নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যক্তিগত ব্লগসাইট : www.akterRhossain.blogspot.com \n \nফেসবুক আইডি : Akter R Hossain \n\n\nফেসবুক আইডি লিংক: www.facebook.com/ARH100

আকতার আর হোসাইন

খেলাধুলো করতে ও বই পড়তে প্রচন্ড ভালবাসি। আর মাঝেমধ্যে শখের বসে লেখার ক্ষুদ্র চেষ্টা করি।

আকতার আর হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কাওসার চৌধুরী ও তার গল্পগুচ্ছ \'পুতুলনাচ\' (বই রিভিউ)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১২



লেখকের প্রথম বই--- বায়স্কোপ: যে বইয়ে কাওসার চৌধুরী এঁকেছেন জীবনের বায়স্কোপ

আর সবার মতন একজন লেখকেরও রয়েছে স্বাধীনতা। যার যে বিষয়ে ইচ্ছে সে সেই বিষয়েই লিখবে। জোড় করে কোন লেখকের উপর লেখার বিষয়বস্তুর চাপিয়ে দেয়া যায় না।

তবে লেখকের কি সমাজের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই?
আছে। অনেক... অনেক...

আমার মতে, একজন আদর্শ লেখক সব সময় সমাজের কুসংস্কার, অসঙ্গতি তুলে ধরেন৷ পাঠকের কাছে বার্তা পৌছানোর চেষ্টা করেন সমাজের যত ঝংকার তা দূরীকরণের জন্য লিখেন, লিখেন দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। একজন আদর্শ লেখক একটা সুস্থ সুন্দর জাতি বিনির্মাণের চেষ্টায় রত থাকেন সব সময়।

আমার মনে হয়, সামহ্যোয়ার ইন ব্লগের ব্লগার ও লেখক কাওসার চৌধুরী ঠিক এই জায়গাটেই আর সবার থেকে আলাদা।

এবার পুতুলনাচের আলোচনায় ফেরা যাক।

পুতুলনাচ গল্পটি একটি প্রেমের গল্প৷ মেয়েরা বোধ হয় ছেলেদের রঙ ভাল বুঝে৷ তাইতো মেয়েরা সহজ সরল ছেলেদের আবেগ ও ভালবাসাকে নিয়ে খেলে। আরমান তার প্রিয়তমাকে বিভিন্ন দিবসে টিওশনের টাকা থেকে দামি দামি উপহার দেয়। বিনিময়ে সহজ সরল আরমার হয়েছে শোষিত। পেয়েছে হৃদয়ভাঙা দুঃখ। একদিন, ভালোবাসা দিবসে আরমানের সামনে তার প্রেমিকা তারিনের মুখোশ উন্মোচিত হয়। তারিন একই সাথে আরমান ও অন্য আরেকজনের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যায়। এই ধাক্কায় আরমানের অবস্থাটা আমরা গল্পে গিয়ে দেখি,

"বিক্ষিপ্ত জীবনের হিসাব মেলাতে মেলাতে কখন যে রাস্তা পার হয়ে উল্টা দিকের ফুটপাতের বইয়ের দোকানের সামনে চলে এসেছে খেয়াল নেই আরমানের।"

পুতুলনাচ গল্পটা প্রেমের হলেও লেখক এতে গুণে ধরা সমাজের নগ্ন চিত্র চিত্রিত করেছেন। এই দেশের মানুষ ভ্যালেনটাইন ডে, নিউ ইয়ার, ক্রিসমাস ডে, ইস্টার হলই ডেতেও অনেক এক্সাইটেড থাকে কিন্তু একুশে ফেব্রিয়ার, ষোলই ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি দিবসগুলোতে মনের টান নাই। এই গল্পে লেখক আরো তুলে ধরেন বর্তমান পাঠকসমাজের অরুচির দিকটি। যারা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, বাংলা সাহিত্য যাদের বাদ দিয়ে হয় না এমন লেখকদের লেখার প্রতি বরতমানের অধিকাংশ পাঠকদেরই অনীহা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর 'পুতুলনাচের ইতিকথা' বইটি দিয়ে লেখক বিষয়টিকে এভাবে ফুটিয়ে তুলন-

