মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহন ও তার হত্যা

০৭ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১:১৭

(প্রথম ব্লগে আপনাদের স্বাগত)



মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সনের ১৯ শে জানুয়ারীতে বগুড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীতে শিক্ষানবিস অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পান। সে বছরই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটা স্টাফ কলেজে কমান্ড কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি জয়দেবপুরস্থ সেকেন্ড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে নিয়োগ পান। উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানীতে যান। ১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে নিয়োগ পান।



২৫ মার্চের কালরাত্রিতে শেখ মুজিবর রহমান যখন হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হন, গ্রেফতার হবার একটু আগে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। শেখ মুজিব গ্রেফতার হবার পূর্বে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর) মেসেজে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। কিন্তু শেখ মুজিবের মেসেজটি তখন সারাদেশের মানুষের কাছে পৌছায়নি। পরে মার্চ ২৭ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মেজর জিয়া ২৭ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।সরাসরি সেনাবাহিনীর থেকে আহব্বান পাওয়ার পর সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে এবং দেশের মানুষ নিশ্চিত হয় যে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে শুরু হয়ে গেছে।



স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান যুদ্ধের পরিক্লপনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭১ এর জুন পর্যন্ত ১ নং সেক্টর কমান্ডার ও তারপর জেড-ফোর্সের প্রধান হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বে জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।



১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহি জনতা বিপ্লবের পর তিনি রাজনীতের কেন্দ্র চলে আসেন। ১৯ শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তিনি প্রধান সামরিক প্রশাষকের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সায়েমকে কৌশলে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ফেলার পর ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে জিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়া দেশে আবার গনতান্ত্রায়নের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় গনতন্র চালুর সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী কালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিল (BNP)



জিয়া একটি নতুন দিকনির্দেশনাতে জাতিকে নেতৃত্বদান করে বহুবিস্তৃত জনপ্রিয় সমর্থন জয় করেছিল। দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার লক্ষে তিনি মুক্ত বাজার অর্থনীতি নীতিমালা প্রতিষ্টিত করেছিলেন। অধিক জনপ্রিয়তা পাবার লক্ষে তিনি ইসলামকে রাজনীতিতে জরিয়ে ফেলেন এবং তা জাতীয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। শেখ মুজিবকে হত্যা করার সহযোগিতা করার দায়েও তাকে অভিযুক্ত করা হয়।



রাজনৈতিক কোন কারনে তিনি ২৯ মে ১৯৮১ সনে তিনি চট্টগ্রাম ভ্রমনে যান। রাতে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন। পরদিন সকালে (৩০ মে ১৯৮১ সনে) সেনা বাহিনী কর্তৃক ছয়জন দেহরক্ষি তাকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে।



জিয়া হত্যার সাথে জরিত প্রধান ছিল মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। তিনি প্রথমে উর্ধতন সেনা কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৭ সনে তাকে চট্টগ্রামে ট্রান্সফার করা হয়।



জিয়ার সরকারে জেনারেল মঞ্জুর একটি সেনা কমান্ডার ব্যাতিত পদ আশা করেছিলেন ঢাকাতে। কিন্তু জেনারেল জিয়া তাকে নিরাশ করেন।



জিয়া হত্যার পর জেনারেল মঞ্জুরের সামরিক শাসন প্রচেষ্টা ব্যার্থ করে লেঃ জেনারেল এরশাদ সেনা বাহিনীর নেতৃত্ব নেন।



পরবর্তিতে জেনারেল জিয়ার বিভিন্ন সহচরদের মুখে জিয়া হত্যার সাথে জেনারেল এরশাদের হাত আছে বলে শুনা যায়।



তাকে শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়। জেনারেল জিয়ার জানাজা বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম ঘটে।



সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ এবং উইকিপেডিয়া

৮ টি +৬/-৪