নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শখের গল্প লেখক

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ

শখের বশে গল্প লিখি

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীঃ নতুন অস্তিত্ব

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


ছবিঃ ইন্টারনেট

ক্যাম্পাসে র‍্যাগ ডে’র অনুষ্ঠান ছিল। বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র সবার সাথে হই হুল্লোড় করে অনুষ্ঠান শেষ করে আরো বেশ রাত পর্যন্ত ছিলাম ক্যাম্পাসে। খাওয়া দাওয়া, আড্ডা সব করে রাত ১টার দিকে বাড়ির পথ ধরলাম। বন্ধুরা বারবার করে বলছিল আজকে হলে থেকে যা, এতো রাতে যাস না। কিন্তু তাদের কথা শুনলাম না। বাড়িতে কড়া করে বলে দিছে। রাতে বাড়ি না ফিরলে আর ঢুকতে দেবেনা। তাছাড়া ভেবেছিলাম একটা না একটা কিছু পেয়েই যাবো। কিন্তু রাস্তায় এসে কিছুদূর হেঁটেই বুঝলাম বিঁধি বাম। কিচ্ছু নাই। ক্যাম্পাস থেকে আমার বাড়ি তিন/চার কিলো মতো হবে। আরেকটু সামনে গেলে হয়তো কিছু একটা পেয়ে যাবো, এই আশা করে করে আরো সামনে এসে বুঝলাম যে কপালে কিছুই নাই। এইদিকে দেড় কিলোর বেশি পার করে আসছি। আস্তে আস্তে থেমে থেমে আসছিলাম রিক্সা অটো কিছু পাবো এই আশায়। এইদিকে সারাদিন হৈ হুল্লোর লাফালাফি করে এমনিতেই ক্লান্ত। এখন এই সামান্য হেঁটেই ভালোমতো পায়ে ব্যাথা করছে। এতো দূর এসে ক্যাম্পাসে ফিরে যাবো নাকি বাড়ির দিকেই হাঁটতে থাকবো তাও বুঝতে পারছিনা। শেষে বাড়িতে আম্মার হুমকির কথা মনে পড়তেই যা থাকে কপালে ভেবে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম দ্রুত পায়ে। এখনো দেড়/দুই কিলো মতো বাকি। ভাবতেই শীতের রাতেও ঘামতে থাকলাম। রাস্তাঘাট একদম নির্জন। শীতের রাত। কুয়াশা বেশি নাই, মাঝারী কুয়াশা। কিছুদূর পর্যন্ত মোটামুটি দেখা যাচ্ছে। জ্যাকেটের চেইনটা গলা পর্যন্ত টেনে দিয়ে হুডি দিয়ে ভাল করে মাথাটা ঢেকে নিলাম। এই অবস্থায় কোনো টহল পুলিশ আমাকে দেখলে নির্ঘাত ধরে নিয়ে যাবে, যতই ভার্সিটির ছাত্র পরিচয় দেইনা কেন। কারণ এইভাবে একা একটা ছেলে এই শীতের রাতে এরকম রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়াটা আসলেই অস্বাভাবিক। কিন্তু কপাল ভাল কোনো পুলিশ টুলিশ নাই। সেই সাথে এইটাও লক্ষ্য করলাম রাস্তায় কোনো কুকুরও নাই। এমন রাতে শহরের রাস্তাগুলো সাধারণতঃ কুকুরদের দখলে থাকে। কিন্তু এতো লম্বা রাস্তা পার করে আসলাম একটাও কুকুর নাই। এমনকি রাস্তায় একটা গার্ডও নাই। কেমন অস্বস্তি লাগতে থাকল।

অর্ধেক পথ পার করে আসার পর বুঝলাম কেউ একজন আমার পিছন পিছন হাঁটছে। ভয় ভয় লাগতে থাকল। এতো রাতে এই নির্জন রাস্তায় আমার ঠিক পিছন পিছন যেই হাঁটুক না কেন সে সুবিধাজনক কেউ হতে পারেনা। পিছনে ঘাড় ঘুরাতে কেমন জানি লাগছে। হাঁটছি তো হাঁটছিই। কিন্তু ঘাড় আর হাত যেন জমে গেছে। কান খাড়া করে রাখলাম যদি পিছনের লোকটা কিছু করতে যায় তাহলে যেন টের পাই। কান খাড়া করে রেখে পায়ের শব্দ শুনতে লাগলাম। ভাল করে খেয়াল করে শুনে বুঝতে পারলাম পিছনের লোকটা ঠিক আমার মতো পা ফেলে হাঁটছে। একদম একই শব্দে একই রকম রিদমে। এমনকি জুতার শব্দও হুবহু এক। মনে হবে যেন আমি নিজেই হাঁটছি পিছনে। সামনে একটা ল্যাম্পপোস্ট আছে। ঐটা পার করে আসার পর দেখি ওর আলোতে আমার ছায়া ঠিক আমার সামনে পড়লো। ভাবলাম এইটাই সুযোগ। পিছনের লোকটাও ল্যাম্পপোস্ট পার করে আসার পর তার ছায়া লম্বা হয়ে পড়লো আমার কিছুটা সামনে ডানদিকে বাঁকা হয়ে। আর তাতেই বুঝলাম সেই লোকটাও আমার মতোই মাথায় হুডি দেয়া জ্যাকেট পড়ে জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে। পুরো ব্যাপারটাই অস্বাভাবিক। এমনভাবে হাঁটা যায়না। কিছু একটা করতে হবে।

হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। ঠিক সাথে সাথেই পিছনের জনও দাঁড়িয়ে গেল। আমি এইদিকে অতিরিক্ত ঘামছি আর শীতে কাঁপছি। কেমন অনুভূতি বলে বুঝানো যাবেনা। আবার হাঁটা শুরু করলাম। পিছনের জনও সাথে সাথে হাঁটা শুরু করলো। একদম সাথে সাথেই। কোনো বিলম্ব নেই। তার প্রতিটা নড়াচড়া সবকিছু ঠিক যেন আমার কপিক্যাট। আমার মাথার মধ্যে কেমন দপদপ করছে। আরো দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। পিছনের জনও কোনো রকম বিলম্ব ছাড়াই হাঁটার গতি ঠিক একইভাবে বাড়িয়ে দিল। বুঝলাম আস্তে হাঁটি আর দ্রুত, এইভাবে কাজ হবেনা। এর মোকাবিলা করতে হবে। ঠিক যেমন দ্রুত গতিতে হাঁটছিলাম ঠিক তেমনি ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেলাম। বলা বাহুল্য পিছনের জনও একদম একই সাথে একইভাবে ব্রেক করে দাঁড়িয়ে গেল। দাঁড়ানোর পর যেটা প্রচন্ড আতঙ্কের সাথে খেয়াল করলাম সেটা হল পিছনের জন ঠিক আমার একহাত পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে, এবং আমি তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। মাথার মধ্যে খুব দ্রুত গতিতে দপদপ করছে আমার। কয়েক সেকেন্ড এইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে একদম হঠাৎ করেই শরীর ঘুরিয়ে পিছনের জনের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। ঘুরেই বুঝলাম হাঁটা থামিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোটা ছিল আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। স্ট্রিট ল্যাম্পের আবছা আলোতে আমি দেখলাম আমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঠিক আমি। একই জামা, জ্যাকেট, প্যান্ট, একই হালকা দাড়িগোঁফ, একই জুতা পায়ে, একই উচ্চতা, একই গায়ের রঙ। প্রথমে ভাবলাম কোনো আয়নার সামনে দাঁড়ানো আমি হয়তো। কিন্তু প্রচন্ড আতংকের সাথে দেখলাম সামনের জন আমি নিজে আমার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলাম। হাসিটাকে আমার অমানুষিক মনে হল। প্রচন্ড ভয়ে আতংকে আমি যেন জমে গেলাম। হঠাৎ সামনের ‘আমি’ একহাত উঠিয়ে হাতের পাতাটা সোজা করে ঠিক আমার বুকের বামপাশে হৃদপিণ্ড বরাবর রাখলো। তার মুখে ঠিক তখনো সেই বাঁকা অমানুষিক হাসি। চোখ বড় বড় করে নিজের বুকের দিকে তাকালাম। আর দেখলাম, আমার শরীর নিচের থেকে আস্তে আস্তে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। আমার পা, কোমর, পেট আস্তে আস্তে গায়েব হয়ে কেমন একটা আলোর আভা হয়ে সামনের জনের শরীরের মধ্যে মিশে যাচ্ছে। আমি হাঁ হয়ে চোখ বড় বড় করে সামনের ‘আমি’ এর দিকে তাকালাম। তার মুখে তখনও সেই বাঁকা অমানুষিক হাসি। নিজের মাথাটা গায়েব হয়ে যাওয়ার আগে শুধু এইটুকু বুঝতে পারলাম আমি আর আমি নেই। আমি ‘ও’ হয়ে যাচ্ছি। নিজের আমি শেষ হয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে প্রিয় মানুষগুলোর মুখ সামনে একবার শধু ভেসে উঠলো।

** বডি এন্ড সৌল ক্লোনিং প্রসেসটা শেষ করে নিজের দিকে তাকালাম। হাঁদারামটার এখন আর নিজের কোনো অস্তিত্ব নেই। সে পুরোটা, এমনকি তার আত্মাটাও আমার হয়ে গিয়েছে। এখন থেকে আমিই আরিফ। যাক বাবাহ!! বাঁচলাম। সোমব্রেরো গ্যালাক্সির প্রতিরক্ষা বাহিনী আমাকে আর এখন খুঁজে পাবেনা। সাতাশ নাম্বার খুনের পর এখন আমাকে ধরতে পারলে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু কপালে থাকবেনা। এখন এই পৃথিবীতে আরিফ হয়ে বাকিটা জীবন আরিফের মতো হাঁদারাম হয়েই পার করে দেবো। তবে সমস্যা হলো এদের আয়ু অনেক কম। একটা গড় আয়ু পার করে মারা যাবার অভিনয় করে পরে আরেকটা মানুষ খুঁজে তার অস্তিত্ব নিয়ে বাঁচতে হবে। আপাতত বাড়ি গিয়ে আম্মার ঝাড়ি খেতে হবে।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.