নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গাংচীল

রংধনু সাদাকালো

রংধনু সাদাকালো › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি চাঁদময় রাত্রি ও মৃত্যুভয়

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:২০







গুছিয়ে লিখতে পারি না তাই অনেকটা এলোমেলো।এটা শুধুমাত্র সত্যের প্রকাশ। কিছু ঘটনা থাকে যা অতিপ্রাকৃতিক যার কোন ব্যখ্যা আমাদের কাছে নেই। যদিও বাস্তবে ঘটে তথাপি কোন প্রমাণ থাকে না ,অনেকটা দুঃসপ্নের মতো। ঘটনাটি ঘটেছিল আমার এক আত্মীয়ের সাথে। ২০০২ সালে তিনি অতীত হয়েছেন। আমি ঘটনাটি শুনি উনার মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে। ঘটনার সময়কাল ছিল ১৯৮২ কি ৮৩। উনি প্রচন্ড সাহসী ছিলেন। উনার কাছে আলো অন্ধকারের কোন পার্থক্য ছিল না। উনি কোন এক পীরের মুরিদ ছিলেন। প্রতি মাসে একবার পীরের দরবারে যেতেন। উনি আমাকে ঘটনাটি বলেছিলেন এই ভাবে,আমি উনার মুখ থেকে বলছি। আমার ভাষায় ।



আমি প্রতি বাংলা মাসের শেষ বৃহস্পতিবার পীরের দরবারে যেতাম। দরবার থেকে বাড়ির দুরত্ব ছিল প্রায় ৩০ কিমি। সেই সময়টাতে যাতায়ত ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল। পায়ে হাটা আর নৌকা ছাড়া কোন মাধ্যম ছিল না। দরবারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।জরুরী কাজ থাকার কারনে সন্ধা বেলায় রওনা হই। মাঝখানে অনেকটা নদীপথ ছিলো। ঘাটে পৌছে এশার নামাজ পরলাম। মাঝিকে এদিক ওদিক খুজলাম,পেলাম না। কিছুক্ষন পর মাঝি আসল.এসে বলল একজন নিয়ে যাওয়া যাবে না আর গেলেও জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে মাঝি চলে গেল। আমি আর কিছু না ভেবে নৌকায় উঠে বসলাম। রাত্রি বেলা এ অঞ্চলে মানুষের যাতায়ত খুব কম ছিল।কতক্ষন বসে ছিলাম মনে নেই। দুরে একজন মানুষ দেখতে পেলাম । এদিকেই আসছে। মনে মনে ভাবলাম একজন পাওয়া গেল। লোকটি নৌকায় উঠে বসল। লোকটির বয়স ৬০ কি ৬৫ হবে ।বৃদ্বই বলা চলে। চুল দাড়ি সব কাশঁফুলের মতো সাদা। আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাবেন উনি কিছু বলল না শুধু আমার দিকে একনজর দেখলো। আমি তার চোখের দিকে তাকালাম কিন্তু কেন জানি তাকিয়ে থাকতে পারণাম না। চারপাশটা আমার কাছে নিথর মনে হচ্ছিল।উনি নৌকায় উঠার সময় নৌকাটা একটুও নড়েনি। মনেই হয়নি একজন লোক নৌকায় উঠল।এরই মধ্যে মাঝি আসল।নদীতে বাতাশ না থাকার কারনে দাড় ছাড়া কোন উপায় ছিল না। মাঝি নিঃশব্দে নৌকা বেয়ে চলল। রাত্র সময়ের উপর ভর করে গভীরে যাচ্ছে। চারপাশে নৌকার দাড়ের করুন শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ ছিল না।মাঝ রাতে চাঁদের আালোয় আরো অদ্ভুত লাগছিল।কতটা সময় পার হয়েছে জানিানা একসময় নদীর এপারে পৌছলাম। আমি মাঝির ভাড়া মিটিয়ে চলে আসলেও লোকটি তখনো নৌকায় বসে ছিল। আমি আর দেরি না করে হাটা শুরু করলাম। কিছুক্ষন হাটার পর আমার পেছনে লোক দেখতে পেলাম । কাছে আসার পর দেখলাম সেই বৃদ্ব লোকটি আমার সহযাত্রী। অল্পক্ষনের মধেই উনি আমার কাছে চলে আসে।একপর্যায়ে উনি আমার সাথে কথা বলা শুরু করে।তিনি আমার গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করল ।আমি বললাম। উনি আমাকে বললেন যে উনার আতিœয় মারা গেছে জনাজা দিয়ে আসতে দেরি হয়েছে। আমাদের পরিচিতি পর্ব শেষ হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম উনি অমার বংশের অনেককেই চেনে কিন্ত আমি উনাকে জীবনে দেখেছি বলে মনে হয় না। রাত্রি প্রায় শেষের পথে। বড় রাস্তা ছেরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাটছি। আর ৪ কিমি পরেই আমার বাড়ি। লোকটি হঠাৎ হাটা বন্ধ করে আমাকে বলল সামনে আমার বাড়ি.বাকি রাতটা থেকে গেলে ভলো হয় সামনের পথ একা যেতে সমস্যা হতে পারে ।শরীরটা অনেক খারাপ লাগছিল তাই অনিচ্ছা সত্বেও রাজি হলাম। ভাবলাম ভোর হলেই বাড়ি চলে যাব। আমি তখনো জানতাম না আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে।বৃদ্ব লোকটি বাড়ির উঠোন পেরিয়ে হাটতে লাগল আমি তার পেছনে ছিলাম।বাড়িটার পেছনে দিকটা সম্পুর্ন অন্ধকার ছিলো।বৃদ্ব লোকটির হাটার গতি বেরে গেল । সামনে গিয়ে উচু কিছু একটার উপর দাড়াল। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম অনেক পুরোনো ভাঙ্গা কবর। লোকটি আস্তে আস্তে কবরের ঠিক মাঝখানটায় দাড়াল। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি ঘটছে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলাম লোকটির শরীর আস্তে আস্তে কবরের ভেতর দেবে যাচ্ছে। কবরের মধ্যে প্রচন্ড আলো। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। বৃব্দটি আমাকে ডাকল। আমার শরীর নাড়াতে পারছিলাম না।শরীরের প্রতিটা অঙ্গ অবশ হয়ে গেছে।আমার দৃষ্টি শক্তি কমতে লাগল। বাচার জন্য প্রচন্ড জোরে দৌড় দিলাম। ভাগ্য সহায় ছিল না। মাথায় প্রচন্ড ধাক্কা লাগল। আর কিছু মনে নেই।



