নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যক্তিগত ব্লগসাইট : www.akterRhossain.blogspot.com \n \nফেসবুক আইডি : Akter R Hossain \n\n\nফেসবুক আইডি লিংক: www.facebook.com/ARH100

আকতার আর হোসাইন

খেলাধুলো করতে ও বই পড়তে প্রচন্ড ভালবাসি। আর মাঝেমধ্যে শখের বসে লেখার ক্ষুদ্র চেষ্টা করি।

আকতার আর হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই রিভিউ: জোছনা ও জননীর গল্প।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৭

মানুষের যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। হুমায়ুন আহমেদের দৃষ্টিতে একজন লেখক সেই ঋণ শোধ করেন লেখার মাধ্যমে। একজন লেখক হিসেবে দেশমাতার প্রতি হুমায়ুন আহমেদের যে ঋণ তা শোধ করার জন্য তিনি ‘জোছনা ও জননীর গল্প’-কে বেছে নেন।



বইটির ভূমিকাতে লেখক স্বীকার করে নেন যে, "বইয়ে ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। থাকাটা স্বাভাবিক। উপন্যাস যেহেতু আসমানি কিতাব না, এই সব ভুল ভ্রান্তি দূর করার উপায় আছে।"

ভুল ভ্রান্তি তো কিছু অবশ্যই আছে বলে মনে হয়।

কিন্তু গুগলিং করে বইটির কিছু রিভিউ দেখলাম যে, অনেকেই বইটিকে ইতিহাসের দলিল বলে মনে করে থাকেন। যেনতেন কোন ইতিহাস না, স্বাধীনতার ইতিহাস, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কোন যুক্তিতে এটাকে স্বাধীনতার দলিল বলা যেতে পারে তা আমার মাথায় আসছেনা।

অথচ হুমায়ুন আহমেদ নিজেই বলেছেন, জোছনা ও জননীর গল্প কোন ইতিহাসের বই না, এটা একটা উপন্যাস। তবে তিনি ইতিহাসের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছেন।

বইটিতে আরো কিছু দিক তুলে ধরা উচিৎ ছিল বলে আমি মনে করি। যাহোক বইটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এত বড় একটি বইয়ে(৫০৪ পৃঃ) সব ক'টি চরিত্রের পরিপূর্ণতা দেয়া সহজসাধ্য কোন বিষয় ছিল না। তাই চরিত্রের পূর্ণতা দেয়ার দিকটি আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে।
...........

এবার বইয়ের গল্পে ফেরা যাক। গল্পের যে মুহুর্তে এসে চোখের পানি ঝরঝর করে গড়িয়ে পড়ে আমার গাল দুটো ভিজিয়ে দিল সেই মুহুর্তটির কথা এখন বলতে যাচ্ছি।

ইরতাজউদ্দিন নীলগঞ্জ মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ান। তার মনে দেশের প্রতি ভালবাসা জন্মালে তিনি একপর্যায়ে বিদ্রোহ করে বলেন-

‘যা বলতেছি চিন্তাভাবনা করে বলতেছি। এখন থেকে আমি জুম্মার নামাজ পড়ব না। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই।’

জুম্মার নামাজ না পড়ানোর কারণে ক্যাপ্টেন বাসেত তাকে বলেন-

'আমি খবর পেয়েছি আপনি জুম্মার নামজ পড়াবেন না।কারণ আমি জুম্মার নামাজ পড়তে যাই। আমার মতো খারাপ মানুষকে পেছনে নিয়ে নামাজ হয় না। এই জাতীয় বক্তৃতাও নাকি দিয়েছেন।'

ইরতাজউদ্দিন শান্ত গলায় ব্যাখ্যা করলেন কেন তিনি জুম্মার নামাজ পড়াচ্ছেন না। ব্যাখায় শুনে ক্যাপ্টেন বাসেতে মুখ কঠিন হয়ে গেল।

- আপনি বলতে চাচ্ছেন পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ বলতে চাচ্ছেন পূর্ব পাকিস্তান পরাধীন?
- জ্বি জনাব।