ধুলোবালির আস্তরণ থেকে খুঁজে বের করে ঝেড়ে বইটি হাতে দিতে গিয়ে দোকানির সহজ স্বীকারোক্তি 'এসব বই এখন কেউ পড়ে না, মামা।চাহিদাও নেই। কয়েকবছর আগে নীলক্ষেতের ফুটপাত থেকে কিনেছিলাম, এখনো আছে। মলাটের সাদা রঙটি এখন বাদামি হয়ে গেছে। কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। বইটি আপনাকে ৭০% ছাড়ে দিব। সর্বমোট ষাট টাকা দিলেই চলবে।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু শিশুরা বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য বাসস্থানসহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগ, সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে উপজাতি শিশুরা। মগজধোলাই গল্পে লেখক তুলে ধরেছেন এই বিষয়টি। তাছাড়া গল্পে এসেছে একাত্তরের সময় লুটপাট করা ভুয়া মুক্তিযুদ্ধাদের সুখী জীবন ও প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধাদের জীবনের অশ্রুসিক্ত অধ্যায়।

তপন সরকার নরওয়ে থেকে চাইল্ড সাইকোলজির উপর পিএইচডি করলে মাত্রই দু'বছর হল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে আবারো পড়াশোনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান। তারমতে তিনি খুনিদের সাইকোলজি বাদ দিয়ে খুন হওয়া মানুষদের সাইকোলজি নিয়ে খামাখা পড়াশোনা করেছে। এবার তিনি পড়তে চান পূর্ণবয়স্ক মানুষদের সাইকোলজির উপর। কিন্ত কেন? জানতে হলে পড়তে হবে মগজধোলাই গল্পটি।

পারফিউম গল্পটাতে সিনেমা জগতের মডেলদের কালো জগতের ইঙ্গিত রয়েছে। যারা পর্দার আড়ালে ঘৃণ্য কাজ করে কাড়ি কাড়ি টাকা কমায় তারাই আবার টেলিভিশনের পর্দায় বক্তব্য রাখে সমাজ সচেতনতার বিষয়ে, তার লাইফস্টাইল নিয়ে। পরীক্ষায় এ+ পেলো কি পেলোনা এদেশে মেধার পরিমাপক হিসেবে এটাই বিবেচিত। বাচ্চাদের উপর এ+ পেতে বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে তাঁদের ক্রিয়েটিভ মাইন্ড ধ্বংস করা হয়। গল্প বলার ঢঙে লেখক আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এই দুর্বল দিকটিও ফুটিয়ে তুলেছেন পারফিউম গল্পে।

শহরচানের চানরাইত একটা রম্য গল্প। তবে আমার হাসি আসেনি তেমন৷ আমি গুরুগম্ভীর টাইপ মানুষ এই জন্যে হয়তো। আবার এমনও হতে পারে রম্য গল্পে লেখকের হাত এখনো পাকা হয়ে ওঠেনি। এমন যদি হয় তাহলে এইটা লেখকের ব্যর্থতা।

আমরা বাংলাদেশিরা ড. ইউনুসদের নাম শুনেই নাক সিটকায়। সুদখোর, ঘুষখোর বলে রাগ ঝাড়ি, ঘৃণা ছড়ায়৷ অথচ যারা দুর্নীতির করাল ঘ্রাসে মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, দেশকে ডুবিয়ে দিচ্ছে তারাই আমাদের সমাজের নেতৃত্বের আসনটি দখল করে আছে। 'তুলসী বনের বাঘ' গল্পটি এক কথায় অনবদ্য। গল্পটা নতুনভাবে ভাবিয়েছে আমায়।

'পুতুলনাচ' গল্পগ্রন্থের আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প 'কাঁচের সিন্ধুক' । এই গল্প বলার ধরণাটা বেশ ভালো লেগেছে। গল্পটা এক বাবার আদুরী মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বলা হয়েছে। কাঁচের সিন্ধুক পড়ার সময় খুবই ব্যথিত হয়েছি। চোখের কোণে জল জমেছে। জল জমতে পারে আপনাদেরও।



"আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই ।
তাই,যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে
সত্য করে বলবে তো?'
আমি বললেম ‘বলব’
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোলো,
আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে-
কিছুই কি নেই বাকি?'
একটুকু রইলেম চুপ করে;
তারপর বললেম,
রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।"


'ঘুণে পোকার গুঞ্জন' গল্পটিতে যখন এই রবীন্দ্র সঙ্গীতটি পড়বেন তখন বেদনায় ছেয়ে যাবে হৃদয়। আবেগ্লাপুত না হয়ে পারবেন না। কৃষ্ণচূড়া গল্পটিও বেদনাবহ যা অশ্রুসিক্ত করতে পারে।

তাছাড়া এই বইতে রয়েছে তেলাপোকার বৃষ্টিবিলাস, কাঁটাতার, সুশীল ফরমান আলী
তিনশূন্যে একশো
র মতো দারুণ গল্প।

