নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি জিনিসটা একটা নেশার মতোন। এই নেশা যার আছে, সে ভাগ্যবান মানুষদের দলে।

অনূসুয়া

পরিচয় দেবার মতোন কেউ আমি নই। কোনদিন হবে, সেদিন লিখবো কিংবা লিখবো না।

অনূসুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোঝা

১১ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪০

প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আমি হাত নাড়ছি, আর দেখছি ধীরে ধীরে ট্রেনটা সরে যাচ্ছে। কিন্তু নীলা’র কোনো ভাবান্তর নেই। কেমন জানি মূর্তির মতো লাগছে ওকে। আস্তে আস্তে আমার চোখে নীলার অস্তিত্ব ঝাপসা হতে থাকে। আমি জানি, নীলা কাঁদবে। কান্নার সময় নীলার ফুঁপিয়ে ওঠা আমি আগেও লক্ষ্য করেছি। কিন্তু কখনো ওকে সান্তনার স্বরে কিছু বলিনি। যতবারই ও কষ্ট পেয়েছে,আমার কাছে ছুটে এসেছে। ও সবসময় বলতো, "তোমার কাছে আসলে আমার কষ্টটা বড্ড হালকা হয়ে যায় নীহার'দা।"
আমি হাসতাম। নীলা কি ভাবতো জানিনা, কিন্তু আমি দেখতাম ও হাসছে। আমার কাছে আসলে আসলেই কি ওর কষ্ট হালকা হতো?
নীলা অসাধারণ পর্যায়ের কোনো মেয়ে ছিলোনা। তেমন সুন্দরীও ছিল না। কিন্তু আর দশটা মেয়ের মত সে কখনো নিজেকে অসাধারণ প্রমান করতে চাইতো না, পারতপক্ষে অসাধারণ হতেও চাইত না। কিন্তু নীলা'র এই না চাওয়াটাই কি ভীষণভাবে ওকে অন্যদের মধ্যে থেকে আলাদা করে তুলতো, এটা নীলা বুঝতে পারতো না হয়তো।
নীলা হাসলে কখনো ওর গালে টোল পড়ত না। কিন্তু মনে হতো এই হাসির চেয়ে সুন্দরতম হাসি বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই। হতে পারে এটা আমার ভাবনা।
আমি নীলাকে ভালোবাসি। আর নীলা আমাকে ভালোবাসতো। আমি ঠিক জানিনা নীলা এখন আমাকে আর ভালোবাসে কি না। জানলে হয়ত বলতে পারতাম।