নামাজ না পড়ানোয় তাকে কি শাস্তি দেয়া হল দেখুন

"নীলগঞ্জের অতি শ্রদ্ধেয় অতি সম্মানিত মানুষ মাওলানা ইরতাজউদ্দিনকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় প্রদক্ষিণ করা হল। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হল নীলগঞ্জ স্কুলে। সেখান থেকে নীলগঞ্জ বাজারে। বাজারে ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটল। দরজির দোকানের এক দরজি একটা চাদর নিয়ে ছুটে এসে ইরতাজউদ্দিনকে ঢেকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকল।
ইরতাজউদ্দিন এবং দরজিকে মাগরেবের নামাজের পরে সোহাগি নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করা হল। মৃত্যুর আগে ইরতাজউদ্দিন পরম নির্ভরতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে উঁচু গলায় শেষ প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহপাক যে মানুষটা জিবনের মায়া তুচ্চ করে আমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল তুমি তার প্রতি দয়া কর। তুমি তার প্রতি তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও।" (৩৮৪ পৃঃ)

(নেত্রকোনা অঞ্চলের এই সত্য ঘটনাটির সাক্ষী যে দরজি সে গুলি খাওয়ার পরেও প্রানে বেঁচে যায়। হুমায়ুন আহমেদ তার কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেন।)
মনসুর সাহেব তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ইরতাজ উদ্দিনকে মিলিটারিরা গতকাল সন্ধ্যায় নদীর গুলি করে মেরছে। তাঁরা এ অঞ্চলে কারফিউ দিয়ে রেখেছে। মৃত দেহ পড়ে আছে নদীর পাড়ে। ভয়ে কেউ সেখানে যাচ্ছে না। আমি ওনার ডেডবডি নিয়ে আসতে চাই। নিয়মমতো কবর দিতে চাই।
আসিয়া বললেন আপনি একা এই কাজ করতে পারবেন?
-কেন পারব না? পারতে হবে।
-আপনি যদি বলেন, তাহলে আমি যাব আপনার সাথে।
মনসুর সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি যেতে চাও?
-জ্বি যেতে চাই।মিলিটারিরা যদি আপনাকে গুলি করে মারে তাহলে আপনার সঙ্গে আমিও মরতে চাই। আমি একা বেঁচে থেকে কি করব?



‘নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, হেডমাষ্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পরা একজন মহিলা প্রবল বর্ষনের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না।
হটাৎ একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সে আসিয়া বেগমের কাছে এসে উর্দুতে বলল, মাতাজি আপনি সরুন, আমি ধরছি। মনসুর সাহেব বললেন, আপনার নাম?
আগন্তুক বলল, আমি বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সেপাই। আমার নাম আসলাম খাঁ।’

(ইরতাজউদ্দিনের নামজে জানাজা হয় দেশ স্বাধীন হবার পর। ঐ দিন তাঁর কবর হলেও জানাজা হয়নি। জানাজার জন্যে মাওলানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।)

..............

জোছনা ও জননীর গল্পে এমন আরো কিছু দৃশ্য আছে যা আপনার পাথর হৃদয়কেও মোমের মতো গলিয়ে দিবে, নয়নে অশ্রু ঝরাবে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ভাল লাগলো

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদের সাথে ভালবাসা নিবেন ভাই।।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৪

পথিক সরদার বলেছেন: বাহ বাহ, চালিয়ে যান আপনার রিভিউ অভিযান

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩০

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: দোয়া রাখবেন ভাই।।

আর ভালবাসা দিলাম ধন্যবাদের সাথে

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২১

দুংখবিলাসী বলেছেন: হুমায়ূন আহমদ স্যার এর অনেক বই- ই আমার পড়া উনি আমার খুব প্রিয় একজিন লেখক , কিন্তু এই বইটি মনে হয় বাদ পরে গিয়েছিল। ভাল লাগল আপনার রিভিউ পড়ে যদিও মন কিছুটা ভারাক্রান্ত হল। ধন্যবাদ লেখকে ।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৯

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: জোছনা ও জননীর গল্প এমন একটি উপন্যাস যেটা পড়ার পর অনেক্ষণ পর্যন্ত এর রেশ থেকে যায়। সময় পেলে পড়ে নিবেন।

ধন্যবাদ আপনাকে। ভালবাসা অহর্নিশ....

৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮

দুংখবিলাসী বলেছেন: ঢাকা এসেই বইটি সংগ্রহ করব। আমি কিছু ছবি শেয়ার করেছি, সময় পেলে দেখবেন......... :``>>


৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:১২

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: অবশ্যই...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.