কয়েকটি উদ্বৃতি: পুতুলনাচ বইটি থেকে নীচে বইয়ের কিছু উদ্বৃতি শেয়ার করলাম।



১৷। যে সকল মানুষ কম বোঝে, কম জানে, কম কৌতূহলী হয় সেসব মানুষ বেশি সুখী হয়।

২। টাকা-পয়সা মানুষের বয়সকে প্রভাবিত করতে না পারলেও হৃদয়ের কপাটকে প্রভাবিত করতে পারে সহজেই।

৩। মানুষের বাল্যকাল, কৈশোরকাল, যৌবনকাল প্রাক্তন হয়; কিন্তু ভালবাসা নামক মহাসমুদ্রটি দিনের পর দিন আরো পোক্ত হয়, আরো স্মৃতিময় হয়, আরো সুন্দর হয়। কখনো পুরনো হয় না, হতে পারে না।

৪। কৃত্রিম আলোকসজ্জা চাঁদের মায়াবী আলোর চেয়ে অনেক বেশি ঔজ্জ্বল্য ছড়ালেও তার স্থায়িত্ব ক্ষণিকের হয়।

৫। মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী সহজে তাদের খোলস বদলায় না।

৬৷ মানুষের বুদ্ধির সাথে বিবেকটা যদি শাণিত হতো তাহলে পৃথিবীটা কিছুটা হলেও মানবিক হতো।



৭। মানুষের আছে পেটের চেয়ে সহস্রাধিক বড় খাবারের খিদে, যোগ্যতার চেয়ে লক্ষাধিক বেশি অর্জনের বাসনা। আছে জীবনকে জয় করে চিরজীবী হওয়ার নেশা।

৮। পেটের খিদের চেয়ে মন আর মস্তিষ্কের খিদে যখন অধিক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন বুকের পাঁজরে বজ্রপাতের গরম সেঁক বিবেকের মিটমিট করা বাতিটাকে গলা টিপে হত্যা করে।

৯। পরীক্ষায় এ+ পাওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাল হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করা, জানার আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া, শেখার জন্য কৌতূহলী হওয়া।


১০। শিশু অধিকার নিশ্চিত করা না হলে একটি দেশ, একটি পৃথিবী ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।


১১। পাগলা মন আর দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা গাড়ির কোন দায়ভার থাকে না৷ সব দায়ভার নির্ভর করে ড্রাইভার নামক মানুষটির মস্তিষ্কের সুস্থতা আর বিবেকের বিশুদ্ধতার উপর।


আপনাদের যদি কোন উদ্বৃতি ভালো লেগে থাকে তাহলে মন্তব্য করে জানাবেন। অবশ্য প্রতি উত্তর আমি কখন দিব তার ঠিক ঠিকানা নাই। এজন্য দুঃখিত।

ইন্টারনেট জগৎ থেকে দূরে আছি। তরুণ লেখকদের প্রতি পাঠকের একটা দায়িত্ব আছে। সেটা হলো ভালো হোক মন্দ হোক বইয়ের কথা ছড়িয়ে দেয়া। একুশে বইমেলা থেকে ৭ টি বই কেনার একটা তালিকা করেছিলাম। কাওসার ভাইয়ের এই বইটিও ছিল। কাওসার ভাই বইটি উপহার পাঠিয়েছেন। টাকা বাঁচলো। হাহাহ...

ভাইয়ের ভালোবাসার জন্য ভীষণ আনন্দিত। ধন্যবাদ দিলে অকৃতজ্ঞতা হবে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতই হোক কিংবা একজন তরুণ লেখকের পাঠক হিসেবে দায়িত্ব থেকেই হোক পুতুলনাচের রিভিউটা দিব বলে আপাতত ব্লগে আসা হল। প্রিয় কাওসার ভাইয়ের পুতুলনাচ পাঠকপ্রিয়তা পাক, সেই কামনা রইলো। ধন্যবাদ।

পৃথিবী হোক বইয়ের
ছড়িয়ে পড়ুক ভালো বইয়ের কথা।


বইটি সম্পর্কে কিছু তথ্য:

বই: পুতুলনাচ
লেখক: কাওসার চৌধুরী (সামুর একজন জনপ্রিয় ব্লগার)
প্রচ্ছদ: মুস্তাফিজ কারিগর
প্রকাশন: উৎস প্রকাশন
মলাট মূল্য: ২২৫ টাকা
একুশে বইমেলার উৎস প্রকাশনে (৩২ নং প্যাভিলিয়ন) পাওয়া যাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.