গভীর আবেগে নীলা আমাকে যেদিন তার দেয়া এবং আমার পাওয়া জীবনের প্রথম প্রেমপত্র টা লিখেছিলো। খুব অবাক হলেও খুশীই হয়েছিলাম ভিতরে ভিতরে। খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো, আমিও একটা প্রেম ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটা চিঠি ওকে লিখি। কিন্তু না,আমি পারিনি। সংক্ষেপে উত্তর দিয়েছিলাম। আর তাতেই নীলা খুশী। অল্পতেই খুশী হওয়া নীলা কখনো জীবনে বেশী কিছু চায়নি।
আমার বড় ভালোলেগেছিলো যে মেয়ের তিন কুলে আপন বলতে এক জ্যাঠা ছাড়া আর কেউই নেই, সেই মেয়ে আমাকে তার নিজের করে ভাবছে। তার জীবনের সবটুকু ভালোবাসা আমি পাচ্ছি এবং হয়তো আজীবন পাবো ভেবেই আমি শিহরিত হচ্ছিলাম।
আমার আর নীলার এই সুখের সময়ের ছেদ পড়লো এক ঘন বরষার বিকেলে। মাঝারী সাইজের একটা ব্যাগ নিয়ে নীলা হঠাৎ বিনা খবরেই আমার ছোট্ট রুমের মেসে এসে হাজির। ঘটনা জানতে বা বুঝতে আমার কোন বেগ পেতে হয়নি।নীলার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এবং নীলার মতামত ছাড়াই তার জ্যাঠা সমস্ত কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
আমার একমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো, আমি নীলার হাত ধরে বলি, "চল, দুজন মিলে নতুন জীবন শুরু করি।" আমি নিজেও জানতাম নীলা নিজেও এই আশাতেই আমার কাছে ছুটে এসেছে।
কিন্তু আমি নীলাকে ফিরিয়ে দিলাম। কারন আমি বোধহয় বড্ড স্বার্থপর। নিজের ভালোবাসার মানুষকে আমি সুখে রাখতে পারব না ভেবে আমি তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি ভেবে আমি ভিতরে ভিতরে মরতে লাগলাম।
যখন ট্রেনে আমি নীলাকে তুলে দিয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি, নীলা আমার দিকে তাকায়নি পর্যন্ত। হয়ত ও আমাকে খুবই নিকৃষ্টতম মানুষ ভাবছে। আমার হঠাৎ মনে হলো, আমি নীলার হাত ধরে বলি,চলো, দুজনে মিলে বাকী জীবন টা কোনমতে কাটিয়ে দেবো। কিন্তু না, সেটা আমি পারিনি।হয়ত নীলা আমাকে কাপুরুষ ভাবছে। ভাবাটাই স্বাভাবিক।
আমি চোখের সামনে নীলার প্রস্থান দেখেছি। আমি জানি এবারের কান্নায় নীলার কষ্ট হালকা হবে না। আমার চোখ ঝাপসা হয়ে উঠতেই, নীলার গলায় আমার ভিতরের কেউ যেন বলে উঠলো,
"নীহার'দা, এতদিনের কষ্ট হালকা করে আজ জীবনের সবথেকে বড় কষ্টের বোঝা আমায় ধরিয়ে দিলে?"
আমার কেন জানিনা পা নড়ছে না। মনে হচ্ছে নীলা হয়তো দুঃখে থাকবে না জীবনে। কিন্তু সুখের জীবন ও পাবে না। আমি নিজে হাতে ওর সুখ নষ্ট করেছি বলে মনে হতে লাগলো আমার। এমন নির্দয় আমি তো হয়েছি ওর নিজের সুখেরই জন্য। তাহলে আমার এমনটা হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবুও হচ্ছে। বারবার আমার মনে হচ্ছে, আমি অন্যায় করেছি ওর সাথে। এতক্ষণ আমার মনে হচ্ছিলো আমি নীলার সুখের জন্যই নীলাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আসলে আমি নিজের সুখ চেয়েছিলাম হয়তো। আমার নিজের সুখের কারণে আমি আজ নীলাকে চলে যেতে বাধ্য করলাম।
আমার পঁচিশ বছরের জীবনে নীলার আগমন মাত্র তিন বছর আগে থেকে। সবসম্য কোনোকিছু না পাওয়ার কষ্টে, আঘাতের কষ্টে, কিংবা অপমানের কষ্টে আমার কাছে এসেছে। বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছে। আর আমি একটা নির্জীব পদার্থের মত সেটা দেখেই গেছি। নীলা যখন আমায় নীহার’দা বলে ডাকতো, আমি দেখতাম ও শুধু মুখ দিয়ে নয়, যেন চোখ দিয়েও ডাকছে আমায়। আমার সমস্তটা ওকে দিয়ে দিতে ইচ্ছা করতো আমার। কিন্তু আমি কখনো সেটা করিনি। আচ্ছা? আমি কি আগে থেকেই আমার আর নীলার পরিণতি বুঝতে পেরেছিলাম? এজন্যই কি আমি ওকে মন খুলে ভালোবাসতে পারিনি? আমার এখন এসবই কেন মনে হবে তাহলে? এমনটা মনে হওয়ার কোন কারণ তো থাকার কথা না। আর থাকবেও বা কেন? আমি ওকে মনের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলাম সারাজীবন। সেজন্য হয়তো বাস্তবে ওকে পেলাম না। মনের মধ্যে করেই রাখা লাগবে সারাটাজীবন। একজীবনে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর এত নিষ্প্রাণ এই আমার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করেছিলো যে, সে নীলা। আর আজ তাকেই আমি এভাবে নিষ্প্রান করে ছেড়ে দিলাম? কেন করলাম এমনটা আমি? আমি জানিনা। আমি জানতেও চাই না। কিন্তু প্রতিমুহূর্তে আমার মনে কেমন জানি সুক্ষ ব্যথার মতো একটা চাঁপা আর্তনাদ হচ্ছে। আমার বিবেক আমাকে বলছে তুই ভুল করেছিস।
দিন তিনেক পরে আমি খবর পেলাম, যে ট্রেনে নীলা সেদিন চলে গিয়েছিলো, আর আমি একটা কাপুরুষ, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছিলাম, সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে একটা দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নীলা ও ছিলো। আমার মনে হলো আমি নিজেই একটা খুনি। এটা এক্সিডেন্ট না। আমি নিজ হাতে খুন করেছি আমার নীলাকে।
সেই আবারো আমার মধ্যে থেকে নীলা’র কন্ঠে কে যেন বলে উঠলো, “নীহার'দা, এতদিনের কষ্ট হালকা করে আজ জীবনের সবথেকে বড় কষ্টের বোঝা আমায় ধরিয়ে দিলে?”

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৫৬

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: গল্পে ভালোলাগা আর নীলার জন্য দুঃখ! ভাল লিখেছেন!

১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৬

অনূসুয়া বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ :)

২| ১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো গল্প। কষ্ট আছে। আনন্দ আছে।

৩| ১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুকোমল ভাবনার অনন্য লেখা।

৪| ১১ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯

অনূসুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। গল্পটি পড়ার জন্য

৫| ১১ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫০

অনূসুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ১১ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বেশ লিখেছেন ।
শুভ কামনা ।

৭| ১১ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০৭

অনূসুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.