নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শখের গল্প লেখক

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ

শখের বশে গল্প লিখি

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিন রাত একটায়

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:০৮


রাত একটার একটু বেশি বাজে। প্রচণ্ড ভ্যাঁপসা গরম আবার ইলেক্ট্রিসিটি নেই। এই গরমে ঘুম আর আসবেনা। ঘরের মধ্যে থেকে সিদ্ধ হওয়ার থেকে ছাদে যাওয়া বেশি ভাল মনে হল। যেই কথা সেই কাজ। চলে গেলাম পাঁচতলার ছাদে। আসলেই ছাদে বেশ ভাল ঠান্ডা বাতাস বইছে। পুরো এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিপাশে। আলোক দূষণ কম থাকায় আকাশটাও বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মিটমিট করে প্রচুর তারা দেখা যায়। ছোটবেলার আকাশের দিকে তাকালেই মনে হতো এতো তারা গুণে শেষ করতে পারবো না। কিন্তু বড় হতে হতে আশেপাশে বড় বড় বিল্ডিঙের সংখ্যা বাড়তে থাকলো আর আলোক দূষণও বাড়তে থাকলো। ফলে রাতের আকাশে তারা দেখাটাই একটা কঠিন কাজ হয়ে যায়। আজ বহুদিন পর মনে হল সেই ছোটবেলার মতো তারা গুণে শেষ করতে পারবো না। ছাদের চিলেকোঠার উপর উঠে সেখানে শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখতে থাকলাম। প্রচুর বাতাস লাগছে গায়ে। আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে ছোটবেলায় শোনা অনেক কাহিনী মনে পড়ে যেতে থাকলো।

ছোটবেলা শুনেছিলাম অনেকে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আগুনের গোলা ছুটে যেতে দেখতো। সেগুলো নাকি জ্বীন। তারা আগুনের তৈরি। তাই যখন তারা রাতের বেলা কোথাও দ্রুত যেতে চায় তখন আগুনের গোলার মতো ছুটে যায়। গ্রামের দিকেই এসব বেশি দেখা যেত তবে শহরের আকাশেও নাকি কেউ কেউ দেখেছে। আমি ছোটবেলা শুনতাম আর অবাক হয়ে ভাবতাম আমিও কবে দেখবো। ছাদে উঠে অনেক বসে থেকেছি কিন্তু কখনো আমার চোখে কিছুই পড়েনি। বড় হতে হতে একসময় ভাবতে থাকি হয়তো যারা দেখেছে তারা ভুল দেখেছে। অথবা উল্কা ছুটে যেতে দেখেছ তাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনে জ্বীন মনে করেছে। তবে ব্যপারটা এমন না যে আমি জ্বীনে বিশ্বাস করিনা। মুসলিম হিসেবে আমি অবশ্যই জ্বীনে বিশ্বাস করি। তবে মুরুব্বীরা হয়তো অন্যকিছু দেখেই জ্বীন ভেবে নিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখের ডানদিকে হঠাৎ কিছু একটা নড়াচড়া ধরা পড়লো। পাশে তাকাতে দেখি পশ্চিমের আকাশে একটা আগুনের গোল বলের মতো কিছু একটা উড়ে যাচ্ছে। জিনিসটাকে দেখে মোটেও উল্কার মতো লাগলো না। জিনিসটা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে উড়ে যাচ্ছে। উল্কা যেমন চোখের পলকে একটা সাদা রেখার মতো চলে যাওয়ার কথা জিনিসটা সেভাবে যাচ্ছেনা। বেশ আস্তে আস্তে যাচ্ছে। তার সামনের দিকটা আগুনের গোলার মতো গোল আর পিছন দিকটা একটা লেজের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে উড়ছে। আমি আগুনের গোলাটা দেখে ঝট করে উঠে বসলাম। প্রচণ্ড বিস্ময়ে আমি চোখ বড় বড় করে জিনিসটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আগুনের গোলাটা ঠিক আমার চোখের সামনে দিয়ে দূর পশ্চিম আকাশ বরাবর কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে গিয়ে দিগন্তে মিলিয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে ভাবতে থাকলাম যে জিনিসটা নিয়ে আমি চিন্তা করছিলাম ঠিক সেই জিনিসটাই আমার চোখের সামনে সাথে সাথে ঘটলো কিভাবে?! এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে?

