নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি জিনিসটা একটা নেশার মতোন। এই নেশা যার আছে, সে ভাগ্যবান মানুষদের দলে।

অনূসুয়া

পরিচয় দেবার মতোন কেউ আমি নই। কোনদিন হবে, সেদিন লিখবো কিংবা লিখবো না।

অনূসুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিংকর্তব্যবিমুঢ়

১৩ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৩

এই দোকানে যতগুলো বই আছে, তার মধ্যে আমার স্থান তৃতীয় সারির বাম দিক থেকে দু নম্বর স্থানে। এই দোকানের আশেপাশে আরো অনেক অনেক বই রয়েছে। সেগুলো ঠিক কেমন দেখতে তা আমি বলতে পারব না। কিন্তু এই দোকানের সমস্ত বইগুলো আমি বেশ ভালোই দেখতে পারি। অবশ্য দেখতে পারি কথাটা বলা ভুল হবে। আমার তো চোখ নেই, আর চোখ ছাড়া কিভাবে দেখতে হয় তা আমি জানিনা। আমার সেটা জানার কথাও না। প্রতিদিন হরেক রকম মানুষ আসে, কেউ বই কেনে, কেউ একটু নেড়েচেড়ে দেখে সামনের দিকে পা বাড়ায়। আবার কেউ কেউ অনেকগুলো বই একসাথে কিনে নিয়ে যায়। আমি এই দোকানে আছি বেশ অনেকদিন ধরে। অনেকদিন ধরে সেটা কিভাবে বুঝলাম, সেটাও একটা কথা। আমার সোজাসুজি দেয়ালে একটা ক্যালেন্ডার ঝোলানো আছে। ক'দিন পর পরই সেটাতে নতুন নতুন ছবি দেখা যায়। আমি তো আর দিনক্ষণ পড়তে জানিনা, যে কয়মাস পার হলো সেটা বলতে পারব।
কিন্তু এমনও কপাল আমার! আমার জায়গা থেকে একটুও নড়চড় হয়নি আমার। একটা কেমন ঘ্যাড়ঘ্যাড় শব্দ হতেই আমি বুঝি এই সকাল হলো। আবার সেই শব্দটা আরেকবার শুনতেই রাত হয়ে যায়। বই বলে কি আর ঘুম নেই আমার, কি যে ভাবে সবাই। এ এক মস্ত জ্বালা হয়েছে। আশেপাশে কতশত বই বদলি হচ্ছে। আর আমি একই জায়গায় প্রতিদিন থাকছি, আর মাঝে মাঝে আমার গায়ের উপর এসে পড়া ধুলা কেউ একজন পরিষ্কার করে দিচ্ছে।
এইতো ক'দিন আগেই, একটা মেয়ে এসে কিছুক্ষণ বই দেখে হঠাৎ আমার দিকে হাত বাড়ালো। মনে মনে হাপ ছেড়ে বাচলাম। বাবা, এতদিন একই জায়গায় থেকে থেকে কেমন ম্যাজম্যাজে হয়ে গেছে শরীর টা। মেয়েটা হঠাৎই বললো, "এমা! এ তো দাগ হয়ে গেছে। এটা চেঞ্জ করে দিন না।"
ব্যাস, আমি আবারো সেই একই জায়গাতেই এসে পড়লাম। এমন রাগ হলো আমার, কি বলব। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে আমার মধ্যে কি এমন আছে যা আমি দেখতে পাচ্ছি না, আর সবাই দেখতে পাচ্ছে। দেখতে যে পাই না, সেটা ভুল কথা। আমার নিজের দিকে আমি তাকাতে পারি তো। এই তো আমার গায়ে একটা জামা আছে। সবাই যেটাকে বলে প্রচ্ছদ, ওই আর কি, ওটা একটা গাড় নীল রংয়ের। আর ভিতরে বেশ অনেকগুলো সাদা কাগজে ছোট ছোট লেখা রয়েছে। কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছে করে, আমার মধ্যে কি এমন লেখা রয়েছে? কিন্তু চাইলেই যে আর সব জানা যায় না, তা আমার থেকে ভালো আর কে বুঝবে। আজকাল আমার ঠিক পাশেই একটা লাল মলাটের বই এসে জুটেছে। আমার থেকে বয়সে তো ছোটই হবে। কিন্তু তেজ দেখে বাঁচিনা। এলো সবে দুদিন। আর আসতেই আমাকে একটা চাপাচাপি অবস্থার মধ্যে ফেলে দিলো। এমন অবস্থা আগে হয়নি আমার। আমার থেকে এর পৃষ্টা বেশী সেটা দেখেই বোঝাই যাচ্ছে। আস্তে আস্তে ক'দিন যাক, বুঝবে, কত অক্ষরে কত পৃষ্টা। এর মাঝে কয়েকদিন টানা রোদ পড়লো আমার ঠিক উপরেই। এরই মধ্যে এক ভয়ংকর সুন্দর ঘটনা ঘটে গেল। ভয়ংকর সুন্দর কেন বলছি সে বিষয়ে কিছুক্ষণ পরেই বলছি।