যখন নিজেকে খুজে পেলাম ,দেখি রাস্তায় শূয়ে আছি, চারপাশে মানুষের ভীর। সবার দৃষ্টি আমার দিকে।শরীরের অসারতা তখনো আছে।দাড়াতে পারছিলাম না। একজনে সাহায্যে উঠে দাড়ালাম। অনেকেই অনে কথা জিজ্ঞেস করছিল ,কথা বলার শক্তি ছিল না। আমি আমাকে চিনতে পারছি না । আশপাশের মানুষের পরিচর্যায় শরীরের অবস্থা একটু ভালো মনে হলো। আস্তে আস্তে বাড়ির পথে হাটা শুরু করলাম।এর পর আরো কয়েক দিন অসুস্থ ছিলাম।শরীর ভালো হওয়ার পর একদিন বিকেল বেলা বৃদ্ব সম্পর্কে খোজ নিতে সেই গ্রামে যাই। বৃদ্বের বাড়িতে কাউকে খুজে পাইনি। পাশের বাড়িতে খোজ নিয়ে জানলাম তাদের আতিœয় মারা গেছে এবং তারা সেখানে আছে। বৃদ্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা অবাক হয় এবং বলে উনিতো মারা গেছেন অনেক বছর হয়। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস না করে নিঃশব্দে চলে এলাম। অনেকবার দুঃসপ্ন ভেবে ভুলতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি। বারবার ফিরে আসে জীবন্ত অতীত হয়ে ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:০৬

দুঃখ বিলাস বলেছেন: হুম!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.