এরপর আমার হঠাৎ মনে পড়লো আব্বার কাছে শোনা এক ঘটনা। আমার আব্বা এক সময় অনেক রাতে ছাদে উঠে পায়চারী করতেন। তার কাছে থাকতো একটা দুরবিন। সেই দুরবিন দিয়ে আব্বা রাতের আকাশে কি কি জানি দেখার চেষ্টা করতেন। একদিন তিনি এইভাবে পায়চারী করছিলেন। তখন তিনি হঠাৎ দেখেন একটা অবাক করা জিনিস। আমাদের বাড়ির সামনেই একটা রাস্তা। রাস্তাটা দিনের বেলায় বেশ ভাল ব্যস্ত থাকে আর শহরের মাঝের দিকের বেশ বড় একটা রাস্তা বলা যায়। সেই রাস্তার ওপাশে সেই আমলে বেশকিছু দোতলা একতলা বাড়ি ছিল। সেই বাড়িগুলোর সামনের দিকে ছিল বেশ কিছু নারিকেল গাছ। আর পিছনদিকে ছিল নারিকেল গাছ আর একটা পুকুর। সেই পুকুরের আশেপাশে আরো কিছু টিনের ঘর ছিল কিন্তু সেগুলো আমাদের বাড়ি থেকে আর দেখা যেতোনা। আমাদের বাড়ির ঠিক সোজা যে দোতালা বাড়িটা আছে সেই বাড়ির সামনে একটা বড় উঠোন আছে আর তার সামনে কিছু নারকেল গাছ। আব্বা একরাতে পায়চারী করতে করতে দেখেন ঐ বাড়িটার পিছন থেকে অনেক লম্বা নারিকেল গাছের চেয়ে অনেক লম্বা সাদা মানুষের আকৃতির একটা কিছু সব দোতালা তিনতালা বিল্ডিং গুলো ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে পুকুরের দিকে চলে যাচ্ছে। খুব সম্ভবত পুকুরটা একবারে পার করে ওপাড়ে চলে যায়। আমার আব্বা প্রচণ্ড সাহসী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন এমনভাবে যে একটু নড়াচড়া করলে সেই লম্বা জিনিসটা আব্বাকে দেখে ফেলতে পারে। জিনিসটা চোখের আড়াল হলে আব্বা সেদিন নিচে এসে শুয়ে পড়েন।

ছাদে দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আমি সেই বিল্ডিং গুলোর দিকে তাকাই। সেখানে এখন আর আগের মতো সেই দুই তিনতলা বাড়ি গুলো নেই। দশতালা আধুনিক বিল্ডিং হয়ে গেছে। নারিকেল গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়ে গেছে অনেক আগে। ঐ বাড়িগুলোর পিছনদিকে যে পুকুরটা ছিল সেইটাও ভরাট করা হয়েছে। আমি ভাবছিলাম এখন আর এতো লম্বা বিল্ডিং গুলো ডিঙিয়ে যাওয়ার জন্যে সেই জিনিসগুলোও হয়তো নেই। এটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমি বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দেখি সেই দশতালা বিল্ডিঙের পিছন থেকে অনেক লম্বা সাদা মানুষের আকৃতির কিছু একটা সেই বিল্ডিং ডিঙিয়ে আমাদের বাড়্রির দিকে এগিয়ে আসছে। এখন আর আশেপাশে আগের মতো এতো গাছপালা পুকুর কিছুই নেই। আমি খোলা ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছি। ঐ জিনিসটা এদিকে আসতে থাকলে আমাকে সহজেই দেখতে পাবে। প্রচণ্ড ভয়ে আমি পাথরের মতো জমে দাঁড়িয়ে আছি। আমি দেখলাম সেই লম্বা সাদা জিনিসটা দশতলা বিল্ডিংটা ডিঙিয়ে রাস্তায় একটা পা ফেলল। এরপর একবারে ঠিক আমার মাথার উপর দিয়ে আমাদের পাঁচতলা বিল্ডিংটা ডিঙিয়ে তার পরের পা ফেলল আমাদের বাড়ির পিছনদিকে। জিনিসটা এতোটাই লম্বা ছিল যে আমি তার মাথার দিকটা দেখতে পাচ্ছিলাম না। এরপর সে এক এক করে আরো বিল্ডিং ডিঙিয়ে আমার চোখের আড়াল হয়ে গেল।

আমি আর এক মুহুর্তের জন্যেও ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইলাম না। না জানি ছোটবেলায় শোনা কোন কোন কাহিনী আবার মনে পড়ে যাবে আর সেটাই আমার সাথে ঘটতে শুরু করবে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমার পা চলতে চাইছিল না। তারপরেও আমি কোনভাবে সিঁড়ি বেয়ে নিচে আমার ঘরে চলে এলাম। আর তখনি ইলেক্ট্রিসিটিও চলে এলো। বাকিরাত আমি লাইট জ্বালিয়েই ঘুমিয়ে থাকলাম। এরপর আমি অনেক চিন্তা করেও বের করতে পারিনি আমি সেদিন যা যা ভেবেছি ঠিক তাই কিভাবে আমার সাথে ঘটলো। বাড়ির কাউকে এসব ঘটনা আমি শেয়ারও করিনি পাছে কেউ ভয় পায়। এরপর থেকে রাতে কারেন্ট গেলে আমি অনেকবার ছাদে গিয়েছি, অনেক পুরনো শোনা কাহিনী মনে করে চিন্তাও করেছি। কিন্তু ওমন অদ্ভুত ঘটনা আর কখনোই ঘটেনি আমার সাথে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:২৫

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আর কিছুক্ষণ পর রাত ১ টা বাজবে, আমার তো কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে!

২| ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ৩:১৩

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আষাঢ়ে গল্প,
বিজ্ঞানের যুগে এধরনের গল্পর কোন
পাঠক পাবেন না ।

.................................................................
সাইন্স ফিকসন নিয়ে কিছু লিখুন ,

২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১০

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ বলেছেন: আপনি না পড়লে অন্য কেউ পড়বে। এইখানে কেউ না পড়লেও অন্য কোনো মাধ্যমে কেউ পড়বে। এটা কোনো বিষয় না। অন্যকিছু নিয়ে গল্প পড়তে চাইলে আমার ব্লগে আপনার আমন্ত্রণ রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.