আমার সোজাসুজি দেয়ালে, যেখানে একটা ক্যালেন্ডার ছিলো সেটা সরিয়ে আরো একটা বইয়ের তাক যুক্ত করা হলো।
এই পর্যন্ত ব্যাপার টা ঠিক ছিলো। কিন্তু ঠিক আমার সোজাসুজি যে বইটা সেই তাকে রাখলো, সেটার কথা আর কি বলব, যাকে বলে দেখেই প্রেমে পড়ে গেলাম। এখানে হাসির কিছু নেই যে মুচকি হেসে ফেলতে হবে। আচ্ছা, মানুষের যদি প্রেম হতে পারে, বইয়ের হতে পারবে না কেন? কোনো নিয়ম আছে, যে বইয়ের প্রেম হবেনা? মানুষ স্বীকার করুক আর নাই করুক, এটা তো পরিষ্কার যে বই পড়েই মানুষ প্রেমে পড়ে। অনেকে নাকি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ইত্যাদি'র প্রেমে পড়ে। মুলত সেগুলো তো একটা একটা করে অক্ষরের বিন্যাস ঘটিয়ে তারপর সেখান থেকে একটা একটা করে পৃষ্ঠা বানিয়ে একটা পূর্ণাংগ বই তৈরী করে। মানুষ তারপর সেটা পড়ে। সেখান থেকে বই আর পাঠকের মাঝে একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আজকাল অনেক মানুষই তো বলে, আমার প্রিয় বই অমুক, তমুক, এভাবে নাম বলে বিভিন্ন বইয়ের।
যাক সেসব কথা, আমি পরের কথায় আসি। আসলে ব্যাপার টা হয়েছে কি, প্রেমে পড়ার পরই আমার কেন জানি বেশী ভাবনা চিন্তা করা রোগ হয়েছে। আমি সারাক্ষণ সেই আমার সোজাসুজি বইয়ের দিকে তাকেলেই কেমন জানি অন্যজগতে চলে যাই। দোকান টা বন্ধ করলেই আজকাল আমার হাসফাস লাগে। কারন তখন তো আর আলো থাকে না, আর লাইট ও জ্বালিয়ে দিয়ে যায় না কেউ, সুতরাং সকালের ঘ্যারঘ্যাড় আওয়াজের অপেক্ষায় আমার দিন কাটে।
এই প্রথম আমার মনে হতে লাগলো, আমি ছেলে বই। বইয়ের কোনো লিঙ্গ হয়না সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমার মনে হয় আমি একটা ছেলে বই। এই মনে হওয়ার পিছনের একটা কারন ও আছে। আর তা হলো আমার নাম, "কিংকর্তব্যবিমূঢ় " এই নাম কোনো মেয়ের হওয়া সম্ভব না। যতই যা বলি, সত্য তো আর চাপা থাকে না, আমি যে বই টাকে ভালোবাসি, তা হালকা একটা মেয়েলী রংয়ের বই। আর নামটাও মেয়ে মেয়ে। "শেষের আগে"
কি সুন্দর একটা নাম। এজন্যই আমার মনে হয় আমি ছেলে বই।
আমি দিনের সকল সময়টুকু নষ্ট করি আমার শেষের আগে কে দেখে৷ কি মায়াময় প্রচ্ছদখানি। কি সুন্দর করে লেখা উপরে ওর নাম। দেখেই শান্তি। কিন্তু ওর সম্পর্কে আমার আরো জানিতে ইচ্ছা করে। ওর ভিতরে কি লেখা আছে, তা জানার আমার বড্ড ইচ্ছা। কিন্তু আমি চাই আমাদের একটু প্রণয় হোক, ভালোবাসা হোক, তারপর মন খুলে আমি দেখব ওকে। সবটা জানবো ওর।
একটা ছেলে আজ দোকানে এসে নিবি না নিবি আমার "শেষের আগে" কেই হাতে নিলো। আমার মলাট ফেটে কান্না পেতে লাগলো। কিন্তু আশেপাশে সব বই গুলো দেখে ফেলবে এই ভয়ে কাঁদতে পারলাম না। এই প্রথম আমার মনে হতে লাগলো বই হওয়ার চেয়ে যন্ত্রনার কিছু নেই। অকপটে অন্যের কথা বলে যাও সারাজীবন। নিজের কথা শোনার মতন কেউ নেই।
শেষের আগে যতক্ষণ ওই ছেলের হাতে ছিলো, আমি একমনে কামনা করছিলাম যেন ওকে আবার রেখে দেয় যথাস্থানে। ঠিক তাই হলো৷ ছেলেটি বই না কিনেই চলে গেলো। আমি বেশ খুশী হলাম। আরো ক'টা দিন তো ওকে দেখতে পাবো।
আমার পাশের লাল মলাটের বই আমাকে বললো, "বেশী বাড় বেড়ো না।"
কথাটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। আমি দেখলাম আশেপাশের কয়েকটা বই কথাটা শুনতে পেয়েছে। কিন্তু কথাটা কাকে বলেছে সেটা স্পষ্ট নয়। আমি কিছু বলার আগেই ব্যাটা লাল মলাট আমাকে বললো, "ওই কিংকর্তব্যবিমুঢ় শালা, তোকেই বলেছি। শেষের আগে শুধু আমার। ওর দিকে ফের প্রেমের মলাটে দেখবি তো মলাট ছিড়ে রাস্তায় ফেলে দেবো। পুরাতন বইয়ের ঝুলিতে গিয়ে পচে মরবি।"
এই প্রথম আমার শীর্ণ জীর্ণ আকৃতি নিয়ে আমার আফসোস হলো। আমি লাল মলাট কে কিছুই বললাম না। বলেও লাভ হতোনা। ওর জোর আমার থেকে ঢের বেশী।
আচ্ছা, এতকিছু যে আমি শেষের আগে কে নিয়ে ভাবছি, ও ভাবছে কি? নাকি ওর মধ্যে এসব ভাবনা নেই। কি জানি। আমি জানতেও চাই না। এই দোকানে যারা বসে, তারা মাঝে মাঝে এসব নিয়ে গল্প করে। সেদিন এক নামকরা লেখক কথায় কথায় বলেছে, " ভালোবাসতে পারাটাই আসল। সবাই ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসার প্রতিদানে ভালোবাসা পেলো কি না, সেটা মুখ্য বিষয় না।"
সেখান থেকে কথাটা আমার মাথায় গেথে গেছে। আমি নিতান্তই একটা বই। আমাকে কি আর শেষের আগের মতো মায়াময় একটা মেয়ে বই আমাকে ভালোবাসবে? সেটা উচিত ও না। এসব সুন্দর প্রচ্ছন্দের আর সুন্দর লেখার বই তৈরিই হয় একটা সুন্দর ঘরে একটা সুন্দর তাকের সবচেয়ে সামনে থাকার জন্য। ওই যে মানুষেরা কথায় কথায় বলেনা, "ইউ ডিজার্ভ বেটার"
আমারো তেমনই বলতে ইচ্ছে করে শেষের আগে কে।
কিন্তু একথা বলার আগেই একদিন এক পাঞ্জাবি পড়া ছেলে আর লাল শাড়ী পড়া মেয়ে দোকানে হাজির হলো। আর যাবার সময় শেষের আগে কে নিয়ে গেল। আমি চোখের সামনেই দেখলাম, কিন্তু করতে পারলাম না কিছু। আমার মলাট বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমার পাশে থাকা লাল মলাটের বই কষ্ট পেয়েছে কি না জানিনা। কারণ ও দুদিন পর পর ওর পছন্দ পাল্টাতো। আমার মলাট বেয়ে পানি পড়ছে তো পড়ছেই। থামাতে চেয়েও পারছি না। কি হলো কে জানে।
এক পর্যায়ে শুনতে পেলাম দোকানের ছেলেটা বললো, "বাম দিকের সাটার টানেন। অসময়ে বৃষ্টি আইসা বই'ডা ভিজায়া দিলো রে..."

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২২

রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো। লেখায় আকর্ষন করার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না।

২| ১৪ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৩১

নীল আকাশ বলেছেন: শুভ সকাল,
১। আপনি কী একজন লেখিকা? মনে হচ্ছে এক রঙ্গা এক ঘুড়ির স্টলে আপনাকে আমি দেখেছি?
২। লেখার মাঝে বেশ কিছু বানান ভুল হয়েছে, আঞ্চলিক শব্দ এসেছে । এটা কী ইচ্ছে করেই লিখেছেন?
৩। লেখার মাঝে হুট করে প্লট পরিবর্তন করলেন কেন? বেশ তো চলছিল 'কিংকর্তব্যবিমুঢ়' বইয়ের আত্মজীবনী!!!
৫। আপনি নিশ্চয় 'শেষের আগে' বইয়ের এ্যাড দেন নি এটা দিয়ে? সেক্ষেত্রে সেই বইয়ের রিভিউ লিখে পোস্ট দিবেন।
৪। লেখার মাঝে প্যারাগুলিতে গ্যাপ দেবেন। এতে পাঠকে পড়তে সুবিধা হয়।
ধন্যবাদ।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৯

অজ্ঞ বালক বলেছেন: সুন্দর লাগলো পইড়া :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.