একটা বাটপার সেটা আপনি জানেন?
মেয়েটা আমার কথা শুনে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো, কি বলছেন যা তা ও অনেক ভালো ছেলে,বাজে কথা বলবেন না
-আমি বললাম ছেলেটা জানত আপনার হাতে দুই দিন সময় আছে এর মাঝে আপনি এখন বিয়ে করতে চাইবেন না, সেজন্যই বিয়ের নামে একটা বাহানা করল। ও আপনার মত বোকা নয় আপনি সৌদীতে আসলেই ওর জন্য ভালো।
মেয়েটা আমার কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছে সেটা আমি জানি কিন্তু আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছি। আপনি যেখানেই যান ভালো থাকুন সুখে থাকুন কেন অযথা ফালতু পিছুটান থেকে কি লাভ।
-কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মেয়েটি বলল আমি কি করে বুঝবো আমার সাথে প্রতারণা করছে আমার টাকার জন্যই এমন করছে।
আমি বললাম ঠিক আছে আমি প্রমাণ করব যদি প্রমাণ করতে না পারি তাহলে আপনাদের জন্যই ভালো ।আর যদি পারি তাহলে আপনি ওকে ভুলে যাবেন অথবা মনে রাখবেন সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।
দীর্ঘ 6 ঘণ্টা পর আমরা জেদ্দা এয়ারপোর্টে এসে নামলাম সেখান থেকে দুই ঘন্টা পর আল বাহা র উদ্দেশ্য রওনা হবে, কিন্তু আমার সফর জেদ্দা পর্যন্তই বড় ভাইয়ের কাছে কয়দিন থাকব।
আমি আমার সিম থেকেই ছেলেটাকে ফোন করলাম, তার আগে যা যা করতে হবে আমি মেয়েটাকে বলে দিলাম।
-হ্যালো
পৌঁছে গেছো
-একটু সমস্যা হইছে
কি সমস্যা
-আমার ভিসা সমস্যা আছে
কি বলছ এখন কি হবে
-আমাকে জেদ্দা থেকে পাঠাই দেবে দেশে এখন আমি কি করব?
কি বলো যা তা সব ঠিকই ছিল।
-আচ্ছা তুমিতো দুইদিন আগে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে, দেশে চলে আসলে না হয় বিয়েটা করে ফেলব। আর আগের গার্মেন্টসের চাকরি টা নিয়ে নেব।
ছেলেটা বলল আমার পক্ষে বিয়ে করা এখন সম্ভব না, বিয়েটা অনেক সময়ের ব্যাপার কোন ছেলেখেলা নয় দুঃখি। মেয়েটা ফোনটা কেটে দিলো ।আমি আমার মতো করে কিছুক্ষণ মেয়েটা কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আমি চলে আসলাম আমার জায়গায়।
তবে মেয়েটার নামটাই জানা হয়নি এখনো, ভালো থাকুক সহজ-সরল মেয়ে গুলো সুন্দর কাটুক তাদের জীবন।
©somewhere in net ltd.